পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/৮৫
শ্রীযুক্তা বাসন্তী দেবীকে লিখিত
শ্রীচরণেষু—
মা,
অনেকদিন যাবৎ আপনার কোন খবর পাই নাই। আপনি কেমন আছেন? বাড়ীর চিঠিতে আপনার খবর যা পেয়ে থাকি। তা ভিন্ন কোনও খবর আর পাই না। আমি মনে করেছিলাম যে ভোম্বল মধ্যে মধ্যে সংবাদ দিবে—কিন্তু সে তা করে না। কয়েকদিন হইল ভোম্বলকে পত্র দিয়াছি—তার কোনও উত্তর আজও পাইলাম না। পূর্ব্ব পত্রের উত্তর তো দেয়ই নাই। যাহা হউক চোখের সামনে না থাকলে বোধ হয় লোকের অস্তিত্ব থাকে না—তাই সে সংবাদ দেওয়া প্রয়োজন মনে করে নাই। আর এক হিসাবে আমাদের ত অস্তিত্ব নাই-ই। মহাত্মার কথায় আমরা “civilly dead.”। বুঝি— কিন্তু মন বোঝে না বলে বাহিরের খবর পেতে ইচ্ছা করে। এই রকমভাবে কিছুদিন চললে আর “civilly dead” না হয়ে উপায় থাকবে না।
আজ মহাষ্টমী। আজ বাঙ্গলার ঘরে ঘরে মা এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সৌভাগ্যক্রমে আজ জেলের মধ্যেও তিনি এসে দেখা দিয়েছেন। আমরা এই বৎসর এইখানেই শ্রীশ্রীদুর্গা পূজা করিতেছি। মা বোধ হয় আমাদের কথা ভোলেন নাই তাই এখানে এসেও তাঁহার পূজা-অর্চ্চনা করা সম্ভবপর হয়েছে। পরশুদিন আবার আমাদের কাঁদিয়ে মা চলে যাবেন। জেলখানার অন্ধকারের মধ্যে নির্জ্জীবতার মধ্যে—পূজার আলো, পূজার আনন্দ বিলীন হয়ে যাবে। এইরূপে কয় বৎসর কাটবে জানি না। তবে মা যদি এসে বৎসরান্তে দেখা দিয়ে যান তবে—কারাবাস দুর্ব্বিষহ হইবে না ভরসা করি।
এ চিঠি যখন আপনার নিকট পৌঁছাবে তখন বিজয়া দশমী হয়ে গেছে। বিজয়ার সময়ে সকলের ভক্তি ও প্রণাম আপনার নিকট পৌঁছবে। সঙ্গে সঙ্গে যদি আমার যৎকিঞ্চিৎ ভক্তির অর্ঘ্য আপনার নিকট পৌঁছায়— আর প্রতিদানে যদি একটীবার আমি নীরব আশীষ লাভ করি তবে আমি ধন্য হইব।
Sjta. Basanti Devi
2, Beltola Road