পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/৭৪

◄  ৭৩
৭৫  ►
৭8

(শরৎচন্দ্র বসুকে লিখিত)

মান্দালয় সেণ্ট্রাল জেল
২।৭।২৫

পরম পূজনীয় মেজদাদা,

 অনেকদিন আপনার পত্র না পাইয়া চিন্তিত আছি।

 * * *

 কিছুদিন পূর্ব্বে কলিকাতা কর্পোরেশনের সভায় একটি প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছিল। উহাতে বলা হইয়াছিল যে, ২নং ওয়ার্ড হইতে ডালের গােলা অপসারণ করিয়া মাণিকতলা এলাকায় কোনও নির্দ্দিষ্ট অঞ্চলে উহা স্থাপন করা উচিত। কলিকাতা শহরের সম্প্রসারণের প্রশ্ন লইয়া আমি কিছু চিন্তা করিয়াছি এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি যে, মাণিকতলাকে একটি বসতিপূর্ণ অঞ্চল হিসাবেই গড়িয়া উঠিতে দেওয়া উচিত। একবার এখানে ঠিকমত পাকা নর্দ্দমার ব্যবস্থা হইলে এবং বর্ত্তমানে যে ধরনের সেতু আছে উহার পরিবর্ত্তে ইমপ্রুভমেণ্ট ট্রাস্ট বড় ও যাতায়াতের সুবিধাযুক্ত কয়েকটি সেতু নির্মাণ করিয়া দিলে এখানকার জনবসতি দ্রুত বৃদ্ধি পাইবে * * * এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ১০ বৎসরের মধ্যেই মাণিকতলায় একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়িয়া উঠিতে পারিবে। কাজে কাজেই ডালের গোলা অপসারিত হইলে উহা স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া সৃষ্টির সহায়ক হইবে না এবং সহরের উন্নতির পথেও একটা প্রকাণ্ড বাধাস্বরূপ হইয়া দেখা দিবে। * * * অতএব ঐ গোলাগুলি ভবিষ্যতে কোথায় স্থাপিত হইবে সে সম্বন্ধে পুনর্ব্বিবেচনার প্রয়োজন আছে। * * *

 আর একটি মারাত্মক সমস্যা ৮নং ওয়ার্ডের চামড়ার গুদাম-গুলি। * * * যদি ঐগুলিকেও অপসারিত করিতে হয় তাহা হইলে ভবিষ্যতে উহা কোথায় স্থাপিত হইবে এ প্রশ্নও সতর্কতার সহিত বিবেচনা করা কর্ত্তব্য। সহরের উন্নতি ও ভবিষ্যতের কলিকাতা সহর কিরূপ হইবে, এ সম্বন্ধে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণার উপরই এ সব সমস্যার সমাধান নির্ভর করে।

 * * *

 ইন্সপেক্টর জেনারেল অব প্রিজন্‌স্ কয়েকদিন পূর্ব্বে এখানে আসিয়াছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, অতিরিক্ত ভোজনের ফলেই আমার যে ডিস্‌পেপসিয়া হয় নাই, এ সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত কিনা। আমি বলিলাম, আমার খাদ্যভাতা অর্দ্ধেক পরিমাণ কমাইয়া দিবার পর এ প্রশ্ন অবান্তর। তাঁহার সম্বন্ধে যে যা-ই ভাবুক না কেন, এ সম্বন্ধে তাঁহার মতামত খুবই স্বাভাবিক; কেননা Administration Report এর বার্ষিক সংখ্যায় সম্প্রতি তাঁহার যে প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে তাহাতে তিনি এ কথাই বলিয়াছেন যে, দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে লোকের স্বাস্থ্য ভাল হয়। যখন উহা পড়ি তখন নিজের চোখকেই আমি বিশ্বাস করিতে পারি নাই। ইহার পর আর কোনও মন্তব্য করা চলে কি?

 আই জি আমাকে উপদেশ দিয়াছেন যে, প্রতিকারের জন্য আমার মাঝে মাঝে অনশন করা উচিত। (তাহা হইলে গভর্ণমেণ্টের কর্ম্মচারীদের মধ্যেও মহাত্মা গান্ধীর শিষ্য আছে দেখা যাইতেছে!) আমি তাঁহাকে বলিয়াছি যে, সে চেষ্টা আমি করিয়া দেখিয়াছি; উহা আমাকে শুধু দুর্ব্বল করিয়া ফেলে। [* * *  সেন্সর কর্ত্তৃক কাটিয়া দেওয়া হইয়াছে * * * ]

 ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এখানেই শেষ করিতেছি। আপনি পরবর্ত্তী পত্রে আরও কিছু কিছু খবর দিবেন বলিয়া জানাইয়াছিলেন; আমি ঐ পত্রের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করিতেছি। মিসেস দাশকে এখনও পত্র দিই নাই, শোকের প্রথম আঘাত কাটিয়া যাওয়া পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিতেছি। তবে ভোম্বলকে পত্র দিয়াছি এবং আজকের ডাকে উহার জবাবও পাইয়াছি।

 * * * *

ইতি— 

আপনার স্নেহের 

সুভাষ 

(ইংরাজী হইতে অনূদিত)