নীতিকণা/সমুদ্র
সমুদ্র
গাঢ় নীল রত্নাকর এখন কেমন,
গভীর প্রশান্তভাব ক’রেছে ধারণ!
প্রাতঃকালে তপনের রক্তিম কিরণে,
ঝলমল করিতেছে সুন্দর বরণে।
বিশদ জলদ-মালা ইহার উপর,
ধরিয়াছে চন্দ্রাতপ অতি মনোহর।
নিঃশব্দে চলে’ছে ক্ষুদ্র তরঙ্গ-নিকর,
পবন করি’ছে খেলা তাহার উপর।
আবার রজনী-যোগে যবে চরাচরে,
সকল নিস্তব্ধ হয় আরামের তরে।
নির্ম্মল আকাশ হ’তে যবে নিশাকর,
ছড়ায় জগৎ-মাঝে সুবিমল কর।
সাগরের শান্ত বক্ষে তারা অগণন,
প্রতিবিম্ব-পাতে হয় শোভিত তখন।
উকি ঝুকি মারে গিয়া সাগর অন্তরে,
বসনে চুমকি প্রায় ঝিকি মিকি করে।
কিন্তু যবে সমীরণ হ’য়ে বেগবান,
সাগর-সলিল-রাশি করে কম্পমান।
সুনীল জলদজাল উঠি চারি ধারে,
গগনেরে আচ্ছাদন করে অন্ধকারে।
তখন গর্ব্বিত ভাব ধরিয়া সাগর,
রোষিত সিংহের মত কাঁপায় কেশর।
সমুদ্র উভয় কূল হইতে তখন,
বজ্রপাত-শব্দ সম করয়ে গর্জ্জন।
অচল সদৃশ দেহ করিয়া ধারণ,
উত্তাল তরঙ্গচয় করয়ে গমন।
কত যে অর্ণবযানে প্রচণ্ড পবন,
বিশাল সাগর-গর্ভে করে নিমগন।
মাঝে মাঝে নাবিকেরা আর্ত্তনাদ করে,
অৰ্দ্ধ-বিনির্গত-শ্বাসে ডুবি’ছে সাগরে।
তখন সে উগ্রভাব করি দরশন,
ভীত নাহি হয় কোন মানবের মন?
দেখিতে দেখিতে পুনঃ শান্ত ভাব ধরে,
মনোহর বীচি-মালা তর তর করে।
ধীরে ধীরে সেই ক্ষণে বহে সমীরণ,
কোথায় সে উগ্রভাব করিল গমন।
সাগর ভীষণ ভাব করিয়া বর্জন,
সুন্দর প্রশান্ত মূর্ত্তি করিল ধারণ।
হেন ভীষণতা আর শান্তি চমৎকার,
যাঁহার আজ্ঞায় হয়, তাঁ’রে নমস্কার।