পুরাবৃত্তের সংক্ষেপ বিবরণ/সিল্যুকসের রাজ্য

সিল্যুকসের রাজ্য।

 সেকন্দরের মরণােত্তর আট বৎসর খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩১২ বৎসর পূর্ব্বে সিল্যুকীয় রাজ্য সিল্যুকসকর্ত্তৃক উর্দ্ধ্বস্থ আসিয়াতে স্থাপিত হয়। ঐ রাজ্যব্যাপক যে দেশ তাহা সেকন্দর সম্পূর্ণরূপে অধিকার করিতে পারেন নাই কেবল সামান্যতঃ জয়মাত্র করেন অতএব ঐ রাজ্য বজায় রাখণ এক জন অতিপ্রবল অধ্যক্ষের কর্ম্ম। সিল্যুকস তদ্রূপ প্রবল স্থিরপ্রতিজ্ঞ সেনাপতি ছিলেন এবং আশ্চর্য্য বিষয় এই যে তাঁহার তাবৎ রাজবংশ্যের মধ্যে কেবল তাঁহা রি সেই গুণ ছিল। পাঁচ বৎসরের মধ্যে তিনি ফ্রাৎ ও সিন্ধু নদী ও জিহূন ও পারস্যের মহাখাল এই চারি সরহদ্দের মধ্যে যত দেশ ছিল সে সকল অধিকার করিলেন। খ্রীষ্টীয়ান শকের ৩০৫ বৎসর পূর্ব্বে তিনি এক মহাদল সৈন্য লইয়া ভারতবর্ষীয় মহারাজ চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে যুদ্ধার্থ যাত্রা করিলেন কিন্তু গঙ্গা নদীপর্য্যন্ত পঁহুছিয়া ঐ রাজার সঙ্গে এক সন্ধি করেন তাহাতে এই নিয়ম ছিল যে আমাকে পাঁচ শত হস্তী দিলে মাকিদোনীয়েরা ভারতবর্ষের মধ্যে অতিসাহসে যে দেশ অধিকার করিয়াছিল তাহা ছাড়িয়া দেই এবং সিন্ধুনদী আমার রাজ্যের পূর্ব্বদিগের সীমা নিরূপণ করি। পূর্ব্ব লিখিত ইপ্‌সসের যুদ্ধে আণ্টিগোনসের নিপাত হওয়াতে সিল্যুকস স্বীয় রাজ্য দ্বিগুণ বর্দ্ধিত করিলেন এবং আপনার রাজধানী টিগ্রিস নদীর তীরহইতে উঠাইয়া ভূমধ্যস্থ সমুদ্রের তটোপরি আণ্টিয়ক নগরে স্থির করিলেন। এতদ্রূপ রাজধানী পরিবর্ত্তনেতে অতিবিঘ্ন ঘটিল যেহেতুক তদ্বারা ফ্রাৎ ও সিন্ধুনদীর মধ্যস্থ যে প্রদশে তাঁহার অবস্থিতিকরণের বিশেষ আবশ্যকতা ছিল তাহাতে তাঁহার পরাক্রমের কিঞ্চিৎ ক্ষীণতা হইল এবং পশ্চিম প্রদেশীয় রাজারদের পরস্পর যত বিবাদ বিসম্বাদ হয় সে সকলের মধ্যেও লিপ্ত হইতে হইল। সিল্যুকসের রাজ্যশাসনে তাঁহার প্রজারদের অতিমঙ্গল হয় যেহেতুক তাঁহার অধীনে প্রজারা আঠার বৎসর পর্য্যন্ত নিষ্কণ্টকে কালযাপন করে। তিনি অনেক নগর পত্তন এবং বাণিজ্যের অতিপৌষ্টিকতা করেন বিশেষত্বঃ জিহূন নদী পথ দিয়া পূর্ব্বদিগে যে বাণিজ্য চলিত তাহাতে। অপর বিশবৎসর রাজ্য করণানন্তর তিনি মাকিদোনিয়া রাজ্য জয়করণার্থ যেমন যাত্রা করিতেছিলেন তৎসময়েই হত হইলেন। তাঁহার মরণেতে তাঁহার রাজ্যের যশ একেবারে নির্ব্বাণ হইল।

 তাঁহার পুত্র আণ্টিয়োকস উনিশ বৎসর ব্যাপিয়া, অতিদৃঢ়রূপে কিন্তু অযশস্কর রাজ্য করেন। তিনি বিথি নিয়া দেশ জয় করিতে উদ্যোগ করিলেন তাহাতে তদ্দেশীয় রাজা গলেরদিগকে আহ্বান করিয়া ক্ষুদ্র আসিয়ার মধ্যবর্ত্তি স্থানে গালো গ্রেসিয়া অর্থাৎ গলাতিয়া দেশে স্থাপন করিলেন এবং আণ্টিয়োকস যদ্যপি ঐ গলেরদিগকে পরাজিত করিলেন তথাপি তাহারদিগকে দেশবহিষ্কৃত করিতে পারিলেন না। অপর নবস্থাপিত গলেরদের রাজ্য সিল্যুকসের রাজ্যের কিঞ্চিদশ ভঙ্গ হওয়াতে বর্দ্ধিষ্ণু হইতে লাগিল। আণ্টিোকসের মরণোত্তর তাঁহার পুত্র দ্বিতীয় আণ্টিয়োকস রাজ্য করেন তাঁহার আমলে অন্তঃপুরের স্ত্রীগণই কর্ত্তৃত্ব করিতেন। রাজদরবারি ব্যক্তিরা সকলেই কেবল সুখসাধন ব্যাপারে অত্যন্ত রত হওয়াতে রাজশাসনের ক্ষীণতাপ্রযুক্ত পার্থিয়া ও বাক্‌ত্রিয়া প্রদেশ প্রথমতঃ অবাধ্য পরে পৃথক হইয়া স্বাধীন হয়। এই রাজা পনর বৎসরপর্য্যন্ত রাজ্য করেন তৎসময়ে এই কর্ম্মব্যতিরেকে অপর কোন গুরুতর কার্য্য হয় নাই। তাঁহার মরণানন্তর দ্বিতীয় সিল্যুকস বিংশতি বৎসরপর্য্যন্ত রাজ্য করেন এবং তৎকালব্যাপিয়া কেবল নিরন্তর যুদ্ধ হইয়া অতিস্পষ্ট রূপেই রাজ্যের ক্ষয় হইতে লাগিল। তিনি পার্থিয়া দেশ পুনর্ব্বার স্বীয় রাজ্যে সম্মিলিত করণার্থ উদ্যোগ করিলেন কিন্তু পরাজিত হইয়া ঐ অবাধ্য প্রজারদের হস্তে মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত বন্ধ থাকিলেন। তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র তৃতীয় সিল্যুকস অত্যল্পকাল অর্থাৎ তিন বৎসর অযশস্কর রূপেরাজ্য করিয়া বিষের দ্বারা হত হন এবং তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মহাইতি নামে বিখ্যাত আণ্টিয়োকস রাজ্য করেন। যে মেডিয়া ও পারস্যের সুবাদারেরা অবাধ্য হইয়াছিলেন তিনি তাঁহারদিগকে দমন করিয়া যে মিসরদেশীয় রাজা সুরিয়প্রদেশ তাঁহার হাতছাড়া করিয়াছিলেন এই প্রযুক্ত তাঁহার প্রতিকূলে সসৈন্যে যাত্রা করিলেন কিন্তু রাফিয়ার যুদ্ধে পরাভূত হইলেন। তৎপরে ঊর্দ্ধ্ব আসিয়াতে যে প্রদেশ অবাধ্য হইয়াছিল তাহারদের প্রতি মনােযোগ করিলেন কিন্তু তাঁহারদিগকে জয়করণ দূরে থকুিক বরং পার্থিয়া ও বাক্‌ত্রিয়ার স্বাধীনতা স্বীকার করিতে হইল। ইহাতেও তিনি হতাশ না হইয়া ভারতবর্ষের প্রতি সসৈন্য যাত্রা করিলেন। যদ্যপি তিনি সেই অঞ্চলে কোন প্রকৃত বিষয় অধিকার করিতে পারিলেন না তথাপি ঐ উদ্যোগের এই ফলোদয় হয় যে পূর্ব্ব আসিয়াতে যে২ প্রদেশের স্বাধীনতা তিনি স্বীকার করিয়াছিলেন তত্তৎ প্রদেশব্যতিরেকে অন্যান্য সকল স্থানে তাঁহার পরাক্রম দৃঢ়ীভূত হইল। তাহার কিঞ্চিৎ পরে মাকিদোনীয়ার রাজা ফিলিপের সঙ্গে যােগ করিয়া লিসিয়া ও ফিনিসিয়া দেশহইতে মিসরদেশীয় টলেমি রাজাকে বহিষ্কৃত করিলেন। এই কার্য্য সম্পাদনে রােমাণেরদের সঙ্গে তাঁহার ঘটনা হইল যেহেতুক তৎকালে রোমাণেরা পূর্ব্বদিগে আপনারদের রাজ্য বিস্তার করিতে চেষ্টা পাইতেছিলেন। অপর রোমাণেরদের অশেষ শত্রু মহা হানিবাল তাঁহার দরবারে আশ্রয় লইয়া এককালে ইটালি দেশের মধ্যে গমনপূর্ব্বক যুদ্ধকরণেতে রোমাণেরদের বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা করিতে এক পাণ্ডুলেখ্য প্রস্তুত করিলেন কিন্তু আণ্টিয়োকস ঐ পাণ্ডুলেখ্যের গুণাগুণ বিবেচনাকরণে অক্ষমহওয়াতে তদনুসারে কার্য্য করিলেন না। অতএব রোমাণেরা তাঁহার রাজ্যের উপর আক্রমণ করত তাঁহাকে পরাভূত করিয়া আপনারদের ইচ্ছামতই তাঁহাকে সন্ধি করাইলেন। ঐ সন্ধির নিয়ম রাজার পক্ষে অত্যন্ত অপমানজনক তাহা এই। তাবৎ ক্ষুদ্র আসিয়া অর্থাৎ টরস পর্ব্বতঅবধি পশ্চিমদেশীয় সমুদ্রপর্য্যন্ত যে মহারাজ্য ছিল তাহা রোমাণেরদিগকে অর্পণ করিতে হইল এবং কিস্তি২ দশ বৎসরপর্য্যন্ত অসংখ্যক টাকা তাহারদিগকে দিতে হইল এবং হানিবালকে রোমাণেরদের হস্তে সমর্পণ করিতে এবং এই সকল নিয়মের জামিনম্বরূপ আপনার পুত্র রোমাণেরদিগকে দিতে স্বীকার করিতে হইল। রোমাণেরা ঐ ক্ষুদ্র আসিয়া প্রাপ্ত হইয়া পরাগামসের রাজাকে দিলেন তিনি রোমাণের মিত্র আণ্টিয়োকসের অত্যন্ত শত্রু। অপর আণ্টিয়োকস সাঁইত্রিশ বৎসর রাজ্য করণানন্তর হত হইলেন।

 তাঁহার পুত্ত্র এগার বৎসর রাজ্য করেন তাঁহার রাজত্ব সময়ে দৌবল্যপ্রযুক্ত যে শান্তি তাহাই দৃষ্ট হইল যেহেতুক তৎসময় রোমানেরদের সর্বাচ্ছাদকতারূপ পরাক্রমের দ্বারা তদ্দেশীয় লােকেরা একেবারে ভগ্নোদ্যম হইল। সিল্যুকসের মরণোত্তর এপিফানিস সিংহাসন প্রাপ্ত হন তিনি রোম নগরে বিদ্যাভ্যাস করিয়াছিলেন। পরে মিসর দেশ আক্রমণ করেন এবং রোমানেরা যদি মধ্যস্থ না হইতেন তবে তদ্দেশ অধিকার করিতেন। তিনি স্বধর্ম্ম স্থাপন বিষয়ে অত্যন্তাকাঙ্ক্ষী হইয়া গ্রীকীয়েরদের ধর্ম্ম স্বীয় তাবৎ রাজ্যের মধ্যে সংস্থাপন করিতে উদ্যোগ করিলেন ইহাতে য়িহুদীয় লোকেরা অবাধ্য হইয়া য়িহুদী দেশ স্বাধীন হইল। ঐ রাজা খ্রীষ্টীয়ান শকের ১৬৫ বৎসর পূর্ব্বে লােকান্তরগত হন। সিল্যুকীয় রাজ্যের অবশিষ্ট বিবরণ বর্ণন করা অনাবশ্যক। তাহাতে কেবল আন্তরিক যুদ্ধ এবং ঘরে২ বিবাদ ও নিষ্ঠুর কার্য্যমাত্র লিখিত আছে তদ্বিবরণ পাঠে লোকের নিতান্তই বৈমুখ্য হয়। ঐ রাজ্যের সীমা ক্রমে এমত সঙ্কুচিত হয় যে পরিশেষে সুরিয়া ও ফিনিসিয়া ভিন্ন প্রথম সিল্যুকসের মহারাজ্যের আর কোন অধিকার থাকিল না। ফলতঃ ঐ রাজ্য এমত দৌর্ব্বল্যে পতিত হয় যে রোমানেরা অনাবশ্যক বোধে তাহা জয়ও করিলেন না কিন্তু খীষ্টীয়ান শকের ৬৪ বৎসর পূর্ব্বে স্বীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে ঐ দেশ লইয়া এক সুবা করেন।

THE KINGDOM OF SELEUCUS.

 The empire of the Seleucidæ was established by Seleucus in Upper Asia, B. C. 312, eight years after the death of Alexander. It comprised a region rather overrun than subdued by that monarch, and which required a chief of energy and vigour to sustain it. Seleucus was a captain of this resolute character, and strange to say the only prince of his line, who possessed those qualities. In the course of five years, he made himself master of all the country lying between the Euphrates and the Indus, the Oxus and the Persian gulf. In the year 305, B. C. he led a large army against Chundergoopt, the powerful sovereign of India, but after penetrating as far as the Ganges, he concluded a treaty, in which, on the consideration of receiving five hundred elephants, he relinquished all that the valour of the Macedonians had conquered in India, and agreed to fix the Indus as the eastern boundary of his dominions. By the fall of Antigonus at the battle of Ipsus as already noticed, Seleucus nearly doubled the extent of his dominions; he also removed the seat of his empire from the banks of the Tigris, to Antioch, on the shores of the Mediterranean. This was a disastrous change, as it both weakened his authority in the countries lying between the Euphrates and the Indus, where his presence was more particularly necessary, and involved him in all the disputes of the western kingdoms. The reign of Seleucus was advantageous to his subjects, who enjoyed eighteen years of peace under his Sway. He built many cities, and encouraged trade, more especially that to the east, on the line of the Oxus. After a reign of thirty years he was assassinated while directing his steps to the conquest of Macedon; and with him the splendour of the kingdom was quenched.

 His son Antiochus reigned nineteen years, without glory, though not without vigour. He made an attempt to subdue Bythinia, which induced its King to call in the Gauls and settle them in Gallogræcia, or Galatia, in the heart of Asia Minor; from whence Antiochus was unable to expel them, though he beat them in battle. The newly risen state of Pergamus also began to expand itself at the expense of the empire of Seleucus. Antiochus was succeeded by his son, the second of that name, during whose reign the women of the seraglio bore the chief sway. The boundless luxury of the court, and the weakness of the government led to the revolt of the provinces of Parthia and Bactria, which assumed independence. This was the only important event during his reign of fifteen years. Seleucus the second succeeded him, and governed for twenty years; a period of unabated war, and manifest decay. He attempted to restore Parthia to the empire, but was defeated, and remained a prisoner with his revolted subjects till his death. His elder son, Seleucus the third, after a short and inglorious reign of three years, was removed by poison, and succeeded by his younger brother, Antiochus, surnamed the Great. He subdued the satraps of Media and Persia who had revolted, and directed his forces against the Egyptian monarch who had wrested Syria from him; but he was defeated at the battle of Raphia. He next bent his attention to the revolted provinces of Upper Asia; but so far from re-conquering them, he was obliged to confirm the independence of both Parthia and Bactria. Notwithstanding this disappointment, he led his army into India, and though he obtained no permanent footing there, he re-established his sovereignty in Eastern Asia, except in the countries whose independence he had guaranteed. Soon after he allied himself to Philip king of Macedon, and expelled Ptolemy of Egypt, from Lysia and Phenicia. This brought him into contact with the Romans who were then stretching their dominion towards the East. The great Hannibal, the inveterate foe of the Romans, took refuge at his court, and drew a plan for checking their progress by carrying the war into Italy. But Antiochus, from inability to appreciate his scheme, declined to act on it. The Romans accordingly invaded his dominions, defeated him and obliged him to submit to their own terms of peace, which were sufficiently humiliating. He was required to evacuate all Asia Minor, that is, the wide country extending westward from Mount Taurus to the sea, to pay an enormous sum of money in ten yearly instalments, to deliver up Hannibal, and to give his son as a hostage. Asia Minor the Romans made over to the king of Pergamus, the friend of Rome and the deadly foe of Antiochus. This monarch was murdered after having reigned thirty-seven years.

 The reign of his son, which extended to eleven years, was marked by the tranquillity of weakness; for the overpowering influence of Rome repressed every national energy. Seleucus was succeeded by Epiphanes, who had been educated at Rome. He made war on Egypt, which, but for the interference of the Romans, he would have conquered. Being an intolerant bigot, he sought to introduce the Grecian superstition throughout his dominions, and this circumstance led to the revolt of the Jews, and the independence of Judea. He died B. C. 165. It is unnecessary to trace the remaining history of the Seleucidæ; it is only a detail of civil wars, family feuds, and deeds of horror, from which the mind involuntarily revolts. The kingdom was gradually contracted in its limits till nothing remained of the large empire of Seleucus beyond Syria and Phenicia. To such a state of weakness indeed was it reduced, that the Romans did not think it worth their while to conquer it; but, about the year 64 B. C. they annexed it as a province to their empire.