নির্ব্বাণ।

জিজ্ঞাসু—  কপিল ঋষি-উষিত পুরী
ভূষিত করি কিরণে,
দেবতা ও কে আসিল লোকে সঞ্চারি?
অমর বালা জ্যোতির মালা
দোলায়ে নভ-তোরণে
নমিছে রাঙ্গা আঙ্গুলে বাঁধি অঞ্জলি!

জাগ্রত—  কুমার আজি রাজাধিরাজ
বেশে প্রবেশে ভবনে;
দেব ও দেবী, এস গো অভিনন্দিতে;
তরিবে যদি ভব জলধি
হেরি সুগতে নয়নে,—
জগতজন, এস, চরণ বন্দিতে।

(কথা)


শুদ্ধোদন, দেবী গোতমী
লভি আমনি বার্ত্তা—
আকুল আঁখি জুড়াল, দেখি নন্দনে।



মরণ-গত  অমৃত-পথ
হেরিল যেন আত্মা;
সুধার ধারা ঝরে অধীর ক্রন্দনে।
সজল আঁখি যুগল মুছি——
অর্দ্ধ-অবগুণ্ঠিতা,—
হেরি’ পতির জগদতীত দীপ্তি,
চরণ মূলে  নয়ন তুলে
রহিল ধূলি-লুণ্ঠিতা;
শাক্যকুল লভিল নব তৃপ্তি।
উদ্ধোধিয়া মুগ্ধ প্রাণী
বুদ্ধবাণী ক্ষরিল;
ঝরিল ভবে স্নিগ্ধ নব শান্তি;
বিরহ-শোক-  বিগত লোক,
জীর্ণ জরা মরিল;
নাহিরে দেহে শ্রান্তি —মনে ভ্রান্তি।


(শুদ্ধোদন)

আমি জনক; পালক তুমি!
কুল-পাবন পুত্র!
শুষ্ক মরু, করুণাধারে ভরিলে।

মুছিয়ে বাধা, আঁধার ধাঁধা,
অন্ধে দিলে নেত্র;
জীবন-তরু। তরুণ করি গড়িলে।

(গোতমী)[]


এস, নয়ন পুতলি সুত,
উতলা চিত মাঝারে!
করিয়াছিলে স্তন্যপানে ধন্যা!
আজি যে তব ধর্ম্মে, নব
জন্ম লভি’, বাছারে,
হইনু,—লোক জনক! তব কন্যা!

(কথা)

শ্রীপদ-সেবা করিতে ষেবা
ছিলরে অধিকারিণী-
অগাধ যা’র চিত্ত ভরা ভক্তি,
চাহি’ শ্রীমুখ পানে, সে মূক
ভাষায় যেন কামিনী
যাচিল প্রাণে প্রাণেশ সেবা-শক্তি।

যাচিল, প্রিয় রাহুল তরে,
বহুল প্রীতি-বিত্ত,
বিনয়ে শীলে ভূষিতে শিশু সন্তান;
যেন রে সুত, সাধনা-পূত
দৃষ্টি লভি’ নিত্য,
পতির, মত লভে অমৃত নির্ব্বাণ।

(গাথা)

গাহে  কাশ্যপ মুনি[] শাশ্বত বাণী,
বিস্মিত শুনি বিশ্ব।
রাজা অধিরাজ, ভিখারী-সমাজ,
হইল সুগত-শিষ্য।
ভণে  পুণ্য বিনয় বর্ণন করি
অগ্রগণ্য উপালি।
কি গৃহী, শ্রমণ, কিবা ব্রাহ্মণ,
ধন্য শুনি সে গাথালী।
কহে  আনন্দ দেব-বন্দিত কথা;
স্তম্ভিত নর, মন্ত্রে।

অতীব শুদ্ধ বিবিধ সুত্ত
ধ্বনিত হৃদয় যন্ত্রে।
গাহে  থের থেরী[] পূত গাথা অগণন।
বাধা কোথা ব্যথা ভয়ে?
জীবনে বর্ম্ম শ্রীঅভিধর্ম্ম(২),
জন্ম-মরণ-জয়ে।



  1. এই স্থানের সম্পূর্ণ ভাবটি স্বয়ং দেবী গোতমী রচিত গাথা হইতে গৃহীত। অপদান,৩৪-৩৬।
  2. কাশ্যপ, আনন্দ ও উপালি, ভগবানের প্রধান শিষ্য ত্রয়।
     উঁহারাই বিনয় পিটক, সূত্ত পিটক ও অভিধন্ম পিটকের পাঠ নিদ্দিষ্ট করিয়া গিয়াছেন।
  3. -বৃদ্ধ পুরুষ ও রমণীর নাম থের ও খেরী; ইঁহাদের গাথা খুদ্দক নিকায়ে আছে।