ধম্মপদ (সতীশচন্দ্র মিত্র)/পাপ বর্গ
নবম সর্গ―পাপবর্গ।
পুণ্যলাভ তরে শীঘ্র হও ধাবমান;
পাপ হ’তে বিনিবৃত্ত কর নিজ মন;
পুণ্যকাজ করে যেই আলস্য সহিত
তাহার মানস রহে পাপে নিমজ্জিত॥ ১॥ ১১৬॥
যে জন কলুষক্রিয়া করে কদাচন
সে যেন তা’ পুনঃ পুনঃ না করে কখন;
তাহাতে আসক্তি যেন প্রকাশ না করে,
দুষ্কৃতি সঞ্চিত হ’লে দুঃখ বৃদ্ধি করে॥ ২॥
পুণ্যকাজে মতি যা’র প্রধাবিত হয়,
সেই কার্য্য পুনঃ পুনঃ করিবে নিশ্চয়;
তাহাতে আসক্তি যেন জন্মায় তাহার,
পুণ্যের সঞ্চয় ভবে অতি সুখকর॥ ৩॥
পরিপক্ব নাহি হয় পাপ যতক্ষণ,
ততক্ষণ করে পাপী সুখ সন্দর্শন;
পূর্ণপাপ পরিপাক প্রাপ্ত যবে হয়
অশুভ দর্শন করে পাপী সে সময়॥ ৪॥
পরিণত নাহি হয় পুণ্য যতক্ষণ
সাধুও করেন সেবে অশুভ দর্শন;
কিন্তু যদি পুণ্যকর্ম্ম পরিণত হয়,
নেত্রপথে হয় তাঁর মঙ্গল উদয়॥ ৫॥ ১২০॥
পাপ আসিবে না ভাবি’ অবজ্ঞা ক’রোনা,
দুরন্ত পাপের পথ কেহই জানে না;
বিন্দু বিন্দু বারিপাতে কুম্ভ পূর্ণ হয়
অল্প অল্প পাপাগমে পাপের সঞ্চয়॥ ৬॥
পুণ্য হইবে না বলি’ করিয়া নির্ভর
অবজ্ঞা ক’রোনা কেহ পুণ্যের উপর;
বিন্দু বিন্দু বারিপাতে কুম্ভ পূর্ণ হয়—
অল্প অল্প পুণ্যলাভে পুণ্যের সঞ্চয়॥ ৭॥
সঙ্গে ধনরাশি কিন্তু সঙ্গী অল্প হ’লে
বণিক ভয়ের পথ ফেলে যায় চ’লে;
বিষ যথা ত্যজে নর প্রাণের আশায়
পাপ তথা পরিত্যাগ করিবে নিশ্চয়॥ ৮॥
হস্তে কোন ক্ষত কা’রো না থাকে যখন,
নিঃসন্দেহে পারে বিষ করিতে গ্রহণ;
বিষে কি করিবে দেহ অক্ষত যাহার
যে না করে কোন কাজ, পাপ নাহি তা’র॥ ৯॥
নির্ম্মল বায়ুর যথা প্রতিকূল দিকে
ধূলিক্ষেপ করিলে তা’ উড়ে পড়ে মুখে,
নির্ম্মল নির্দ্দোষ শুদ্ধ হয় যেই নর
তা’র নিন্দা যদি কেহ করয়ে প্রচার,
সে নিন্দা ফিরিয়া পড়ে নিন্দুকের গায়
সজ্জনের নিন্দাবাদে কিছুই না হয়॥ ১০॥
কেহ কেহ করে পুনঃ জনম গ্রহণ,
পাপাচারী করে পরে নরকে গমন;[১]
পুণ্যাত্মার তরে মুক্ত স্বর্গের সোপান,
বিষয় বাসনাহীন লভেন নির্ব্বাণ॥ ১১॥
অন্তরীক্ষে, সমুদ্রে বা পর্ব্বত-বিবরে
পাপমুক্ত হ’তে কেহ কোথাও না পারে॥ ১২॥
অন্তরীক্ষে, সমুদ্রে বা পর্ব্বত গুহায়
হেন স্থান নাহি যথা মৃত্যু নাহি যায়॥ ১৩॥
- ↑ বুদ্ধঘোষের উপাখ্যানে নরক ও তত্রত্য যন্ত্রণার লোমহর্ষণ বর্ণনা আছে। See Buddhaghosa's Parables translated by Captain Rogers, p. 132.