কৃপণ

লভিতে অমূল্য ধন খনির ভিতরে,
ঘোর অন্ধকারে যা’রা পরিশ্রম করে।
তা’দের অদৃষ্ট বটে মন্দ অতিশয়,
কিন্তু কৃপণের চেয়ে কখনো ত নয়।
কৃপণ আপন ধন রক্ষিবার তরে,
তাহাদের শতগুণ পরিশ্রম করে।
হৰ্ষ-বিকসিত-নেত্রে মুদ্রাগুলি গণে,
শিহরে যদ্যপি কেহ যায় সেই ক্ষণে।
টাকার উপরে টাকা ঢালে রাশি রাশি,
চিন্তাযুক্ত কপোলেতে দেখা যায় হাসি।
শয্যা পাতি প্রাণসম সিন্দুকের পাশে,
শয়ন করিতে যায় আরামের আশে।
সহসা স্বপন দেখি জাগরিত হয়,
মনে করে বুঝি চোরে চুরি ক‘রে লয়।
তাড়াতাড়ি উঠে’ দেখে দ্বার রুদ্ধ আছে,
ত্বরা করি ছুটে’ যায় সিন্দুকের কাছে।
দেখিল সিন্দুক তা’র আছে নিরাপদ,
ঘুমা’তে না পারে তবু চিন্তিয়া বিপদ।

জনক-জননী-হীন বালক যখন,
দাঁড়াইয়া তা’র কাছে করয়ে রোদন।
সে সময় কৃপণের পাষাণ হৃদয়,
তাহার নয়ন-জলে আর্দ্র নাহি হয়।
বিধবা রমণী যদি হাহাকার করে,
দেখিয়া না হয় দয়া তাহার অন্তরে।
নিরাশ্রয় দীন যদি মরে অনাহারে,
তথাপি সে এক কড়া দিবে না তাহারে
প্রাণসম অর্থরাশি রাখিয়া যতনে,
নিরন্তর বদ্ধ থাকে আপন ভবনে।
যখন শমন আসি বিস্তারি বদন,
গ্রাস করে কৃপণেরে হায় রে! তখন,
তা’র শোকে নেত্রজল বিসর্জ্জন করে,
কা’রেও না দেখি হেন সংসার ভিতরে।
তখন সে ধনরাশি থাকে বা কোথায়,
এক কপর্দকো তা’র সঙ্গে নাহি যায়।
যা’র তরে কষ্ট ক’রে কাল কাটাইল,
তাহাও সময়ক্রমে অন্যের হইল।