নাবিক-বধূ/অষ্টম পরিচ্ছেদ
অষ্টম পরিচ্ছেদ
মিঃ ডড্লে মিস্ এরস্কাইনের প্রাণরক্ষার জন্য আত্মবিসর্জ্জনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হইয়াছিলেন। স্বার্থপরতার বশবর্ত্তী হইয়া তিনি ইহা করেন নাই, স্বার্থচিন্তা কাহাকেও মৃত্যুর পথে লইয়া যাইতে পারে না। মিস এরস কাইনের প্রণয়লাভে সমর্থ হইবেন কি না—তাও তিনি চিন্তা করবেন নাই, কিন্তু একথাও সত্য, ভাল না বাসিলে কেহ আত্মবিসর্জ্জন করিতে পারে না। আত্মবিসর্জ্জনে স্বার্থচিন্তার অবকাশ থাকে না। কোন্ আশায় তিনি এত বড় বিপদের মুখে আপনাকে নিক্ষেপ করিতেছেন, সে কথা তাঁহার মাথায় আসিল না। মিস্ এরস্কাইনের সহিত সাক্ষাতের পর তাঁহার জিদ্ শতগুণ বর্দ্ধিত হইল। তাঁহার মনে হইল,মিস্ এরস্কাইনের অনুগ্রহেই তাঁহার প্রাণরক্ষা হইয়াছে, যিনি রক্ষা করিয়াছেন,প্রাণটা তাঁহারই জীবনরক্ষায় নিয়োজিত হইয়া সার্থক হউক।
এরূপ যাঁহার মনের ভাব ও প্রাণের আগ্রহ, তিনি সকল প্রকার দুঃসাহসিকতায় প্রবৃত্ত হইতে পারেন।—ডড্লে কার্য্যসিদ্ধির উপায় চিন্তা করিতে করিতে নিদ্রিত হইলেন। সমস্ত রাত্রির মধ্যে তাহার সুখ-সুপ্তির ব্যাঘাত হইল না।
প্রভাতে নিদ্রাভঙ্গ হইলে পূর্ব্বরাত্রির সকল ঘটনার কথা তাঁহার স্মরণ হইল। প্রথমে মনে হইল তিনি স্বপ্ন দেখিয়াছেন। ধীরে-ধীরে সকলই মনে পড়িল। তাঁহার প্রথম চেষ্টা এত সহজে সফল হইবে, ইহা স্বপ্নেও ভাবিতে পারেন নাই।—এখন কয়েকদিন পর্য্যন্ত মিস্ এরস্কাইনের জীবনের আশঙ্কা নাই, ইহা বুঝিয়া তিনি অপেক্ষাকৃত নিশ্চিন্ত হইলেন। তাঁহার আশা হইল—মিস্ এরস্কাইনের ঔষধের সহিত কিছুদিন বিষপ্রয়োগ বন্ধ হইলেই তাঁহার শরীর অপেক্ষাকৃত সুস্থ ও সবল হইবে।”
এই জাহাজ হইতে মিস্ এরস্কাইনকে সরাইয়া লইয়া যাওয়াই যে তাঁহার যার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ উপায়,—ডড্লে ইহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, কিন্তু কি কৌশলে এই কঠিন কার্য্য নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায়, তাহা তিনি কোন মতে ভাবিয়া ঠিক করিতে পারিতেছিলেন না। দিবসে এই চেষ্টা নিস্ফল হইবে, অধিক কি, তাহাতে জীবনরক্ষাও কঠিন হইবে। কিন্তু রাত্রিকালেই-বা তাহা কতদূর সম্ভব? পলাইয়া যেস্থানে আশ্রয় লইতে হইবে—সেই স্থানটি তাঁহার পরিচিত হওয়া আবশ্যক, বিশেষতঃ, সমুদ্রতীরের নিকটবর্ত্তী কোন পরিচিত স্থানে উপস্থিত হইবার পূর্ব্বে জাহাজ ত্যাগের চেষ্টা করাও যুক্তিসঙ্গত নহে।—তাঁহার স্মরণ হইল, ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন জাহাজের কাপ্তেনকে বলিয়াছিল, তিন দিনের মধ্যেই সে সকল ঝঞ্চাট চুকাইয়া ফেলিবে। অর্থাৎ তৃতীয় দিন—বৃহস্পতিবার রাত্রিকালই ঝঞ্ঝাট চুকাইবার শেষ মেয়াদ।—সেই দিন রাত্রিকালে জাহাজ কোন্ স্থানে উপস্থিত হইবে—ইহা জানিবার পূর্ব্ব তিনি কোনও কার্য্যে হস্তক্ষেপণ করিতে সাহস করিলেন না। এজন্য জাহাজার পথের ‘চার্ট’খানি দেখা একান্ত আবশ্যক। এতদ্ভিন্ন আবও একটা ভাবিবার কথা ছিল।—তিনি কি কৌশলে জাহাজ হইতে বোট জলে নামাইবেন?—যদিই-বা কোনও উপায়ে অন্যের অলক্ষ্যে তাহা জলে নামাইলেন, কিন্তু বোটে যে সকল সামগ্রী লওয়া আবশ্যক খাদ্য পানীয় প্রভৃতি অবশ্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলি তিনি কি উপায়ে সংগ্রহ করিবেন?—তিনি উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্যাদি, জীবনরক্ষার উপযুক্ত উপকরণাদি না লইয়া মিস্ এরস্কাইনের সহিত একখানি ক্ষুদ্র বোটে অকূল সমুদ্রে ভাসিতে পারিবেন না। রাক্ষসের কবল হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে গিয়া তিনি কি তাঁহাকে জলধিগতে বিসর্জ্জন করিবেন?—জাহাজে বিশ্বাসঘাতক মাতুলের প্রদত্ত বিষে তিল তিল করিয়া মৃত্যুগ্রাসে পতিত হওয়া, অকূল সমুদ্রে বোটের উপর সামওয়েলির ন্যায় শোচনীয় মৃত্যু অপেক্ষা সহস্রগুণ অধিক প্রার্থনীয়।
মিঃ ডড্লে প্রাতর্ভোজন শেষ করিয়া পিতলের কলকব্জা পালিশের যন্ত্রাদিসহ জাহাজের ‘হরিকেন ডেকে’, উপস্থিত হইলেন। তিনি জাহাজের গন্তব্যপথের মানচিত্র (Chart) খানি দেখিবার জন্য অধীর হইয়া উঠিলেন, কিন্তু অন্যের অলক্ষ্যে সেই কক্ষে প্রবেশ করিবার কোন উপায় দেখিয়েন না। তিনি কাপ্তেনের কেবিনের নিকট কায করিতে-করিতে ক্রমে সেই কক্ষের অভিমুখে অগ্রসর হইলেন। সে সময় কাপ্তেন জাহাজের ‘ব্রিজে’র উপর ছিলেন। ‘চার্টরুমে’র নিকট তিনজন নাবিক ‘জীবন-তরী’তে কায করিতেছিল, তাহারা কার্য্যানুয়োধে নীচে প্রস্থান করিলে ডেকের উপর তিনি ভিন্ন আর কেহই রহিল না।
মিঃ ডড্লে তীক্ষ দৃষ্টিতে চতুর্দ্দিকে চাহিয়া নিঃশব্দ-পদসঞ্চারে ‘চার্টরুমে প্রবেশ করিলেন, তিনি সেই কক্ষের টেবিলের উপর মানচিত্রখানি প্রসারিত দেখিলেন। এই মানচিত্রখানি তখন তাঁহার নিকট পৃথিবীর যাবতীয় ধনরত্ন অপেক্ষা মহার্ঘ্য বোধ হইল। তিনি ‘করিওলেনস্’ জাহাজে ইহার অনুরূপ মাত্রচিত্র বহুবার দেখিয়াছেন, কিন্তু তাহা যে কোনদিন এভাবে তাঁহার কাযে লাগিতে পারে—ইহা কখন কল্পনাও করেন নাই। যাহা হউক, তিনি অত্যন্ত ব্যগ্রভাবে তীক্ষ দৃষ্টিতে জাহাজের গন্তব্যপথ দেখিতে লাগিলেন। জাহাজখানি তখন কোন স্থান দিয়া চলিতেছিল—তাহা তাঁহার বুঝিতে কষ্ট হইল না। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত্রে জাহাজখানি কোন্ উপকূলের সন্নিকটে উপস্থিত হইতে পারে—তাহাও তিনি ঠিক করিয়া লইলেন। তিনি বুঝিলেন, তাঁহার আনুমানিক সিদ্ধান্ত সত্য হইলে জাহাজখানি সেই সময় লামু দ্বীপের সন্নিকটে উপস্থিত হইবে।—তিনি আশ্বস্ত হইলেন।
তাঁহার আশ্বস্ত হইবার কারণ ছিল। মোম্বাসার উত্তর ‘লামু’ একটি সমৃদ্ধ নগর। এই নগর হইতে জাঞ্জিবার ও মোজাম্বিকে টেলিগ্রাম প্রেরণ করিবার ব্যবস্থা আছে। ডড লে ইহাও জানিতেন যে, ডিউসি-অস্-আফ্রিকা ‘লাইনের’ জাহাজগুলি বোম্বাই নগর হইতে মোম্বাসা ও জাঞ্জিবারে যাত্রা করিয়া ছয় সপ্তাহ অন্তর একবার লামু নগরে নোঙ্গর করে।—সুতরাং তাঁহার বিশ্বাস হইল, যদি তিনি কোন উপায়ে মিস্ এরস্কাইনকে লইয়া এই নগরে আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারেন, তাহা হইলে তাঁহাদের বিপদের আশঙ্কা দূর হইতে পারে। কিন্তু তাঁহার এ আশা কি পূর্ণ হইবে?
আরও দুই একটি বিষয়ে তাঁহার সন্দেহ ছিল, সেই সন্দেহ নিরাকরণের উদ্দেশ্যে তিনি সেই কক্ষের সেল ফের উপর হইতে ‘এড্মিরাল টি পাইলট্’ নামক পুস্তকখানি লইয়া পড়িয়া আফ্রিকার উপকূল সম্বন্ধে কোন কোন জ্ঞাতব্য বিষয় জানিয়া লইলেন। হঠাৎ সেই কক্ষের বহির্ভাগে কাহার পদশব্দ শুনিয়া তিনি তাড়াতাড়ি পুস্তকখানি যথাস্থানে রাখিয়া চক্ষুর নিমিষে মেঝের উপর বসিয়া পডিলেন, এবং ‘চার্ট টেবিলে’র পিতলের হাতল পরিষ্কার করিতে লাগিলেন। পর মুহূর্ত্তে জাহাজের প্রধান মেট্ সেই কক্ষে প্রবেশ করিয়া ডড্লেকে দেখিয়া অত্যন্ত বিস্মিত হইল, তাহার পর ক্রুদ্ধ স্বরে বলিল, “তোকে এখানে আসিতে কে বলিয়াছে?—চুরী করিবার মতলবে এই ঘরে ঢুকিয়াছিস বুঝি? এই মুহূর্ত্তেই এখান হইতে চলিয়া যা, বিলম্ব করিলে জুতা মারিয়া পিঠ ফাটাইয়া দিব।”
প্রধান মেট্ সবেগে পা ছুঁড়িল, কিন্তু তাহার বুট ডড্লের অঙ্গস্পর্শ করিবার পূর্ব্বেই তিনি সেই কক্ষ ত্যাগ করিয়া পলায়ন করিলেন। প্রধান মেট্ যে তাঁহার অভিসন্ধি বুঝিতে পারে নাই বা তাঁহাকে মানচিত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে দেখে নাই, ইহা তিনি সৌভাগ্যের বিষয় মনে করিতেন। ধরা পড়িলে তাঁহার কি দশা হইত, তাহা অনুমান করা কঠিন নহে।—বেলা আট ঘটিকার সময় ডড লে নীচের ডেকে নামিয়া আসিলেন।
অপরাহ্নে মিঃ ডড্লে মিস এরস্কাইনের সাক্ষাৎ লাভের আশায় উপরের ডেকে আসিলেন। তাঁহার বিশ্বাস ছিল, নিস এরস কাইন বায়ুসেবনের উদ্দেশ্যে কিছুকালের জন্যও উপরের ডেকে আসিয়া বসিবেন। প্রায় অর্দ্ধঘণ্টা পরে মিস্ এরস কাইন তাঁহার মাতুল ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের স্কন্ধাবলম্বন করিয়া ধীরে-ধীরে ডেকে আসিয়া বসিলেন। সেদিনও মিস্ এরস্কাইনকে অত্যন্ত দুর্ব্বল বলিয়া বোধ হইল। তিনি অবসন্নভাবে চেয়ারে বসিয়া হাঁপাইতে লাগিলেন। তাঁহার কেবিন হইতে এইটুকু আসিতেই তিনি অত্যন্ত পরিশ্রান্ত ইয়াছিলেন।—ডড্লে দেখিলেন, ল্যাম্পিয়নের মুখ অত্যন্ত প্রফুল্ল।
ল্যাম্পিয়ন তাঁহার ভাগিনেয়ীকে বলিল, “কোন চিন্তা নাই, মা। গরমে তুমি হাঁপাইতেছ। তোমার শরীর আজ অনেক ভাল বুলিয়াই ত বোধ হইতেছে, কাল তুমি অনেকটা সুস্থ হইবে। তোমার যদি ইচ্ছা হয়—তাহা হইলে তোমার কাছে কিছুকাল বসিয়া তোমাকে নভেল খানা পডিয়া শুনাই।”
মিস্ এরস্কাইন মাথা নাড়িয়া বলিলেন, “না, তাহার আবশ্যক নাই, আমি একটু নিরিবিল থাকিতে চাই।”
ল্যাম্পিয়ন বলিল, “তোমার যেরূপ অভিরুচি, তবে আমি এখন চলিলাম। যদি আমাকে ডাকিবার আবশ্যক হয় তাহা হইলে স্টুয়ার্ডকে বলিলেই সে আমাকে সংবাদ দিবে।”
ল্যাম্পিয়ন অন্যত্র প্রস্থান করিলে মিস্ এরস্কাইন চেয়ারে অর্দ্ধশায়িত ভাবে বসিয়া চক্ষু মুদিত করিলেন।—তাহার পর চক্ষু খুলিয়া একবার চতুর্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন। ইত্যবসরে ডড্লে তাঁহার চেয়ারের অদূরে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। ডড্লে নিম্নস্বরে বলিলেন, “আপনার অবস্থা দেখিয়া আমার বড়ই ভয় হইয়াছিল, মনে হইতেছিল আজ আপনি আরও অধিক অসুস্থ হইয়াছেন।”
মিস্ এরস্কাইন বলিলেন, “না, আজ আমি অনেকটা ভালই আছি। আপনার উপদেশানুসারেই আমি মামাকে বুঝিতে দিয়াছি—আজ আমি পূর্ব্বাপেক্ষা অধিক অসুস্থ হইয়াছি।—ভাল করি নাই?”
ডড্লে সোৎসাহে বলিলেন, “খুব ভাল করিয়াছেন। আপনি সত্যই কি আজ অন্যদিন অপেক্ষা ভাল আছেন? আশা করি আপনি আজ একবারও ঔষধ ধান নাই।”
মিস্ এরস্কাইন বলিলেন, “হাঁ, আজ অনেক ভাল। ঔষধ কি খাবার, কিছুই খাই নাই।”—অনন্তর তিনি ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া বলিলেন, “আপনি কি আমার উদ্ধারের কোনও কৌশল আবিষ্কার করিতে পারিলেন কি? উপায় স্থির করিয়াছেন?”
ডড্লে বলিলেন, “আগামী কল্য রাত্রে এ জাহাজ ত্যাগ না করিলেই নয়। আপনি এজন্য প্রস্তুত আছেন কি? মিস্ এরস্কাইন বলিলেন, “যখনই বলিবেন তখনই আমি আপনার সঙ্গে জাহাজ ত্যাগ করিব, আমার আর বিলম্ব সহ্য হইতেছে না। আমার জীবন নষ্ট করিবার জন্য যে ভীষণ ষডযন্ত্র হইয়াছে, এ বিষয়ে আমার আর সন্দেহ নাই।—এখান হইতে পলাইতে পারিলেই বাঁচি।
ডড্লে বলিলেন, “যথাসময়ে আপনি সংবাদ পাইবেন। এখনও আমার উদ্যোগ-আয়োজনের কিছু বাকি আছে, কিন্তু কালই পলায়ন করা স্থির। কাজটা অত্যন্ত কঠিন, কোন রকম ভুলচুক হইলে আর রক্ষা নাই।”
ডড্লে বোধ হয় আবও কোন কথা বলিতেন, কিন্তু হঠাৎ ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন সেই স্থানে উপস্থিত হইল। তাহার হাতে এক পেয়ালা ব্রথ্। সে তার ভাগিনেয়ীকে বলিল, “মা, এই ব্রথ্টুকু খাও দেখি, শরীরে বল পাইবে।”
মিস্ এরস্কাইন মাথা নাডিয়া ক্ষীণস্বরে বলিলেন, “না মামা, আমি উহা খাইতে পারিব না, আমার গা বমি-বমি করিতেছে। উহা খাইলেই বমি হইবে।”
ল্যাম্পিয়ন সেই ব্রথ্টুকু তাঁহাকে পান করাইবার জন্য কত অনুনয় বিনয় করিল, শেষে ভয় প্রদর্শনও করিল, কিন্তু মিস্ এরস্কাইন তাহা পান করিলেন না। তখন ল্যাম্পিয়ন সেই পেয়ালাটি একটি গবাক্ষে রাখিয়া বলিল, “আমি ইহা এখানে রাখিয়া চলিলাম, এখন খাইবাব ইচ্ছা না হয়, খানিক পরে ব্রথ টুকু পান করিও। না খাইলে শরীরে বল পাইবে কেন? রোগের সময় এত অবাধ্য হইলে কি শীঘ্র রোগ সারে? ঔষধ পথ্য নিয়মমত খাইতে হইবে।”
মিস্ এরস্কাইন বললেন, “আর রোগ সারিয়াছে।—এখন মরলেই বাঁচি। এ যাতনা আর সহ্য হয় না। কিন্তু মামা, তোমার দয়ার জন্য আমি তোমার নিকট চিরকৃতজ্ঞ, তুমি আমার যেরূপ সেবাশুশ্রুষা করিতেছ, মাবাপেও ততদূর করিতে পারে না। তোমার স্নেহ-মমতা আমার মা স্বর্গ হইতে দেখিতে পাইতেছেন।”ল্যাম্পিয়ন আর অধিকক্ষণ সেখানে অপেক্ষা না করিয়া নীচে চলিয়া গেল।—ভাগিনেয়ীর কথা শুনিয়া সেই শয়তানের মনে লজ্জার সঞ্চার হইয়াছিল কি না কে বলিবে?
ডড্লে মিস্ এরস্কাইনকে একাকিনী দেখিয়া বলিলেন, “আমি আজ রাত্রেই সকল বন্দোবস্ত শেষ করিব। আপনি কাল আর ডেকে আসিবেন না, তাহা হইলে সকলে বুঝিবে আপনি আরও অধিক দুর্ব্বল হইয়াছেন। আমি কাল সন্ধ্যার সময় আপনাকে কোন কৌশলে সংবাদ দিব, সম্ভবতঃ গবাক্ষপথে চিঠি ফেলিয়া দিব। তাহাতেই সকল কথা লেখা থাকিবে, আপনি তদনুসারে কায করিবেন।”
মিস্ এরস্কাইন বলিলেন, “নিশ্চয়ই করিব।”
তখন ডড্লে প্রফুল্লচিত্তে সেইস্থান ত্যাগ কবিলেন।