নাবিক-বধূ/দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
পরদিন প্রভাতে ডড্লে সংবাদ পাইলেন, সেইদিন বেলা এগারটার সময় এডমিরালের সহিত দেখা করিতে হইবে। ডড্লে পূর্বেও নৌ-সেনাপতির প্রাসাদে পদার্পণ করিয়াছিলেন, কিন্তু এরূপ বিচিত্র কার্যতার লইয়া তিনি আর কখনও সেখানে যান নাই। ডড্লে তাহার সহিত দেখা করিতে আসিলেন, তখন এডমিরাল বারান্দায় দাঁড়াইয়া একটা চুরুট টানিতেছিলেন। এডমিরাল মহাশয় ডড্লে কে দেখিবামাত্র তাঁহাকে সঙ্গে লইয়া একটি সুসজ্জিত কক্ষে প্রবেশ করিলেন, সহাস্যে বলিলেন, “কাল অনেক রাত্রি জাগিয়াছিলে, মনে করিয়াছিলাম তোমাকে ক্লান্ত দেখিব, কিন্তু দেখিতেছি তুমি বেশ স্থত্তিতে আছ। তোমাদের মত বয়সে উৎসাহটা এই রকমই থাকে বটে, তোমরা ক্লান্ত হইতে জান না।”
অনন্তর কাযের কথা আরম্ভ হইল। উভয়ে প্রায় এক ঘণ্টা কাল মানচিত্র ও নানাপ্রকার কাগজ-পত্র লইয়া অনেক কথার আলোচনা করিলেন। সেই সময় উড়লে তাহার কর্তব্য সম্বন্ধে সকল কথা জানিয়া লইলেন। কখন কি ভাবে চলিতে হইবে, কি করিতে হইবে—প্রভৃতি কোন বিষয় তাহার জানিতে বাকি রহিল না।
অবশেষে এডমিরাল মহাশয় অত্যন্ত গম্ভীর হইয়া বলিলেন, “আমার শেষ কথা ভাল করিয়া শুনিয়া রাখ। মোজাম্বিকে উপস্থিত হইয়া তুমি কোন বিষয়ে অতিরিক্ত চাঞ্চল্য বা উৎসাহ প্রকাশ করিও না। অসতর্কভাবে কোনও কাযে হাত দিও না। বিন্দুমাত্র ভ্রম-প্রমাদে সকল চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে। ইউসিদ্ধি না হইয়া অনর্থপাত হইতে পারে।”
ডড্লে বলিলেন, “আমি খুব সতর্ক থাকিব। আমি আমাদের বোট অধিকার করিয়া জাঞ্জিবারে যাত্রা করি, এবং বোটখানি কর্তৃপক্ষের জিম্বা করিয়া দিব, তার পর আমাদের জাহাজের জন্য সেখানে অপেক্ষা করিব।”
এডমিরাল বলিলেন, “ঠিক। যদি বিশেষ কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তাহা হইলে তুমি জাঞ্জিবারে গমনের পর সপ্তাহমধ্যে আমরা সেখানে উপস্থিত হইব, কিন্তু যদি দেখি তুমি তখন পর্যন্ত সেখানে পৌছিতে পার নাই, তাহা হইলে আমরা তোমার অন্বেষণে যাত্রা করিব। তোমাকে আর যাহা করিতে হইবে—তৎসম্বন্ধে লিখিত উপদেশ প্রদান করিব, তাহা তুমি অবকাশ কালে পাঠ করিয়া হৃদয়ঙ্গম করিয়া রাখিবে। আমার প্রত্যেক উপদেশ তোমার হৃদয়ে মুদ্রিত হইলে তুমি সেই কাগজ গুলি নষ্ট করিবে। তাহা হইলে তাহা অন্যের হাতে পড়িবার আশঙ্কা থাকিবে না। আমার কথা বুঝিয়াছ?”
ডড্লে বলিলেন “তা আর বুঝি নাই?”
ডড্লের কথা শুনিয়া এডমিরাল খুশি হইলেন। তিনি ডড্লের অত্যন্ত পক্ষপাতী হইয়াছিলেন, এই যুবকের বুদ্ধির তীক্ষ্ণতায় ও কার্য্যতৎপরতায় তাহার বিলক্ষণ আস্থা হইয়াছিল। তাহার মনে পডিল, তিনিও যৌবনকালে ডড্লের মত বুদ্ধিমান ও কম্মঠ ছিলেন, বিপদের কার্য্যে মাথা বাড়াইয়া দিতে তাহারও অসাধারণ উৎসাহ ছিল, কিন্তু এখন তিনি প্রৌঢ়, প্রথম যৌবনের সেই উৎসাহ, উদ্যম, ক্ষিপ্রতা অন্তর্হিত হইয়াছে, যাহা তিনি হারাইয়াছেন তাহা এই যুবকের নিকট পাইয়া তাহার আনন্দের সীমা রহিল না। তিনি উঠিয়া ডড্লের হাত ধরিয়া বলিলেন, “তুমি অবিলম্বে ম্যাথুজের সহিত সাক্ষাৎ কর। তাহার পর ‘ডিউসি অস্ আফ্রিকা’ নামক জাহাজের টিকিট লইয়া যাত্রার জন্য প্রস্তুত হও, সেই জাহাজখানি আগামী শনিবার বন্দর ত্যাগ করিবে। ইতিমধ্যে যদি নিজের কাযের জন্য দুইদিন ছুটি চাও, তাহা পাওয়া কঠিন হইবে না।”
ডড্লে এডমিরালকে ধন্যবাদ জানাইয়া বিদায় লইলেন।—তাহার দুইদিন ছুটি লইবার বিশেষ কোন আবশ্যক ছিল না, কিন্তু না চাহিতেই যে ছুটি। পাওয়া যায়,—এমন যুবক কে আছে, যে তাহা প্রত্যাখ্যান করে? ‘ সেইদিন অপরাহকালে ঘুরিতে-ঘুরিতে ডড়লে একটি ক্লাবে উপস্থিত হইলেন, তিনি এই ক্লাবে মধ্যে-মধ্যে আমোদ-প্রমোদ করিতে আসিতেন। তিনি ধুমপানের কক্ষে প্রবেশ করিয়া একখানি বংশবিনির্ম্মিত চেয়ারে উপবেশন পূর্বক খানসামাকে কিছু খাবার আনিতে আদেশ করিলেন, তাহার পর একটি সিগারেট ধরাইয়া লইয়া ধূমপান করিতে করিতে এড, মিলের উপদেশগুলি মনে মনে আলোচনা করিতে লাগিলেন। কয়েক মিনিট পরে তাঁহার পশ্চাদ্বর্তী একটি দ্বার খুলিয়া একজন লোক সেই কক্ষে প্রবেশ করিল। আগন্তুক ভৃত্যকে আহ্বান করিবার জন্য সজোরে ঘণ্টাধ্বনি করিয়া সেই কক্ষের এক কোণে উপস্থিত হইল, তাহার পর টেবিলের উপর হইতে কতকগুলি কাগজপত্র টানিয়া লইয়া তাহা নাড়াচাড়া করিতে লাগিল। আগন্তুক একখানি চেয়ারে বসিয়া একখানি কাগজ পরীক্ষা করিতে-করিতে হঠাৎ ডড্লেকে দেখিতে পাইল।
আগন্তুক ডড্লেকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, “কে, মিঃ ডড্লে যে! কেমন আছেন? আজ দিনটা ভারি খারাপ, নয় কি?”—তাহার পর সে চেয়ারখানি ডড্লের পার্শ্বে টানিয়া আনিয়া বলিল, “কাল রাত্রে লাট সাহেবের বাড়ীর নাচে খুব স্মৃর্তি করিয়াছিলেন, সেখানে অনেক লোক যুটিয়াছিল, কেমন?
ডড়লে বলিলেন, “হাঁ, সচরাচর যেমন হয়, তার চেয়ে লোক কিছু বেশীই হইয়াছিল।—মিস এসকাইন ভাল আছেন ত?”
আগন্তুক বলিল, “কৈ, কোনও রকম অসুখের কথা ত শুনি নাই। সে বড় চালাক মেয়ে, অনেককে দেখিয়াছি নাচিতে-নাচিতে এলাইয়া পড়ে, শেষে সেই ধাক্কা সামলাইতেই দু’দিন যায়, এরাইন তেমন মেয়ে নয়।
আগন্তুক এরসকাইনের মামা—ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন। সে আর কোন কথা না বলিয়া গম্ভীরভাবে কাগজ দেখিতে লাগিল। বস্তুতঃ উইলফ্রেড ল্যাম্পিয়ন কিছু অদ্ভুত প্রকৃতির লোক। দক্ষিণ আফ্রিকার জনক লোকেই জানিত-তাহার ন্যায় ধূর্ত সচরাচর দেখা যায় না। সকলেই তাহার বুদ্ধির প্রশংসা করায় তাহার মেজাজ কিছু গরম হইয়া উঠিয়াছিল। ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছিল, নিজের শক্তি-সামর্থ্যের উপর তাহার অসাধারণ বিশ্বাস ছিল। নিজেকে অন্য সকলের অপেক্ষা বুদ্ধিমান মনে করিয়া সময়ে সময়ে তাহাকে বিপন্ন হইতেও হইত। লোকটি সুবক্তা ও বাগ্মী ছিল, সাধারণের নেতৃত্ব করিবার শক্তিও অল্প ছিল না। শত্রুপক্ষ তাহার বিদ্রুপ কশাঘাতে জর্জরিত হইত। কেহ তাহাকে সহজে ঘাটাইতে চাহিত না। অসাবহৃদয় হুজুগপ্রিয় রমণী-সমাজেই তাহার বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল, সেই শ্রেণীর পুরুষেরাও তাহার পক্ষপাতী ছিল। কিন্তু অনেকেই তাহাকে কপট বলিয়া ঘৃণা করিত। লোকটি দীর্ঘাকৃতি, মস্তকের সম্মুখভাগে টাক, প্রশস্ত ললাট, খজোর ন্যায় উন্নত নাসিকা,দাড়ি নাই, গোঁফজোড়াটা অতান্ত জমকালো। তার পোষাক-পরিচ্ছদেরও যথেষ্ট পারিপাট্য ছিল। বস্তুতঃ এরূপ সৌখিন লোক সে অঞ্চলে অধিক ছিল না। লোকের প্রশংসালাভের জন্য ডাক্তার বেশ ভূষায় বিস্তর অর্থব্যয় করিত।
যাহা হউক, এখন আমরা আলোচ্য বিষয়ের অবতারণা করি।
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন আহার শেষ করিয়া কাগজখানি পাঠ করিল, তাহার পর হাই তুলিয়া কাগজখানি মেঝের উপর নিক্ষেপ করিল, এবং ডডলর মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, “আপনি শীঘ্রই দেশান্তরে যাইতেছেন? আপনার সৌভাগ্য দেখিয়া হিংসা হয়। কিন্তু বোধ হয় আপনি ইংলণ্ডে যাইতে পারিলে অধিকতর সুখী হইতেন।”
ডড্লে যে রাজকার্য্যে দেশান্তরে যাইতেছেন—একথা বাহিরের কোন লোক জানিত না, সুতরাং ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের কথা শুনিয়া তিনি অত্যন্ত বিস্মিত হইলেন। ডাক্তার হঠাৎ কেন এই প্রসঙ্গের অবতারণা করিল—তাহাও তিনি বুঝিতে পারিলেন না। শেষে তাহার মনে হইল, তিনি পূর্বদিন নাচের মজলিসের বাহিরে মিস্ এরাইনকে তাহার বিদেশ যাত্রার কথা বলিতেছিলেন, সেই সময় ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন তাহার তাগিনেয়ীর অদূরে দাঁড়াইয়া, ছিল, সম্ভবতঃ ডাক্তার তাহার কথা শুনিতে পাইয়াছিল।
ডড্লে ক্ষণকাল নিস্তব্ধ থাকিয়া উত্তর দিলেন, “এক বৎসর বা দেড় বৎসর মধ্যে আমার বোধ হয় ইংলণ্ডে যাওয়া ঘটিবে না। আমরা এদেশে অতি অল্প দিন আসিয়াছি।”
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন হঠাৎ কোন কথা না বলিয়া গম্ভীর ভাবে সিগারেট টানিতে লাগিল। তাহার পর সোজা হইয়া বসিয়া গোঁফে তা দিয়া বলিল, “আপনি পূব্বে কখন কি ‘ডিউসি অ আফ্রিকা' লাইনে ভ্রমণ করিয়াছেন?”
ডড্লে অতি কষ্টে বিস্ময় দমন করিয়া বলিলেন, “ডিউসি অস্ আফ্রিকা লাইনে?—না, আমি আর কখন সে লাইনে ভ্রমণ করি নাই। আপনি কি এই জাহাজওয়ালা-কোম্পানীকে জানেন?”
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন বলিল, “আমি গত বৎসর তাহাদের একখানি জাহাজে মোজাম্বিক পর্য্যন্ত গিয়াছিলাম, সেখানে গিয়া একজন লোকের সহিত আমার পরিচয় হইয়াছিল, তাহার নাম বাটন, সে ভারি জবর লোক—যেন একটা হাতি। মাথার চুলগুলি সব লাল। সে ‘ডাক কণ্টিনেণ্ট ডেভেলপমেণ্ট' কোম্পানীর এজেণ্ট।
ডড্লে বলিলেন, “হাঁ, তাহার সহিত আমারও একবার আলাপ হইয়া ছিল। তাহার সহিত আমার যখন দেখা হয়—তখন সে ছুটি লইয়া দেশে যাইতে ছিল।”
ল্যাম্পিয়ন বলিল, “সে এখন ছুটি শেষ করিয়া ফিরিয়াছে। কয়েক দিন পূব্বে আমি তাহার একখানি পত্র পাইয়াছি। তাহার সহিত আপনার সাক্ষাৎ হইলে তাহাকে আমার কথা স্মরণ করাইয়া দিবেন।—আমার এ অনুরোধ আপনার মনে থাকিবে কি?”
ডড্লে বলিলেন, “আপনার কি বিশ্বাস আমি আফুিকার পূর্ব উপকূলে যাইতেছি? আপনার এরূপ ধারণার কারণ কি?”
ল্যাম্পিয়ন বলিল, “আমার এরূপ ধারণা কিরূপে হইল তাহা আপন বলিতে পারিব না। আপনি বোধ হয় এ কথা আমার ভাগিনেয়ীকে বলিয়াহিলেন, আমি তাহারই কাছে ইহা শুনিয়া থাকিব।” কিন্তু ডড্লে কেপ টাউন হইতে কোথায় যাইবেন তাহা মিস এরসকাইনকে নিশ্চয়ই বলেন নাই, এ বিষয়ে তাঁহার বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। গুপ্তকথা ব্যক্ত হইবার ভয়ে তিনি ইচ্ছা করিয়াই এ কথা প্রকাশ করেন নাই, তবে ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন এ কথা কাহার নিকট শুনিল? ডড্লে কিছুই বুঝিতে পারিয়া তীক্ষ দৃষ্টিতে ডাক্তারের মুখের দিকে চাহিলেন, কিন্তু ডাক্তারের মুখ দেখিয়া মনের ভাব বুঝিতে পারিলেন না। তবে তিনি এটুকু বুঝিলেন যে, তাঁহার গতিবিধির সন্ধান রাখিয়া ডাক্তারের লাভ আছে। নিশ্চয়ই কোনও গুপ্ত অভিসন্ধির বশবর্তী হইয়া সে এ সকল সন্ধান লইতেছে।কিন্তু তাহার অভিসন্ধি কি? ডড্লের এই অভিযানের সহিত ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের কি কোন সম্বন্ধ আছে?
ইতিমধ্যে ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন গাত্রোখান করিয়া বলিল, “আপনার যাত্রার যদি দুই চারিদিন বিলম্ব থাকে—তাহা হইলে আগামী রবিবার আমাদের গৃহে আপনি ভোজন করিলে আমরা অত্যন্ত আনন্দ লাভ করিব। আমার ভাগিনেষী মিস্ এরাইন আপনাকে দেখিয়া যে অত্যন্ত সুখী হইবে—এ কথা বলাই বাহুল্য।”
ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের কণ্ঠস্বরে কোনরূপ ছলনা বা চাতুর্যের আভাস ছিল না, কিন্তু ডড্লে তাহার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিলেন, ডাক্তারের চক্ষু দুটি যেন অস্বাভাবিক উজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছে, সে চক্ষুতে তাহার মানসিক উৎকণ্ঠা ও ঔৎসুক্য পরিস্ফুট হইতেছিল।
ডড্লে ধীরে ধীরে বালন, “আপনার নিমন্ত্রণ লাভ করিয়া আমি বড়ই সুখী হইলাম, কিন্তু নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে পারিব কি না ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না। যদি আমি সে দিন পর্যন্ত কেপ টাউনে থাকি—তাহা হইলে নিশ্চয়ই যাইব, আমি আপনার নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে পারিব কি না তাহা আগামী কল্য আপনাকে বলিতে পারিব।”
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন বলিল, “তাহাই হইবে। যদি আগামী কল্য আপনার নিকট হইতে কোন সংবাদ না পাই, তাহা হইলে বুঝিব আপনি নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইবেন। বেলা দুইটার সময় আমরা আহার করি।—আপনি বোধ হয় আমার বাডী চেনেন?”
ডড্লে সেদিনও সেই বাড়ীর পাশ দিয়া দুইবার যাতায়াত করিয়াছিল, এবং মিস্ এরসকাইনকে দেখিবার আশায় দ্বিতলের বাতায়নের দিকে ঘনঘন দৃষ্টিপাত করিয়াছিলেন, সুতরাং তিনি ডাক্তারের বাড়ী চেনেন না—এ কথা বলিতে পারিলেন না। ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন আর কোন কথা না বলিয়া সেই কক্ষ ত্যাগ করিল। ডড্লে একটি সিগারেট ধরাইয়া নানা কথা ভাবিতে লাগিলেন, কিন্তু ডাক্তার ল্যাম্পিয়নেব উদ্দ্যেশ্য ন্ত কি, তাহা বুঝিতে পারিলেন না।
ক্রমে মিস্ এরসকাইনের কথা তাহার মনে উদিত হইল। মিস্ এরসকাইন কি চমৎকার সুন্দরী। কথাগুলি কেমন মিষ্ট —তিনি কি কোন দিন এই কুবের-নন্দিনীর হৃদয় জয় করিতে পারিবেন, তাহাকে লাভ করা কি সম্ভব হইবে?—যদি তাহাকে বিবাহ করিতে পারেন—তাছা হইলে তাহার জীবন ধন্য হইবে, দেশে তাঁহার যে পৈত্রিক সম্পত্তি আছে তাহাতেই বেশ মুখে চলিবে, কিন্তু এই মুখস্বপ্ন সফল হইবে কি?
তিনি বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইয়া এই সকল কথা চিন্তা করিতেছেন, এমন সময় দুইটি যুবক সেই কক্ষে প্রবেশ করিলেন, তাঁহাদের একজন টর্পেডো লেফটেনাণ্ট ব্রাডফোর্ড, অন্যটি এণ্ডোমেডা জাহাজের কর্ম্মচারী পাশিভাল, উড়য়েই ডড্লের বন্ধু।
ব্রাডকোর্ড মিঃ ডড্লেকে দেখিয়া উল্লাস ভরে তাঁহার পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন, “ডড্লে, তুমি এখানে। আমরা তোমাকে কোথায় না খুঁজিয়াছি? এখানে তুমি কি করিতেছ?”
ডড্লে বলিলেন, “একটু বিশ্রাম করিতেছি। আমি দু’দিন ছুটি পাইয়াছি, কাযেই সময়টুকু একটু আরামে কাটাইবার জন্য আগ্রহ হওয়া অস্বাভাবিক নহে, আমাকে তোমরা খুঁজিতেছিলে কেন?”
পার্শিভাল বলিলেন, “তোমাকে নিমন্ত্রণ করিতে জাসিয়াছি। ডিক্ পয়েণ্ডার ‘পণ্টিফ্রাক্ট কাল জাহাজে এখানে আসিয়াছে, অল্পক্ষণ পূর্বে পথে তাহার সহিত দেখা হইয়াছিল। সে তোমাকে ও আমাদের দু'জনকে তার জাহাজে নিমন্ত্রণ করিয়াছে। যাইবে ত?”
ডড্লে বলিলেন, “নিশ্চয়ই যাইব। পয়েণ্ডার ছুটি পাইয়াছে?”
ব্রাডফোর্ড বলিলেন, “তাহাই ত বোধ হয়। আর ছুটিবই-বা অপরাধ কি? বেচারা বার বৎসর পর দেশে যাইতেছে।কিন্তু সে বিস্তর টাকা। জমাইয়াছে, টাকাগুলি ব্যবসায়ে খাটাইবে শুনিয়াছি।”
সেইদিন সন্ধার পর ডাকের জাহাজে থানার আয়োজন হইল, সে অতি বিরাট আয়োজন। যিনি এই প্রীতিভোজের আয়োজন করিলেন, তাহার নাম মান্যবর রিচার্ড পয়েণ্ডায়, তিনি আর্ল অফ উইম্পডনের কনিষ্ঠ পুত্র। গত দ্বাদশ বৎসর কাল তিনি পূর্ব-আফ্রিকার সন্নিহিত কোনও দ্বীপে বিষয়কর্মে লিপ্ত ছিলেন। এই দীর্ঘকালে তিনি স্থানীয় অধিবাসিগণের ভাষা শিখিয়াছিলেন, তাহাদের রীতিনীতি আচার ব্যবহার সম্বন্ধেও যথেষ্ট অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিলেন।
রিচার্ড পয়েণ্ডার কথা প্রসঙ্গে তাহার বন্ধুগণকে বলিলেন, “আমি যে দেশে ফিরিতেছি, এ কথা বিশ্বাস করিতে এখনও প্রবৃত্তি হইতেছে না। আমার যে কত আনন্দ হইতেছে, তা আর কি বলিব? তোমাদের লইয়া যাইতে পারিলে আমি আরও অধিক সুখী হইতাম—সে সৌভাগ্য হইবে কি?”
টর্পেডো লেফটেনাণ্ট দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “আর সৌভাগ্য। কতদিন আমাদিগকে আটক থাকিতে হইবে তা কে বলিবে? যদি টাকার মানুষ হইতাম তাহা হইলে চাকরী ছাডিয়া দেশে গিয়া ঘূর্তি করিতাম, কিন্তু টাকা ত নাই, বড় লোক হইবার কোন সম্ভাবনাও দেখিতেছি না, তবে যদি কোন লক্ষপতির কন্যা আমার কন্দর্পের মত চেহারা দেখিয়া বিবাহ করিয়া ফেলে—তাহা হইলে রাতারাতি বড়লোক হইতে পারিব।”।
পয়েণ্ডার বলিলেন, “দেশে ত যাইতেছি, ইচ্ছা আছে দেশে গিয়া দেখিয়া শুনিয়া একটা বিবাহ করিয়া ফেলিব। আমি খুব বেশী বড়লোকের মেয়ে চাহি না, লাখ খানেক টাকা বার্ষিক আয় আছে—এ রকম কোন সুন্দরীর প্রেমে পড়িতে পারিলে কৃতার্থ হইব। ডডি, তুমি এমন সুপুষ, একটা শিকার যুটাইতে পারিতেছ না? রূপ দেখিয়া যদি কোন কুবের-নন্দিনী তোমার প্রেমের পাথারে হাবুডুবু না খাইল-ত এমন চেহারা কি জন্য?”
টর্পেডো লেফটেনাণ্ট বলিলেন, “ডডির কথা ছাডিয়া দাও, ছোবরার একটা মস্ত দাও ফসকাইয়া গিয়াছে। কাল রাতে লাট-প্রাসাদে নাচের মজলিসে ডডি এক যুবতীর প্রেমের তুফানে পডিয়া নাকানি-চুবানী থাইয়াছিল, —কিছু লোনা জলও পেটে ঢুকিয়াছিল। যুবতী যেমন সুন্দরী—তেমনি সাঁঁশালো, লক্ষপতির কন্যা। এমন শিকার হতে পাইয়াও ছাডিয়া দিলে হে। ধিক, খোলা গরম থাকিতে থাকিতে বিবাহের ভিয়ান চড়াইলে না কেন? কথাটা পাড়িতে কি ক্ষতি ছিল?
ডড্লে বলিলেন, “ব্রাডফোর্ডটা প্রকাণ্ড গাধা। সেই যুবতী উহার মত টর্পেডে লেফটেনাণ্টকে গ্রাহ্যও করে নাই, এইজন্য আপশোষ হওয়ায় হত ভাগাটা এই রকম প্রলাপ বকিতেছে। উহার অপেক্ষা সে আমার বেশী খাতির করিয়াছিল, এই হিংসায় মরিতেছে আর কি।”
পয়েণ্ডার বলিলেন, “তোমাদের ভাগ্য ভাল, কিন্তু আমার অদৃষ্টে এ পর্যন্ত কোন লক্ষপতির কন্যা মিলিল না, চারে মাছ না আসিলে আর বঁড়সি গিলিবে কে? অগাধ সমুদ্রে ছিপ ফেলিয়া বসিয়া আছি, চুনোপুটিতে দুই একটা ঠোকর দেয়, সে সব নিতান্ত অগ্রাহ্য। যাহা হউক, বাহার প্রেমের তুফানে পডিয়া এতটা বেসামাল হইয়াছ—সেই ভাগ্যবতীটিকে জানিতে পারি কি?
ডড্লে কথাটা চাপা দিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু ব্রাডফোর্ডের নেশাটা বেশ জমিয়া আসিয়াছিল, তাহার তখন মহা স্মৃত্তি, সে কথা চাপ দিতে দিল না,সোৎসাহে বলিল, “ডড্লে সে কথা বলিবে না, পাছে শিকার হাতছাড়া হয়। কিন্তু আমার কাছে লুকাইবার চেষ্টা বৃথা।—সেই যুবতীর নাম মিস এরসকাইন। মাস ছয়েক পূর্বে সে এদেশে আসিয়াছে। আঃ, কি চমৎকার তার রূপ ভাই, আর নিখুঁত গড়ন, তার উপর তার বাপের বিপুল ঐশ্বর্য্য।”
পয়েণ্ডার বলিলেন, “বল কি। তবে আমি একবার উমেদারী করিয় দেখিব না কি? তাড়াতাড়ি দেশে না ফিরিয়া মাসখানেক না হয় এখানেই থাকিয়া যাই, ভাগ্য প্রসন্ন হইলেও হইতে পারে। আমার এমন চেহারা তাহার মনে ধরিবে না? যুবতী-মনোরঞ্জনের শক্তিও আমার যে নাই তাও বলিতে পারি না।—এই পরীর এখানে আড্ডা কোথায়?”।
ডড্লে বলিলেন, “তিনি তার মাতুল ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের বাড়ীতে থাকেন, ডাক্তার ল্যাম্পিয়নকে জানত?—ভারি টাকার মানুষ।”
পয়েণ্ডার বলিলেন, “ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের ভাগিনেয়ী? বল কি। ল্যাম্পিয়নটা ভয়ঙ্কর চতুর লোক, কিন্তু একদিন তার সমস্ত চালাকি বাহির হইয়া যাইবে। লোকটাকে শীঘ্রই ডুবিতে হইবে, তাহার সর্বনাশ অনিবার্য্য।”
ডড্লে সবিস্ময়ে বলিলেন, “তোমার কথার মর্ম বুঝিতে পারিলাম না। ব্যাপার কি, সকল কথা খুলিয়া বল।” পয়েণ্ডার বলিলেন, “দেড় বৎসর পূর্বে বুকার পশ্চিমাংশে আরবদের বোট-সংক্রান্ত যে গোলমাল ঘটিয়াছিল—সে কথা কি তোমার মনে পড়ে?
ডড্লে বলিলেন, “বিলক্ষণ মনে পডে! সেই ব্যাপারের সহিত ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের কি সম্বন্ধ?”
কিন্তু হঠাৎ অন্য কথার প্রসঙ্গ উপস্থিত হওয়ায় কথাটা চাপা পড়িয়া গেল। আহারাদির পর তিন বন্ধু একত্র তীরে অবতরণ করিলেন। ডকের অদূরে একটি ছোট বাড়ী ছিল, যে সকল জাহাজ ডকে আসিত, সেই সকল জাহাজের নাবিক, ফায়ারম্যান প্রভৃতি অনেকে এই বাড়ীতে আড্ডা দিতে আসিত। সেখানে তাহাদের পানাহারেরও বন্দোবস্ত ছিল। পয়েণ্ডর এই অট্টালিকায় প্রবেশের ইচ্ছা প্রকাশ করিলে ডড্লে ও টর্পেডো লেফটেনাণ্ট তাঁহাকে প্রতিনিবৃত করিবার চেষ্টা করিলেন, কারণ সেখানে জুয়া খেলাও চলিত; তাঁহারা বুঝিয়াছিলেন, পয়েণ্ডার সেখানে প্রবেশ করিলে জুয়ায় মাতিবেন, এবং তাঁহার হাতে যাহা কিছু ছিল—তাহা সমস্তই তাহাকে খায়াইতে হইবে। কিন্তু পয়েণ্ডার তাঁহার সঙ্কল্প ত্যাগ করিলেন না, বন্ধুত্বের চেষ্টা বৃথা হইল। তখন তাহারা অগত্যা পয়েণ্ডারের সহিত সেই জুয়ার আড্ডায় প্রবেশ করিতে বাধ্য হইলেন।
ডড্লে টর্পেডো লেফটেনাণ্টকে নিম্নস্বরে বলিলেন, “লোকটার হতে যাহা কিছু আছে—আজ সমস্তই তাহা এখানে রাখিয়া যাইবে। উহাকে আমাদের সঙ্গে না আনিলেই ভাল হইত। “
পয়েণ্ডার সেকথা শুনিয়া ও শুনিলেন না, তিনি পাশের একটি সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া সেই অট্টালিকায় প্রবেশ করিলেন। ডড়লে ও টর্পেডো লেফটেনাণ্ট তাহার সহিত অন্ধকারাচ্ছন্ন সঙ্কীর্ণ গলির ভিতর দিয়া দূরবর্তী একটি আলোকিত কক্ষে প্রবেশ করিলেন। সেই কক্ষে অনেক গুলি লোক জটলা করিতেছিল, তাহাদের উত্তেজনাপূর্ণ ভাবভঙ্গি দেখিয়া ও কথাবার্তা শুনিয়া তাহারা বুঝিলেন, দুই এক মিনিটের মধ্যেই তাহাদের হাতাহাতি আরম্ভ হইবে। সেই কক্ষটিতে খানদুই টেবিল, কয়েকখানি জীর্ণ আরামকেদারা সংরক্ষিত ছিল। তাহারা দেখিলেন, সেই কেদারাগুলি খালি পড়িয়া আছে, কিন্তু পরমুহুর্তেই একটি দীর্ঘাঙ্গী যুবতী পাশের একটি কক্ষ হইতে সেই কক্ষে প্রবেশ করিল। সে আগন্তুকগণকে তাহাদের প্রার্থিত পানীয় পরিবেশন করিতে লাগিল। হঠাৎ পণ্ডোরের প্রতি তাহার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইলে যুবতী তৎক্ষণাৎ অস্ফুষ্টস্বরে বিস্ময় প্রকাশ করিয়া হাতের বোতল নামাইয়া রাখিয়াই দ্রুতপদে সেই কক্ষ ত্যাগ করিল।
পয়েণ্ডার বলিয়া উঠিলেন, “কি আশ্চর্য। আমি যে এই যুবতীকে চিনি, কিন্তু পূর্বে উহাকে কোথায় দেখিয়াছিলাম—মনে করিতে পারিতেছি না। স্ত্রীলোকটি আমাকে চিনিতে পারিয়াছে—কিন্তু সে আমাকে চিনিবামাত্র সরিয়া পড়িল কেন, সন্ধান লইতে হইতেছে।”
পয়েণ্ডার কক্ষান্তরে প্রবেশ করিবার জন্য সেই দিকে চলিলেন, পাছৈ তিনি কোন বিপদে পড়েন, এই আশঙ্কায় ডড্লেও তাঁহার অনুসরণ করিলেন। কিন্তু পয়েণ্ডার সেই অন্ধকারের মধ্যে কোথায় অদৃশ্য হইয়াছেন, ডড্লে তাহা বুঝিতে পারিলেন না। তিনি চলিতে চলিতে দেখিতে পাইলেন, একটি কক্ষের দ্বার কয়েক ইঞ্চি খোলা রহিয়াছে, তাহার ভিতর হইতে আলো দেখা যাইতেছে। ডড্লে সেই কক্ষের দ্বারে দাড়াইয়া, কক্ষ মধ্যে প্রবেশ করিবেন কি না ভাবিতেছেন, এমন সময় সেই কক্ষের অভ্যন্তর হইতে কাহার কণ্ঠস্বর তাহার কর্ণে প্রবেশ করিল।—তিনি বুঝিতে পারিলেন, তাহা মিস্ এরসকাইনের মাতুল ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের কণ্ঠস্বর।
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন বলিতেছিলেন, “না, না, এ বড় ঝুঁকির কার্য। ইহাতে বিপদের আশঙ্কা অত্যন্ত প্রবল।”
একজন মোটা গলায় বলল, “যতবড় ঝুকির কাযই হউক—ইহাই তোমার একমাত্র সুযোগ। আর ইহাতে বিপদেই বা পড়িবে কেন? তুমিই ত বলিতেছিলে যেরূপে হউক-তোমার টাকা চাই।”
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন বলিলেন, “টাকা, হ্যাঁ, টাকা চাই বৈ কি। এই অর্থের উপর আমার জীবন-মরণ নির্ভর করিতেছে, উহা না পাইলে আমার ভবিষ্যতের সকল আশা-ভরসা বিলুপ্ত হইবে, আমার সর্বনাশ হইবে। লোকে সকল কথাই জানিতে পারিবে, আমি উন্নতির উচ্চতম সোপান হইতে অধঃপতনের শেষ সীমায় উপনীত হইব।—হ, টাকা চাই, কিন্তু কিরূপে তাহা পাইব?”
দ্বিতীয় ব্যক্তি মোটা গলায় বলিল, “আমার মতলবে চলিলেই তোমার আশা পূর্ণ হইবে। উইলখানি যে তোমার সম্পূর্ণ অনুকূল, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই ত?
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন বলিল, “হাঁ, আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস এই উইল আমার অনুকুল।
দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল, “তাহা হইলে আমি যাহা বলিব—তদনুসারে তোমাকে কাম করিতে হইবে, কিন্তু আমি পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড পারিশ্রমিক লইব, এ কথা ভুলিও না। এক পেনিও কম লইব না।”
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন বলিল, “কিন্তু আমার দায়িত্ব কত অধিক তাহ ভাবিয়া দেখিয়াছ কি?—তমার আর এমন কি অধিক দায়িত্ব আছে?
দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল, “কিছু ত আছে, আমার পক্ষে তাহাই যে অনেক। হা হউক, অগ্রে দরজাটা বন্ধ কর। দরজা খোলা থাকিলে আমাদের পরামর্শ অন্যে শুনে নিতে পারে।”
ঠিক সেই মুহূর্তে একজন লোক সেই দ্বারের নিকট আসিল, দেখিয়াই ডড়লে-দরজার পাশে লুকাইলেন। তিনি দেখিলেন, লোকটি দ্বার খুলিয়া বিস্ফারিত নেত্রে একবার বাহিরের দিকে চাহিল।সে ডড্লে কে বা অন্য কাহাকেও দ্বারপ্রান্তে দেখিতে না পাইয়া দ্বার বন্ধ করিয়া দিল। ডড্লেও নানা কথা চিন্তা করিতে করিতে—যে কক্ষ হইতে সেখানে গিয়াছিলেন, সেই কক্ষে প্রত্যাগমন করিলেন, কিন্তু ব্যাপার কি তাহা বুঝিতে পারিলেন না, তবে কথাগুলি তাঁহার স্মৃতিপটে অম্বিত রহিল।