পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় সংখ্যা)/নেজাম ডাকাইতের পালা
১০। নিজাম ডাকাতের পালা। ৩২১-৩৪৬ পৃঃ
নিজাম ডাকাতের পালাটি আমাদের অন্যতম পালাসংগ্রাহক শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী মহাশয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান হইতে সংগ্রহ করিয়া ১৫।৭।২৫ তারিখে আমাকে পাঠান। এই পালার অধিকাংশ আশুতোষ বাবু চট্টগ্রামের বোলখালি থানার অন্তর্গত অল্লাগ্রাম নিবাসী সদর আলী গায়েনের নিকট হইতে সংগ্রহ করেন এবং মতিয়ার রহমান নামক একজন বাজীকরের নিকট হইতে অবশিষ্টাংশের উদ্ধার করেন। পালাটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্ব্বত্র প্রচলিত।
পালারচয়িতার নাম জানা যায় নাই; নিজাম ডাকাত চতুর্দ্দশ শতাব্দীর লোক। সুতরাং তৎসম্বন্ধীয় পালা তাহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই রচিত হইবার কথা। কিন্তু বর্ত্তমান পালাটিতে পরবর্ত্তী কালের গায়কদিগের অনেক যোজনা রহিয়াছে।
পালাটির কবিত্বসমৃদ্ধি বিশেষ কিছু নাই; কিন্তু তথাপি এই জাতীয় পালাগান ‘তন্ত্রীলয়সমন্বিত’-ভাবে গীত হইয়া সরলপ্রাণ শ্রোতৃবৃন্দের মধ্যে অকৃত্রিম করুণরসের সৃষ্টি করিয়া থাকে।
ইহা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করিবার বিষয় যে ধর্ম্ম সম্বন্ধীয় কোনও উপাখ্যান পালাগানের বর্ণনীয় বিষয় হইলে তাহাতে অতিপ্রাকৃত ব্যাপারের আতিশয্য দৃষ্ট হয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয়শ্রেণীরই ধর্ম্মোপাখ্যান সম্বন্ধে একথা প্রযোজ্য; এই সমস্ত পালা ময়নামতীর গানের সহিত সমশ্রেণীর; মন্ত্রবলে অসাধ্যসাধন ও অতিমানুষিক ঘটনার সমাবেশ এই সমস্ত গানের বিশেষত্ব।
সাধু বা পীরদের সম্বন্ধে অতিপ্রাকৃত ঘটনার অবতারণা ও তাঁহাদের প্রতি অলৌকিক শক্তিমত্তার আরোপ করার প্রথা প্রাচ্য ও প্রতীচ্য সমস্ত দেশেই প্রচলিত। পালাগানটি মুসলমান-রচিত হইলেও ইহার অনেক স্থলেই হিন্দুদিগের ধর্ম্মোপাখ্যানের সঙ্গে ঐক্য দেখা যায়। ইহার কারণ বোধ হয় এই যে ধর্ম্মজীবনের উচ্চস্তরে আরোহণ করিলে মানুষ সাম্প্রদায়িকতার গণ্ডীতে আবদ্ধ থাকে না; হিন্দু ও মুসলমান সেখানে অভিন্ন। জাতিবর্ণনির্ব্বিশেষে সমস্ত মনুষ্যজাতিই সাধুদিগের ধর্ম্মজীবনের অমৃতময় ফলভোগ করিতে পারেন। হিন্দুরা অনেক মুসলমানপীরের দরগায় পূজা দিয়া থাকেন; আবার মুসলমানেরাও অনেক হিন্দু সন্ন্যাসীকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখেন। পালাগানটির মুসলমান লেখক হিন্দুদিগের বহু তীর্থস্থানের প্রতি, এমন কি হিন্দুর উপাস্য রাধাকৃষ্ণ ও শক্তিদেবতা কালীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাইয়াছেন। এখনও পল্লীগ্রামের মুসলমানেরা মনসার ভাসান এমন কি কালীকীর্ত্তন ও গান করিয়া উপজীবিকা অর্জ্জন করেন। উভয় শ্রেণীর এই উদারতাই হিন্দুমুসলমানমিলনের সুদৃঢ়ভিত্তিস্বরূপ হইয়া আসিয়াছে। দুঃখের বিষয় এখন কোন কোন স্থানে উভয় সম্প্রদায়ের গোঁড়ার দল কাল্পনিক মনোমালিন্যের সৃষ্টি করিয়া এই সুদৃঢ় প্রেমের বন্ধনকে নির্দ্দয়ভাবে ছিন্ন করিবার প্রয়াস পাইতেছেন।
এই পালাগানে দুইটি নরহত্যাদ্বারা নিজাম ডাকাত ধর্ম্মজীবনের উচ্চস্তরে উঠিয়াছিলেন বলিয়া বর্ণিত আছে। সাধু উদ্দেশ্যে নরহত্যাও পুণ্যকার্য্য বলিয়া গৃহীত হইতে পারে, এই ধারণা হিন্দুদের গীতায়ও প্রমাণিত দৃষ্ট হয়। কিন্তু সুকোমল বাঙ্গালী হিন্দুর হৃদয়ে নরহত্যা কোন উদ্দেশ্যেই ধর্ম্মের সোপান বলিয়া গণ্য হইবে না। এই স্থানে বোধ হয় হিন্দু সাধুদের সম্বন্ধীয় পালাগানের সঙ্গে নিজাম ডাকাতের পালার একটু বৈষম্য দৃষ্ট হয়।
পালারম্ভে বন্দনাগীতিতে বড় পীরসাহেবের নাম পাওয়া যাইতেছে। এখনও চট্টগ্রামের অন্তর্গত রঞ্জন থানার এলাকাধীন নোয়াপাড়া গ্রামে কর্ণফুলীতীরে এই বড় পীরসাহেবের দরগা বিদ্যমান রহিয়াছে। নোয়াখালি মৈমনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলের বহুদূরবর্ত্তী স্থান হইতে অনেক ধর্ম্মপ্রাণ মুসলমান এখনও এই বড় পীরসাহেরের দরগায় আসিয়া সিন্নি দিয়া থাকেন।
পালাগানোক্ত সেখফরিদও একজন প্রসিদ্ধ পীর। চট্টগ্রাম সহরের মাত্র পাঁচ মাইল দূরে নসিরাবাদ নামক স্থানে এখনও সুলতান বাজেদ বষ্টামি নামক পীরের দরগা রহিয়াছে। এখানে একটি স্বচ্ছতোয়া প্রস্রবণকে লোকে ‘সেখফরিদের চসমা’ নাম দিয়াছে।
কাঁহারও কাহারও মতে চট্টগ্রামের নিজামপুর গ্রাম এই নিজামের নামের সহিত সংস্রবযুক্ত। দ্বাদশ আউলিয়ার স্থান বলিয়া চট্টগ্রাম ধর্ম্মপ্রাণ মুসলমানদিগের চক্ষে পরম পবিত্র তীর্থ। প্রসিদ্ধ চৈনিক পরিব্রাজক ইবন বাটুটা পীর বদরের দরগা দেখিবার জন্য চট্টগ্রামে আগমন করেন।
সেখ ফরিদের সহিত নিজামের সাক্ষাৎ ও সাধুসংসর্গে নিজামের পরিবর্ত্তন অনেকটা কৃত্তিবাসী রামায়ণের রত্নাকরের উপাখ্যানের অনুরূপ। ব্রহ্মা ও নারদের প্রভাবে দস্যু রত্নাকর মহর্ষি বাল্মীকিতে পরিণত হইয়াছিলেন, কৃত্তিবাসপ্রদত্ত এই বর্ণনা হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত করিয়া পালাগানের কয়েকটি পঙ্ক্তির সহিত তুলনা করিতেছি।
(১) পুনঃ বলিলেন পাপ কর কার লাগি।
তোমার এ পাতকের কেহ আছে ভাগী॥
মুনি বলে আমি যত লয়ে যাই ধন।
মাতা পিতা পত্নী আমি খাই চারিজন॥
যেবা কিছু বেচি কিনি খাই চারিজনে।
আমার পাপের ভাগী সকলে এক্ষণে॥
শুনিয়া হাসিয়া ব্রহ্মা কহিলেন তবে।
তোমার পাপের ভাগী তারা কেন হবে॥
করিয়াছ যত পাপ আপনার কায়।
আপনি করিলে পাপ আপনার দায়॥
(২) ফকির কহিল তুমি কর এক কাম॥
ঘরে তোমার মা জননী স্তিরী পুত্ত্র আছে।
এই টাকা লইয়া তুমি যাও তারার কাছে॥
রুজি করিয়াছ টাকা অনেক মানুষ কাড়ি।
মাডিদি বানাইয়ে শরীল শেষে হৈব মাডি॥
ডাকাতি না করিও যে বুলি তোমার স্তরে।
এবে হন্তে ভালা হৈয়া থাক নিজের ঘরে॥
এই কথা বলি ফকির হৈয়া গেল চুপ।
হেষ্ট-মুখী রৈল ডাকাইত হইল বেকুব॥
কৃত্তিবাস পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বাঙ্গালা রামায়ণ রচনা করেন। কৃত্তিবাস মুসলমানী আখ্যায়িকা হইতে দস্যু রত্নাকরের কাহিনীর উপাদান গ্রহণ করিয়াছিলেন, অথবা হিন্দু ও মুসলমান উভয় কবিই প্রাচীন কালের কোনও বিস্মৃত নামা সাধুর জীবন-বৃত্তান্তের অনুকরণ করিয়াছিলেন—সে কথা বলা কঠিন।
নিজামুদ্দিন আউলিয়া সম্বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত মৌলবী সহিদুল্লাহ এম. এ., বি. এল. মহাশয় লিখিয়াছেন যে নিজামুদ্দীন আউলিয়া ত্রয়োদশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি দিল্লীর অধিবাসী। কথিত আছে, সেখ ফরিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্ব্বে নিজাম বায়ান্নটি নরহত্যা করেন এবং জব্বরকে মারিবার সময় তিনি বলিয়াছিলেন, “যাহা বায়ান্ন, তাহা তেপ্পান্ন।” তদবধি নাকি নিজাম আউলিয়ার এই উক্তি প্রবাদে পরিণত হইয়াছে। কিন্তু এই পালাগানে দেখা যায় যে ফরিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্ব্বে নিজাম প্রত্যহ নিরানব্বইটী করিয়া লোকের প্রাণ সংহার করিতেন।
বাঙ্গালা ১৩৩২ সালের ১৫ই ফাল্গুন তারিখের আনন্দ বাজার পত্রিকার বিশেষ-সংখ্যায় অধ্যাপক শ্রীযুক্ত যদুনাথ সরকার সি. আই. ই, মহাশয় এই নিজামুদ্দান সম্বন্ধে ফার্সী সাহিত্য হইতে অনেক তথ্যের সন্ধান দিয়াছেন। ‘তুজুকী জাহাঙ্গীরী’তে নিজামুদ্দীনের উদার মত সম্বন্ধে একটি গল্প আছে। একদিন নিজামুদ্দীন যমুনা তীরে বহু হিন্দুকে “হর হর” শব্দ উচ্চারণ করিতে শুনিয়া বলিয়াছিলেন, “হর্ কমরস্থ রহে দিনি ওকিলি গহে” (অর্থাৎ প্রত্যেক জাতিরই স্বধর্ম্মে মুক্তির সহজ উপায় প্রদর্শিত হইয়াছে)। ইহার উত্তরে নিজাম-শিষ্য আমির খসরু নিম্নলিখিত ফার্সী শ্লোক রচনা করিয়া বলিয়াছিলেন, “মন্ কিবলা এ রস্থ কার্দাম্ বর্ শিম্ল আ কব্জ্ কুলহে” (অর্থাৎ আমার গুরুর এই বক্র শিরোবন্ধটি আমার মুক্তির উপায়)। প্রবাদ আছে, সুলতান মহম্মদ তোগলকের নিষ্ঠুর অত্যাচারে ক্রুদ্ধ ও বিচলিত হইয়া নিজাম শাপ দিয়াছিলেন, তাহাতে তোগলকাবাদ মরুভূমিতে পরিণত হইয়াছিল।
নেজাম ডাকাইতের পালা
বন্দনাগীতি
পর্থমে পর্ণাম করি পর্ভু করতার[১]।
দোতীয়ে[২] পর্ণাম করি সির্জন[৩] যাহার॥
তির্তিয়ে পর্ণাম করি ভাল নুরনবি[৪]।
কিতাব কোরাণ মানম পরভুর নিজবাণী॥৪
যেই কালে ছিলা পর্ভু পরম ধেয়ানে।
নুর মহহ্মদের রূপ দেখিলা নয়ানে॥
দেখিতে দেখিতে রূপ ইত[৫] উপজিল।
মহব্বতের[৬] জন্য কামেল[৭] মহহ্মদ সির্জিল॥৮
মহহ্মদকে কৈল্ল পদাই[৮] রবিকুলের সাই[৯]।
তার শেষে পদাই কৈল্ল এ সব দুনিয়াই[১০]॥
যদি সে মহহ্মদ নবি না হৈত সির্জন।
না হইত আর্সকোর্স[১১] এ তিন ভুবন॥১২
আবদুল্লা আমিনা মানম, মানি তানার পদ।
যার গর্ভে পদাই হৈল দুন্যাইর[১২] মহহ্মদ॥
পচ্ছিমেতে[১৩] মানি আমি মক্কাভূমি স্থান।
উদ্দিশ্বেতে মানি আমি মোমিন[১৪] মোছলমান॥১৬
তার পচ্ছিমে মানি আমি মদিনা সহর।
যেই জাগাতে[১৫] ছিল আমার রছুলের কবর॥
রছুল বেটী[১৬] আলামকুটী[১৭] বিবি ফাতেমা।
সক্কলে[১৮] ডাকিত যে মা আলী এ ডাইক্ত না[১৯]॥২০
উত্তরেতে মানি আমি হেমন্ত কেদার[২০]।
যাহার হিমানী বংশে সয়াল[২১] সংসার॥
পূবদিকে মানি আমি পূবে যাত্রাভানু।
বিন্দাবন সহিত মানম রাধের শোভাকানু॥২৪
দক্ষিণেতে মানি আমি ক্ষিরন্দী[২২] সাইগর[২৩]।
একূল ওকূল দুকূল ভাঙ্গি মধ্যে বালুর চড়॥
চারিদিকে মানি আমি চারি নিকা[২৪] মান।
হেটে[২৫] মানি বসুমাতা উপরে আসমান॥২৮
রাউন্যা[২৬] গেরামে মানি মাতা ইচ্ছামতী।
নোয়াপাড়ায় মানি আমি বড়পীর সাহেবের পাতি[২৭]॥
ডেন কূলে কুড়াল্যা মুড়া[২৮] বাঁকূলে হির্ম্মাই[২৯]।
তার মধ্যদি[৩০] চলি গেল গৈ সত্যের কানাই॥৩২
ছোড ছোড[৩১] দলা[৩২] মারি বাঁধাই আছে চড়।
শঙ্খনদী ঊড়ি[৩৩] বলে মোরে রৈক্ষা কর॥
এই সব মানি আমি সীতার ঘাটে[৩৪]যাই।
সীতা সন্তি[৩৫] মাকে মানি রঘুনাথ গোঁসাই॥৩৬
দুনিয়ার সার মানি বাপ আর মায়।
ভুবন দেইখাছি[৩৬] আমি যারার কির্পায়[৩৭]॥
মা বাপেরে যেইজন কঠোর দিব গালি।
ভেয়স্ত[৩৮] দেখাই তারে দোজখে[৩৯] দে ঢালি॥৪০
আনলের[৪০] চাদ্দর দিব ঐ যাদুর গায়।
ছডফড[৪১] করিবরে করি হায় রে হায়॥
আখেরেতে বন্দি আমি ওস্তাদের চরণ।
নেজাম ডাকাইত্যার কথা শুন সভাজন॥৪৪
পার্ব্বত্য প্রদেশে ডাকাতি
(২)
নেজাম ডাকাইত ছিল পূবের পাহাড়ে।
ঘুরিত ফিরিত সদাই মানুষ কাডিবারে[৪২]॥
রাত্র পর্ভাতে[৪৩] উডি[৪৪] তলোয়ার হাতে লৈয়া।
দিগাড় জঙ্গলে ডাকাইত যায়ন্ত চলিয়া॥৪
নিপোলী[৪৫] শরীল[৪৬] তায় বরণ অতি কাল।
জোয়াফুলের[৪৭] মতন চৌখ[৪৮] সদাই থাকে লাল॥
খাজুরিয়া[৪৯] মাথার চুল দাড়ি মোচ[৫০] লাম্বা[৫১]।
হাত পা যেমন তার জারৈল[৫২] গাছের খাম্বা[৫৩]॥৮
বাঘের মতন থাবা যে তার সিঙ্গের[৫৪] মতন গলা।
মৈষের[৫৫] মতন দিষ্টি[৫৬] যে তার হাতীর মতন চলা॥১০
দিগাড় জঙ্গলর কথা কি কহিব আর।
পূবমিক্যা[৫৭] আছে যে তার ওচল[৫৮] পাহাড়॥
পাইয়া বাঁশ ও গল্লাক বেতে সেই পাহাড় ঘেরা।
বাঘ ভাল্লুক হাতী গয়াল[৫৯] করে চলা ফেরা॥১৪
ছোড ছোড[৬০] ছনের টিলা পচ্ছিমেতে[৬১] তার।
দুই টিলার মাঝে ঢালা[৬২] বড় চমৎকার॥
সেই ঢালার মুখে একটা বট গাছ আছিল।
তাহার কিনারে[৬৩] নেজাম বৈঠক করিল॥১৮
ফকির সেখ ফরিদের কথা
(৩)
সেখ ফরিদ নামে আছিল ফকির একজন।
গহীন কাননে থাকি করিত ধেয়ান॥
ইছিম[৬৯] জপিত সদাই চৌখে নাহি তান[৭০] ঘুম।
আতাইক্যা[৭১] ডাকাত্যার কথা হইল মালুম[৭২]॥৪
ধেয়ানে বসিয়া ফকির জানিল সে রাইত।
এককম একশত মানুষ কাইট্যো[৭৩] সে ডাকাইত॥
পরদিন পর্ভাতে[৭৪] উডি[৭৫] ভাবিয়া চিন্তিয়া।
একজন বিদ্দবেশে[৭৬] চলিল সাজিয়া॥৮
টাকা পৈসা[৭৭] বহুত লৈল ভরি একটা ঝুলি।
হাঁডা[৭৮] দিল ভরা ঝুলি কাঁধর মাঝে তুলি॥
লোহার একটা লাডি[৭৯] হাতে ধীরে ধীরে যায়।
গুজা[৮০] হৈয়া চলে বিদ্দ মাডির[৮১] দিকে চায়॥১২
আস্তে আস্তে[৮২] ঢালার মুখে আসিল যখন।
দূরে থাকি নেজামিয়া করিল গর্জ্জন॥
হাতে খোলা তলোয়ার রক্তিম নয়ান।
বুড়ার কিনারে[৮৩] নেজাম হৈল আগুয়ান॥১৬
নেজাম কহিল—“বুড়া শুন দিয়া মন।
টাকা যদি নাহি দেয় লইব গর্দ্দন॥
বুড়া বলে—“কত টাকা চাও আমার কাছে”।
“দুইশত টাকা দিলে তোমার পরাণ যদি বাঁচে”॥২০
এই কথা শুনি ফকির ঝোলায় হাত দিয়া।
দুইশত টাকা দিল তারে বাহির করিয়া॥
দুইশত টাকা লৈয়া ডাকাইত ঝোলার দিকে চায়।
পুরা রৈয়ে ঝোলার মুখ দেখিবারে পায়॥২৪
মনে মনে ভাবি ডাকাইত কিকাম করিল।
আর অ পানশ[৮৪] টাকা চাহি কহিয়া উঠিল॥
জল্দি[৮৫] যদি নাহি দাও কাটিব তোমায়।
এহা[৮৬] বুলি[৮৭] নেজামিয়া তলোয়ার ঘুরায়॥২৮
আর অ পানশ টাকা ফকির গনিয়া গনিয়া।
ডাকাইতের হাতে দিল যত্তন[৮৮] করিয়া॥
পানশ টাকা লৈয়া ডাকাইত ঠাহার করি চায়।
ঝোলার মুখ পুরা রৈয়ে দেখিবারে পায়॥৩২
মনে মনে ভাবে এটা মানুষ নাই হবে।
এত টাকা দিলে কেনে ঝোলা পুরা রবে॥
মনে মনে ভাবি ডাকাইত মন কৈল্ল স্থির।
এ বেটা মানুষ নহে দরবেশ ফকির॥৩৬
নেজাম ডাকাইত বলে—“শুন ওরে বুড়া
আর ও টাকা দাও নতু মাথা কর্বো গুড়া॥
ফকির করিল কিবা শুন গুণিগণ।
ঝারিতে লাগিল ঝোলা করিয়া যত্তন॥৪০
ঝন্ ঝন্ আবাজ[৮৯] উডে[৯০] কি বলিব আর।
দেখিতে দেখিতে হৈল টাকার পাহাড়॥
টাকার পাহাড় হৈল দেখিল নেজাম।
ফকির কহিল—“তুমি কর এক কাম॥৪৪
ঘরে তোমার মা জননী স্তিরি[৯১] পুত্ত্র আছে।
এই টাকা লৈয়া তুমি যাও তারার[৯২] কাছে॥
রুজি[৯৩] করিয়াছ টাকা অনেক মানুষ কাড়ি।
মাডিদি[৯৪] বানাইয়ে শরীল শেষে হৈব মাডি॥৪৮
ডাকাতি না করি ও যে বুলি তোমার স্তরে[৯৫]
এবে হুন্তে[৯৬] ভালা হৈয়া থাক নিজের ঘরে”॥
এই কথা বলি ফকির হৈয়া গেল চুপ।
হেষ্টমুখী[৯৭] রৈল ডাকাইত হইল বেকুব॥৫২
থর থর করি নেজাম কাঁপিয়া উঠিল।
দিগাড় জঙ্গলে যে ভুইচাল[৯৮] ধাইল॥
ফকির বলিল আবার হাসিয়া হাসিয়া।
“ফায়দা[৯৯] কি পাও তুমি মানুষ কাডিয়া॥৫৬
টাকা পৈসা লৈয়া তুমি কিবা কাম কর।
ভেয়স্তর[১০০] মাঝাবে কেন বাঁধ গুনার[১০১] ঘর॥
মানুষ মারিয়া তুমি খোদার কাছে দাগী[১০২]।
আখেরের[১০৩] কালে কেহ না হইব ভাগী॥”৬০
আস্মানে জবিনে[১০৪] নেজাম চাহে বারে বার।
চারিদিকে চাইয়া দেখে ঘোর অন্ধকার॥
ঠাডার[১০৫] পড়িলে যেমন মানুষ থাকে খাড়া।
থিয়াই[১০৬] রহিল নেজাম ডাকাইত নাহি লড়া চড়া॥৬৪
তলোয়ারগান[১০৭] পড়ি গেলগৈ[১০৮] হাতরথূন[১০৯] খসি।
নেজাম ডাকাইত মাথাত হাতদি[১১০] কাইনত[১১১] লায়িল[১১২] বসি॥
কাঁদিতে কাঁদিতে নেজাম কি কাম করিল।
ফকিরর পায়ের উপর আসিয়া পড়িল॥
“বহুত মানুষ কাডিয়াছি[১১৩] টাকার লাগিয়া।
টাকা লৈতে আজি কেন পরান যার ফাডিয়া[১১৪]
টাকার লাগি মানুষ কাডি[১১৫] করিয়াছি গুনা[১১৬]।
এতটাকা পাইলাম আমি পরাণ কেনে উনা[১১৭]॥”৭২
কাঁদিতে লাগিল নেজাম চৈক্ষে[১১৮] বহে পানি।
সেখ ফরিদে ডাকাইতরে বুগত[১১৯] লৈল টানি॥
পুছার[১২০] করিল তারে—“কান্দ কি কারণ।
তুমি চাও টাকা পৈসা দিলাম বহুত ধন॥৭৬
ডকোইত কহিল—“টাকা ন[১২১] লাগিব আর।
তোমার গোলাম হৈতে একিন[১২২] আমার॥৭৮
(8)
দীক্ষা
সেখ ফরিদ নেজামরে হঙ্গে[১২৩] করি লৈল।
খাল্যা[১২৪] ঝোলা নেজামিয়ার পিডত[১২৫] তুলি দিল॥
ভর্মিতে ভর্মিতে অরে তারা দুই জন।
গহীন কাননে যাইয়া যায়া দিল দরশন॥৪
চলভল[১২৬] হৈয়া নেজাম চারিদিকে চায়।
ফকিরের মনে হৈল পরখিতে[১২৭] তায়॥
বুদ্ধিমন্ত[১২৮] সেখ ফরিদ মনেতে ভাবিয়া।
পাহাড়ের পাষাণ দিল সোণা বানাইয়া[১২৯]॥৮
পিছে পিছে যাইতে নেজাম মাডির[১৩০] দিকে চায়।
কর্দা কর্দা[১৩১] সোনা তথায় দেখিবারে পায়॥
নেজায় ভাবিল দিলে[১৩২] ভাগ্য বড় ছিল।
সোনাধর পাহাড় আজি দরশন হৈল॥১২
কতেক[১৩৩] সোনা লৈয়া নেজাম ঝোলাতে সামাইল[১৩৪]।
আদ্যে আদ্যে[১৩৫] সেখ ফরিদর তাহা মালুম[১৩৬] হৈল॥
উল্টি ফিরি সেখ ফরিদ নিরখিয়া চায়
ঝোলাপুরা দেখিয়ারে বলে হায়রে হায়॥১৬
সেখ ফরিদ বলে—“নেজাম কি দেখি ঝোলাতে
খুলিয়া দেখাও তাহা আমার সাক্ষাতে॥”
তা শুনিয়া নেজাম ডাকাইত ঝোলাটা খুলিল।
পাহাড়ের পাত্থর[১৩৭] হক্কল[১৩৮] ঝোলাতে দেখিল॥২০
সেখ ফরিদ বলে—“অরে[১৩৯] সোনা কি করিলা।”
নেজাম উডিয়া[১৪০] বলে—“সোনা হৈল শিলা॥
তখন ফকির বলে “চলি যাও ঘরে।
আমার সঙ্গে আস তুমি কন[১৪১] কামের তরে॥”২৪
ডাকাইত বলিল— “আমি তোমার সঙ্গে ফিরি
মিছা দুনিয়াইর মাঝে লইব ফকিরী॥
ফকির উডিয়া বলে— “তোমার কার্য্য নয়।
ডাকাইতি ফকিরী দুইটা বহুত তাফাৎ হয়॥২৮
মানুষ কাডিয়া[১৪২] তুমি কামাইয়াচ[১৪৩] ধন।
শেষ কাডালে[১৪৪] ফকিরীতে কেন দিলে মন॥
এখনোত ধনের লোভ তোমার দিলে[১৪৫] আছে।
ফকিরীর ভান কেন কর আমার কাছে॥”৩২
তা শুনিয়া নেজাম ডাকাইত উডিল[১৪৬] কাঁদিয়া।
ফকিরর পয়র[১৪৭] উপর পড়ে লোডাইয়া[১৪৮]॥
কাঁদিতে কাঁদিতে তার চৈক্ষে[১৪৯] বক্ষে পানি।
“ধনের লোভ না করিব বলিলাম আমি॥৩৬
তুমি যদি কির্পা[১৫০] নাহি কর আজি মোরে।
তোমার সাক্ষাত অরে[১৫১] যাব আমি মৈরে॥”
এই কথা বুলি[১৫২] নেজাম কি কাম করিল।
পাত্থরর[১৫৩] উপরত বুক কুটিতে লাগিল॥৪০
চোখের জল আর বুকের লৌয়ে[১৫৪] পাষাণ যায় ভাসি।
সেখ ফরিদে নেজামরে বুগত[১৫৫] লৈল আসি॥
“মাতা আছে পুত্র আছে আছে তোমার স্তিরি[১৫৬]।
চাহি রৈয়ে তোমার মিক্যা[১৫৭] কখন যাইবা ফিরি॥”৪৪
নেজাম বলে—“তারার কথা ন[১৫৮] ভাবিব আর।
গুনার[১৫৯] ভাগী ন হইব তারা যে আমার॥
কুসঙ্গে মজিয়া আমি পাইয়াছি তাপ।
আখেরে[১৬০] ফকিরী দাও তুমি আমার বাপ॥৪৮
তা শুনিয়া সেখ ফরিদ কি কাম করিল।
লোহার লাডি[১৬১] সেই জঙ্গলর মধ্যেতে গাড়িল॥
নেজামরে ডাকি বলে শুন সমাচার।
হাউসের[১৬২] লাডি এইটা ছিল যে আমার॥৫২
তোমারে আজুকা আমি জানাইয়া যাই।
লাডির আগার দিকে তুমি থাকিবা চাহাই[১৬৩]॥
একমনে এক চিত্তে ইচ্ছিমটা[১৬৪] জপিয়া।
অনাহারে অনিদ্রায় থাকিবা চাহিয়া॥৫৬
বার বচ্ছর গত হৈলে ফাডি[১৬৫] লাডির[১৬৬] মাথা
দেখিবা যে অপরূপ বাহির হৈব লতা॥
যে তারিখে এই লতা বাহির হয় দেখিবা।
সে তারিখে তুমি আমার দেখা যে পাইবা॥৬০
এই কথা বুলি[১৬৭] ফকির ভরমনা[১৬৮] করিয়া।
আপনার নিজ কাজে গিয়ন্ত চলিয়া॥
বাঘ ভাল্লুক ঘুরে সেই গহীন কাননে।
নেজাম ইছিম[১৬৯] জপে আপনার মনে॥৬৪
স্তিরি[১৭০] পুত্র বাড়ীত[১৭১] রহিল কিছু না জানিল
নেজামরে বাঘে খাইল সমাচার হৈল॥
ছয় বছর গত হৈল এরূপে যখন।
জঙ্গলী পাত্সার রাজ্যে হৈল অঘটন॥৬৮
(৫)
পাহাড়ী সর্দার।
জঙ্গলী পাত্সা ছিল যে পাহাড়ের সর্দ্দার।
সুখেতে করিত বাস বনেরি মাঝার॥
ধন দৌলত টাকা পৈসা বহুত আছিল।
তান ঘরে অপরূপ মাইয়া[১৭২] জনমিল॥৪
মুখের গঠন মাইয়ার পুন্নিমার শশী।
বচন কোকিলার বোল কাম্বুর হাতর বাঁশী॥
নির্ম্মলা শরীল[১৭৩] তার মাজাখানি[১৭৪] সরু।
শিনায়[১৭৫] কদলী পুষ্প যেন কল্পতরু॥৮
অপূর্ব্ব সোন্দরী[১৭৬] মাইয়া[১৭৭] শুন অনুপাম।
লালবাই কন্যা বুলি[১৭৮] বাছি রাইখ্যো[১৭৯] নাম॥
বার বচর হৈয়ে পাড় মাইয়ার তের নাই পুরে।
কাঞ্চুলী আঁটিয়া ধরে কাল যৌবনর ভরে॥১২
শুন শুন সভাজন শুন সমাচার।
কিবা অঘটন হৈল রাজ্যের মাঝার॥
পাত্সার ছিল এক উজির সুজন।
মহব্বত[১৮০] করিত তানে[১৮১] দোস্তর[১৮২] মতন॥১৬
জব্বর বলিয়া সেই উজিরের বেটা।
এই মাইয়ার লাগিয়ারে ঘটাইল লেটা[১৮৩]॥
লম্পট আছিল জব্বর বড়ই দুষ্মন।
মাইয়ারে করিতে চুরি ভাবে মন মন॥২০
উজিরের পুত্র বুলি পাত্সার আন্দরে[১৮৪]।
মাঝে মাঝে জব্বর মিয়া আসন যায়ন করে॥
লালবাইর উপরে তরে আসক[১৮৫] হইল।
হাসিল করিতে কাম একিন করিল॥২৪
পিরিতর তিনটী আক্ষর মর্ম্মে লাগে যার।
কিবা সরম কিবা ভরম জাতি কূল তার॥
পিরিতর ফল খাইলে উদর নাহি পুরে।
ধর্ম্মে যে পাঠাইয়ে ফল সংসার মজাইবারে॥২৮
একদিন লালবাই আন্দরর ভিতরে।
মিডা মিডা[১৮৬] শিখায় শাইর[১৮৭] পাখীটাকে॥
কেহ না আছিল তথায় ছিলা একাশ্বরী[১৮৮]।
জব্বর মিয়া সময় পাইয়া আইল[১৮৯] তড়াতড়ি॥৩২
কাছেতে আসিয়া ধরে লালবাইর হাত।
আচানক[১৯০] কারখানা দেখি মাইয়া দিল ডাক॥
এক ফাল[১৯১] দিয়া জব্বর ধাই গেল পলাই।
মায় আসি দেখে শুধু কাঁদে লালবাই॥৩৬
পুছার[১৯২] করিল মায়—“বল আমার লালী।
সোনার শরীল[১৯৩] কেন আজি হৈল কালি॥”
কাঁদিয়া বলিল লাল—“জব্বর দুর্জন।
ধরিল আমার হাত জানিনা কারণ॥”৪০
পাত্সার কানে যখন এই কথা গেল।
অসময়ে উজিররে ডাকিয়া আনিল॥
পাত্সা বলিল শুন—“তোমার যে বেটা[১৯৪]।
ধরিয়া মাইয়ার[১৯৫] হাত ঘটাইল লেটা॥৪৪
জল্দি[১৯৬] করি জব্বররে এইখানে আন।
আজুকা[১৯৭] তাহার আমি কাটিব দুইকান॥
জ্বলিয়া উডিল[১৯৮] উজির উজালের[১৯৯] মত।
শীঘ্রগতি বাড়ী গিয়া হৈল উপনীত॥৪৮
খানা পিনা[২০০] খাই জব্বর মুখে দিছে পান।
সেই সমে[২০১] উজির যাইয়া ধরিল তার কান॥
পয়র[২০২] জুতা খুলি লৈয়া মাথাত[২০৩] দিল বাড়ি।
জব্বর মিয়য়া মাডিত পড়ি দিল গড়াগড়ি॥৫২
নবাবের হুকুমে গেল তার কান ফাড়া[২০৪]
উজির বাঁধিয়া দিন তার গলায় ঝাঁড়া[২০৫]
অকমানী[২০৬] হৈয়া জব্বর পলাইয়া গেল।
তাহার খবর আর কেহ না রাখিল॥৫৬
পাশবিক ইচ্ছা
তার পরে কি হইল শুন বিবরণ।
বীমারে[২০৭] পড়িয়া লালী করিল শয়ন॥
শুকাইতে লাগিল কৈন্যা বাসি ফুলের মত।
অঝোরে নয়ন মায়ের ঝরে অবিরত॥৪
সোনার পর্তিমা[২০৮] সেই ভালা ন[২০৯] হইল।
চৌখের[২১০] জল ছাড়ি লালী ভেয়স্তে[২১১] চলিল॥
উডিল[২১২] কান্দনের রোল ছাইল আস্মান।
বুকে কিল দিয়া তার কাঁদে বাবজান॥৮
মায়ে কাঁদে বুগ কুডি[২১৩] চুল ফালায়[২১৪] ছিড়ি।
দাসী বান্দী[২১৫] কান্দন করে ঘরর কোনাজ ধরি॥
আড়া কাঁদে পাড়া কাঁদে মরার মুখ চাই।
জঙ্গলী মুল্লুক কাঁদে এই মাইয়ার লাই[২১৬]॥১২
তার পরে সভাজন শুনহে খবর।
ময়দানে মাইয়ারে নিয়া দিল যে কবর॥
লম্পট জব্বর তখন করিল কেমন।
দোস্ত এক ডাকিয়া লৈয়া চিন্তে মনে মন॥১৬
ভাবিয়া চিন্তিয়া তারা কন কাম করিল।
রাতুয়া[২১৭] কবরের পাশে হাজির হইল॥
কত যে ভাবিল জব্বর না যায় বলন।
দুষ্মনি করিতে তার পাকল[২১৮] হৈল মন॥২০
মনে মনে আশা করে আসকদার[২১৯] তুসিব।
মরা মানুষ লৈয়া মোরা আর্জ[২২০] মিটাইব॥
এইরূপে চিন্তি তারা গোর[২২১] কুড়িতে ছিল।
নেজাম ডাকাইতের তাহা মালুম[২২২] হইল॥২৪
ইছিম[২২৩] জপিতে তার হৈয়া গেল ভুল।
তড়াতড়ি[২২৪] উডি[২২৫] নেজাম ভাবিয়া আকুল॥
এক কম একশত মানুষ কাডিয়াছি[২২৬] আমি।
তার থুন[২২৭] অ অধিক কার্য্য ইহারার দেখি॥২৮
এই কথা ভাবি নেজাম স্থির কৈল্ল মন।
লোহার লাডি হাতি[২২৮] লৈয়া করিল গমন॥
দুষমণেরা কবর কুড়ি[২২৯] উঠাইয়াছে মাইয়া।
বেকুব[২৩০] হইল নেজাম সেইখানে যাইয়া॥৩২
মাইয়ার কাফন[২৩১] যখন খুলিতরে ছিল।
নেজাম ডাকাইত তখন আপনা ভুলিল॥
লোহার লাডি[২৩২] হাতত[২৩৩] লৈল আকল[২৩৪] গেল ছাড়ি।
ঘুরাইয়া দুইজনর মাথাত দিল বাড়ি॥৩৬
লাডির বাড়ি দুইজনে খাইল যখন
মস্তক ফাডিয়া তারার হইল মরণ॥
নেজাম ফিরিয়া আসে আগের জাগায়।
লাডিটা গাড়িয়া[২৩৫] তার উপর দিকে চায়॥৪০
লতার আগা বাহির হৈয়ে দেখিতে পাইল।
সেই সমে[২৩৬] সেখ ফরিদ আসিয়া মিলিল॥
নেজাম উডিয়া তানে[২৩৭] জানাইল ছেলাম।
মাপ কর করিয়াছি আমি গুনাকাম[২৩৮]॥৪৪
আরঅ দুইজন মানুষ আমি কাডিয়াছি[২৩৯] রোষে।
মাপ কর ফকির সাহেব মাপ কর মোরে॥”
সেখ ফরিদ নেজামরে কোলেতে লইল।
লৈক্ষ লৈক্ষ[২৪০] চুম্প[২৪১] তার কোপালেতে[২৪২] দিল॥৪৮
ফরিদ বলিল “তুসি মারি দুষ্মনেরে।
বার বছরের কাম কৈল্লা ছ বছরে[২৪৩]॥
এই রকম কাম যদি করিত[২৪৪] পার সার।
আলক রথে[২৪৫] যাইবা তুমি ভেয়স্তর[২৪৬] মাঝার॥৫২
(৭)
হালুয়ানীর ঘরে নেজামের মুক্তি
তারপরে কি হইল শুন সভাজন।
ফরিদর[২৪৭] পিছে নেজাম করিল গমন॥
দিগাড় জঙ্গল হৈতে তারা ঘুরিয়া ফিরিয়া
বেমান দরিয়ার[২৪৮] পারে উতরিল[২৪৯]গিয়া॥৪
সেখ ফরিদ মনে মনে ভাবিতে লাগিল।
তড়াতড়ি[২৫০] মাথার থুন[২৫১] টুপি খসাই লৈল॥
কেরামতী[২৫২] মাথার টুপি দরিয়ায় ভাসাইয়া।
খোদার ফজলে[২৫৩] দুইজন পার হৈল গিয়া॥৮
দরিয়ার পরপারে বাজারের পিছে।
মিঠাই বেচিতে এক হালুয়ানী[২৫৪] আছে॥
ছেমাই[২৫৫] পিডা বেচে বুড়ী দুমি[২৫৬] পিডা[২৫৭] কত।
খালা বুলি[২৫৮] তারে সবে ডাকে অবিরত॥১২
তারা দুইজন যাইয়া তথায় উপনীত হৈল।
হালুয়ানী ফরিদরে ছেলাম[২৫৯] জানাইল॥
ফরিদ বলিল— “খালা[২৬০] শুন মন দিয়া।
আমার যে দোস্ত[২৬১] এজন নাম নেজামিয়া॥১৬
তোমার নিকটে তারে যাইতাম চাই।
দুই সিন্ধা[২৬২] খাইব তোমার ঠাই গরু চড়াই॥
ভালামতে কাম যদি করিতে পারে সার।
মুজুরি যে দিও কিছু যা খুসী তোমার॥২০
এই কথা বলি ফরিদ মাঙ্গিল[২৬৩] বিদায়।
নেজামিয়া ওস্তাদর[২৬৪] চরণে লোডায়[২৬৫]॥
ফকির বলিল—“তোমার নাহি কোন ভয়।
সময় মত আমার লাগত[২৬৬] পাইবা নিরচয়॥২৪
নেজাম চাকরি লৈল হালুয়ানীর ঘরে।
দুইবেলা গরু চড়ায় মাঠে মাঠে ফিরে॥
কি এক ভাবনা ভাবে সদাই আনমনা।
পাড়াপড়শী ভাবে বুঝি পাকল[২৬৭] এইজনা॥
মারিলেও নাহি কাঁদে দিলে নাই তার রোস।
কাম করে দশ গুন নাই কোন হোঁস[২৬৮]॥
গালাগালি কুবাক্য যে কতশত সয়।
জান পরাণে করে কাম যেই যাহা কয়॥৩২
হালুয়ানীর ঘরে এক পুত্ত্র যে আছিল।
সোন্দর কুমার বুলি[২৬৯] তার নাম যে রাখিল॥
অপূর্ব্ব সোন্দর[২৭০] কুমার শুন সমাচার।
চান সুরুজ[২৭১] জিনি রূপ দিয়াছে তাহার॥৩৬
খসমের[২৭২] মরণের পরে হালুয়ানী তারে।
বুগর[২৭৩] লৌদি[২৭৪] পালিয়াছে বড় যত্তন[২৭৫] কৈরে॥
সোন্দর কুমার তার সদা দিল খোস।
গরু চরাণিয়া তার হৈল বড় দোস্[২৭৬]॥৪০
হজরত বড় পীর শাহা আছিল বড় পীর।
ধর্ম্মমন্ত যোগ্যমন্ত দয়ামন্ত থির[২৭৭]॥
সোন্দর কুমারের উপর মহব্বত[২৭৮] তান।
আদর করিত তারে বেটার[২৭৯] সমান॥৪৪
হালুয়ানীর ঘরে পীর হামিসা[২৮০] আসিত।
সোন্দর কুমারে পীর দেখিয়া যাইত॥
পিডা[২৮১] বেচনীর পুত বড় ভাগ্যবান।
হালুয়ানীর ঘর হৈল পীর ফকিরর থান[২৮২]॥৪৮
একদিন হালুয়ানী ঘরের ভিতরে।
গরু চরানিয়া বুলি ডাকে বারেবারে॥
নেজাম হাজির হৈলে তাহার কাছে কয়।
মুজুরি যে কত লৈবা বলহে নির্চয়[২৮৩]॥৫২
নেজাম বলিল —“মাগো টাকা নাহি চাই।
দুনিয়া দারীতে[২৮৪] আমার কন আশা নাই॥
দিল-দরিয়ার মাঝে আছে থোরা[২৮৫] পানি।
সাইগরের[২৮৬] লাগি আমার কাঁদিছে পরাণি॥৫৬
এক খয়রাত[২৮৭] মাগো দাও যে আমারে।
বড় পীর সাহেব আসে তোমার দুয়ারে॥
বড়পীর সাহেব হন গুণীর পরধান[২৮৮]
তাহান[২৮৯] জোনাবে[২৯০] মোর শতেক ছেলাম॥৬০
তান[২৯১] কাছে আমি কির্ গুণ গেয়ান[২৯২] চাই।
তুমি যদি কির্পা[২৯৩] কর তানে আমি পাই॥”
শুনি নেজামের কথা হালুয়ানী কয়।
কার বেটা[২৯৪] কেবা তুমি দেয় পরিচয়॥৬৪
নেজাম কহিল—“আমি নেজাম ডাকাইত।
দিগড়ে জঙ্গলে মানুষ কাইটি[২৯৫] দিন রাইত[২৯৬]॥
আতাইক্যা[২৯৭] আঘাত[২৯৮] তখন হৈল হালুয়ানী।
কথা নাহি আসে মুখে বুকে নাহি তার পানি॥৬৮
তারপরে হালুয়ানী কাঁপে থর থর।
হৈয়াছে তাহার যেন সান্নিবাতি[২৯৯] জ্বর॥
নেজাম করিল কিবা শুন বিবরণ।
হালুয়ানীর পয়র[৩০০] উপর পড়িল তখন॥৭২
“তুমি আমার ধর্ম্ম মাতা জর্ম্ম হইতে বড়।
বহুত[৩০১] গুণা[৩০২] করিয়াছি মোরে রক্ষা কর॥”৭৪
এই সমে বড় পীর বাহিরে দিল ডাক।
হালুয়ানী ছেলাম[৩০৩] জানাই হইল সাক্ষাৎ॥
বড়পির সাহেব বলে—“সোন্দর কুমার কই।
তারে আজি দেখি হুনি[৩০৪] সয়রে[৩০৫] যাইয়ম গৈ[৩০৬]॥৭৮
হালুয়ানী হাসি কয়—বেমাইর[৩০৭] হৈছে ভারি।
কালুকা[৩০৮] ফজরে[৩০৯] আইলে[৩১০] দেখইেতাম পারি॥
পীর বলে হালুয়ানী কৈরনা ছলনা।
বাধা কেনে দেয় আজি আমাকে বলনা॥৮২
হালুয়ানী কহে—“আগে খয়রাত দাও মোরে।
ঘরের দুলালে আমার দেখাইব পরে॥”
পীর বলে—“বেটী তোমার কিবা আছে উনা[৩১১]।
মিহা কথা বৈলা কেনে দিলে[৩১২] আনগুনা॥৮৬
হালুয়ানী কহে—“আমায়, আর এক পুত্ত্র আছে।
আউলিয়া তুমি তারে কর আমার কাছে॥
পীর বলে—“আউলিয়া করিবরে আমি।
দিলে[৩১৩] যদি থাকে তার হজরতের[৩১৪] বাণী॥৯০
দুয়ার খুলি হালুয়ানী নেজামে দেখায়।
ডাকাইত বলিয়া পীর করে হায় হায়॥
হাত জোর করিয়া নেজাম ইছিম[৩১৫] জপিল।
বড় পীররে হালুয়ানী ডাকিয়া কহিল॥৯৪
“ডাকাইত হৈয়াছে আজি ফকিরর পরধান[৩১৬]।
তার কথা কহি তুমি কর অবধান॥
পীর বলে—“শুনিয়াছি ফরিদর কাছে।
নেজাম ডাকাতের কথা সবার জানা আছে॥”৯৮
হালুয়ানী কহে—“বাবজান জানিও নির্চয়।
সোন্দর কুমার হৈতে আমার নেজাম অধিক হয়॥”
ভাবিতে লায়িল[৩১৭] পীর ক্ষানিকক্ষণ[৩১৮] ধরি।
ডাকাইতরে আউলিয়া কেমন কৈরে করি॥১০২
ভাবিতে ভাবিতে পীর জলজলা[৩১৯] হইল।
“নেজামের বাপ আউলিয়া” বুলি[৩২০] কহিতে লাগিল॥
হালুয়ানী কহে—“বাবজান পয়ত[৩২১] ধরি সার!
“নেজাম আউলিয়া” বুলি বল একবার॥১০৬
এই বাক্য বড় পীর যখন শুনিল।
“সাতগোরো[৩২২] আউলিয়া” বুলি কহিয়া উঠিল॥
তা শুনিয়া হালুয়ানী কাঁদি কাঁদি কয়।
“নেজাম আউলিয়া বুলি[৩২৩] কহিবা নির্চয়[৩২৪]॥১১০
সোন্দর কুমার আসি তখন ধরে পীরের হাত।
সেই সমে[৩২৫] সেখ ফরিদর হইল সাক্ষাৎ॥
তিন সুপারিশে পীর জলজলা[৩২৬]হইল।
“নেজামুদ্দিন আউলিয়া বুলি গর্জ্জিয়া উঠিল॥১১৪
জবানেতে[৩২৭] পীর যখন আউলিয়া ক্কৈল।
পার্শে[৩২৮] ছিল নেজামুদ্দিন হাবা[৩২৯] হৈয়া গেল॥১১৬
(সমাপ্ত)
- ↑ করতার=কর্তা।
- ↑ দোতীয়ে=দ্বিতীয়ে।
- ↑ সির্জন=স্বজন।
- ↑ নুর=আলো, নবি=অবতার।
- ↑ ইত=মায়া।
- ↑ মহব্বত=ভালবাসা।
- ↑ কামেল=সিদ্ধ পুরুষ।
- ↑ পদাই=সৃষ্টি।
- ↑ সাই=শ্রেষ্ট।
- ↑ দুনিয়াই=পৃথিবী।
- ↑ আর্সকোর্স=ভগবানের আসন।
- ↑ দুন্যাইর=পৃথিবীর।
- ↑ পচ্ছিমেতে=পশ্চিমেতে।
- ↑ মোমিন=সাধক।
- ↑ জাগাতে=জায়গাতে।
- ↑ বেটী=কন্যা।
- ↑ আলামকুটী=(আলাম শব্দের অর্থ পৃথিবী) পৃথিবী পূজ্যা।
- ↑ সক্কলে=সকলে।
- ↑ ডাইক্ত না=ডাকিত না।
- ↑ হেমন্ত কেদার=হিমালয় পর্ব্বত।
- ↑ সয়াল=সকল।
- ↑ ক্ষিরন্দী=ক্ষীর নদী।
- ↑ সাইগর=সাগর।
- ↑ নিকা=মুসলমান ধর্ম্মমতাবলম্বীদিগকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়, ইহার এক এক ভাগের নাম এক একটী নিকা। ৪টী নিকার নাম যথা (১) হানিকী; (২) সাহেবী; (৩) হাম্বিলী; (৪) মালিকী। এই বিভিন্ন সম্প্রাদায়ের লোক বিভিন্ন দিকে নামাজ পড়িয়া থাকে।
- ↑ হেটে=নীচে।
- ↑ রাউন্যা=রাঙ্গুনিয়া নামক গ্রাম। এখানে ইচ্ছমতী নদীর তীরে প্রসিদ্ধ কালী বাড়ী আছে।
- ↑ পাতি=দরগাহ। নয়াপাড়া গ্রামে বড়পীর সাহেবের দরগাহ খুব প্রসিদ্ধ।
- ↑ কুড়াল্যামুড়া=এই পাহাড়টী কর্ণফুলী নদী ভাঙ্গিয়া নিতেছে।
- ↑ হির্ম্মাই=দরগার নাম।
- ↑ মধ্যদি=মধ্যদিয়া।
- ↑ ছোড ছোড=ছোট ছোট।
- ↑ দলা=ঢিল।
- ↑ উডি=উঠিয়া।
- ↑ সীতার ঘাট=কর্ণফুলীর উজানে এই ঘাট অবস্থিত।
- ↑ সন্তি=সতী।
- ↑ দেইখাছি=দেখিয়াছি।
- ↑ কিরপায়=কৃপায়।
- ↑ ভেয়স্ত=স্বর্গ।
- ↑ দোজখে=নরকে।
- ↑ আনলের=অনলের, অগ্নি।
- ↑ ছডফড=ছট্ফট্।
- ↑ কাডিবারে=কাটিবার জন্য।
- ↑ পরভাতে=প্রভাতে।
- ↑ উডি=উঠিয়া।
- ↑ নিপোলী=পোলহীন, নিটোল।
- ↑ শরীল=শরীর
- ↑ জোয়াফুল=জবাফুল।
- ↑ চৌখ=চক্ষু।
- ↑ খাজুরিয়া=ফোঁঁকড়ান।
- ↑ মোচ=গোঁফ।
- ↑ লাম্বা=লম্বা।
- ↑ জারেল=জারুল বৃক্ষ।
- ↑ খাম্বা=থাম।
- ↑ সিঙ্গের=সিংহের।
- ↑ মৈষ=মহিষ।
- ↑ দিষ্টি=দৃষ্টি।
- ↑ পূবমিক্যা=পূর্ব্বমুখ।
- ↑ ওচল=উচ্চ, ‘উচল’ পাঠ কোথায়ও দৃষ্ট হয়, যথা চণ্ডীদাসে ‘উচল বলিয়া অচলে চড়িমু”।
- ↑ গয়াল=বন্য মহিষ।
- ↑ ছোড ছোড=ছোট ছোট।
- ↑ পচ্ছিমেতে=পশ্চিমেতে।
- ↑ ঢালা=গিরিবর্ত্ম।
- ↑ কিনারে=নিকটে।
- ↑ পথুক=পথিক।
- ↑ রাস্তাদি=রাস্তাদিয়া।
- ↑ আপসেতে=বিনা প্রতিবাদে।
- ↑ শেষকাডালে=শেষ ভাগে।
- ↑ কাডা=কাটা।
- ↑ ইছিম=মন্ত্র।
- ↑ তান=তাঁহার।
- ↑ আতাইক্যা=হঠাৎ।
- ↑ মালুম=অনুভূতি।
- ↑ কাইট্যে=কাটিয়াছে।
- ↑ পর্ভাতে=প্রভাতে।
- ↑ উডি=উঠিয়া।
- ↑ বিদ্দবেশে=বৃদ্ধবেশে।
- ↑ পৈসা=পয়সা।
- ↑ হাঁডা=হাটা।
- ↑ লাডি=লাঠি।
- ↑ গুজা=নুইয়া চলা।
- ↑ মাডির=মাটির।
- ↑ আস্তে আস্তে=আসিতে আসিতে।
- ↑ কিনারে=নিকটে।
- ↑ পানশ=পাঁচশত।
- ↑ জল্দি=ত্বরা।
- ↑ এহা=ইহা।
- ↑ বুলি=বলিয়া।
- ↑ যত্তন=যত্ন।
- ↑ আবাজ=আওয়াজ।
- ↑ উডে=উঠে।
- ↑ স্তিরি=স্ত্রী।
- ↑ তারার=তাহাদের।
- ↑ রুজি=উপার্জ্জন।
- ↑ মাডিদি=মাটি দিয়া।
- ↑ স্তরে=নিকটে
- ↑ এবেহুন্তে=এখন হইতে।
- ↑ হেষ্টমুখী=হেটমুখ।
- ↑ ভুইচাল=ভূমিকম্প।
- ↑ ফয়দা=ধর্ম্ম।
- ↑ ভেয়স্ত=স্বর্গ।
- ↑ গুনা=পাপ।
- ↑ দাগী=অপরাধী।
- ↑ আখরের=শেষ সময়ের।
- ↑ জবিনে=জমিতে।
- ↑ ঠাডার=বজ্র।
- ↑ থিয়াই=দাঁড়াইয়া।
- ↑ তলোয়ার গান=তলোয়ার খান।
- ↑ গেলগৈ=গেল।
- ↑ হাতরথুন=হাত হইতে।
- ↑ হাতদি=হাত দিয়া।
- ↑ কাইনত=কাঁন্দিতে।
- ↑ লায়িল=লাগিল।
- ↑ কাডিয়াছি=কাটিয়াছি।
- ↑ ফাডিয়া=ফাটিয়া॥
- ↑ কাডি=কাটিয়া।
- ↑ গুনা=গাপ।
- ↑ উনা=খালি।
- ↑ চৈক্ষে=চক্ষে।
- ↑ বুগত=বুকে।
- ↑ পুছার=জিজ্ঞাসা।
- ↑ ন=না।
- ↑ একিন=বাসনা
- ↑ হঙ্গে=সঙ্গে।
- ↑ খাল্যা=খালি।
- ↑ পিডত=পৃষ্ঠে।
- ↑ চলভল=চঞ্চল।
- ↑ পরখিতে=পরীক্ষা করিতে।
- ↑ বুদ্ধিমন্ত=বুদ্ধিমান।
- ↑ বানাইয়া=তৈয়ার করিয়া।
- ↑ মাড়ির=মাটির।
- ↑ করদা করদা=খণ্ড খণ্ড।
- ↑ দিলে=মনে।
- ↑ কতেক=কতকগুলি।
- ↑ সামাইল=প্রবেশ করাইল।
- ↑ আদ্যে আদ্যে=আগে আগে
- ↑ মালুম=বোধ।
- ↑ পাত্থর=পাথর।
- ↑ হক্কল=সকল।
- ↑ অরে=ওগো।
- ↑ উডিয়া=উঠিয়া।
- ↑ কন=কোন।
- ↑ কাডিয়া=কাটিয়া।
- ↑ কামাইয়াচ=উপার্জ্জন করিয়াছ।
- ↑ শেষ কাডালে=শেষকালে
- ↑ দিলে=অন্তঃকরণে।
- ↑ উডিল=উঠিল।
- ↑ পয়র=পায়ের
- ↑ লোডাইয়া=লুঠাইয়া।
- ↑ চৈক্ষে=চক্ষে
- ↑ কির্পা=কৃপা।
- ↑ অরে=ওগো
- ↑ বুলি=বলিয়া
- ↑ পাত্থরর=পাথরের।
- ↑ লৌয়ে=রক্তে।
- ↑ বুগত=বুকে
- ↑ স্তিরি=স্ত্রী।
- ↑ মিক্যা=দিকে।
- ↑ ন=না।
- ↑ গুনার=পাপের।
- ↑ আখেরে=শেষ সময়ে।
- ↑ লাডি=লাঠি।
- ↑ হাউসের=সখের।
- ↑ চাহাই=চাহিয়া।
- ↑ ইচ্ছিম=মন্ত্র।
- ↑ ফাডি=ফাটিয়া।
- ↑ লাডির=গাঠির।
- ↑ বুলি=বলিয়া
- ↑ ভর্মনা=ভ্রমণ।
- ↑ ইছিম=মন্ত্র।
- ↑ স্তিরি=স্ত্রী।
- ↑ বাড়ীত=বাড়ীতে
- ↑ মাইয়া=কন্যা।
- ↑ শরীল=শরীর।
- ↑ মাঝাখানি=কোমর।
- ↑ শিনায়=বক্ষে।
- ↑ সোন্দরী=সুন্দরী।
- ↑ মাইয়া=কন্যা।
- ↑ বুলি=বলিয়া।
- ↑ রাইয্যে=রাখিয়াছে।
- ↑ মহব্বত=ভালবাসা।
- ↑ তানে=তাঁহাকে
- ↑ দোস্ত=বন্ধু।
- ↑ লেটা=অনর্থ।
- ↑ আনন্দে=অন্দরে
- ↑ আসক=প্রেম।
- ↑ মিডা মিডা=মিঠা মিঠা।
- ↑ শাইর=শারি।
- ↑ একাশ্বরী=একলা।
- ↑ আইল=আসিল।
- ↑ আচানক=অসম্ভব
- ↑ ফাল=লাফ।
- ↑ পুছার=জিজ্ঞাসা।
- ↑ শরীল=শরীর।
- ↑ বেটা=পুত্র।
- ↑ মাইয়ার=কন্যার।
- ↑ জল্দি=তাড়াতাড়ি।
- ↑ আজুকা=আজ।
- ↑ উডিল=উঠিল।
- ↑ উজাল=মশাল।
- ↑ খানাপিনা=খাদ্য ও পেয়।
- ↑ সেই সমে=সেই সময়ে।
- ↑ পয়র=পায়ের।
- ↑ মাথাত=মাথায়।
- ↑ ফাড়া=কাটা।
- ↑ ঝাঁড়া=ঝাঁটা।
- ↑ অকমানী=অপমানিত।
- ↑ বীমারে=ব্যারামে।
- ↑ পরতিমা=প্রতিমা।
- ↑ ন=না।
- ↑ চৌখের=চক্ষের।
- ↑ ভেয়স্তে=স্বর্গে।
- ↑ উডিল=উঠিল।
- ↑ বুগ কুডি=বুককুটিয়া
- ↑ ফালায়=
- ↑ বান্দী=বাঁদি।
- ↑ লাই=জন্য।
- ↑ রাতুয়া=রাত্রিতে।
- ↑ পাকল=পাগল।
- ↑ আসকদার=আসক্তি।
- ↑ আরজ=মনের বাসনা।
- ↑ গোর=কবর।
- ↑ মালুম=বোধ।
- ↑ ইছিম=মন্ত্র।
- ↑ তড়াতড়ি=তাড়াতাড়ি।
- ↑ উডি=উঠিয়া।
- ↑ কাডিয়াছি=কাটিয়াছি।
- ↑ তার থুন=তাহা হইতে
- ↑ হাতি=হাতে।
- ↑ কুড়ি=খুঁড়িয়া।
- ↑ বেকুব=সংজ্ঞাহীন।
- ↑ কাফন=মৃতদেহের উপর আবৃত বস্তু।
- ↑ লাডি=লাঠি।
- ↑ হাতত=হাতে
- ↑ আকল=বুদ্ধি।
- ↑ গাড়িয়া=পুতিয়া।
- ↑ সেই সমে=সেই সময়।
- ↑ তানে=তাঁহাকে।
- ↑ গুনাকাম=অপকর্ম্ম।
- ↑ কাডিয়াছি=কাটিয়াছি।
- ↑ লৈক্ষ লৈক্ষ=লক্ষ লক্ষ।
- ↑ চুম্প=চুম্বন।
- ↑ কোপালতে=কপালেতে।
- ↑ ছবছরে=ছয় বৎসরে।
- ↑ করিত=করিতে।
- ↑ আলকরথে=জ্যোতিষ্মান রথে; আলোকমণ্ডিত রথে।
- ↑ ভেয়স্ত=স্বর্গ।
- ↑ ফরিদর=ফরিদের।
- ↑ বেমান দরিয়া=অসীম সাগর।
- ↑ উতরিল=উপস্থিত।
- ↑ তড়াতড়ি=তাড়াতাড়ি।
- ↑ মাথার থুন=মাথা হইতে।
- ↑ কেরামতী=যাদুময়।
- ↑ খোদায় ফজলে=ঈশ্বরেচ্ছায়
- ↑ হালুয়ানী=হালুই করের মেয়ে।
- ↑ ছেমাই=এক রকমের পিডা
- ↑ ছছি=এক রকমের পিডা।
- ↑ পিডা=পিঠা।
- ↑ খালা বুলি=মাসী বলিয়া।
- ↑ ছেলাম=সালাম।
- ↑ খালা=মাসী।
- ↑ দোস্ত=বন্ধু।
- ↑ সিন্ধা=বেলা।
- ↑ মাঙ্গিল=মাগিল।
- ↑ ওস্তাদর=ওস্তাদের
- ↑ লোডায়=লুটায়।
- ↑ লাগত=লাগল।
- ↑ পাকল=পাগল।
- ↑ হোঁস=হুস।
- ↑ বুলি=বলিয়া।
- ↑ সোন্দর=সুন্দয়।
- ↑ চান সুরুজ=চন্দ্র সূর্য্য।
- ↑ খসমের=স্বামীর।
- ↑ বুগর=বুকের।
- ↑ লৌদি=রক্ত দিয়া।
- ↑ যত্তন=যত্ন।
- ↑ দোস্=দোস্ত, বন্ধু।
- ↑ থির=স্থির, ধীর।
- ↑ মহব্বত=ভালবাসা।
- ↑ বেটার=পুত্ত্রের।
- ↑ হামিসা=সর্ব্বদা।
- ↑ পিডা=পিঠা।
- ↑ থান=স্থান।
- ↑ নির্চয়=নিশ্চয়।
- ↑ দুনিয়াদারীতে=সংসারের কাজে।
- ↑ থোরা=অল্প।
- ↑ সাইগরের=সাগরের।
- ↑ খয়রাত=ভিক্ষা।
- ↑ পর্ধান=প্রধান।
- ↑ তাহান=তাঁহার।
- ↑ জোনাবে=চরণে।
- ↑ তান=তাঁহার।
- ↑ গেয়ান=জ্ঞান।
- ↑ কির্পা=কৃপা।
- ↑ বেটা=পুত্ত্র।
- ↑ কাইটি=কাটিয়াছি।
- ↑ রাইত=রাত্রিতে।
- ↑ আতাইক্যা=হঠাৎ।
- ↑ আঘাত=মর্ম্মপীড়া ও ভয়।
- ↑ সান্নিবাতিক=সন্নিপাত।
- ↑ পয়র=পায়ের।
- ↑ বহুত=অনেক।
- ↑ গুনা=পাপ।
- ↑ ছেলাম=সালাম।
- ↑ হুনি=শুনি।
- ↑ সয়রে=শীঘ্র।
- ↑ যাইয়মলৈ=যাব গিয়া।
- ↑ বেমাইর=ব্যারাম।
- ↑ কালুকা=কাল।
- ↑ ফজরে=প্রাতঃকালে।
- ↑ আইলে=আসিলে
- ↑ উনা=কম।
- ↑ দিলে=মনে।
- ↑ দিলে=মনে।
- ↑ হজরতের=ঈশ্বরের।
- ↑ ইছিম=মন্ত্র।
- ↑ পরধান=প্রধান।
- ↑ লায়িল=লাগিল।
- ↑ ক্ষানিকক্ষণ=কিছু সময়।
- ↑ জলজলা=চঞ্চল।
- ↑ বুলি=বলিয়া।
- ↑ পয়ত=পায়ে।
- ↑ সাতগোরো=সাতগোষ্ঠী।
- ↑ বুলি=বলিয়া।
- ↑ নির্চয়=নিশ্চয়।
- ↑ সেই সমে=সেই সময়ে।
- ↑ জলজলা=চঞ্চল।
- ↑ জবানেতে=সত্যবাক্যে।
- ↑ পার্শে=পার্শ্বে।
- ↑ হাবা=হাওয়া।