পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/আনুষ্ঠানিক বিবরণ

২ অধ্যায়।

আনুষ্ঠানিক বিবরণ।

 জলপ্লাবনের পর এইক্ষণে মনুষ্যবর্গের পুরাবৃত্ত বৃত্তান্ত প্রস্তাব আরম্ভ করিয়া নানা দেশে মনুষ্যের নানা বংশের সংস্থাপন এবং তাহারদের রাজনীতি বৃদ্ধির বিবরণ ব্যাখ্যা করিতে উদ্যোগ করি।

 কিন্তু পুরাবৃত্তের এই ক্ষেত্রে প্রবিষ্টহওনের পূর্ব্বে আনুষ্ঠানিক কতক বিবরণ কহা আমারদের উচিত হয়। ধর্ম্ম পুস্তকভিন্ন পুরাবৃত্তের বিবরণ আমরা আকর ত্রয়হইতে প্রাপ্ত হই। প্রথমতঃ ধারাবাহিক প্রবাদ। দ্বিতীয় মুদ্রা ও চিহ্নার্থ অট্টালিকা। তৃতীয় মুদ্রাঙ্কিত বা লিখিত গ্রন্থ।

 প্রত্যেক জাতীয় মনুষ্যের পুরাবৃত্ত প্রথমে কেবল ধারাবাহিক প্রবাদে প্রাপ্ত হওয়া যায় এতদ্রূপে ভারতবর্ষে যা- হা শ্রুত ছিল তাহা লইয়াই শ্রুতিগ্রন্থ নামের দ্বারাই তাহা স্পষ্ট বোধ হয়। অতএব ইহাতে সুতরাং অনুমান করি যে ধর্ম্মবিষয়ে এবং পূর্ব্বের ইতিহাসবিষয়ে যে প্রবাদ বেদের সৃষ্টিসময়ে লোকেরদের মধ্যে প্রচলিত ছিল তাহাই তদ্‌গ্রন্থের মধ্যে অর্পিত হয়। প্রবাদের দ্বারা যে বিবরণ সকল প্রাপ্তহওয়া যায় তাহা সামান্যতঃ আশ্চর্য্য এবং সতত অনিশ্চিত। যে কথা বংশানুক্রমে চলে প্রতিবংশে তাহার কিঞ্চিৎমতান্তর হয় এবং তদ্দ্বারা আসল যে সত্যকথা তাহা মিথ্যাকথাবরণেতে আচ্ছন্ন হইয়া বিলুপ্ত হয়। এইপ্রযুক্ত তাবদ্দেশীয়েরদের অতিপ্রাচীন ইতিহাস প্রায় সকলই গপ্পময়। পুনশ্চ এইস্থলে মন্তব্য যে পূর্ব্ব২ ইতিহাসসকল পদ্যক্রমে রচিত যেহেতুক গদ্যাপেক্ষা পদ্য শীঘ্র স্মরণে থাকে। চিহ্নার্থ অট্টালিকা ও মুদ্রা পুরাবৃত্তের কালনিরূপণকরণে অত্যুপকারক। ঐ অট্টালিকা কোন আশ্চর্য্য ক্রিয়ার স্মরণার্থ গ্রথিত হইয়াছিল এবং কখন২ তৎক্রিয়ার বার্ত্তা তাহার উপরি ক্ষোদিত হইত। কখন২ দৃষ্ট হইতেছে যে ঐ অট্টালিকা লুপ্ত হইলেও তদুপরি ক্ষোদিত কথাসকল কালের গ্রাসহইতে রক্ষা পাইয়াছে এবং তদ্দ্বারা পুরাবৃত্ত কতক২ গুরুতর ক্রিয়া যেকালে হয় তাহা অনায়াসে নিরূপণ করা যায়। মুদ্রা অসভ্য জাতীয়েরদের অজ্ঞাত কিন্তু সভ্যতার বৃদ্ধিহওয়াতে তাহার ব্যবহার হয়। ঐ মুদ্রার মধ্যে কতক কোন মহাক্রিয়ার স্মরণার্থ অঙ্কিত হয় তদ্দ্বারা তৎক্রিয়ার কাল আমরা নিরূপণ করিতে ক্ষম হই। অন্যান্য মুদ্রায় মনুষ্যবর্গের মধ্যে কতক মহাকীর্ত্তিশালিব্যক্তিরদের প্রতিমূর্ত্তি ও নাম ও কাল চিহ্নিত ছিল এবং তদ্দ্বারা পুরাবৃত্তের তারিখ নিরূপণ করিতে এবং ভ্রমসকল সংশোধিত করিতে ক্ষম হওয়া যায়। কিন্তু বিদ্যার অনুশীলনহওনানন্তর যে ইতিহাস লিখিত হইয়াছে তাহাই পূর্ব্বকালীন বৃত্তান্তের নিঃসন্দিগ্ধ পথদর্শক। মুদ্রাযন্ত্রের সৃষ্টিহওনানন্তর ঐ সকল বৃত্তান্ত পূর্ব্বাপেক্ষা ভ্রমশূন্য হয়।

 জলপ্লাবনের পর মনুষ্যবর্গের সাধারণ বিবরণ স্পষ্ট ও পৌর্ব্বাপর্য্যক্রমে জ্ঞাতকরণার্থ ঐ পুরাবৃত্ত সকল নানা কালে বিভক্তহওনের ব্যবহার হইয়াছে। অতএব তদ্রীতিক্রমে আমরা প্রথম কালের সীমা খ্রীষ্টীয়ান শকের ১২০০ বৎসর পূর্ব্বে ত্রোজানের যুদ্ধ সময়পর্য্যন্ত নিরূপণ করি। তাহার এক কারণ এই যে ঐ যুদ্ধ তৎকালীন ইতিহাসের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ ক্রিয়া দ্বিতীয় কারণ যে তৎকালে ইউরোপীয়েরা আসিয়াতে প্রথম স্মরণীয়ত্বরূপে আক্রমণ করেন। এই কালের অন্তঃপাতি ১২০০ বৎসর এবং পুরাবৃত্তের মধ্যে উক্ত এই প্রথম কালীন ক্রিয়া সর্ব্বাপেক্ষা অনিশ্চিত। দ্বিতীয় কাল ত্রোজানের যুদ্ধঅবধি খৃীষ্টীয়ান শকের ৫৬০ বৎসরের পূর্ব্বে কোরেসের সময়পর্যন্ত অর্থাৎ ৬০০ বৎসর ঐ কোরেস বৃহদায়ত পশ্চিম আসিয়া দ্বীপের মধ্যে প্রথমে সাধারণ রাজ্য স্থাপন করেন। তৃতীয় কালের অন্তর্গত ২৩০ বৎসর কোরেশের অধিকার অবধি সিকন্দর সাহের রাজ্যপর্য্যন্ত। পারসীর সাম্রাজ্য বিনষ্ট করা এবং আসিয়াতে প্রথম ইউরোপীয়রদের প্রাবল্য তাঁহাহইতেই হয় এবং ঐ প্রাবল্য অদ্যপর্য্যন্ত আছে। চতুর্থকাল খীষ্টীয়ান শকের ৩৩৩ বৎসরের পূর্ব্বে সিকন্দর সাহের অধিকার সময়াবধি খ্রীষ্টের জন্মপর্য্যন্ত। তৎকালে খ্রীষ্টীয়ান ধর্ম্ম প্রথম প্রকাশিত হয় এবং পৃথিবীর পশ্চিমাংশের একাধিপত্য রোমাণেরদের হস্তে ছিল। পঞ্চমকাল খ্রীষ্টের জন্মঅবধি রোমাণেরদের সামাজ্য বিনষ্ট হওনপর্য্যন্ত। তৎকালে এখনকার ইউরোপীয় নানা রাজ্যের প্রথম অঙ্কুর দৃষ্ট হইল। তদন্তঃপাতী ৪০০ বৎসর এবং যে পুরাবৃত্ত সামান্যতঃ প্রাচীন কহা যায় তাহার সীমা ঐ কালের অন্ত। ষষ্ঠকাল অন্ধকারময় কালনামে বিখ্যাত। তৎসময়ে গ্রীক ও রোমাণেরদের যে সভ্যাচার ব্যবহার সকল ছিল তাহা অসভ্যেরদের আক্রমণেতে প্রোথিত হইয়া ইউরোপের তাবদ্দেশ অযুক্তধর্ম্ম ও অজ্ঞানেতে একেবারে নিমগ্ন হইল। ঐ কাল রোমাণেরদের সামাজ্য বিলুপ্তহওনাবধি কলম্বসের কালপর্য্যন্ত। কলম্বস পৃথিবীর এক নূতন ভাগ প্রথম দৃষ্টিকরাতে ইউরোপীয়েরদের উৎসাহের উত্তেজনা জন্মাইলেন। কলম্বসের শক ১৪৯২। সপ্তম অথচ শেষ কাল আমেরিকা দেশের প্রথম দর্শনঅবধি অদ্যপর্য্যন্ত। এবং যেমন প্রথমকালে মনুষ্যের অত্যন্ত অসভ্যতাবস্থার পুরাবৃত্ত লিপি আছে তেমনি এই অন্তকালে জ্ঞান ও সভ্যতাতে প্রবল মনুষ্যবর্গের পুরাবৃত্ত লিখিত আছে।


CHAP. II.

PRELIMINARY OBSERVATIONS.

 WE now commence the history of mankind after the flood, and shall endeavour to trace the settlement of the different families of man in various countries, and the growth of their institutions.

 Before we enter on this field of history, a few preliminary observations appear desirable. The sources from which, in addition to the Sacred Scriptures, our acquaintance with the past is drawn, are three, oral tradition; coins and monuments, and written or printed documents.

 The history of every nation begins in oral tradi- tion. Thus in India, the records of the Vedus consist, as the name imports, of that which had been “heard,” hence we naturally infer that those books contain the religious and historical traditions which were current at the time when they were penned. Whatever we receive from oral tradition, is generally marvellous, and always uncertain; a story passing through many generations, receives at each step such alterations, that the original truth is lost in the folds of fiction. Hence the early records of every nation consist of narratives in which fiction predominates. It is also worthy of remark, that the primitive histories were all written in verse, because measured lines are more easily remembered than prose. Monuments and coins are of great use in fixing the periods of history. Monuments were erected to commemorate some striking event, the narrative of which was sometimes engraved on them. In many cases while the monuments have perished, the inscriptions have escaped the ravages of time, and thus we are enabled to determine the period in which some of the leading events of history happened. Coins, unknown in a rude age, came into general use with the civilization of mankind. Some were struck to commemorate great events, through which we can fix the date of the event; others contained the figures, the name and the age of the great actors on the stage of life; and from them we are enabled to ascertain the dates and to correct the errors of written history. But the most certain guide to the events of past ages is to be found in the histories which were compiled on the introduction of letters. These histories become more exact after the invention of printing.

 To convey a clear and connected idea of the general history of mankind after the flood, it has been the practice to divide it into different epochs. Adopting this usage, we fix the termination of the First epoch at the Trojan war, in the twelfth century before Christ, partly because this is the most prominent event in the history of that age, and partly because it forms the first memorable irruption of Europeans into Asia. This epoch comprises the events of 1200 years, and is by far the most uncertain period of history. The Second epoch will extend from the Trojan war to the age of Cyrus, B.C. 500 years, which will include six centuries. He established the first general monarchy through the vast extent of Western Asia. The Third epoch will embrace a period of 230 years, from Cyrus to the days of Alexander, who subverted the Persian empire and first established the supremacy of Europe over Asia; a supremacy which it retains to this day. The Fourth epoch will include the events from the age of Alexander, B. C. 330 years, to the birth of Christ, when Christianity was first promulgated, and Rome enjoyed the monarchy of the western world. The Fifth epoch will comprise the history of mankind from the birth of Christ to the subversion of the Roman Empire, when the first germ of the present European community began to appear. It includes a period of about four hundred years, and with it terminates that portion of History generally denominated, ‘Ancient.’ The Sixth period is the dark ages, when the arts of civilization cultivated by the Greeks and Romans were buried amidst the inroads of barbarism, and superstition and ignorance reigned throughout Europe. It extends from the overthrow of the Roman empire to the days of Columbus, who, discovering a new world, aroused the energies of Europe. The age of Columbus is the modern year 1492. The Seventh or last epoch extends from the discovery of America to the present date. As the first epoch gives us the history of man when in a state of rude barbarism, this last era comprises the history of the human race in all the vigour of knowledge and civilization.