দীর্ঘকেশী/পঞ্চম পরিচ্ছেদ

পঞ্চম পরিচ্ছেদ।

 কলিকাতার ক্যানিংষ্ট্রীট পাঠকগণের মধ্যে কাহারও অপরিচিত নহে। ঐস্থান বাণিজ্য কার্য্যের নিমিত্ত প্রসিদ্ধ। ঐ রাস্তার দুই ধারে সারি সারি দোকান, সূর্য্যোদয়ের পর হইতে রাত্রি নয়টা দশটা পর্য্যন্ত ঐ সকল দোকানে যেমন কেনা-বেচার বিরাম নাই, সেইরূপ লোক যাতায়াতেরও কিছুমাত্র কমবেশী নাই। দোকানগুলি দেখিয়া নিতান্ত সামান্য দোকান বলিয়া অনুমান হয়, কিন্তু যাঁহারা উহাদিগের ভিতরের অবস্থা জানেন, তাঁহারা বলিয়া থাকেন, ঐ সকল দোকানের মূলধন কম নহে, ও উহাদিগের নিকট হইতে যে কোন দ্রব্য যত পরিমাণ চাহিবে, তৎক্ষণাৎ তাহা প্রাপ্ত হইবে। দোকানের সুদূরবর্ত্তী স্থানে গলির ভিতর প্রত্যেক দোকানদারের দুই চারিটী করিয়া গুদাম আছে, ঐ সকল গুদাম দোকানের বিক্রেয় দ্রব্যের দ্বারা পরিপূর্ণ, যেমন কোন একটী দ্রব্য কম পড়িতেছে, অমনি ঐ সকল গুদাম হইতে ঐ সকল দ্রব্য আনাইয়া ঐ সকল স্থান পূর্ণ করিয়া রাখা হইতেছে।

 ঐ স্থানের একজন ব্রাহ্মণ দোকানদারের সহিত আমার পরিচয় ছিল, পরিচয়ই বা বলি কেন, তাহার সহিত আমার বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। সময় সময় আমি তাহার দোকানে গিয়া বসিতাম ও দোকানের বেচা-কেনার অবস্থা দেখিতে দেখিতে দুই এক ঘণ্টা অতিবাহিত করিতাম। যে দিবস মস্তক-বিবর্জ্জিত স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পুষ্করিণীর মধ্য হইতে আমরা প্রাপ্ত হইয়া ছিলাম, তাহার তিন চারি দিবস পরে আমি আমার সেই বন্ধুর দোকানে গমন করিলাম। তখন বেলা প্রায় শেষ হইয়া গিয়াছে, অতি অল্প মাত্রই আছে। সেই সময় ঐ দোকান হইতে রাস্তার অপর পার্শ্বস্থিত একটী দ্বিতল বাড়ীর ছাদের উপর হঠাৎ আমার নয়ন আকৃষ্ট হইল। দেখিলাম, ছাদের উপর দুইটী স্ত্রীলোক পদচারণ করিতেছে। একটীকে দেখিয়া অনুমান হয় যে, তাহার বয়স হইয়াছে। বোধ হয়, তাহার বয়ঃক্রম ৫৫ বৎসরের কম নহে। অপরটী অল্পবয়স্কা দেখিয়া অনুমান হয়, তাহার বয়ঃক্রম ১৬।১৭ বৎসরের অধিক হবে না। উভয়েই আলুলায়িত কেশা। যে দীর্ঘকেশী স্ত্রীলোকের অনুসন্ধানে আমরা প্রবৃত্ত ছিলাম, ইহাদিগের কেশের দৈর্ঘতা তাহা অপেক্ষা কোন অংশে ন্যূন নহে, দেখিতেও প্রায় সেইরূপ। উভয়েই ছাদের উপর বেড়াইতেছে, কিন্তু দূর হইতে দেখিয়া অনুমান হইতেছে, ঐ কেশরাশী তাহাদিগের পদ স্পৃষ্ট করিয়া আছে। উভয় স্ত্রীলোকের কেশের সাদৃশ্য দেখিয়া আমার মনে হইল, যে দীর্ঘকেশীর মৃতদেহ আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি ও যাহার অনুসন্ধানে অনর্থক কয়েক দিবস অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে, সেই স্ত্রীলোকের সহিত এই দীর্ঘকেশী শ্রীলোকদ্বয়ের কোনরূপ সংশ্রব আছে কি? ঐ স্ত্রীলোকটী যে কে ছিল, তাহার কোনরূপ সন্ধান কি ইহাদিগের নিকট হইতে কিছুমাত্র প্রাপ্ত হইব না? এরূপ হইতে পারে, সেই স্ত্রীলোকটী ইহাদিগের কেহ না কেহ হইবে। দুইটী স্ত্রীলোকের চুলের ভাব যখন একই রূপ দেখিতেছি, তখন বোধ হইতেছে, ইহাদিগের বংশই এইরূপ দীর্ঘকেশী ও মৃতা স্ত্রীলোকটীও হয় ত ইহাদিগের কেহ না কে হইবে। এরূপ স্ত্রীলোকদ্বয় যখন হঠাৎ আমার নয়নগোচর হইল, তখন বিশেষরূপ অনুসন্ধান না করিয়া নিশ্চিন্ত থাকা আদৌ কর্ত্তব্য নহে। এইরূপ ভাবিয়া আমি আমার সেই দোকানদার বন্ধুকে কহিলাম, দেখ দেখি, স্ত্রীলোকের ঐরূপ কেশ আর কখন দেখিয়াছি কি?

 বন্ধু। দেখিব না কেন? আমি ত প্রত্যহই দেখিয়া থাকি। কেন, তুমি কি ইতিপূর্ব্বে উহাদিগকে আর কখন দেখ নাই?

 আমি। না, দেখিলে আর আমি তোমাকে বলিব কেন?

 বন্ধু। তুমি তো প্রায়ই আমার দোকানে আসিয়া থাক, আর উহারাও প্রায়ই ছাদের উপর বেড়াইয়া থাকে, এপর্য্যন্ত কি উহারা তোমার নয়নপথে কখন পতিত হয় নাই।

 আমি। না, আজই আমি উহাদিগকে প্রথম দেখিলাম। উহারা কাহারা, তুমি কিছু অবগত আছ?

 বন্ধু। আছি।

 আমি। কিরূপ অবগত আছ?

 বন্ধু। তুমি জান যে, আমার সকল দ্রব্যের এই দোকানে স্থান কুলায় না।

 আমি। তাহা জানি, আর জানি—এই নিমিত্ত তোমার কয়েকটী গুদাম ভাড়া আছে।

 বন্ধু। আমার কয়টী গুদাম আছে তাহা জান?

 আমি। না, তবে এইমাত্র জানি যে, কয়েকটী গুদাম ভাড়া আছে।

 বন্ধু। কোথায় আমার গুদাম জান?

 আমি। না, তাহাও জানি না, তবে এইমাত্র বলিতে পারি যে, দোকানের সম্নিকটবর্ত্তী কোন না কোন স্থানে তোমার গুদাম ভাড়া আছে।

 বন্ধু। যে বাড়ীতে দুইটী দীর্ঘকেশী স্ত্রীলোক দেখিয়া তুমি হতজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছ, ঐ বাড়ীটীও আমার একটি গুদাম।

 আমি। ঐ বাড়ীটী যদি তুমি গুদামরূপে ব্যবহার করিয়া থাক, তাহা হইলে ঐ বাড়ীতে মনুষ্য কিরূপে বাস করিয়া থাকে?

 বন্ধু। বাড়ীর একতালায় যতগুলি ঘর আছে, সমস্তগুলিই আমার গুদাম। উহারা দোতালায় বাস করিয়া থাকে, নীচের তালার সহিত উহাদিগের কোনারূপ সংস্রব নাই।

 আমি। তাহা হইলে ঐ বাড়ীতে তুমি সর্ব্বদাই গিয়া থাক?

 বন্ধু। আবশ্যক হইলেই যাই। ঐ বাড়ীতে আমার একজন গুদাম-সরকার আছে, তথাপি দিনের মধ্যে আমাকে তিন চারিবার তথায় গমন করিতে হয়।

 আমি। তাহা হইলে উহাদিগের সহিত নিশ্চয়ই তোমার আলাপ-পরিচয় আছে?

 বন্ধু। বন্ধুত্ব আছে।

 আমি। উহারা কি লোক?

 বন্ধু। ইহুদি।

 আমি। এই বাড়ীতে উহারা কত দিন হইতে আছে?

 বন্ধু। বহুকাল আছে, বোধ হয় বিশ বৎসরের কম হইবে না।

 আমি। উহারা কাহারা বা কি কার্য্য করিয়া থাকে?

 বন্ধু। উহারা একরূপ হাফ্‌ বেশ্যা, গৃহস্থের ধরণে বাস করে বটে, কিন্তু বেশ্যাবৃত্তি করিতেও সঙ্কুচিত হয় না।

 আমি। উহারা কয়জন এই বাড়ীতে বাস করিয়া থাকে?

 বন্ধু। পুরুষের মধ্যে একজন বৃদ্ধ ইহুদি। ঐ যে প্রবীণা স্ত্রীলোকটীকে দেখিতেছ, সে উহাকেই আপনার স্ত্রী বলিয়া পরিচয় প্রদান করিয়া থাকে, কিন্তু উহাকে ঐ বৃদ্ধের স্ত্রী বলিয়া আমার বোধ হয় না, কারণ অপর পুরুষদিগের সহিত উহার সম্মুখে আমোদ আহ্লাদ করিতেও আমি দেখিয়াছি।

 আমি। অপর স্ত্রীলোকটী কে?

 বন্ধু। ঐ প্রবীণার কন্যা।

 আমি। উহারা কয় সহোদরা?

 বন্ধু। আমি উহাদিগের দুই ভগ্নীকে দেখিয়াছি।

 আমি। দুই ভগ্নীই কি এই বাড়ীতে থাকে?

 বন্ধু। যেটীকে দেখিতে পাইতেছ, সে এই বাড়ীতেই তাহার মাতার সহিত বাস করে। কলিকাতায় একটী বাঙ্গালী জমিদার বাবু ইহাকে রাখিয়াছে, তিনি প্রায়ই এখানে আসিয়া থাকেন, ও তাঁহা-কর্ত্তৃকই ইহাদিগের খরচ-পত্রের সরবরাহ হইয়া থাকে।

 আমি। উহার, অপর ভগ্নী কি এখানে থাকে না?

 বন্ধু। সে এই স্থানে থাকে না, কিন্তু মধ্যে মধ্যে এখানে আসিয়া থাকে?

 আমি। তুমি এখানে তাহাকে শেষ কতদিবস হইল দেখিয়াছ?

 বন্ধু। গত পনের দিবসের মধ্যে আমি তাহাকে এ বাটীতে দেখিয়াছি।

 আমি। সে থাকে কোথায়?

 বন্ধু। শুনিয়াছি, সে কলুটোলায় থাকে।

 আমি। কলুটোলায় সে কাহার নিকট থাকে? তাহার কি বিবাহ হইয়াছে?

 বন্ধু। ইহাদিগের আবার বিবাহ, শুনিয়াছি কলুটোলায় একজন চামড়ার মহাজন তাহাকে রাখিয়াছে, তাহারই সহিত সে সেই স্থানে বাস করিয়া থাকে।

 আমি। সেই চামড়ার মহাজন কি উহাদিগের জাতীয়?

 বন্ধু। না।

 আমি। তবে সে কোন্ জাতীয়?

 বন্ধু। মুসলমান বলিয়া আমি শুনিয়াছি কিন্তু কখন তাহাকে দেখি নাই।

 আমি। তুমি সেই স্ত্রীলোকটিকে দেখিয়াছ?

 বন্ধু। খুব দেখিয়াছি, অনেকবার দেখিয়াছি।

 আমি। সে দেখিতে কেমন?

 বন্ধু। বেশ সুশ্রী।

 আমি। তাহার ভগ্নী দেখিতে যেরূপ?

 বন্ধু। আমার বোধ হয় ইহা অপেক্ষাও সে দেখিতে ভাল।

 আমি। সে এটী অপেক্ষা বড় না ছোট?

 বন্ধু। সেই বড়, আর যেটীকে এখন দেখিতে পাইতেছ, সেই ছোট।

 আমি। তাহার মস্তকের কেশ দেখিতে কিরূপ?

 বন্ধু। ইহাদিগের যেরূপ কেশের বাহার দেখিতেছ, তাহার কেশও সেইরূপ। ইহাদিগের তিনজনেরই কেশের সমান বাহার।

 আমি। এরূপ কেশ তুমি আর কখন দেখিয়াছ?

 বন্ধু। আমি অনেক জাতীয় স্ত্রীলোক দেখিয়াছি, হিসাব মত প্রায় ইহুদি পাড়ার মধ্যেই বাস করিয়া থাকি, কিন্তু এই তিনটা স্ত্রীলোক ভিন্ন অপর কোন স্ত্রীলোকের মস্তকে এরূপ কেশরাশী আর কখন দেখি নাই।

 আমি। যে মুসলমান চামড়াওয়ালা ইহার বড় ভগ্নীকে রাখিয়াছে, তাহার বাড়ী কে জানে বলিতে পার?

 বন্ধু। উহারাই জানে, আর কে জানিবে।

 আমি। বৃদ্ধ ইহুদি তোমার নিকট পরিচিত?

 বন্ধু। খুব পরিচিত। এক হিসাবমত উহারা আমার প্রজা।

 আমি। কি সূত্রে উহারা তোমার প্রজা হইল?

 বন্ধু। যে বাড়ীতে উহারা বাস করে, সেই বাড়ীতে আমার গুদাম আছে, তাহা আমার নিজের বাড়ী না হইলেও যাহার বাড়ী তাহার নিকট হইতে ঐ সমস্ত বাড়ী আমি এগ্রিমেণ্ট করিয়া লইয়াছি, সমস্ত বাড়ীর ভাড়া আমিই তাহাকে প্রদান করিয়া থাকি। আমার নিকট হইতে ঐ বৃদ্ধ ইহুদি ঐ বাড়ীর দোতালাটী ভাড়া করিয়া লইয়াছে। সে উহার ভাড়া আমাকেই প্রদান করিয়া থাকে, এরূপ অবস্থায় বোধ হয় আমি বলিতে পারি যে, উহারা আমার প্রজা।

 আমি। তা তো নিশ্চয়ই, এরূপ অবস্থায় ঐ বৃদ্ধ ইহুদিকে যদি তুমি কোনরূপ উপরোধ কর, তাহা হইলে বোধ হয় সে অনায়াসে শুনিতে পারে?

 বন্ধু। পারে বলিয়া তো আমার বিশ্বাস।

 আমি। আমি তাহাকে একটী সামান্য উপরোধ করিতে চাই।

 বন্ধু। কি উপরোধ?

 আমি। সে একবার কলুটোলায় গিয়া দেখিয়া আসে যে, তাহার কন্যা সেই স্থানে আছে কি না, আর যদি না থাকে, তাহা হইলে এখন সে কোথায় তাহা যদি জানিতে পারে।

 বন্ধু। এ অতি সামান্য কথা, বৃদ্ধ যদি বাড়ীতে থাকে, তাহা হইলে আমি এখনই তাহাকে ঐ স্থানে পাঠাইয়া দিতেছি, কিন্তু একটী কথা আমি জিজ্ঞাসা করিতে চাই।

 আমি। কি কথা?

 বন্ধু। ইহা জানিবার প্রয়োজন কি?

 আমি। বিশেষ প্রয়োজন না থাকিলে আর আমি বলিব কেন, সে যদি ঐ স্থানে না থাকে, তাহা হইলে আমার যে কি প্রয়োজন তাহার সমস্ত কথা তোমার নিকট বলিব।

 বন্ধু। আর সে যদি ঐ স্থানে থাকে।

 আমি। তাহা হইলেও যদি জানিতে চাও তবে বলিব?

 আমার কথা শুনিয়া আমার সেই বন্ধু দোকানদার তাহার দোকানের একজন কর্ম্মচারীকে ঐ বাড়ীতে পাঠাইয়া দিলেন, ও বলিয়া দিলেন যে, “বৃদ্ধ যদি এখন বাড়ীতে থাকে, তাহা হইলে আমার নাম করিয়া তাহাকে একবার আমার নিকট ডাকিয়া আন।”

 বন্ধুর কথা শুনিয়া তাহার সেই কর্ম্মচারী ঐ বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিল ও দেখিতে দেখিতে সেই বৃদ্ধকে সঙ্গে করিয়া সেই দোকানে আমার বন্ধুর নিকট আনিয়া উপস্থিত হইল। বৃদ্ধ ইহুদি সেই স্থানে আসিয়াই আমার সেই বন্ধুকে কহিল, “আপনি কি আমাকে ডাকিয়াছেন?”

 বন্ধু। হাঁ।

 বৃদ্ধ। কেন?

 বন্ধু। একটী সামান্য কথার জন্য।

 বৃদ্ধ। কি কথা?

 বন্ধু। আপনার বড় কন্যাটীকে অনেক দিবস দেখি নাই। তিনি এখন কোথায়?

 বৃদ্ধ। কলুটোলায় আছে।

 বন্ধু। আপনি তাহাকে কত দিবস দেখেন নাই?

 বৃদ্ধ। প্রায় ১৫ দিবস হইল সে আমার এখানে আসিয়াছিল, সেই সময় আমি তাহাকে দেখিয়াছিলাম। তাহার পর আর তাহাকে দেখি নাই।

 বন্ধু। তাহার সহিত আমায় একবার সাক্ষাৎ করিবার বিশেষ প্রয়োজন হইয়াছে, আপনি একবার সেই স্থানে গিয়া তাহার সহিত সাক্ষাৎ করুন ও জিজ্ঞাসা করিয়া আসুন, কোন্ সময় আমি সেই স্থানে গমন করিলে তাহার সহিত সাক্ষাৎ হইতে পারিবে। আমি জানি, তিনি, কলুটোলায় থাকেন, কিন্তু কোন্ বাড়ীতে থাকেন, তাহা জানি না, এই জন্যই আপনাকে একটু কষ্ট প্রদান করিতেছি; তাহার ঠিক ঠিকানা আমার জানা থাকিলে আমি নিজে গিয়াই এতক্ষণ তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া আসিতাম।

 বৃদ্ধ। এ অতি সামান্য কথা, যে স্থানে আমার কন্যা থাকে সেই স্থান এখান হইতে বহু দূরবর্ত্তী নহে, বোধ হয় অর্দ্ধ ঘণ্টার মধ্যেই আমি সেই স্থান হইতে ফিরিয়া আসিতে পারিব। আমি এখনই সেই স্থানে যাইতেছি। যদি তাহাকে বাড়ীতে পাই, তাহা হইলে আমি এখনই তাহাকে সঙ্গে লইয়া আপনার নিকট আসিতেছি।

 বন্ধু। আর যদি এখন তাহার সাক্ষাৎ না পান?

 বৃদ্ধ। তাহা হইলেও আমি সেই সংবাদ আপনাকে প্রদান করিব।

 এই বলিয়া বৃদ্ধ সেই দোকান হইতেই কলুটোলা অভিমুখে গমন করিল। মুর্‌গিহাটা হইতে কলুটোলা বহুদূর ব্যবধান নহে, তাহা কলিকাতার পাঠকগণ সকলেই অবগত আছেন। সুতরাং তাহার প্রত্যাগমনের প্রত্যাশায় আমি সেই স্থানেই অপেক্ষা করিতে লাগিলাম।

 সেই সময় আপনার বন্ধু আমাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঐ ইহুদি স্ত্রীলোকটীর জন্য এত অনুসন্ধান করিতেছেন কেন?”

 আমি। দীঘির পাড়ায় একটী স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছে, এ কথা তুমি শুন নাই কি?

 বন্ধু। শুনিয়াছি।

 আমি। যে দুইটী স্ত্রীলোক ছাদের উপর বেড়াইতেছে, তাহাদিগের মস্তকের চুলের সহিত মৃত স্ত্রীলোকের মস্তকের চুলের বিশেষ সাদৃশ্য আছে, তাই ঐ স্ত্রীলোকটীর অনুসন্ধান করিতেছি।

 বন্ধু। তোমার উদ্দেশ্য এখন আমি বুঝতে পারিলাম।