পারসীক গল্প/প্রণয়ী-পরখ
প্রণয়ী-পরখ
এক বাড়ীতে অনেকগুলি পুরুষ বাস করিত। সেই বাড়ীতে আর এক ব্যক্তি তাহার নিকাইতা স্ত্রীকে লইয়া থাকিতেন। অনেক কারণে সেই স্ত্রীর উপর তাহার স্বামীর সন্দেহ হয়। এমন কি সে জানিতেও পারে যে, সেই বাড়ীর কোন পুরুষের সহিত সে অবৈধ প্রণয়ে আবদ্ধ হইয়াছে। স্বামী তাহার স্ত্রীর চরিত্রের বিষয় উত্তমরূপে জানিতে পারিলেন বটে; কিন্তু দুষ্কর্ম্মকালীন কোন প্রকারেই তাহাকে ধরিতে পারিলেন না, বা কোন ব্যক্তির সহিত যে অবৈধ প্রণয়ে আসক্ত হইয়াছে, তাহার নাম পর্যন্তও জানিতে পারিলেন না।
এইরূপ অবস্থায় কি কর্ত্তব্য, তাহার কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া, তিনি কাজি সাহেবের নিকট গমন করিয়া তাঁহার শরণ লইলেন। কাজি সাহেব তাঁহার প্রমুখাৎ আদ্যোপাত্ত সমস্ত অবগত হইয়া আপনার অতঃপুরের ভিতর গমন করিলেন, ও অতি উৎকৃষ্ট এক শিশি আতর আনিয়া তাঁহার হস্তে প্রদান করিলেন। কহিলেন, “এই আতরের শিশি লইয়া গিয়া তুমি তোমার স্ত্রীর হস্তে অর্পণ কর ও তাহাকে বলিয়া দেও যে, ইহা অতিশয় উৎকৃষ্ট দ্রব্য; ইহা যেন সে কোনরূপে অপর কাহাকেও প্রদান না করে।”
কাজি সাহেবের আদেশ শিরোধার্য্য করিয়া, তিনি সেই আতরের শিশি লইয়া গিয়া আপনার স্ত্রীর হস্তে প্রদান করিলেন, ও তাহাকে বিশেষরূপে নিষেধ করিয়া দিলেন, যে, ইহা যেন সে অপর কাহাকেও প্রদান না করে।
কাজি সাহেব স্ত্রী-চরিত্র সম্বন্ধে যাহা সন্দেহ করিয়াছিলেন, ঠিক তাহাই ঘটিল। প্রণয়িনী সেই উৎকৃষ্ট আতরের কিয়দংশ তাহার প্রণয়ীর বস্ত্রে লাগাইয়া না দিয়া থাকিতে পারিল না। সুতরাং কাজি সাহেবের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হইল, — উত্তম আতরের গন্ধে প্রণয়ী অনায়াসেই ধৃত হইল।