পুনশ্চ/একজন লোক
একজন লোক
আধবুড়ো হিন্দুস্থানী,
রোগা লম্বা মানুষ,
পাকা গোঁফ, দাড়ি-কামানো মুখ,
শুকিয়ে-আসা ফলের মতো।
ছিটের মেরজাই গায়ে, মালকোঁচা ধুতি,
বাঁ কাঁধে ছাতি, ডান হাতে খাটো লাঠি,
পায়ে নাগরা, চলেচে সহরের দিকে।
ভাদ্র মাসের সকাল বেলা,
পাৎলা মেঘের ঝাপ্সা রোদ্দুর;
কাল গিয়েচে কম্বল-চাপা হাঁপিয়ে-ওঠা রাত,
আজ সকালে কুয়াশা-ভিজে হাওয়া
দো-মনা করে বইচে আমলকির কচি ডালে।
পথিকটিকে দেখা গেল
আমার বিশ্বের শেষ-রেখাতে
যেখানে বস্তুহারা ছায়া-ছবির চলাচল।
ওকে শুধু জানলুম, একজন লোক।
ওর নাম নেই, সংজ্ঞা নেই, বেদনা নেই,
কিছুতে নেই কোনো দরকার,
কেবল হাটে-চলার পথে
ভাদ্রমাসের সকালবেলায়
একজন লোক।
সেও আমায় গেছে দেখে
তার জগতের পোড়ো জমির শেষ সীমানায়,
যেখানকার নীল কুয়াষার মাঝে
কারো সঙ্গে সম্বন্ধ নেই কারো,
যেখানে আমি—একজন লোক।
তার ঘরে তার বাছুর আছে,
ময়না আছে খাঁচায়;
স্ত্রী আছে তার, জাতায় আটা ভাঙে,
পিতলের মোটা কাঁকন হাতে;
আছে তার ধোবা প্রতিবেশী,
আছে মুদি দোকানদার,
দেনা আছে কাবুলীদের কাছে,—
কোনোখানেই নেই
আমি—একজন লোক।
১৭ ভাদ্র, ১৩৩৯