পঞ্চক মালা/শীত বাসরে
শুষ্ক পত্র মর্ম্মরিয়া নিশ্বসিছে কাননে পবন,—
কোথা সে শারদ শ্যামলতা?
কোথা সে বসন্তভুক্ত আতি স্নিগ্ধ ফুল্ল উপবন?
পরিমলে কুসুমিতা লতা?
প্রকৃতির প্রফুল্লতা, সুখগাথা, লুকাল কোথায়
শীত-ক্লিষ্ট নিস্তব্ধ বিজনে?
যৌবন গিয়াছে মরে, মর্ম্মভরা প্রেমের ব্যাথায়;
জরা আজি বিচারে জীবনে।
আসিবে না সে যৌবন, ফিরে নিয়ে সুখ-উন্মাদনা?
কেন তারে চাও তুমি কবি?
শ্বসিওনা বহি বুকে সুষমার বিরহ-বেদনা,
ভোল সে কোমল শ্যাম-ছবি।
তীব্র দাহে কোথা তৃপ্তি? ক্ষিপ্ততায় কোথা প্রফুল্লতা?
বাঁধ আজি স্থিরতায় প্রাণ।
জলদ-গর্জ্জনে প্রাণে হানে ঘন দীপ্ত বিদ্যুল্লতা;
কি লাভ, বিলাপে গাহি গান?
দুঃখ শোকে নিপীড়িত, প্রপীড়িত শত অত্যাচারে,
ঘরে ঘরে কাঁদে নর নারী;
সুগতের মুক্তি-মন্ত্র শুনাইয়া শান্ত কর তারে;
কাছে গিয়ে মোছ অশ্রুবারি।
উন্মনা কল্পনা নিয়ে, ওহে কবি, রচিয়োনা গান;
দীপ্তি ওর—চঞ্চল্তা টুক্।
কোরো না উন্মাদ তুমি ক্ষিপ্তস্বরে বিশ্বেব পরাণ;
বিলাস লালসা নহে সুখ।
হোক্ শুষ্ক, কিম্বা পুষ্পে সুভূষিত যত তরুলতা,
শরত-বসন্ত-বর্ষা-শীতে;
চঞ্চল বাসনা সহ ঝরিয়া পড়ুক তরুণতা;
তাজি তায় দুঃখ নাই চিতে।
মেঘ-মুক্ত প্রশান্ততা দীপ্ত হোক্ প্রীতির কিরণে,
ক্ষুদ্র সুখ-দুঃখ উড়ে যাক্;
নবজন্ম লভি’ প্রীতি,—স্বার্থের মরণে-—
বক্ষ আর বিশ্ব জুড়ে থাক্।