জীবনোৎস।

 “Whosoever drinketh of the water that I shall give him shall never thirst; but the water that I shall give him shall be in him a well of water springing up unto everlasting life. John, iv. 14.


আছে অতি দূরে,
জীবন-উনুই এক, উজল নগরে।
নিরমল জলে তা’র,
রজত কিরণ ধার,
বিতরে আলোক যেন শত রবিকরে।
স্বর্গীয় সে উজলতা থাকে চিরতরে

প্রবাহ তাহার,
যীশুর চরণ ধু’য়ে যায় অনিবার।
ত্বরিতে যাইছে চলে,
শুধু সে চরণ-তলে,
ক্ষণেক চঞ্চল গতি থামিছে তাহার।
একান্ত বাসনা যেন সেথা থাকিবার॥
তটিনীর তীরে,
প্রহরী দূতেরা সবে শ্বেত বাস পরে॥
ভ্রমিতেছে দলে দলে,
উজল তারকালে,
লিখিছে জীবনময় জলন্ত আখরে।
“এস যা’রা পরিশ্রান্ত সংসার-সমরে॥”
বারেক যে জন,
দূর হ’তে এ উনুই করি’ নিরীক্ষণ।
তাপিত হৃদয় ল’য়ে,
যীশুর চরণ-ছায়ে,
কহে আসি “শুন, পিতঃ, পাতকিজীবন,
“নিরাশ্রয় অনুতাপ পাপীর রোদন॥

“শ্রান্ত হীনবল,
“মাগিছে চরণে তব জীবনের জল।
“যা’তে প্রভো চিরতরে,
“যায় এ পিপাসা দূরে,
“পান করি’ জীবনের বারি নিরমল।
“তাপিত অবশ প্রাণ হইবে শীতল॥
দূর হ’তে,
“মধুর কল্লোলধ্বনি পেয়েছি শুনিতে।
“জীবন-তটিনী পরে,
“নাচিয়া পুলক ভরে,
“কহিছে ঊরমি রাশি আপন মনেতে।
‘এস এ শীতল ছায়ে বিরাম লভিতে॥
“প্রভো হে আমার,
“তুমিই সকলি মম নাহি গতি আর।
“কহিতেছি কায়মনে,
রাখ মোরে ও চরণে,”
এসর যে মন হ’তে কহে একবার।
ডাকেন তখনি তা’রে করুণা-আধার॥


বারেক জীবন-জল চেয়েছ যখন,
 ফিরিবে না তৃষিত অন্তরে।
এসেছ আকুল প্রাণে বিরামের তরে,
 সে বিরাম মিলিবে অচিরে॥

“যে কেহ বাসনা করে করিবারে পান,
 “আমি দিব যে জল তাহারে।
“দূরে যাবে অধীরতা, হইবে না আর,
 “পিপাসিত চিরদিন-তরে॥

“সে জল তাপিত প্রাণ করিবে শীতল,
 “দিন দিন শান্তি সুগভীর।
“মরুময় শুষ্ক প্রাণ করিবে শীতল,
 চিরস্থায়ী করুণার নীর॥”

উথলিবে শান্তিসুখ দুখের জগতে,
 স্নেহ-হস্ত হেরিবে তখন।
হেরিবে বিপদ হ’তে পিতা তোমাদের,
 করিছেন যতনে রক্ষণ॥


“জাননা কি চির-স্নেহে তোমাদের তরে,
 “পরিপূর্ণ আছে এ হৃদয়?
“আমাতে বিশ্বাসী যা’রা তাহাদের তরে,
 অবারিত পিতার আলয়॥”

দিতেছি আমার শান্তি, শান্তি অনুপম,
 তোমাদের, মম শিশুগণ।
জগত যেমন দেয় নহে তার সম,
 অলীক সে নিশার স্বপন॥

দিওনা হইতে আর তোমাদের মন,
 অধীর ও ব্যাকুলতাময়।
ত্যজিব না তোমাদের সান্ত্বনা-বিহীন,
 সাথে আছি সকল সময়॥

জীবন-উৎসের তীরে কর আসি পান,
 জীবনের বারি নিরমল।
পিপাসা-পীড়িত প্রাণ আবার উঠিরে,
 পুনরায় পা’বে নববল॥


যখন সময় তব আসিবে, সহসা
 খুলে যাবে সম্মুখে তোমার॥
খুলে যা’বে চিরস্থায়ি-জীবনের পথ,
 স্বরগের উজল দুয়ার॥

দলে দলে দূতগণ আসিবে নামিয়া,
 উজলিবে রবির কিরণ।
গাহিতে গাহিতে ল’য়ে যাইবে তোমারে,
 “শেষ হ’ল দুখের জীবন॥”