নেতাজীর জীবনী ও বাণী/নারী বাহিনী
নারীবাহিনী
যুগ যুগ ধরে ভারতের নারী স্নেহে, মাধুর্য্যে প্রীতিতে ঘরে ঘরে শান্তির অর্থ রচনা করেছে কিন্তু তাদের চিরন্তন কল্যাণীরূপের পিছনে যে শক্তির উৎস লুকিয়ে ছিল কে তার খোঁজ রাখত! বিদেশী শাসনের নিপীড়নে, সে ভয়ঙ্কর শক্তি আজ ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। আজ তারা দেখাচ্ছে ভারতের নারী শুধুই স্নেহ-মমতার উৎস নয়—তারা শক্তির উৎস। গৃহকোণই শুধু তাদের আশ্রয় নয়—সংগ্রাম ক্ষেত্রেও তারা দাঁড়াতে পারে শক্রর সম্মুখে পুরুষের সাথে।
সেবায় নারী—আজাদ হিন্দ বাহিনীতে প্রবাসী ভারতীয় নারীগণ ডাঃ লক্ষী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে উঠল। ভারতের নারী গিয়ে দাঁড়াল পুরুষের পাশে,—তাদের দেবে আশা—দেবে উদ্দীপনা,—রোগ শয্যায় মুছিয়ে দেবে রুগ্নের বেদনা, তারা অভয় দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলবে। ওরা সব ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের দল—লক্ষ্মী স্বামীনাথন আর বেলা দত্ত, রেবা সেন আর মিস ভট্টাচার্য। লক্ষ্মী স্বামীনাথন্ ডাক্তার, —তাঁর প্রধান কাজ হল হাঁসপাতালে। কুমারী বেলা দত্তের বয়স যোল। তার উপর দেওয়া হল আর এক হাঁসপাতালের দায়িত্ব। দিনের পর দিন সে চলে শুশ্রুষা করে, ঝাঁকে ঝাঁকে শত্রু বিমান বোমা বর্ষণ করে যায় মাথার উপর দিয়ে। অনেকে সরে গেল নিরাপদ আশ্রয়ে। কিন্তু সে যাবে কেমন করে তার রুগ্ন ভাইদের ফেলে? মৃত্যুর সম্মুখে দাড়িয়ে সে বোমা বর্ষণ উপেক্ষা করে চলল রোগীদের সেবা করে। শেষে একবার তাকে উদ্ধার করা হল এক ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে।
যুদ্ধে নারী—কিন্তু শুধু রুগ্ন আর আহতদের পরিচর্যা করে নারীরা তৃপ্তি পেল না। তারা চায় ভাইদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে—তারা জানে অস্ত্র ধরতে—সে শিক্ষা নেতাজী তাদের দিয়েছেন তাই আঙ্গুল কেটে তারা নেতাজীর কাছে লিখে পাঠান রক্তের লিখন।
তাদের সে আবেদন মঞ্জুর হল। সিপাহী বিদ্রোহের বীরঙ্গনা রাণী লক্ষ্মীর নামে গড়ে উঠল “ঝাঁসীর রাণী বাহিনী” স্বাধীনতার অদম্য আকাঙ্খায় আজ তারা নববলে বলীয়ান। তার জানে সে পথ বন্ধুর—সে পথে আসবে দুঃখ—আসবে মৃত্যু। কিন্তু তা বলে ত বসে থাকলে চলবে না—সে পথই যে মুক্তির পথ। তারা পায়ে পর্ল রবারের বুট, শাড়ীর বদলে গায়ে উঠল ফুলপ্যাণ্ট আর খাকি সার্ট, মাথায় ফেটিল টুপি।...“ঝাঁসীর রাণী বাহিনী” যুদ্ধ করে ইম্ফলের সমতল ক্ষেত্রে আর আসামের বনে বনে। নারীসেনাদল মৌলমেনের নিকট প্রায় ১৬ ঘণ্টা মিত্রপক্ষের সৈন্যগণের সহিত যুদ্ধ করে ও আহত হয়। মিত্রবাহিনী ভারী কামান এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা যুদ্ধ করে কিন্তু নারীবাহিনী রাইফেল ও বুলেট দ্বারা যুদ্ধ চালায় এবং মিত্র বাহিনীর গতি রােধ করে। মাতৃভূমির কোলে এসে তারা দাঁড়াল কিন্তু ভাগ্য বিপর্যয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের চলল না—হট্তে হ’ল। তাদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল; বিদেশী শক্তির সাথে যুদ্ধে নিতে হল পরাজয় বরণ করে। কিন্তু সত্যই কি তারা পরাজিত? যে দুঃখ লাঞ্ছনা তারা বরণ করেছে তার কোনও মূল্যই কি তারা পাবে না? ভারতের ঘরে ঘরে তাদের স্মৃতি চিরদিনের জন্য আঁকা হয়ে থাকবে।