নেতাজীর জীবনী ও বাণী/ঐতিহাসিক আগষ্ট প্রস্তাব
ঐতিহাসিক আগষ্ট প্রস্তাব
(নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতিতে যে আকারে গৃহীত হয়)
ওয়ার্কিং কমিটির ১৯৪২ সালের ১৪ই জুলাই এর প্রস্তাব নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি অনুমোদন ও সমর্থন করিতেছে। ...ভারতবর্ষের জন্য এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান অবিলম্বে প্রয়োজন। ব্রিটিশ শাসন ভারতকে পঙ্গু করিয়া তাহার অবনতি ঘটাইতেছে। ইহার ফলে ভারতবর্ষের আত্মরক্ষার ও বিশ্বের মুক্তি সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করিবার ক্ষমতা ক্রমশঃ লোপ পাইতেছে।
স্বাধীনতা অপেক্ষা পরাধীন ও ঔপনিবেশিক দেশগুলির উপর আধিপত্য স্থাপন এবং ধনতান্ত্রিক প্রথা ও উপায়কে কায়েম করিবার চেষ্টার উপরই মিত্রপক্ষীয় জাতিপুঞ্জের নীতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। সাম্রাজ্যের অধিকার ইংরেজকে শক্তি দান করে নাই বরং উহা অভিশাপ স্বরূপ হইয়াছে। আধুনিক সাম্রাজ্য বাদের চরম নিদর্শন ভারতবর্ষ সমস্ত প্রশ্নের জটিল গ্রন্থি স্বরূপ কারণ ভারতের স্বাধীনতার মাপকাঠিতেই ব্রিটেন ও মিত্রজাতিগুলিকে পরিমাপ করিতে হইবে। ভারতের স্বাধীনতা, এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের মনে আশা ও উৎসাহ আনিবে।
সুতরাং বর্ত্তমান বিপদের দিনে (যুদ্ধের সময়ে) ভারতের স্বাধীনতা এবং ভারতে ব্রিটিশ প্রভুত্বের অবসান অত্যাবশ্যক। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন আশ্বাস বা নিশ্চয়তা দ্বারা বর্ত্তমান সমস্যার সমাধান হইবে না বা বর্ত্তমান বিপদের প্রতিকার হইবে না। লক্ষ লক্ষ লোকের যে প্রেরণা ও শক্তি অবিলম্বে যুদ্ধের প্রকৃতি পরিবর্ত্তন করিতে পারে, জনগণ একমাত্র এখনই স্বাধীনতা লাভ করিলেই সে শক্তি স্ফুরিত হইতে পারে।
সুতরাং ভারত হতে বৃটিশ শক্তি অপসারণের জন্য যে দাবী করা হইয়াছে, নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি পূর্ণ গুরুত্ব আরোপ করিয়া উহা পুনরুখাপন করিতেছে। ভারতের স্বাধীনতা ঘোষিত হইলে এক সাময়িক গভর্ণমেট গঠন করা হইবে এবং স্বতন্ত্র ভারত সম্মিলিত জাতিসমূহের মিত্ররাষ্ট্রে পরিণত হইয়া স্বাধীনতার সংগ্রাম প্রচেষ্টায় তাহাদের সুখ দুঃখের সমান অংশীদার হইবে। একমাত্র এ দেশের প্রধান পার্টি ও দলগুলির সহযোগীতায়ই সাময়িক গভর্ণমেণ্ট গঠিত হইতে পারে। সুতরাং ভারতের জনগণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমূহের প্রতিনিধিদের লইয়া এই গভর্নমেণ্ট গঠিত হইবে ও তাহা মিশ্র গভর্নমেণ্ট হইবে। গভর্ণমেণ্টের প্রথম কার্য্য হইবে দেশ রক্ষার ব্যবস্থা করা এবং মিত্রশক্তিবর্গের সহিত সহযোগীতায় সর্ব্বপ্রকারের হিংস ও অহিংস উপায়ে শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করা। ক্ষেত্রে, কারখানায় এবং অন্যান্য স্থানে যাহারা পরিশ্রম করে, মূলতঃ সশস্ত্র ক্ষমতা ও অধিকার তাহাদেরই হইবে এবং সাময়িক গভর্ণমেণ্ট ইহাদের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করিবেন।
গণপরিষদ গঠনের উদ্দেশ্যে, সাময়িক গভর্নমেণ্ট একটি পরিকল্পনা স্থির করিবেন এবং সেই গণপরিষদ ভারত শাসনের জন্য সকল শ্রেণীর গ্রহণযোগ্য একটি শাসনতন্ত্র প্রস্তুত করিবেন। কংগ্রেসের মতানুসারে সেই শাসনতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্র হইবে। যে সকল রাষ্ট্রলইয়া যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হইবে, তাহাদিগকে যত অধিক সম্ভব স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা দেওয়া হইবে। কেন্দ্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর যাহা অবশিষ্ট থাকিবে যে সকল রাষ্ট্র লইয়া যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হইবে, সেই ক্ষমতা সেই সকল রাষ্ট্রে বর্ত্তিবে। পারস্পরিক সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া এবং আক্রমণ প্রতিরোেধরূপ সাধারণ কর্ত্তব্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে পরস্পর সহযোগিতা করিবার জন্য ঐ সকল স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ সম্মিলিত আলোচনার দ্বারা ভারতের সহিত সম্মিলিত জাতিসমূহের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধের বিষয় স্থির করিবেন। স্বাধীনতা লাভ করিলে ভারত জনসাধারণের সম্মিলিত ইচ্ছা ও শক্তি দ্বারা পুষ্ট হইয়া, কার্যকরীভাবে আক্রমণ প্রতিরোধ করিতে সমর্থ হইবে।
ভারতের স্বাধীনতা এশিয়ার বৈদেশিক শাসনাধীন অন্যান্য সকল জাতীর স্বাধীনতার প্রতীক এবং অগ্রদূত হইবে। ব্রহ্ম, মালয়, ইন্দোচীন, ডাচ ইণ্ডিজ, ইরাণ ও ইরাক অবশ্যই পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করিবে
বর্ত্তমান সঙ্কট মুহূর্ত্তে নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি প্রধানতঃ ভারতের স্বাধীনতার এবং ভারতরক্ষার সহিত সংশ্লিষ্ট। কিন্তু কমিটির অভিমত এই যে, জগতের ভবিষ্যৎ শান্তি, নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ উন্নতির জন্য বিশ্বের স্বাধীন জাতিসমূহের মৈত্রীবন্ধন একান্ত প্রয়োজন। এতদ্ভিন্ন অন্য কোনও ভিত্তিতে আধুনিক জগতের সমস্যসমূহের সমাধান হওয়া সম্ভবপর নহে। এই ধরণের বিশ্বরাষ্ট্র সঙ্ঘ গঠিত হইলে, যাহাদের দ্বারা সঙ্ঘ গঠিত, সেই সকল জাতীর স্বাধীনতা নিরাপদ হইবে। বিশ্বরাষ্ট্র আক্রমণ প্রতিরোধ, এক জাতি কর্ত্তৃক অন্য জাতিকে শোষণ, সংখ্যালঘিষ্ঠদিগের সংরক্ষণ, অনগ্রসর অঞ্চল ও অধিবাসীদিগের উন্নতিবিধান এবং সর্ব্বসাধারণের মঙ্গলের জন্য জগতের ঐশ্বর্য্য আহরণ করিবে। এইরূপ বিশ্বরাষ্ট্র গঠিত হইলে কোন দেশেই সৈন্য দরকার হইবে না। একটি বিশ্বরাষ্ট্র বাহিনী পৃথিবীর শান্তি রক্ষা করিবে।
এইরূপ বিশ্বরাষ্ট্র সঙ্গে স্বাধীন ভারত সানন্দে যোগদান করিবে এবং আন্তর্জাতিক সমস্যাবলীর সমাধানে সমমর্যাদার ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সহিত সহযোগিতা করিবে।
যে সকল জাতি ফেডারেশনের মূলনীতিতে বিশ্বাসী হইবেন, তাঁহাদের সকলেরই উহাতে যোগদানের অধিকার থাকিবে; কিন্তু বর্ত্তমানে যুদ্ধের অবস্থা বিবেচনায় প্রারম্ভে মাত্র সম্মিলিত জাতিসমূহ লইয়া এই ফেডারেশন গঠিত হইবে। বর্ত্তমানে এরূপ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইলে যুদ্ধের উপর, এক্সিসপক্ষীয় রাষ্ট্রসমূহের জনগণের উপর এবং ভবিষ্যতে যে শান্তি স্থাপিত হইবে তাহার উপর উহার বিশেষ ফল হইবে।
ভারতের স্বাধীনতার দাবী উত্থাপিত হইলেও পরিষ্কার দেখা যায়, এই দাবী সম্পর্কে বৃটিশ গভর্ণমেণ্টের প্রতিক্রিয়া, বৈদেশিক সংবাদ পত্রসমূহের বিপথ চালিত সমালোচনাবলী ভারতের দাবীর বিরোধিতা করিতেছে।
বৈদেশিক মহলে ওয়ার্কিং কমিটির আবেদনের যে সমালোচনা করা হইয়াছে, উহা হইতে ভারত ও পৃথিবীর প্রয়োজন সম্পর্কে তাঁহাদের অজ্ঞতা প্রকাশ পাইয়াছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের স্বাধীনতার দাবী সম্পর্কে তাঁহাদের বিরুদ্ধতার মনোভাবও প্রকাশ পাইয়াছে। এই সমস্ত বৈদেশিকদের প্রভূত্ব করার মনোভাব জাতিগত শ্রেষ্ঠতার মনোভাবেরই নিদর্শন। রাষ্ট্রীয় সমিতি জাতিকে আর বাধাদান করিতে পারেন না। সুতরাং গত ২২ বৎসর শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের ভিতর দিয়া দেশ যে অহিংসা শক্তি অর্জ্জন করিয়াছে, দেশ যাহাতে সমগ্রভাবে সেই শক্তি প্রয়োগ করিতে পারে, তজ্জন্য নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয়সমিতি, স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীনতায় ভারতবর্ষের যে অবিচ্ছেদ্য অধিকার রহিয়াছে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে অহিংস পন্থায় যথাসম্ভব ব্যাপকভাবে গণ-আন্দোলন প্রবর্ত্তনের প্রস্তাব অনুমোদন করিতেছেন। এই সংগ্রাম অনিবার্য্যরূপে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত হইবে এবং নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি তাঁহাকে নেতৃত্ব গ্রহণ করিতে এবং যে সমস্ত পন্থা অবলম্বন করিতে হইবে, সেই সমস্ত পন্থায় জাতিকে পরিচালিত করিবার জন্য তাঁহাকে অনুরোধ করিতেছে।
নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি ভারতবর্ষের জনসাধারণের ভাগ্যে যে সমস্ত বিপদ এবং দুঃখকষ্ট ঘটিবে, তাঁহাদিগকে সেই সমস্ত বিষয় এবং দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হইবার, গান্ধীজীর নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ হইয়া থাকিধার এবং ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শৃঙ্খলপরায়ণ সৈনিক হিসাবে তাঁহার (গান্ধীজীর) নির্দ্দেশ পালন করিবার জন্য অনুরোধ করিতেছে। তাঁহাদিগকে অবশ্যই এই কথা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, অহিংসাই এই আলোন্দালনের ভিত্তি। এমন সময় আসিতে পারে যখন আর আমাদের জনগণের নিকট নির্দ্দেশ পৌঁছাইয়া দেওয়া সম্ভবপর হইবে না এবং কোন কোন কংগ্রেসকমিটি কাজ চালাইতে পারিবে না। যখন এইরূপ অবস্থা ঘটিবে তখন যে সমস্ত নরনারী এই আন্দোলনে যোগদান করিবেন, তাঁহাদের প্রতেকেই সাধারণ নির্দেশাবলীর গণ্ডির ভিতরে থাকিয়া নিজ নিজ কাজ চালাইয়া যাইবেন। স্বাধীনতাকামী এবং স্বাধীনতা লাভের চেষ্টায় তৎপর প্রত্যেক ভারতবাসীকে তাঁহার নিজের পথপ্রদর্শক হইয়া যে বন্ধুর পথের কোথাও বিশ্রামের স্থান নাই এবং ভারতবর্ষের মুক্তি এবং স্বাধীনতা অর্জ্জনের পর যে পথের অবসান হইয়াছে সেই পথ দিয়া অগ্রসর হইতে হইবে।
স্বাধীন ভারতবর্ষের ভারত-শাসন-ব্যবস্থা কিরূপে হইবে সে সম্বন্ধে নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি তাহার নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করিবার পর উপসংহারে সুস্পষ্টভাবে সকলকে এই কথা জানাইয়া দিতে চাহেন যে, গণ-আন্দোলন আরম্ভ করিয়া ইহার কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতা লাভ করিবার কোন উদ্দেশ্য নাই। ক্ষমতা যখন হস্তগত হইবে, তখন ইহা ভারতবর্ষের সমস্ত জনসাধারণের হাতেই থাকিবে।”
এই প্রস্তাব গৃহীত হইবার পর ৯ই আগষ্ট সরকার বাহাদুর মহাত্মা গান্ধীকে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ও সদস্যগণকে এবং প্রত্যেক প্রদেশের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতাদের গ্রেপ্তার করে। সমগ্র ভারতে সমস্ত কংগ্রেস প্রতিষ্ঠানগুলিকে বে-আইনী ঘোষণা করা হয়। ইহার ফলে সমস্ত দেশব্যাপী এক বিরাট আন্তর্বিপ্লব দেখা দেয়। সিপাহী বিদ্রোহের পর এইরূপ ব্যাপক বিদ্রোহ ভারতে আর হয় নাই। এই বিপ্লবের কোন নেতা ছিল না, কোন পরিকল্পনা বা নির্দেশ ছিল না, ইহাতে কোন সৈন্য ছিল না, কোন অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। ইহা স্বতঃ স্ফূর্ত গণ-আন্দোলন। বহুলোক এই আন্দোলনে স্বেচ্ছায় যোগদান করে। মনে রাখিতে হইবে প্রথমে জনসাধারণ অহিংস উপায়ে “ভারত ছাড়” আন্দোলন করে। কিন্তু গভর্ণমেণ্ট অহিংস আন্দোলনকে হিংস উপায়ে প্রতিরোধ করেন। তখন জনসাধারণ অহিংস উপায় পরিত্যাগ করিয়া স্থানে স্থানে হিংস উপায় অবলম্বন করে। ভারতের বহুস্থানে রেলওয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। টেলিগ্রাফের টেলিফোনের ও বৈদ্যুতিক আলোর তার কাটিয়া দেওয়া হয়। বহু পোষ্টাফিস ও থানা পুড়াইয়া দেওয়া হয়, আক্রান্ত বা লুষ্ঠিত হয়, রাস্তাসমুহের ক্ষতিসাধন করিয়া অচল করা হয়। বড় বড় সহরে ট্রামগাড়ী মটর ট্রাকে পোড়াইয়া দেওয়া হয়। নেতৃবর্গের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দোকানপাট স্কুল কলেজ কলকারখানা বন্ধ হয়। ছাত্র ছাত্রী স্কুল কলেজ ছাড়িয়া দিনের পর দিন এই আন্দোলনে যোগ দেয়। চাষী, মজুর, কাজ ছাড়িয়া দলে দলে “ইংরাজ ভারত ছাড়” “কর না হয় মর” এই ধ্বনি করিয়া আকাশ বাতাস মুখরিত করে। বড় বড় কলকারখানায় ধর্ম্মঘট হইয়াছিল। আইনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিয়া ছোট বড় শোভাযাত্রা বাহির করা হইয়াছিল। কয়েক জায়গার কোর্টে, পোষ্টাফিসে ও রেল ষ্টেশনে হানা দিয়া কাগজ পত্র পোড়াইয়া দেওয়া হয়। কয়েক স্থানে রেলপথের ক্ষতি করিয়া ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। অনেক জায়গায় ইউনিয়ন বোর্ড অফিস, আফগারি দোকান, হাইস্কুল, আয়কর অফিস, রেলওয়ে ষ্টেশন আগুন দিয়া পোড়াইয়া দেওয়া হয়। কয়েকখানি ট্রেণও আগুণে পোড়াইয়া দেওয়া হয়। কয়েকজন পুলিশ অফিসার, কনেষ্টবল ও হাকিম নিহত হয়। এই সকল কার্য্যের প্রতিরোধের জন্য সরকার বাহাদুর অমানুষিক অত্যাচার করিয়াছিলেন। পুলিশ অনেক সভা ও শোভাযাত্রায় লাঠি চালাইয়া ছত্রভঙ্গ করে। অনেক স্থলে পুলিশ ও মিলিটারী গুলি চালায়, ইহাতে বহুলোক নিহত ও আহত হয়। পুলিশ অনেক স্থলে দলপতিদের ঘরে আগুন দিয়া পোড়াইয়া দেয়। সরকারের হিসাবে দেখা যায়—৯৪০ জন নিহত, ১৬০০০ হাজার আহত হয়, পুলিশ ৪৭০ জায়গায় গুলি চালায়, ৬০২২৯ জন লোক গ্রেপ্তার হয়, বহু গ্রাম আগুন লাগাইয়া পোড়াইয়া দেওয়া এবং লোকের বনভূমি লাঙ্গল দিয়া চাষ হয়।