পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/৬৮

◄  ৬৭
৬৯  ►
৬৮
মান্দালয় জেল
১২।২।২৫

পরম পূজনীয় মেজ দাদা,

 আপনার ২৪।১।২৫ তারিখের পত্র গতকাল মাত্র পাইয়াছি।

 এখানে আসার পর কর্পোরেশনের সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ নাই। সভার কার্য্যবিবরণী বা মিউনিসিপ্যাল গেজেট কিছুই আমি পাইতেছি না। * * যদি আপনি মাদক বর্জ্জন বিলটি উত্থাপন করেন তাহা হইলে আনন্দিত হইব। ইহা দরকার এবং দেশবাসী ইহা সমর্থনও করিবে।

 * * *

 কর্পোরেশনের পাম্পিং স্টেশনে অথবা জল সরবরাহের যে কোনও কেন্দ্রে ইঞ্জিন ড্রাইভারের পদের জন্য এন্তাজ আলি নামে একটি লোক দরখাস্ত করিয়াছিল। বাঁশের মত গোলাকৃতি একটি টিন কেসের মধ্যে পুরিয়া সে তাহার দরখাস্তের সঙ্গে প্রশংসাপত্রগুলি আমাকে দিয়াছিল। উহা আমার অফিসে হয় টেবিলের উপর নতুবা আমার চেয়ারের বাঁ দিকে whatnot-এর মধ্যে আছে। টিন কেসটি দেখিতে এত অদ্ভুত যে, উহা ভুল হইবার নয়। লােকটি আমাকে ঐ প্রশংসাপত্রগুলির কথা লিখিয়াছে। যত শীঘ্র সম্ভব উহা তাহাকে ফেরৎ পাঠাইবার ব্যবস্থা করিবেন; কারণ উহা না পাইলে সে অন্য কোথাও চাকরির জন্য দরখাস্ত করিতে পারিতেছে না *  *  *

 এখানকার পত্রিকাগুলিতে ঘাটতি বাজেটের খবর প্রকাশিত হইয়াছে; উহা দেখিয়া খুবই বিস্মিত হইয়াছি। আপাততঃ নূতন কোনও উন্নয়নমূলক কাজ শুরু না করিলে খরচ অনায়াসে কমানো যাইতে পারে; তাহা হইলে আয়-ব্যয়ের সমতাও রক্ষা হইবে। আশা করি উহা চূড়ান্তভাবে গৃহীত হইবার পূর্ব্বেই কর্পোরেশন “ব্যয় সঙ্কোচের” নীতিটি ঠিকমত কাজে লাগাইবে।

 আমার মনে হয় আপনারা কেহ কেহ ৩৮।১ নং বাড়ীতে গিয়া বাস করিলে ভাল হয় নতুবা উহা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকিবে না।

 *  *  *

 স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইনের একটা কপি আমার দরকার; উহাতে জেলা বাের্ডের গঠনতন্ত্র লিখিত আছে।

 বিজয় কাকার সঙ্গে আমি একমত যে, লােকাল বাের্ডের প্রার্থিরূপে নির্ব্বাচিত হওয়াই অনেক সুবিধাজনক * *

 এ প্রসঙ্গে আরও একটি কথা আমি বলিতে চাই, তাহা এই যে, যদি আমার জেলে থাকাকালে বঙ্গীয় আইনসভার নির্ব্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহা হইলে আমি কলিকাতার উত্তর অথবা দক্ষিণ যে কোনও অঞ্চল হইতে উহাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে চাই * * বাস্তব অসুবিধা কিছু কিছু থাকিলেও আমার মনে হয় না যে, কারাবন্দী হিসাবে জেলা বোর্ড বা আইন সভার নির্ব্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আইনগত কোনও বাধা আছে।

 * * *

 কলিকাতার রাস্তাঘাটের অবস্থা পর্য্যবেক্ষণের জন্য কর্পোরেশন যে কমিটি নিয়োগ করিয়াছে তাহার সদস্য কে কে হইয়াছেন? এ বিষয়ে আমি নিজে যাহা লক্ষ্য করিয়াছি সে সম্বন্ধে একটি নোট কমিটির নিকট পেশ করিবার জন্য তৈরী করিতেছি; আশা করি আগামী ডাকেই উহা পাঠাইতে পারিব।

[* * সেন্সর কর্ত্তৃক কাটিয়া দেওয়া হইয়াছে * *]

 আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে বলিতে পারি যে, জেলে আসার পর এই প্রথম আমি অসুস্থ বোধ করিতেছি। এখানে আসার দিন হইতেই আমার শরীর ভাল যাইতেছে না এবং ক্রমাগত হজমের গোলমালে ভুগিতেছি। আমাদের প্রায় সকলেরই এখানে ঐ একই অবস্থা। এখানকার জলহাওয়া আমার সহ্য হইবে বলিয়া বোধ হয় না। বাঙ্গলা গভর্ণমেণ্টের নিকট বদলির জন্য লিখিবার কোনও ইচ্ছা আমার নাই; কারণ আমি জানি উহা নিরর্থক। মান্দালয় জেলকে বর্মা দেশের সর্ব্বাপেক্ষা স্বাস্থ্যকর জেল বলিয়া ধরা হয়, তবে আমি শুনিয়াছি যে, প্লেগ ও বসন্তে এখানে প্রতি বছর অনেক লোক মরিয়া থাকে। প্লেগেই নাকি মৃত্যু বেশী হয়। গত বছর প্রায় ত্রিশ হাজার লোক প্লেগে মারা গিয়াছে, অবশ্য আমাকে যে খবর দেওয়া হইয়াছে তাহা যদি সত্য হয়।

 এই মাত্র গভর্ণমেণ্ট আমাকে জানাইয়াছেন যে, তাঁহারা আমাকে কোনও family allowance দিবেন না। ইহার অর্থ, আমার বাড়ীঘর দেখা শোনার কোনও খরচ তাঁহারা বোধহয় বহন করিতে চান না। মাসিক চাঁদার কথা বাদ দিলেও বাড়ীঘর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমার কি পরিমাণ খরচ হইত তাহা আপনি জানেন।

 অনুগ্রহ করিয়া বাবা কিংবা মাকে বলিবেন না যে, আমার শরীর ভাল নাই।

ইতি—

আপনার স্নেহের
সুভাষ

(এস. সি. বোস)

(ইংরাজী হইতে অনূদিত)