পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/মিসর দেশ (২)

মিসর দেশ।

 পূর্ব্বে লিখিত হইয়াছে যে সেকন্দরশাহের রাজ্যের বণ্টন সময়ে তাঁহার এক জন অতিবিজ্ঞ সেনাপতি টলেমির অংশে মিসর দেশ পড়িল। ঐ দেশ দুই শত বৎসর পর্য্যন্ত পারসীয় রাজারদের দৌরাত্মে ক্রমে ক্ষয় পাইল কিন্তু টলেমিরদের অধীন হইলে তাহা এক মহারাজ্য হয় এবং অতিবিস্তীর্ণ বাণিজ্য ব্যাপারের মধ্যবর্ত্তি আড়ত এবৎ জ্ঞান ও বিদ্যার রত্নাকর হয়। প্রথম টলেমি সে কন্দরশাহের দরবারে থাকিয়া রাজধর্ম্মে সুশিক্ষিত হওয়াতে রাজ্য সংস্থাপিত ও সুরক্ষিত ও সুশোভিত করিতে অত্যুপযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন। মিসর দেশে উৎপাদনের যে মহাশক্তি ছিল তাহা তিনি সুব্যক্ত করিয়া তাঁহার মহা প্রভু সেকন্দরশাহের কল্পনা সিদ্ধ করিয়া নব নির্ম্মিত আলেকজান্দ্রিয়া নগর স্বীয় রাজধানী করিলেন। তাহাতে নানাদেশীয় লোকেরদের বাণিজ্যের মূল স্থান হওন বিষয়ে তিনি কিছু ত্রুটি করিলেন না এবং ঐ উদ্যোগে এমত কৃতকার্য্য হইলেন যে আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরের ঐশ্বর্য্যপ্রতিভাতে টায়র নগর একেবারে ঢাকা পড়িল এবং পশ্চিম অঞ্চলের তাবৎ বাণিজ্য ব্যাপার ঐ বন্দরে ক্রমে আকৃষ্ট হইতে লাগিল। মিসর দেশে টলেমির প্রতি দুইবার আক্রমণ হয় এবং তিনি যে কেবল আক্রামকেরদিগকে বহিষ্কৃত করিয়াছিলেন এমত নহে বরং ফিনিসিয়া ও য়িহুদী ও সিপ্রস দেশ স্বীয় রাজ্যভুক্ত করিলেন ঐ তিন দেশ জাহাজ নির্ম্মাণোপযুক্ত উপাদান সামগ্রীতে যেমন পূর্ণ তেমন অপর দেশ পাওয়া দুষ্কর ঐ সকল স্থান এক শত বৎসরপর্য্যন্ত মিসরদেশীয় রাজ্যের অন্তপাতি থাকে। টলেমি আরাে আফ্রিকা দেশে স্বীয় অধিকার বিস্তার করিয়া সায়রিনি ও তন্নিকটবর্ত্তি লিবিয়া দেশ জয় করেন। তিনি অত্যন্ত হিতৈষিতারূপে উনচল্লিশ বৎসরপর্য্যন্ত নির্ব্বিঘ্নে রাজ্য করত তাঁহার লোকান্তর হইলে রাজমুকুট তাঁহার পুত্র দ্বিতীয় টলেমি নিষ্কণ্টকে প্রাপ্ত হইয়া তাঁহার পিতা যত কাল রাজ্য করিয়াছিলেন তদপেক্ষা কেবল এক বৎসর ন্যূন রাজ্য করিলেন। তাঁহার রাজ্য সময়ে নিয়ত শান্তিই থাকে এবং সমুদ্রোপরি মিসর দেশের পরক্রিমের প্রতিযােগী কেহই ছিল না এবং স্থল পথেও মিসর দেশঅপেক্ষা পরাক্রান্ত কোন রাজ্য ছিল না। অথচ তৎসময়ে ঐ দেশের আন্তরিক সম্পত্তির ও মঙ্গলের অপূর্ব্বরূপে উন্নতি হইল। আলেকজান্দ্রিয়া নগরের বাণিজ্য তিন দিগে চলিতে লাগিল এবং পৃথিবীর মধ্যেযে২ স্থান বাণিজ্যের আকর সে সকলের সঙ্গেই ঐ নগরের সম্পর্ক হইল। স্থলপথে আসিয়া ও আফ্রিকাপর্য্যন্ত বাণিজ্য ব্যাপার চলিত। উত্তর দিগে ভূমধ্যস্থ সমুদ্রের তটোপরি দেশসকলের বাণিজ্য হইত এবং দক্ষিণমুখে আরবীয় সমুদ্র দিয়া আসিয়ার অতিসমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চলিত। মিসরদেশে নূতন বন্দর ও জাহাজের আলয় প্রস্তুত হইল এবং নানা খাল খনন করা গেল। ফলতঃ তৎসময়ে বাণিজ্যের এমত সুগম হইল যে কেবল জিনিসের মাসুলেতেই প্রতি বৎসরে চারি কোটি টাকা উৎপন্ন হইত তাহাতেই গবর্ণমেণ্টের তাবৎ খরচ কুলাইত। এইক্ষণে বিংশতি শত বৎসরের পরে আমেরিকা দেশে তদ্রূপ সুগতিক দৃষ্ট হইতেছে। কিন্তু সাংসারিক বিষয়ে প্রথম টলেমি সেকন্দরশাকর্ত্তৃক সুশিক্ষিত হইয়া যে রূপ পরিমিত ব্যয় ও সাত্ত্বিকতা ব্যবহার সিংহাসনপ্রাপ্ত হইয়াও করিলেন তদ্রূপ সদ্ব্যবহার তাঁহার পুত্রের দরবারে ছিল না। তিনি এমন সুখাভিলাষিতার নানা ব্যাপার দরবারে চলিত করাইলেন যে তদ্দ্বারা ক্রমে তাঁহার রাজ্যের গোড়া আলগা হইয়া গেল। অপর তাঁহার পুত্ত্র তৃতীয় টলেমি খীষ্টীয়ান শকের ২৪৬ বৎসর পূর্ব্বে মিসরদেশীয় সিংহাসন আরোহণ করিয়া পঁচিশ বৎসরপর্য্যন্ত রাজ্য করেন। তাঁহার পিতার যে শান্ত স্বভাব ছিল তাহা একেবারে হেয় করিয়া পূর্ব্বদিগে বাক্‌ত্রিয়া রাজ্যের সীমা পর্য্যন্ত জয় করত গমন করিলেন এবং আফ্রিকা দেশের ইথিয়োপিয়ার মধ্যপর্য্যন্ত জয় করিলেন। কিন্তু এই সকল দেশ জয় করিয়া কেবল তদ্দ্বারা বাণিজ্যের উন্নতিই করেন তাঁহার অভিপ্রায়। তাহাতে বিলক্ষণ দৃষ্ট হইতেছে যে রাজার সদ্বিবেচনা ও শক্তি থাকিলে অল্পকালের মধ্যে কোন দেশে কিপর্য্যন্ত ব্যবহারের মহা পরিবর্ত্তন না হইতে পারে যেহেতুক ইহার এক শত বৎসর পূর্ব্বে ভিন্নদেশীয় বাণিজ্য মিসরদেশীয় লোকেরদের নিকটে সর্ব্বাপেক্ষা ঘৃণ্য বিষয় ছিল অথচ টলেমির রাজবংশ্যের সময়ে ঐ মিসর দেশ তাবৎ পৃথিবীর বাণিজ্যের আড়ত হইল।

 অপর মিসর দেশে একশত বৎসর ব্যাপিয়া প্রথম তিন টলেমি রাজার তুল্য গুণবন্ত রাজার শাসন যে হয় ইহাই মিসর দেশের অতিসৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু তৃতীয় টলেমির লোকান্তর হওয়াতে মিসরদেশীয় ঐশ্বর্য্য সূর্য্যের অস্ত হয় এবং রাজশাসনের অত্যন্ত অমাঙ্গলিক পরিবর্ত্তন হয়। দরবারের অশেষ সুখমগ্নতা এবং অবিরত লাম্পট্যপ্রযুক্ত অতিনিষ্ঠুর অপরাধ সকল জন্মিতে লাগিল। অতএব তৃতীয় টলেমির মরণোত্তর দেড় শত বৎসর ব্যাপিয়া কেবল অগম্যাগমন এবং রাজোপপ্লব ও হত্যাকরণ বিবরণেতে মিসরদেশীয় ইতিহাস পরিপূর্ণ সুতরাং ইহাতে পাঠক বর্গের কি শুশ্রূষা হইবে। কিন্তু যে সময়ে মিসর রাজ্য অপরাধের প্রাবল্যে ক্রমে২ খুন্ন হইতেছিল তৎসময়ে রােম নগর ক্রমশঃ অতিবর্দ্ধিষ্ণু হইয়া মিসর দেশ তাহার বাধ্যতা চক্রের মধ্যে আকৃষ্ট হইল। অপর পরাক্রম আকাঙক্ষী রোমানেরা ঐ রাজ্য লইয়া স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করণানন্তর এবং রোমীয় কতক প্রধান ব্যক্তি মিসরের বিদেশস্থিত অধিকার নানাপ্রকারে প্রদান করিলে পর তদ্দেশের শোভাবিহীন মুকুট ক্লিয়োপাত্রার শিরে পড়িল তিনি তৎকালীন স্ত্রীলোকের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সুশিক্ষিত ও সুন্দরী ছিলেন কিন্তু তাঁহার সাত্ত্বিকতা ধর্ম্ম ছিল না। তিনি তৎকালীন সর্ব্বাপেক্ষা প্রধান লোক কাইসর এবং যে আণ্টোনি কিঞ্চিৎ কালপর্য্যন্ত রোমানের মহারাজ্যের অধিপতি ছিলেন এই দুই জনকে স্বীয় লাবন্যাদিতে বশীভূত করিলে রোমীয়কর্ত্তৃক পরাভূত শত্রুর ন্যায় দর্শিত হওনের অপমান ভয়ে বিষপানে খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩০ বৎসর পূর্ব্বে প্রাণ ত্যাগ করিলেন। তদনন্তর মিসর দেশ রোম সাম্রাজ্যের এক সুবার মধ্যে গণ্য হইল। উক্ত বহু কালব্যাপক নিরন্তর বিবদাস্পদ সময়ে ঐ দেশের প্রভুত্ব প্রাপণবিষয়ক কলহ প্রায় কেবল আলেকজান্দ্রিয়া বাজধানী লইয়াই হয় মফঃসল প্রদেশ আলেকজান্দ্রিয়া অপেক্ষা সুস্থির থাকে। পরিশেষে রোমানের যে নানা দেশ জয় করিয়াছিলেন তত্তৎদেশীয় তাবৎ সম্পত্তি রােম নগরে আহৃত হওয়াতে ঐ নগর সুখাকরে বৈকুণ্ঠতুল্য হইল এবং আলেকজান্দ্রিয়া নগর স্থানের গুণে সুখজনক তাবৎ উত্তম দ্রব্যই রােমকে যোগাইত এই প্রযুক্ত এবং যে নানা বন্দরে রোমানেরদেরকত্তৃক পরাজিত হওনের পূর্ব্বে ভিন্ন রাজারদের বিবাদ প্রযুক্ত মধ্যে২ বাণিজ্যব্যাপার রুদ্ধ হইত সেই সকল বন্দরে আলেকজান্দ্রিয়া নগরস্থেরা নির্ব্বিঘ্নে বাণিজ্য করণপ্রযুক্ত জাহাজের দ্বারা আলেকজন্দ্রিয়া নগর ভূমধ্যস্থ সমুদ্রের একপ্রকার কর্ত্তৃত্বকারি হইল এবং রোম নগরের পরে পৃথিবীর মধ্যে অগ্রগণ্য হইল।

EGYPT.

 Egypt as we have already noticed, fell, upon the partition of Alexander's empire, to Ptolemy, one of the ablest of his captains. This country, which for two hundred years had withered under the oppression of the Persians, became under the Ptolemies a mighty kingdom, the centre of a far extended commerce, the museum of science and literature. Ptolemy the first, bred in the school of Alexander, was admirably fitted to create, defend and adorn an empire. He drew forth the great resources of Egypt, and following up the ideas of his great master, made the newly erected city of Alexandria the capital of his kingdom, and spared no labour to make it the mart of the nations; and so complete was his success, that the port of Alexandria soon eclipsed that of Tyre, and gradually drew to itself the entire trade of the western world. Ptolemy was twice attacked in Egypt, and not only repelled his assailants, but added to his dominions Phenicia, Judea, and Cyprus, countries possessed of the finest materials for a navy. They continued to be a parcel of the Egyptian monarchy for nearly a hundred years. Ptolemy likewise extended his dominions in Africa by the conquest of Cyrene and the intervening state of Lybia. His beneficial reign was extended to thirty-nine years; and his crown descended tranquilly to his son Ptolemy the second, whose reign comprised a period less by only one year than that of his father. The characteristic of his reign was peace. During his government Egypt enjoyed the command of the sea, and was second to no kingdom by land; while its internal prosperity and wealth were increased beyond all former example. The commerce of Alexandria was extended in three directions, and embraced all the marts in the world; by land to Asia and Africa; in the north to all the countries on the shores of the Mediterranean; on the south by the Arabian gulf to the wealthy regions of Asia. New harbours and ports were opened; canals were excavated, and such facility given to trade that the duties on merchandise arose to the amazing sum of four millions sterling a year, and several for the entire support of the Government; an event which after more than twenty centuries we now see repeated in America. But the frugality and simplicity of domestic life which the first Ptolemy had imbibed from Alexander, and continued to practise when raised to a throne, was wanting in the court of his son, who introduced a degree of effeminate luxury, that gradually sapped the foundation of the monarchy. Ptolemy III. ascended the Egyptian throne B. C. 246, and reigned twenty-five years. He repudiated the peaceful policy of his predecessor and carried his victorious arms in the East as far as the confines of Bactria, and in Africa to the heart of Ethiopia. But all his conquests were made subservient to the promotion of trade, which shews how mighty a change may be effected in any country in a short time by the energy and judgment of its rulers; for a hundred years before this period, nothing was more odious to the feelings of the Egyptians than any connection with foreign commerce, whereas under the Ptolemies it became the entrepot for the trade of the world.

 Egypt was singularly blessed in having for three successive reigns, which extended over a period of a hundred years, three monarchs of ability like the first three Ptolemies; but the sun of its glory declined with the death of the third monarch of that name. A fatal change came over the administration of the Government. The unbounded luxury, and the unrestrained wantonness of the Court, led to the perpetration of the most atrocious crimes. The history of Egypt for a hundred and fifty years after the death of the third Ptolemy is only a disgusting narrative of incest, revolution, and carnage, uninteresting to the general reader. While the Egyptian monarchy was becoming weaker and weaker by crime, Rome was rising to the climax of its greatness, and Egypt was drawn within the circle of its influence. After it had for some time been the sport of Roman ambition, and after its foreign possessions had been disposed of by some of the leading men of that republic, the crown shorn of all its lustre descended to Cleopatra its last sovereign, the most accomplished and most beautiful woman of the age, but deficient in every moral ornament. After having subjugated to her charms Cæsar the greatest man of his time, and Antony who for a while held the balance of the Roman empire in his hand, she poisoned herself to escape the degradation of being exhibited as a conquered enemy to the gaze of a Roman mob, B. C. 30; on which Egypt was finally annexed as a province to the Roman empire. During this long and unbroken series of disorders, the struggles for power were confined almost exclusively to the capital, Alexandria, and the provinces enjoyed comparative peace. Rome drawing to itself the wealth of all its conquered provinces, became a paradise of luxury, and Alexandria from the advantages of its natural position became the channel by which that luxury was fed. By these means, as well as by enjoying a freedom of trade with all those ports, which before their submission to Rome, had often been closed by the disputes of contending princes, Alexandria became the naval mistress of the Mediterranean, and was esteemed second in importance only to Rome itself.