দেওয়ানা/সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ।

 নবাব সুজা বেগ আর তাঁহার পত্নী আনারউন্নিসার সাহচর্য্য ছাড়িয়া, বাহারবানু কোথায়— এবং কি করিতেছে, তাহার একবার সন্ধান লইতে হইবে।

 আগরা সহরের নিভৃত প্রান্তে, একখানি ছোট খাট, সুন্দর সাজানো, সুপরিচ্ছন্ন অট্টালিকায় বাহারবানুর নিবাস।

 এ বাড়ীতে আর কেহই থাকে না। কেবল বাহারবানু আর তাহার বান্দা বাঁদীগণ। আর এ সব বান্দা বাঁদীর সংখ্যা বেশী নয়। তিন চারি জন মাত্র!

 একটী নির্জ্জন কক্ষে বসিয়া, বাহার এক হস্তীদন্ত নির্ম্মিত ক্ষুদ্র বাক্স হইতে, কতকগুলি পত্র বাহির করিয়া গভীর মনোযোগের সহিত তাহা পড়িতেছিল। সে পত্রগুলি পড়িবার সময়,কথনও তাহার মুখে ঘৃণা পূর্ণ হাস্য প্রকটিত হইতে লাগিল, আবার কখন ও বা তাহার সেই সুন্দর মুখখানি ক্রোধে লাল হইয়া উঠিল। বলা বাহুল্য, সযত্নে পঠিত এই কাগজগুলি নবাব সুজা বেগের পুরাতন প্রেমপত্র।

 পত্রগুলি বেশ করিয়া সাজাইয়া, একটী রেশমী সুতার দ্বারা বাঁধিয়া তাঁহার সম্মুখে রাখিয়া দিয়া, আর একটী বাক্স নিকটে টানিয়া লইয়া সে তাহার ডালা খুলিল। এই দ্বিতীয় বাক্সের ভিতরে যাহা কিছু কাগজ পত্র ছিল—সবই বাহির করিয়া ওলটপালট করিয়া দেখিল। কিন্তু যে কাগজ কয়খানিতে তাহার খুব প্রয়োজন তাহা না পাওয়ায়, তাহার মুখখানা ক্রমশঃ চিস্তা মলিন হইয়া উঠিতেছিল।

 একবার, দুইবার তিনবার খুঁজিবার পর, সে একটী কারুকার্য্যময় লম্বা আকারের চাঁদীর আধারের মধ্যে, কয়েকখানি লোহিতবর্ণের কাগজ দেখিতে পাইল। সেগুলি খুলিয়া পড়িবামাত্রই, সে মহোল্লাসে চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল— “ইয়ে মেরে খোদা মেহেরবান্! ধন্য তোমাকে! এইবার তুমি যাও কোথায় নবাব সুজা বেগ! এই পত্রের সহায়তায় আমি এক ঢিলে দুই পাখী মারিব। যে আনারউন্নিসা গর্বভরে আমার অপমান করিয়াছে, তাহার নবাব-পত্নী হওয়ার দর্পচূর্ণ করিব। তোমাকে তাহার বুক হইতে ছিনাইয়া লইয়া আমার গোলামের গোলাম করিব। শয়তান্! বিশ্বাসঘাতক! শয়তানী নারীর শক্তি যে কত বেশী, তাহা তুমি এখনও বুঝিতে পার নাই।”

 এমন সময় এক বান্দা আসিয়া সেলাম করিয়া তাহার সন্মুখে দাঁড়াইল। বাহার বলিল— “খবর কি বান্দা?”

 “নবাব সুজাখাঁর বাড়ী হইতে এক পত্র আসিয়াছে” বলিয়া সেই বান্দা এক খানি পত্র বাহার বানুর হাতে দিল।

 নবাব সুজাখাঁর নিকট হইতে পত্র আসিয়াছে শুনিয়া, বাহারবানু মনে ভাবিল, যে এইবার সাধাসাধির পালা আরম্ভ হইয়াছে। সুতরাং খুব একটা কৌতূহলবশে, সে পত্রখানি এক নিঃশ্বাসে পড়িয়া ফেলিল। পত্রখানি পড়া শেষ হইলে, বাহার কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ়ভাবে সেখানি হাতে লইয়া কক্ষমধ্যে ইতঃস্তত পরিভ্রমণ করিতে লাগিল! তাহার এরূপ বিস্মিত হইবার একটু কারণ আছে।

 কথিত পত্রখানি, নবাব সুজাবেগের নিকট হইতে আসে নাই। আসিয়াছে—তাঁহার বেগম, আনারউন্নিসার নিকট হইতে। বাহারের বিস্ময়ের কারণ এই,যে আনার-উন্নিসা একদিন দর্পভরে তাহাকে বাড়ী হইতে তাড়াইয়া দিয়াছিল, আজ সে কি না তাহাকে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য সাদরে নিমন্ত্রণ করিতেছে।

 আনার-উন্নিসার সেই পত্রে লেখা ছিল,—“বহিন্! এ সংসারে এমন অনেক ঘটনা ঘটিয়া যায়, যাহার উপর মানুষের কোন হাতই থাকে না। সে দিন আমি না বুঝিতে পারিয়াই তোমার সহিত ওরূপ রূঢ় ব্যবহার করিয়াছিলাম। এজন্য কিছু মনে করিও না। আমায় মার্জ্জনা করিও। আজ সন্ধ্যার পর আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই দেখা করিবে। নবাব সাহেব এখানে নাই। জরুর সরকারী কাজের জন্য তিনি আজমীরে গিয়াছেন। সুতরাং তোমাকে দুটো মনের কথা বলিবার বিশেষ সুবিধাই ঘটিবে। এ পত্রের উত্তর দিবার কোন প্রয়োজন নাই। আমি ধরিয়া রাখিলাম, যে তোমার শুভাগমনই এ পত্রের উত্তর। আমায় নিরাশ করিও না। না আসিলে বুঝিব, তুমি এখনও আমার উপর অসন্তুষ্ট—আনার-উন্নিসা।”

 বাহার পত্রখানি আবার পড়িল। তাহার মুখখানা আবার হাস্যোজ্জ্বল হইয়া উঠিল। সে বুঝিল, আনার-উন্নিসা বড়ই দুর্ব্বল চিত্তা রমণী। এবারেও তাহার বাজী জিৎ হইয়াছে।

 পরক্ষণেই তাহার মনে একটা সন্দেহের ছায়া দেখা দিল। সে ভাবিল—“আনার-উন্নিসার এমন কি কথা—তাহার সঙ্গে থাকা সম্ভব, যাহার জন্য সে তাহাকে আজ এতটা বিনীত ভাবে ডাকিয়া পাঠাইয়াছে! যাহাই হউক না কেন, ব্যাপারটা যে কি, তাহা একবার আমায় দেখিতে হইবে।”

 বাহারবানু সন্ধ্যার প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। যথা সময়ে তাহার সেই ঈস্পিত সন্ধ্যা আসিল। সে ভৃত্যকে বলিয়া এক বলবান অশ্বযোজিত বিচিত্র শিগ্‌রামে সওয়ার হইয়া, নবাব সুজাখাঁর বাটীর উদ্দেশে চলিল।

 আনার জুমেলিকে ইতি পূর্ব্বেই উপদেশ দিয়া রাখিয়াছিল, বাহারবানু আসিলেই,সে সরাসর তাহাকে উপরের কক্ষে তাহার নিকটে লইয়া যাইবে।

 আনার সে দিন ভূবনমোহিনী মূর্ত্তি ধরিয়াছে। তাহার যে অঙ্গে যা ধরে, সেই সব বহুমূল্য অলঙ্কারে সে সজ্জিতা। ফিরোজা রঙ্গের এক সুন্দর সাঁচ্চা শাড়ী, তাহার উপর সেই রঙ্গেরই আঙ্গরাখা ও ওড়না। কণ্ঠদেশে বিলম্বিত নবাব সুজাখাঁর প্রদত্ত নূতন হীরার হার। এই হার ছড়াটীর দাম পঞ্চাশ হাজার টাকা। সেই হারের উজ্জ্বল হীরকগুলির উপর কক্ষ মধ্যস্থ অসংখ্য দীপের আলোকছটা পড়ায়, আনার যেন সর্ব্বোজ্জ্বলকান্তিময়ী অপ্সরার মত দেখাইতেছিল। বলা বাহুল্য, কোন বিশেষ উদ্দেশ্য চালিত হইয়াই, আনার-উন্নিসা এই ভাবে বেশ ভূষা করিয়াছিল।

 বাহারবানুকে কক্ষ মধ্যে উপস্থিত দেখিয়া, আনার-উন্নিসা তাহার হাত ধরিয়া অতি যত্নের সহিত এক সোফার উপর বসাইয়া বলিল,—“সে দিন আমাদের উভয়েরই বুঝিবার দোষে একটা বড়ই অপ্রীতিকর ব্যাপার ঘটিয়া গিয়াছিল। এজন্য আমি বড়ই দুঃখিত বহিন্!”

 বাহার— প্রথমতঃ বিস্মিত হইল, আনারের সমুজ্জ্বল বেশ-ভূষা দেখিয়া। তারপর সে দেখিল, সে দিনের সেই রুক্ষ্ম প্রকৃতি আনার-উন্নিসার পরিবর্ত্তে, সে এক শান্তমূর্ত্তি স্বর্ণপ্রতিমার সমক্ষে উপস্থিত হইয়াছে। সে স্বর্ণ-প্রতিমা স্ফুরিতাধরা, হাস্যময়ী, ও অতি মিষ্টভাষিণী।

 মনের ভাব গোপন করিবার শক্তি, বাহারবানুকে বিধাতা যথেষ্টই দিয়াছিলেন। সুতরাং, সে আদব-কায়দার সহিত তাহার সুন্দর হাতখানি তুলিয়া, আনারকে একটী ছোট খাট কুর্ণীস করিয়া সহাস্যমুখে বলিল, — “আমারও সে দিনের ঘটনাটার জন্য মনে বড়ই একটা অনুতাপ জন্মিয়াছে। এ অধিনীকে স্মরণ করিয়াছেন কেন বেগম?”

 আনারউন্নিসা বাহারের সম্মুখস্থ একখানি আসন অধিকার করিয়া বসিয়াছিল। বাহারের মুখভাব উত্তমরূপে লক্ষ্য করাই, বোধ হয় তাহার মনের গূঢ় উদ্যেশ্য।

 আনার উন্নিসা আর ভূমিকা না করিয়া বলিল,—“তোমাকে একটা কথা বলিবার জন্য আজ আমি ডাকিয়াছি। আশা করি, সরলভাবে— উদার হৃদয়ে, তুমি আমার কথাগুলি বিবেচনা করিবে।”

 বাহার বানু এ ভূমিকায় যেন একটু আশ্চর্য্যবোধ করিল। তবুও সে বলিল—“বলুন আপনার কি কথা? আমি তাহা শুনিতে খুবই প্রস্তুত।”

 আনার উন্নিসা বলিল,— “পত্নীর একটী দায়িত্বময় কর্ত্তব্য আছে। আমার সেই কর্ত্তব্য পালনের পথে তুমিই একমাত্র অন্তরায়। আমি চাই নবাবকে ষোল আনা দখল করিতে। কিন্তু তুমি আগরায় থাকিতে, আমার সে উদ্যেশ্য সিদ্ধি হইবার পক্ষে কোন সম্ভাবনা নাই।”

 বাহারবানু বলিল, — “আপনি আমাকে এ জন্য কি করিতে বলেন বেগম সাহেবা?”

 আনার উন্নিসা। তুমি আগরা ছাড়িয়া অন্য কোথাও চলিয়া যাও। তোমাকে এজন্য কোনরূপ আর্থিক ক্ষতি সহা করিতে হইবে না। চিরদিনের জন্য নয়, কিছু দিনের জন্য অন্ততঃ তুমি নবাব সুজাখাঁর চোখের সম্মুখ হইতে সরিয়া যাও। আজ আমি যে সব জহরতের গহনা পরিয়াছি, তাহার মূল্য এক লক্ষ টাকা। এই হীরকহার ও তৎসঙ্গে সবই আমি তোমায় এখনি খুলিয়া দিতেছি! এই লক্ষ টাকার বিনিময়ে, তুমি আমার এ অনুরোধটী ছয় মাসের জন্য রাখিতে পারিবে না?”

 আনার একটা আকুল আগ্রহবশে, বাহারবানুর হাত দুই খানি ধরিয়া ফেলিল। তাহার উচ্ছ্বাসময় হৃদয়ে তখন মহা ঝটিকা উঠিয়াছে। এক হীনা স্বৈরিণীর নিকট, সে দীনার মত এই ভিক্ষা চাহিতেছে। সে আশা যদি পূর্ণ না হয়, তাহ হইলে তার অপমানের বাকী রহিল কি? বাহার বানুর “হাঁ ও না” এই দুটী কথার উপর তাহার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ-সম্পদ, আনন্দ উল্লাস সবই নির্ভর করিতেছে!

 বাহারবানু, আনারউন্নিসার এ অদ্ভুত অনুরোধে খুবই বিস্মিতা হইয়া পড়িয়াছিল। সে আনারের মনোভাব পরীক্ষার জন্য বলিল—“যদি আমি এ প্রস্তাবে স্বীকৃতা না হই?”

 আনার উন্নিসা বিস্মিতভাবে বাহারের মুখের দিকে চাহিয়া বলিল—“তাহাহইলে বুঝিব, রমণীরূপে তুমি রাক্ষসী। মূর্ত্তিময়ী শয়তানীরূপে তুমি আমার সর্ব্বনাশ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”

 বাহার বানু মনে মনে কিয়ৎক্ষণ ধরিয়া কি ভাবিয়া বলিল, “আমি না হয় আগরা ত্যাগ করিলাম। কিন্তু নবাব সুজাখাঁ আমার স্মৃতি ত্যাগ করিতে সক্ষম হইবেন কি?”

 আনারউন্নিসা বলিল — “তোমার কর্ত্তব্য তুমি কর। তার পর আমি বুঝিব, নবাব সুজাখাঁ তোমাকে ভুলিতে পারেন কি না? আমার পত্নীত্বের শক্তিতে আমি যদি তাঁহার মনে তোমার স্মৃতির বিস্মৃতি না ঘটাইতে পারি, তাহা হইলে তুমি প্রতিশ্রুতি মুক্ত। আমি আমার অদৃষ্টকে ধিক্কার দিয়াই নিশ্চিন্ত হইব।”

 বাহারবানু মনে মনে কি ভাবিতে লাগিল। আনার উন্নিসা—এই মৌনকে সম্মতি চিহ্ন মনে করিয়া তাহার গাত্র হইতে অলঙ্কারগুলি খুলিতে লাগিল।

 বাহারবানু আনারের মনের ভাব বুঝিতে পারিয়া মনে মনে একটু হাসিয়া বলিল,—“কি তুমি সামান্য এক লক্ষ টাকার প্রলোভন আমায় দেখাইতেছ—আনার বেগম! বাহারবানুকে পুরুষে যখন এ পর্য্যন্ত চিনিতে পারে নাই—তা তুমি অতি দূরে! জাননা তুমি—যে নবাব সুজাখাঁর মৃত্যুবাণ আমার হাতে। তাঁহার মরণ বাঁচন আমার হাতে। তোমার ধৃষ্টতা একবার সহ্য করিয়াছি, এবারও করিলাম। সুজাখাঁ আমার এই মুষ্টি মধ্যে থাকিলে, কত ‘এক লক্ষ টাকা’ আমার ঘরের মেঝেয় গড়াগড়ি যাইবে।”

 এই সময় মধ্যে আনারের অলঙ্কার খোলার ব্যাপারটা শেষ হইয়া গিয়াছিল। তাহার সম্মুখস্থ একটী হস্তীদত্ত নির্ম্মিত কারুকার্য্যময় ক্ষুদ্র হাতবাক্সে, সেই অলঙ্কারগুলি রাখিয়া তাহার ডালা বন্ধ করিয়া সে বাহারবানুকে বলিল “বাহারবানু! আনন্দে আমি এগুলি তোমায় দিতেছি। কিন্তু প্রতিজ্ঞা কর—

 বাহারবানু। কি প্রতিজ্ঞা করিব?

 আনারউন্নিসা। আজ হইতে তিন দিনের মধ্যে তুমি আগরা ত্যাগ করিয়া দাক্ষিণাত্যে চলিয়া যাইবে।

 এই কথার সঙ্গে সঙ্গে আনারউন্নিসা একটী রেশমী থলিয়া বাহারের সম্মুখে রাখিয়া বলিল— “ইহাতে এক সহস্র মুদ্রার আসরফি আছে। ইহা তোমার পাথেয়।”

 বাহারবানু আনারের এ প্রস্তাবে মৃদু হাস্য করিল। সে হাসি ঘোর বিদ্রুপমাখা! সে হাসিতে যেন একটা কঠোর উপেক্ষার ভাব পরিস্ফুট।

 আনার বলিল—“হাসিলে কেন?”

 বাহার। তোমার প্রস্তাব অতি অসঙ্গত—অতি অসম্ভব!

 আনার। তাহা হইলে তুমি আগরা ছাড়িয়া দাক্ষিণাত্যে যাইতে সম্মত নও?

 বাহার। না—কোন মতেই না। দুনিয়ার ঐশ্বর্য্য যদি তুমি আমাকে প্রদান কর,তাহা হইলেও নয়! নবাব সুজা বেগ কোন মতেই আমার কবল মুক্ত হইতে পারেন না। আমি হিন্দুস্থানের অতি সুদূর প্রান্তে চলিয়া গেলেও, এমন একটী ভীষণ ব্যাপারে তিনি জড়িত, যে আমার সাহায্য না পাইলে তাঁহার উদ্ধারের কোন সম্ভাবনাই তাঁর নাই! তুমি সে দিন আমায় যথেষ্ট অপমান করিয়াছ। আর এ দর্পিত প্রস্তাব করিয়া আজও অপমান করিলে। ভাগ্যপরীক্ষার্থে আমি ইরান ছাড়িয়া হিন্দুস্থানে আসিয়াছি। তোমার উপকারের জন্য আমি আমার নিজের স্বার্থ ত্যাগ করিব কেন?”

 এই কথা বলিয়া, আনারের দিকে তীব্র ঘৃণাপূর্ণ দৃষ্টিক্ষেপ করিয়া বাহারবানু বলিল— “আমরা জাতিতে শিরিয়ান আরমানী। অপমানের প্রতিশোধ কি করিয়া লইতে হয়, তাহা আমরা জানি। তোমার কৃত এ অপমান এ উপেক্ষণ, ভাবিও না তুমি আমি বিনা প্রতিশোধে ভুলিয়া যাইব। তবে এই টুকু তোমায় বলিয়া রাখি—“আমার জীবন থাকিতে তুমি নবাব সুজাবেগকে কোন মতেই পাইবে না।”

 বাহারবানু তাহার কথাগুলি শেষ করিয়া, অতি দ্রুতপদে সেই কক্ষ ত্যাগ করিয়া পুরীর বাহিরে চলিয়া আসিল। আনার উন্নিসা, তাহার কথাগুলি শুনিয়া অন্তরে কাঁপিয়া উঠিল। আর কোন কিছু বলিবার অবসর পাইল না। দূর্ভাগ্য ক্রমে জয় পরাজয়ের কঠোর সংগ্রামে, বার বার তিনরার তাহার বাজি হার হইল।