নাগপাশ (হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ)/তৃতীয় খণ্ড/প্রথম পরিচ্ছেদ
তৃতীয় খণ্ড।
আরও দুঃখ ।
প্রথম পরিচ্ছেদ।
বিদেশে।
মদ্রদেশের বনরাজিনীলা নীলাম্ববেলায় ওয়ালটেয়ার সহর— প্রথম দর্শনে চিত্রে লিখিতবৎ প্রতীয়মান হয়। সমুদ্র ইহার তিন দিক বেষ্টন করিয়া গিয়াছে; প্রান্তরে কোথাও বিক্ষিপ্ত প্রস্তরখণ্ড, কোথাও বা শিলাস্তূপ; মধ্যে মানবের আবাস-গৃহ প্রান্তর-দৃশ্যে সজীবতার সঞ্চার করিতেছে। পথিপার্শ্বে ও গৃহ প্রাঙ্গনসীমায় কেতকীর বৃতি ও পবনসঞ্চারমুখর, আনতপত্রমুকুট নারিকেল তরু —সরল,— সুন্দর,— শোভাময়। সর্ব্ব ঋতু শীতাতপের আতিশয্যবর্জিত,—শীত বা গ্রীষ্ম, কিছুই প্রবল হইতে পারে না; আবার দিবায় ও রাত্রিতে তাপবৈষম্য অতি সামান্য। পথে যান,—দুইখানি চক্রের উপর একটি অনতিদীর্ঘ বাক্স, দ্বার পশ্চাতে,—মধ্যে লম্বে দুই খানি অথবা প্রস্থে দুই বা তিনখানি বেঞ্চ,—বাহন গো বা অশ্ব। পথের জনতায় কিছু নূতনত্ব আছে। পুরুষের মস্তকের অর্দ্ধভাগ মুণ্ডিত; পরিধেয় বস্ত্রে বর্ণের অভাব নাই,—বসন ও উত্তরীয় প্রশস্ত পাড়ওয়ালা, ভৃত্যাদির পৃষ্ঠে তোয়ালে। রমণীদিগের বসন লোহিত, পীতাভনীল প্রভৃতি বিবিধ উজ্জ্বল বর্ণে রঞ্জিত; শাটী ঘুরিরা বহু ভাঁজে আসিয়া পড়িয়াছে; অনেকের বসন এমন ভাবে দেহলতা বেষ্টন করিয়া ঘুরিয়া আসিয়াছে যে, পৃষ্ঠ ও বাহু অনাবৃত, কিন্তু সন্মুখভাগ সম্পূর্ণ আবৃত। পথে উলঙ্গ বালকবালিকাগণ খেলা করিতেছে; কেহ সম্পূর্ণ উলঙ্গ, কাহারও বা কটিদেশে রৌপ্যে বা পিত্তলে গঠিত অলঙ্কার, প্রকোষ্ঠে বলয়, কর্ণে কর্ণাভরণ, কাহারও বা কটিসূত্র হইতে একখানি চক্রাকার রৌপ্যপত্র সম্মুখে বিলম্বিত। পথের পার্শ্বে দোকানে বা তালপত্রনির্ম্মিত বৃহৎ ছত্রচ্ছায়ায় পশারিণীরা কেহ বা পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করিতেছে, কেহ বা ক্রেতার সহিত দর কসাকসি করিতেছে, কেহ বা কোনও আগন্তুকের সহিত হাস্যপরিহাসবহুল আলাপে মন দিয়াছে, কেহ বা অর্দ্ধশয়ান অবস্থায় আলস্যসঙ্কুচিতনেত্রে চুরুট টানিতেছে। শ্রমজীবীদিগের পরিধানে কৌপীনমাত্র,— সুগঠিত দেহ প্রায় নগ্ন।
সম্মুখে সমুদ্র। অনন্ত জলবিস্তার—যত দূর চাহ, কেবল ঊর্ম্মিলীলা; ঊর্ম্মির পর ঊর্ম্মি; —চক্রবাল পর্যন্ত অসীমজলরাশি প্রসারিত। ঊর্ম্মিমালা যেন আবর্ত্তিত হইয়া তীরের দিকে অগ্রসর হইতেছে; আবর্ত্তনে, পতনে ও প্রত্যাবর্ত্তনশীল জলরাশির প্রতিঘাতে ফেনময় হইয়া উঠিতেছে; শেষে তীরে আসিয়া শুভ্র ফেনহাস্যে বেলাভূমিতে ছড়াইয়া পড়িতেছে; তাহার পর তীরে শুক্তি, প্রস্তরখণ্ডাদি নিক্ষেপ করিয়া সাগরগর্ভে ফিরিয়া যাইতেছে। যেখানে সাগরসলিলে সলিলসঙ্গজাত-শৈবাল-সমাচ্ছন্ন শিলারাশি জলের উপর মস্তক উত্তোলিত করিয়া দণ্ডায়মান, সেখানে শিলার অঙ্গে প্রতিহত ঊর্ম্মিমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া ঊর্দ্ধে ফেনময় জলকণা উৎক্ষিপ্ত করিতেছে। সিন্ধুমধ্যে সাগরের উদার বক্ষে ঊর্ম্মির শ্বেতফেনচূড়া জলোপরি ভাসমান শুভ্রকুসুমদামের মত প্রতীয়মান হইতেছে। সাগরের কি বিচিত্র রূপ! ক্ষণে ক্ষণে নূতন। পবনের চাঞ্চল্যের সঙ্গে সঙ্গে সে রূপ পরিবর্ত্তিত হয়; মেঘালোকক্রীড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে রূপ পরিবর্ত্তিত হয়। কখনও অম্লানোজ্জ্বল নীলাম্বরতলে সমুদ্রের নীলিমা,—নীল জল রবিকরে জ্বলিতেছে, শেষে চক্রবালরেখায় নীল জল আর নীল আকাশ মিশিয়াছে, কখনও অর্দ্ধনীল— অর্দ্ধহরিত। কখনও কূল হইতে বহুদূর গৈরিক—তৎপরে নীল—হরিত। কি বিচিত্র সৌন্দর্য্য! গৃহে বসিয়া সমুদ্রের গভীর গর্জন শুনিতে শুনিতে সে শোভা দেখ, পদে পদে পলায়নপর-কুলীরকশাবক-সঙ্কুল,—কেতকীর বৃতিবেষ্টিত, নারিকেলবীথিমধ্যবর্ত্তী বেলাপথে গমন করিতে করিতে সে শোভা দেখ;—বিশাখাপত্তন ও ওয়ালটেয়ারের মধ্যপথে অবস্থিত বিশ্রামস্থানে বসিয়া সে শোভা দেখ;—দেখিয়া আশ মিটিবে না।
সম্মুখে সমুদ্র—বীচিবিক্ষোভচঞ্চল—কামরূপী। পশ্চাতে পর্ব্বত —হরিতবৃক্ষলতাদিমণ্ডিত। মধ্যে মধ্যে শিলাস্তূপ। পথিপার্শ্বে অযত্নবর্দ্ধনশীল লতাগুল্মে কোথাও বা নীল অপরাজিতা, কোথাও বা লোহিতাভ হরিদ্রাবর্ণের বনফুল গুচ্ছে গুচ্ছে ফুটিয়া আছে। প্রান্তরে হরিত তৃণে লোহিতাভ, হরিদ্রাভ ও নীলবর্ণ কুসুম। সমুদ্রতীরে স্থানে স্থানে বালুকার স্তূপ, তাহার উপর কণ্টকতৃণ সেই বালুকারাশির হৃদয়হীন হৃদয় হইতে রস শোষণ করিয়া বর্দ্ধিত হইতেছে।
এই নূতন স্থানে আসিয়া পথের ক্লেশ দূর হইবার পর প্রথম প্রথম কয় দিন কমলের স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষিত হইল। সকলেরই হৃদয়ে ক্ষীণ আশাদীপ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল।
গৃহ প্রাঙ্গনসীমায় সমুদ্র। কমল সমুদ্রতীর পর্য্যন্ত যাইত; এমন কি, সতীশকে ও প্রভাতকে সমুদ্রে স্নান করিতে দেখিয়া এক দিন সমুদ্রে স্নান করিবার ইচ্ছাও প্রকাশ করিল। শুনিয়া পিসীমা বলিলেন, “ঠাকুর করুন, তুই শীঘ্র সারিয়া ওঠ,—সমুদ্রে স্নান করিবার মত সবল হ’।” শিবচন্দ্র বলিলেন, “তুমি সারিয়া উঠ। আমরা মাতাপুত্ত্রে এক দিন স্নান করিব। আমি এখনও সাহস করিয়া সাগরে স্নান করি নাই।”
সে দেশের লোকের কথা কমল কিছুই বুঝিতে পারিত না। ভাঙ্গা হিন্দীর সাহায্যে — ভৃত্যের সহায়তায় শিবচন্দ্র কোনও রূপে সে কথা বুঝিতে পারিতেন। ভিখারিণী ভিক্ষা করিতে আসিলে, কড়ি-বিক্রেতা কড়ি বিক্রয় করিতে আসিলে, ধীবর সামুদ্রিক মৎস্য লইয়া আসিলে, শিবচন্দ্রকে তাহাদের কথা কমলকে বুঝাইয়া দিতে হইত। শিবচন্দ্র যে সকল সময় অভ্রান্ত হইতেন, এমন বোধ হয় না। কিন্তু এই দ্বিভাষীর কার্য্যে শিবচন্দ্র ও কমল — উভয়েরই অসীম আনন্দ। এক এক দিন কমল জ্যেষ্ঠতাতের সহিত সমুদ্রতীরে অল্প দূর বেড়াইয়া আসিত। কিন্তু অতি সামান্য দূর যাইলেই সে শ্রান্ত হইয়া পড়িত। শিবচন্দ্র তাহাকে ফিরাইয়া আনিতেন।
সকলেরই আশা হইল, যত্নে কমলের জীবন-দীপ সহসা নির্ব্বাপিত হইবে না; এমন কি, সে সারিলেও সারিতে পারে। দারুণ আশঙ্কায় সতীশের হৃদয় বাত্যাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মত অশান্ত হইয়া উঠিয়াছিল — এখন সে হৃদয় বাত্যাবসানে সাগরের মত অপেক্ষাকৃত শান্ত হইল। নিরাশার মেঘঘোরে ক্ষীণ রেখায় আশার অরুণকিরণ— বিকাশ সূচিত হইল। হৃদয়ের অতি দারুণ ভার কিছু লঘু হইল। শিবচন্দ্রের ও নবীনচন্দ্রের মুখে আশঙ্কার অতি নিবিড় ছায়া সরিতে লাগিল।
প্রভাত পূর্ব্বে এক পক্ষকালের ছুটী লইয়াছিল; শেষে আরও এক পক্ষের জন্য ছুটীর দরখাস্ত পেশ করিয়া সে ওয়ালটেয়ারে আসিয়াছিল। নূতন দেশ দেখিয়া তাহার বহু দিন নগরদৃশ্যে অত্যন্ত ক্লান্ত নয়ন তৃপ্ত হইল। সে সমুদ্রগর্ভ হইতে সূর্য্যোদয় দেখিবার জন্য অতি প্রত্যূষে উঠিত; ‘অপেরাগ্লাস’ লইয়া বালুকাস্তূপের উপর দাঁড়াইয়া অসাধারণ ধৈর্য্যসহকারে সূর্য্য-বিকাশের অপেক্ষা করিত। যে দিন পূর্ব্ব-দিক্চক্রবালে মেঘ থাকিত— জলের মধ্য হইতে গোলক প্রকাশ দেখা যাইত না, সে দিন কি হতাশা! আর যে দিন তাহা দেখা যাইত, সে দিন কি আনন্দ! কিন্তু আনন্দের বিপদ, সে দৃশ্য বর্ণনাতীত! তাই শোভাকে পত্র লিখিবার সময় সে কিছুতেই ঠিক বুঝাইতে পারিত না। শোভা তাহা বুঝিবার জন্য বিশেষ ব্যস্ত হউক আর না-ই হউক—আপনার আনন্দের অংশ তাহাকে দিবার জন্য প্রভাত সর্ব্বদাই ব্যস্ত থাকিত।
প্রভাত এই নূতন স্থানে কত নূতন জিনিস দেখিত, আর দীর্ঘ পত্রে শোভাকে সে সকলের বিষয় লিখিত। যুবক যখন প্রেমবিহ্বলতায় পত্নীকে আপনার আনন্দের অংশ দিতে ব্যগ্র হয়, তখন কি সে কল্পনা করিতে পারে, তাহা হয় ত পত্নীর পক্ষে প্রীতিপ্রদ নাও হইতে পারে? প্রভাত কি ভাবিতে পারিত, এই সব অতি দীর্ঘ পত্র—সহস্র খুঁটিনাটির বিস্তৃত বিবরণ হয় ত শোভার ভাল লাগিবে না?
সমুদ্রসৈকতে কত শুক্তি পড়িয়া থাকে—ক্ষুদ্র, সুন্দর; কত সুরঞ্জিত কড়ি বিক্রীত হয়; গজদন্তের কত দ্রব্য বাজারে পাওয়া যায়; বিচিত্র পাড়ওয়ালা কাপড় প্রস্তুত হয়;—প্রভাত পত্নীর জন্য এ সকল সংগ্রহ করিত। কিন্তু সে জন্য তাহার ব্যস্ত হইবার প্রয়োজন ছিল না; বধূর জন্য সেই সকল দ্রব্য কিনিতে, শচীর জন্য খেলানা সংগ্রহ করিতে পিসীমা’র আলস্য ছিল না।
প্রথম প্রথম কমলের স্বাস্থ্যের কিছু উন্নতি লক্ষিত হইল। সকলেরই হৃদয়ে আশার সঞ্চার হইল। এই সময় প্রভাত দুইখানি পত্র পাইল। কৃষ্ণনাথ লিখিয়াছেন, আফিসে কাযের বড় ভিড়; অতিরিক্ত লোক লওয়া হইতেছে। ‘সাহেব’ এ সময় আর অধিক ছুটী দিবে না। বরং এখন আসিলে উন্নতি হইতে পারে— এক জন উপরিস্থিত কর্ম্মচারী বার্দ্ধক্যহেতু কর্ম্মত্যাগ করিয়া যাইতেছেন। শোভা পত্রের শেষে লিখিয়াছে, “তুমি কবে আসিবে?”
কৃষ্ণনাথের পত্র পাইয়া প্রভাত একটু চিন্তিত হইল; কর্ম্মে উন্নতির সম্ভাবনার আলোচনা করিল। কিন্তু সহজেই কর্ত্তব্য স্থির হইয়া গেল। শোভার পত্রের সামান্য জিজ্ঞাসায় প্রভাত আকুলতা অপেক্ষাও দারুণ ব্যগ্রতা উপলব্ধি করিল। সে কল্পনা করিল, শোভা নিশ্চয়ই তাহার প্রত্যাবর্ত্তনের জন্য ব্যাকুল হইয়াছে। সে আপনার হৃদয় দিয়া পত্নীর হৃদয় বিচার করিল। ‘যাই কি, না যাই’—ক্রমে ‘যাইব’ এই সঙ্কল্পে পরিণত হইল। তখন প্রভাত আপনাকে আপনি বুঝাইতে লাগিল,—কমলের শরীর সারিয়া উঠিতেছে। এখন আমি যাইলে ক্ষতি নাই। বরং দিন কতক পরে আসিয়া সকলকে লইয়া যাইব। ইহার মধ্যে শোভাকে বুঝাইব; যদি সম্মত করিতে পারি, তাহাকেও বাড়ী লইয়া যাইব, এবং কিছু দিন বাড়ী থাকিব। আর তখন যদি বুঝি, শোভার পল্লীগ্রাম ভাল লাগে, তবে না হয় কলিকাতার কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া দেশেই স্থায়ী হইব। পিতার ও পিতৃব্যের তাহাই ইচ্ছা। কর্ম্ম করাও একান্ত আবশ্যক—এমন নহে। বাড়ীতে থাকিলেও, বোধ হয়, ভাল হয়। তবে সকলের মূলে—শোভার মত।
ক্রমে সঙ্কল্প স্থির হইয়া আসিল,— অনিশ্চিত নিশ্চিত হইল। তখন আর এক কথা—কেমন করিয়া যাইবার কথা বলিব? শেষে, অনেক চিন্তার পর সে সতীশকে ডাকিয়া কৃষ্ণনাথের পত্র দেখাইল, বলিল, “সতীশ, তুমি সুযোগমত বাবাকে বলিয়া আমার যাইবার অনুমতি করাইয়া দাও।”
সতীশ বলিল, “তোমার চাকরী করা যখন সকলেরই অনভিপ্রেত, তখন না করিলেই ভাল হয় না?”
প্রভাত বলিল, “দেখ, সংসারও ক্রমে বাড়িবে, ব্যয়ও বাড়িবে। বসিয়া না খাইয়া যদি কিছু উপার্জ্জন করিতে পারি, সে কি ভাল নহে? বাবা ও কাকা বাড়ীর কায দেখিতেছেন। আমার পক্ষে এখন বাড়ী থাকা অত্যাবশ্যক নহে। যে কয় দিন সম্ভব হয়, কিছু উপার্জ্জন করি।”
“কিন্তু বাড়ীর কাযও ত শিখিতে হইবে। সহসা যে এক দিন অন্ধকার দেখিবে! বিশেষ নূতন জীবনে অভ্যস্ত হইয়া পড়িলে আর ফিরিতে পারিবে কি না—সন্দেহ।”
“সে ভয় নাই।”
“তোমার বাড়ীর কায তুমি দেখিলে তোমার চাকরীর উপার্জ্জন পোষাইয়া যায়।”
প্রভাত আর কিছু বলিল না।
প্রভাতের একান্ত ইচ্ছা বুঝিয়া সতীশ শিবচন্দ্রের নিকট তাহার যাইবার প্রস্তাব করিতে স্বীকৃত হইল।
সতীশ শিবচন্দ্রকে কৃষ্ণনাথের পত্রের কথা জানাইয়া বলিল, “প্রভাত বলিতেছে, এখন আর এখানে তাহার থাকা বিশেষ আবশ্যক নহে। সে এখন যাইয়া আবার আসিবে। আপনার অনুমতি চাহে।”
শিবচন্দ্র পুত্ত্রের ব্যবহারে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াছিলেন। সে কমলের এই পীড়ার সময়ও তাঁহাদের কাছে থাকিবে না শুনিয়া তাঁহার বিরক্তি অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠিল। তিনি যেন ধৈর্য্যচ্যুত হইলেন; সতীশকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কথা তুমি জিজ্ঞাসা করিতেছ, না— তিনি জিজ্ঞাসা করিয়াছেন?”
সতীশ বুঝিল, দারুণ বিরক্তির কথা; বলিল, “প্রভাত জিজ্ঞাসা করিয়াছে।”
শিবচন্দ্র বলিলেন, “আমার অনুমতির আবশ্যক? তিনি ত সে জন্য ব্যস্ত নহেন। আমি তাঁহাকে আসিতেও বলি নাই, যাইতেও বলিব না। তাঁহার যাহা ইচ্ছা করিতে পারেন।”
সতীশ প্রভাতকে জানাইল, শিবচন্দ্র বলিয়াছেন, তিনি তাহাকে আসিতেও বলেন নাই, যাইতেও বলিবেন না। তাহার যাহা ইচ্ছা করিতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে সতীশ তাহাকে বুঝাইল, তাহার পক্ষে কর্ম্মত্যাগই কর্ত্তব্য।
পিতার কথা শুনিয়া প্রভাতের মনে অভিমান জাগিল। সে আপনার অপরাধ বুঝিতে পারিল না। সঙ্গে সঙ্গে চাকরীতে উন্নতি-সম্ভাবনার বিষয় মনে হইল। সে কিছু স্থির করিতে পারিল না। শোভার মত কি? সে কলিকাতায় যাওয়াই স্থির করিল।
প্রভাত যাইবে শুনিয়া কমল বলিল, “না, দাদা, তুমি যাইতে পাইবে না।”
প্রভাত তাহাকে বুঝাইল, “আমি আসিয়া তোদের লইয়া যাইব। তুই শীঘ্র সারিয়া ওঠ। তুই সারিয়া আমাকে আসিতে লিখিলেই আমি আসিব।”