তীর্থ-সলিল/দুঃখের হেতু
দুঃখের হেতু।
সকলে সুধায়, কেন খিন্ন দিন দিন,—
কেন আমি দুঃখে বিমলিন?
সদাই বিরস কেন সদাই বিমনা?
কৈশোরে এত কি দুর্ভাবনা?
হায়! তা’রা বুঝে না রে এ মৃত্যু-যাতনা,
ঘুচাতে যা’ কেহ পারিবে না,—
বিনা সে মধুর হাসি, বিনা সে চাহনি,—
(জগত-ভুলানো নিঝরিণী;)
কে ঘুচাবে দুঃখ জ্বালা? কে বর্ষিবে ঘুম?
হাহাকার করিবে নিঝুম!
সে কঠিনা, ক্ষমাহীনা, সুন্দরী সে নারী,
শিলা-সুকঠোর হিয়া তা’রি!
সে জানিতে নাহি চায় কেন আমি ক্ষীণ,
কেন বা গুমরি নিশি দিন;
আনন্দে যখনি, হায়, বিমুগ্ধ নয়নে
চাহি সে মধুর মুখ পানে,—
চাঁদ মুখ ঘিরে ফেলে মেঘে,
কুটিল ভ্রুকুটি কি যে উঠে, হায়, জেগে;
বিরহে, নৈরাশ্যে, সদা ডুবে আছি তাই,
ক্ষুব্ধ খেদ ভিন্ন কিছু নাই;
জীবন বিজন মোর, গহন সে হায়,
বিষাদের বিষ-লতিকায়।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত।