পুনশ্চ/মানবপুত্র
মানবপুত্র
মৃত্যুর পাত্রে খৃষ্ট যেদিন মৃত্যুহীন প্রাণ উৎসর্গ করলেন
রবাহূত অনাহূতের জন্যে,
তার পরে কেটে গেছে বহু শত বৎসর।
আজ তিনি একবার নেমে এলেন নিত্যধাম থেকে মর্ত্যধামে।
চেয়ে দেখলেন,
সেকালেও মানুষ ক্ষত বিক্ষত হোত যে সমস্ত পাপের মারে,—
যে উদ্ধত শেল ও শল্য, যে চতুর ছোরা ও ছুরি,
যে ক্রুর কুটিল তলোয়ারের আঘাতে,
বিদ্যুদ্বেগে আজ তাদের ফলায় শান দেওয়া হচ্চে
হিসহিস্ শব্দে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে
বড়ো বড়ো মসীধুমকেতন কারখানা ঘরে।
কিন্তু দারুণতম যে মৃত্যুবাণ নূতন তৈরি হোলো,
ঝকঝক্ করে উঠল নরঘাতকের হাতে,
পূজারী তাতে লাগিয়েচে তাঁরই নামের ছাপ
তীক্ষ্ণ নখে আঁচড় দিয়ে।
খৃষ্ট বুকে হাত চেপে ধরলেন,—
বুঝলেন শেষ হয়নি তাঁর নিরবচ্ছিন্ন মৃত্যুর মুহূর্ত্ত,
নূতন শূল তৈরি হচ্চে বিজ্ঞানশালায়,
বিঁধচে তাঁর গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে।
সেদিন তাঁকে মেরেছিল যারা
ধর্ম্মমন্দিরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে,
তারাই আজ নূতন জন্ম নিল দলে দলে,
তারাই আজ ধর্ম্মমন্দিরের বেদীর সামনে থেকে
পূজামন্ত্রের সুরে ডাকচে ঘাতক সৈন্যকে,
বলচে, “মারো, মারো।”
মানবপুত্র যন্ত্রণায় বলে উঠলেন ঊর্দ্ধে চেয়ে,
“হে ঈশ্বর, হে মানুষের ঈশ্বর,
কেন আমাকে ত্যাগ করলে।”
শ্রাবণ ১৩৩৯