নেতাজীর জীবনী ও বাণী/দলাদলি ও বাংলার ভবিষ্যত
ঘ
দলাদলি ও বাঙ্গলার ভবিষ্যৎ
[ মান্দালয় জেল হইতে ]
আজ বাঙ্গলার সর্বত্রই দলাদলি এবং ঝগড়া, যেখানে কাজকর্ম যত কম সেখানে ঝগড়া তত বেশী। শুধু এই কথা ভাবি ঝগড়া করিবার জন্য এত লোক পাওয়া যায় কিন্তু মিলাইতে পারে এরকম একজন লোকও কি আজ সারা বাঙ্গলার মধ্যে পাওয়া যায় না! এই দলাদলির জন্য বাংলা আজ শ্রীযুক্ত অনিলবরণ রায়ের মত সেবক হারাইয়াছে। আরও কয়জনকে হারাইবে তাহা কে বলিতে পারে? বাঙ্গালী আজ অন্ধ কলহে বিষাদে নিমগ্ন, তাই একথা বুঝিয়াও বুঝিতেছে না, নিঃস্বার্থ আত্মদানের কথা কোথাও শুনিতে পাই না।... অত বড় একটা প্রাণ (দেশবন্ধু) নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া মহাশূন্যে মিলাইয়া গেল। আগুনের ঝলকার মত ত্যাগ-মূর্ত্তি পরিগ্রহ করিয়া বাঙ্গালীর সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করিল। সেই দিব্য আলোকের প্রভাবে বাঙ্গালী ক্ষণেকের জন্য স্বর্গের পরিচয় পাইল। কিন্তু আলোকও নিবিল, বাঙ্গালী পুরাতন স্বার্থের গণ্ডীতে আশ্রয় লইল।...আজ বাঙ্গলার সর্বত্র কেবল ক্ষমতার জন্য কড়াকড়ি চলিতেছে। যার ক্ষমতা আছে সে ক্ষমতা বজায় রাখিতেই ব্যস্ত; যার ক্ষমতা নাই সে ক্ষমতা কাড়িবার জন্য বদ্ধপরিকর। এই ক্ষমতালোলুপ রাজনীতিকবৃন্দের ঝগড়া বিবাদ ছাড়িয়া নীরবে আত্মোৎসর্গ করিয়া যাইতে পারে; এমন কর্মী কি বাঙ্গলায় আজ নাই? সমাজের বর্তমান অবস্থা যদি চলে তবে বাঙ্গলার বহু নিঃস্বার্থ কর্ম্মীকে ক্রমে ক্রমে অনিলবরণের পন্থা অবলম্বন করিতে হইবে।........আজ বাংলার অনেক কর্ম্মীর মধ্যে ব্যবসাদারী পাটোয়ারী বুদ্ধি বেশ জাগিয়া উঠিয়াছে। আমি তো জানিতাম সেবার আদর্শ এই।
“দাও দাও ফিরে নাহি চাও,
থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল"।
দুঃখের কথা, কলঙ্কের কথা, ভাবিতে গেলে বুক ফাটিয়া যায়, প্রতিকারের উপায় নাই, করিবার ক্ষমতা নাই, তাই অনেক সময়ে ভাবি চিঠিপত্র লেখা বন্ধ করিয়া বাহ্যজগতের সহিত সকল সম্বন্ধ শেষ করিয়া দিই। পারি তো দেশবাসীর পক্ষ হইতে আমরা লোকচক্ষুর অন্তরালে তিলে তিলে জীবন দিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিয়া যাইব।
আজ প্রায় ১২।১৪ বৎসর ধরিয়া যে গভীর বেদনা তুষানলের মত আমাকে দগ্ধ করিতেছে তাহা দূর করিবার জন্য আমি এই কায্যে (সেবাগ্রামের কায্যে) হস্তক্ষেপ করিয়াছি। আমি কংগ্রেসের কাজ ছাড়িতে পারি—তবুও সেবাগ্রামের কাজ ছাড়া আমার পক্ষে অসম্ভব। “দরিদ্রনারায়ণের” সেবার এমন প্রকৃষ্ট সুযোগ আমি কোথায় পাইব?