ধম্মপদ (সতীশচন্দ্র মিত্র)/সহস্র বর্গ

অষ্টম সর্গ—সহস্র বর্গ।

নিরর্থ সহস্র বাক্য নহে কার্য্যকর,
অর্থযুক্ত একবাক্য হয় মহত্তর;
নিরর্থক বাক্যে যায় বিফলে সময়,
শুনিলে সদর্থ বাণী চিত্ত শান্ত হয়॥ ১॥ ১০০॥
একমাত্র গাথাপদ শান্তির আকর,
সহস্র নিরর্থ গাথা হ’তে শ্রেয়ঙ্কর॥ ২॥
অর্থশূন্য শত গাথা বলে যেই জন,
সিদ্ধ তা’র নাহি হয় কোন প্রযোজন;
একমাত্র ধর্ম্মপদ করিলে শ্রবণ,
মানসে পরম শান্তি লভে সেইজন॥ ৩॥
একজন জয় করে প্রচণ্ড আহবে
হয়তঃ সহস্রগুণ সহস্র মানবে,[]
অন্যজন আত্মজয় করে সংসাধন,—
আত্মজয়ী এ দু’য়ের মধ্যেঃ সুপ্রধান॥ ৪॥

পর-জয় হ’তে শ্রেষ্ঠ আত্মজয় সার;
আত্মজয়ী যে জনের সংযত আচার,
দেবতা গন্ধর্ব্ব কিম্বা প্রজাপতি, মার,
নির্জিত করিতে তা’রে সাধ্য আছে কা’র?(৫-৬)
সহস্র পদার্থ দ্বারা শতেক বৎসর
মাসে মাসে যজ্ঞ যদি করে কোন নর,
আবার সেজন যদি মূহূর্ত্তের তরে
স্থিরবুদ্ধি[] ধর্ম্মরত জনে পূজা করে,—
শতবর্ষ ব্যাপী যজ্ঞ হইতে তখন,
শ্রেষ্ঠ বলি’ জানিবেক সাধুর পূুজন॥ ৭॥
শতেক বৎসর যদি বনে কোন জন
অগ্নিদেব পরিচর্য্যা করে অনুক্ষণ,

আর যদি সেই ব্যক্তি মূহর্ত্তের তরে
আত্মজয়ী ধর্ম্মরত জনে পূজা করে,
শতবর্ষব্যাপী হোম হইতে তখন
শ্রেষ্ঠ বলি জানিবেক সাধুর পূজন॥৮॥
সংসারে বৎসর ভরি' পুণ্যাকাঙ্ক্ষী জন
যাগ হোম যাহা কিছু করয়ে সাধন,
চতুর্থাংশ নহে তাহা সাধুর সেবার
সাধুসেবা মানবের পরমার্থ সার॥৯॥
বৃদ্ধ জনে নিত্য সেবা করিলে বিহিত
আয়ুঃ, বর্ণ, সুখ, বল হয় সম্বর্দ্ধিত॥১০॥[]
দুশ্চরিত্র উচ্ছৃঙ্খল যদি কোন নর,
জীবন ধারণ করে শতেক বৎসর,

তদপেক্ষা শ্রেয়ঃ হয় সাধুর জীবন—
একদিন মাত্র যদি বাঁচে সেই জন॥ ১১॥ ১১০॥
প্রজ্ঞাহীন অসংযত হয় যেই নর,
আয়ুঃ যদি হয় তা'র শতেক বৎসর,
তদপেক্ষা দিনেকের শ্রেষ্ঠ সে জীবন—
প্রজ্ঞাবান ধ্যানরত হয় যেই জন॥ ১২॥
অলস বা হীনবীর্য্য হয় যেই নর
সে যদি জীবিত থাকে শতেক বৎসর,
তদপেক্ষা শ্রেয়ঃ হয় তাহার জীবন—
বাঁচে যে দিনেক মাত্র দৃঢ়বীর্য্য জন॥ ১৩॥
না চিন্তিয়া জন্ম মৃত্যু মূঢ় যেই নর
সংসারে জীবন ধরে শতেক বৎসর,
তদপেক্ষা দিনেকের শ্রেয়ঃ সে জীবন—
সংসারে আদ্যন্তদর্শী হয় যেই জন॥ ১৪॥
না দেখি নির্ব্বাণপদ অবোধ যে নর
পরমায়ু ভোগ করে শতেক বৎসর,

তদপেক্ষা দিনেকের শ্রেয়ঃ সে জীবন,—
যে জন নির্ব্বাণপদ করেন দর্শন॥১৫॥
না ধরিয়া সার ধর্ম্ম অবোধ যে নর
বিফলে বাঁচিয়া রয় শতেক বৎসর,
তদপেক্ষা দিনেকের শ্রেষ্ঠ সে জীবন—
সুধর্ম্ম মানিয়া চলে ভবে যেই জন॥১৬॥


  1. হাজার হাজার লোক।
  2. মূলে “ভাবিতাত্মা” কথা আছে উহার অর্থ—যিনি আত্মজ্ঞানতৎপর বা স্থিরপ্রজ্ঞ।
  3. মনুসংহিতায়ও অবিকল এই শ্লোকটি আছেঃ―

    অভিবাদনশীলস্য নিত্যং বৃদ্ধোপসেবিনঃ
    চত্বারি সংপ্রবর্দ্ধন্তে আয়ুর্ব্বিদ্যাযশোবলং॥


    মনুসংহিতা, ২য়, ১২১।