পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় সংখ্যা)/সাঁওতাল হাঙ্গামার ছড়া
৯। সাঁওতাল হাঙ্গামার ছড়া। ১১— ৩২০পৃ
সাঁওতাল হাঙ্গামার ছড়াটি বীরভূম অঞ্চল হইতে সংগ্রহ করিয়া শ্রীযুক্ত শিবরতন মিত্র মহাশয় ৮।১০।২৫ তারিখে আমাকে পাঠান। এই ক্ষুদ্র ছড়াটিতে বিশেষ কবিত্ব না থাকিলেও ইহার কিঞ্চিৎ ঐতিহাসিক মূল্য আছে বলিয়া পালাটিকে ‘গীতিকায়’ সন্নিবিষ্ট করিলাম। পালাটি পশ্চিমবঙ্গে বিরচিত হইলেও তাড়াতাড়িতে পূর্ব্বঙ্গগীতিকায় সন্নিবিষ্ট হইয়া গিয়াছে।
বিগত শতাব্দীর শেষভাগে বঙ্গদেশের পশ্চিমসীমাতে যে সাঁওতাল-বিদ্রোহ হইয়াছিল, তদবলম্বনে এই ছড়াটি রচিত হয়। হাণ্টার সাহেব তাঁহার ‘Annals of Rural Bengal’ পুস্তকে এবং এফ, বি, ব্রাড্লি বার্ট সাহেব তাঁহার ‘The Story of an Indian Upland’ নামক পুস্তকে এই হাঙ্গামার কারণ, বিস্তার ও পরিণতি সম্বন্ধে অনেক তথ্য দিয়াছেন। সাঁওতালেরা শান্তিপ্রিয় ও কৃষিজীবী হইলেও কতিপয় হিন্দু ব্যবসায়ীর অর্থলিপ্সা ও অসাধুতার ফলে তাহারা খেপিয়া উঠিয়াছিল; আইন আদালতে অনভিজ্ঞ সাঁওতালের পক্ষে হিন্দুমহাজনদিগের অত্যাচার ও অসহ্য হইয়া উঠিয়াছিল।
সাঁওতাল পরগণার ইংরেজ সুপারিণ্টেডেণ্ট রাজস্ব আদায় লইয়াই ব্যস্ত থাকিতেন; এ সমস্ত বিষয়ের খোঁজ রাখিতেন না। বিভাগীয় কমিশনারও সাঁওতালদের শোচনীয় অবস্থার কোনও প্রতীকার করিলেন না। ঊর্দ্ধর্তন শাসনকর্ত্তারা ভিতরের খবর কিছুই পাইতেন না; কর্ত্তৃপক্ষের এই অবহেলাও পর্ব্বতচারী সাঁওতাল জাতির ধৈর্য্যচ্যুতির কারণ হইল। আমরা ছড়ায় পাইতেছি যে শুভবাবু নামক সর্দ্দারের নেতৃত্বে সাঁওতালেরা দলবদ্ধ হইয়া উঠিল; সমস্ত সাঁওতাল দেশে সাড়া পড়িয়া গেল। এই দল অভিযান করিয়া পূর্ব্বাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল। প্রথমতঃ লুণ্ঠন অত্যাচার হয়ত ইহাদের উদ্দেশ্য ছিল না; হাণ্টার সাহেব ও লিখিয়াছেন, কলিকাতায় আসিয়া ছোটলাট সাহেবের নিকট অভিযোগ নিবেদন করিবার অভিপ্রায়েই সাঁওতাল-অভিযান প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু দলবদ্ধ অসংযত পার্ব্বত্য জাতির পক্ষে খাদ্যাভাব ও বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হইলে লুঠতরাজ করাও বিচিত্র কথা নহে; ফলতঃ তাহাই ঘটিয়াছিল। দলবদ্ধ সাঁওতালেরা ক্ষিপ্ত হইয়া যে যে স্থানে লুঠপাট করিয়াছিল, ছড়ায় তাহার বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে। সরকারী কর্ত্তৃপক্ষগণ প্রথমে একটু ঔদাসীন্য দেখাইবার ফলে এই হাঙ্গামায় বহু নরহত্যা, গৃহদাহ এবং লুণ্ঠন সংঘটিত হইয়াছিল এবং বীরভূম অঞ্চলে মহা আতঙ্কের সৃষ্টি হইয়াছিল। কিন্তু পরে আবশ্যকীয় সৈন্য প্রেরণ করিয়া ইংরেজ সরকার বিদ্রোহ দমন করেন। ফলে বহু সাঁওতাল হত হইয়াছিল।
এই ছড়ার রচয়িতা ভণিতায় কৃষ্ণদাস বলিয়া নিজের নামোল্লেখ করিয়াছেন; হাঙ্গামার কালও ১২৬২ সালের বর্ষাকাল অর্থাৎ ইংরেজী ১৮৫৫ সন বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন। ছড়াটি ১৩০ ছত্রে সমাপ্ত।
সাওতাল হাঙ্গামার ছড়া।
শুন ভাই বলি তাই, সভাজনের কাছে।
শুভবাবুর[১] হুকুম পেয়ে সাঁওতাল ঝুকেছে॥
বেটারা কুক[২] ছাড়িল, জড় হৈল, হাজারে হাজার।
কখন আসে কখন লুটে, থাকা হ'লো ভার॥
হইল সব দুর্ভাবনা, রাঁড় কান্দনা,[৩] সভাই ভাবে ব’সে।
ঘড়াঘটী মাটিতে পুতে, কখন নিবে এসে॥
বলে সব, রাখ্বো কোথা, যেথাসেথা এই কথা শুনি।
রাখ্তে মুলুক, সলা সুল্লুক,[৪] ও ভাবিছে কোম্পানি॥
বেটাদের শক্তি শুনে, প্রজাগণে, কহিছে ধীরে ধীরে।
জিনিষ ছেড়ে পলাওনাক, সবাই থাক ঘরে॥
আমাদের আসিছে গোরা, সঙ্গিন চড়া, জামাজোড়া গায়।
বন্দুকেতে গুলিপুরা, তুরুক সোয়ার তায়॥
বেটারা থাকে কোথা, সত্য কথা, শুধাই তোমারে।
কেহ বলে দেখে এলাম, মৌরক্ষির[৫] ধারে॥
আছে সব জড় হয়ে পূর্ব্বমুয়ে[৬] তীর মারিছে গাছে।
কতশত কর্ম্মকার সঙ্গেতে এনেছে॥
তীরের ফলা বনাইতে, বরাতমতে[৭] যখন যেমন কয়।
হাতে হাতে জোগায় ফাল পাছে টানা[৮] হয়॥
বেটাদের পোষাক চড়া, কপ্নি পরা, পৈতাবেড়া বুকে।
ভাঁড়ের[৯] উপর পূজা করে কুক[১০] ছাড়িছে মুখে॥
আগেতে নাগরা পিটে, কাটে ছিটে, মদে মাসে ভরা।
প্রথমে বাঁশকুলী দিরে পল্ল গাঁয়ে ডেরা॥
দেখে সব, লোক পলাইছে, টোকা পেছে, ল’য়ে লটাই খান।
কেহ বলে, বান্ধা রইল, বড় মাছের খান॥
বলে ভাই পালা পালা, একি জ্বালা, করে কলরব।
বেচারামকে[১১] কেটে বেটাদের রক্তমুখো সব॥
আর কি হাকিম মানে, বনে বনে, রাস্তা পেয়ে সোজা।
সাদিপুরে, লুটে গিয়ে, কাপড়ের বোঝা॥
যথা উচিত বুচকা বেন্ধে, নিল কান্ধে, যত মনে ছিল।
রাতারাতি হাতাহাতি কাপিষ্টকে গেল॥
সকলই এমনি ধারা, দেয় নাগরা, অহর্নিশি পিটে।
খাবার বেলায় সাঁওতালদের ছেলে মেয়ে জুটে॥
‘রাজা হ’ব
টাকা পাব’লে ভাই, রাজা হ’ব, টাকা পাব, করিয়ে মন্ত্রণা।
দুইদিন বাদে পুড়াইল, লাঙ্গুলের থানা॥
ঐ কথা শুনে, সিপাইগণে, বন্দুক নিল হাতে।
দরগা মন্সীর সঙ্গে দেখা হইল পথে॥
মনেতে ভয় পেয়ে পশ্চিম মুয়ে অমনি গেল ফিরে।
পোররপুরে মোকাম কৈল গয়ারামের ঘরে॥
যত সব চেলের গোলা, ভাঙ্গিল তালা, সকল বা’র করিল।
মরাপেটে চড়া দিয়ে খিটন্ করিল[১২]॥
তখন সিপাই-ঘেরা, সঙ্গীন চড়া, কাপ্তান সহিত।
নদীর উপান্তে আসি হৈল উপনীত॥
যত সব সিপাইগণে, ভাবে মনে, হয়ে সার সার।
দেখে শুনে মৌরক্ষির উপার না হয় পার॥
তীর বাঁশ তৈয়ার আছে, আপন সাজে, রণ নাইখ বাজে।
নদীর ধারে সাঁওতালরা নাগরা বাজায় নাচে॥
সেখানে সাধ্য কার, পারাপার, দুকূল বহে বান্।
হাতেতে কিরিচ ধ’রে দেখিছে কাপ্তান॥
দেখিয়ে বহুত সেনা, কি মন্ত্রণা, করে দুইজনে।
বন্দুক তৈয়ার রাখ, কহে সিপাইগণে॥
দণ্ড চারি ছয় পরে, কহে হাওয়ালদারে, সুবেদার প্রতি।
নির্ণয় করিতে দুর্পিণ[১৩] আন শীঘ্র গতি॥
ব’লে উঠ্ল গজে হাওদা মাঝে, নয়নে দুর্পিণ।
ঝুড়েঝাড়ে আছে সাঁওতাল ক্রোশ দুই তিন॥
কিছু দূর পিছা হাট, বলে ঝাট্, সাহেব গেল চ’লে।
পবন বেগে ধায় সাঁওতাল, পলাও পলাও ব’লে॥
করিয়ে বহু দম্ফ, দিল ঝম্প, পড়্লো নদীর জলে।
সাঁতারিয়ে পার হয় হাজার সাঁওতালে॥
বলে সব মার মার, ধর ধর, এই মাত্র রব।
আজ সিউড়ী জেলা লুটবো গিয়ে, করবো পরাভব॥
যাও সব্ জেহাল থানা[১৪], দিব থানা, মুক্ত কর্বো চোরে।
শুভম্বাবু রাজা
হবে
আমরা খুচ্বো মাঝি, কাজের কাজি, মহুরি কর্বো ব’সে।
কৃষ্ণসাহার দোকান ভেঙ্গে সরাপ[১৫] খাব ব’সে॥
বলে সব শীঘ্র তর, অস্ত্র ধর, বিলম্ব কেনে।
কর্ম্মপাকে পড়্লো সাঁওতাল সিপাইয়ের মাঝখানে॥
বেটারা তুচ্ছজাতি, নাইকো বুদ্ধি, কিবা জানে টের।
আচম্বিতে হুকুম হাকে বলিয়ে ‘ফায়ের’॥
হুকুম শুনে, সিপাইগণে, বন্দুক হাতে তুলে।
পঞ্চাশ পঞ্চাশ গুলি মারে এক এক কালে॥
যেমন তারা খাসে, আশে পাশে, তেমনি গুলি ছুটে।
পিষ্টেতে বাজিয়া কারু, পার হয় গা’ফেটে॥
অন্য সাঁওতাল যত, শত শত, পলাইয়া গেল।
কুড়ী আট সাঁওতাল তার সেই কালেতে ম’লো॥
তখন যত সাঁওতাল করে বিকলি পিছে নাহি চায়।
সলাখ্ পাহাড়ে যেয়ে সভাইরে জানায়॥
শুনে সব দু্ষ্খ মনে[১৬], পরদিনে, হৈল এক্কাকার[১৭]।
জদ্দী[১৮] হইতে আনায় সাঁওতাল দ্বাদশ হাজার॥
নাহিক মৃত্যুভয়, সদারয়, ধনুকেতে চরা।
নগর মোকামে আসি বাজায় নাগরা॥
দেখে সব লোক পলাইল, বিষম হইল, তামলী জুদ্দার।
সৎগোপ গোয়ালা পলায় কান্ধে লয়ে ভার॥
পলায় সব বুড়াবুড়ি, দৌড়াদৌড়ি, হাতে ল’য়ে লড়ি।
ফকির পলায়
মুখে পাকা
দাড়ি
মুখে বলে আল্লা, বিশ্ মোল্লা, একি বেটাদের তীর।
এবিপদে রক্ষা কর ওহে সত্যপীর॥
বলে প্রাণ যায়, হায় হায়, কি বিপদ হৈল।
কালুসেখের মা বলে, আমার মুরগী কোথা গেল॥
পালায় সব দৌড়াদৌড়ি, হুড়াহুড়ি ঊর্দ্ধমুখে ধায়।
হাজার দুই সাঁওতাল তারা রাজবাড়ী সান্ধায়[১৯]॥
লুটি ঘর সব, কলরব, করিয়ে বেড়ায়।
মানুষ কাটা প’ল্ল সেদিন কুড়ী দুই আড়াই॥
পরে সাঁওতালগণ, হৃষ্টমন্, দেয় টাঙ্গিতে শান্।
লাউজুরে নাড়া বেটাকে দিল বলিদান॥
গেল সব কুমরাবাদে আপন ফোজে কৈল একাকার।
ঘরে অগ্নি দিয়ে বেটারা ক’ল্লে ছারখার॥
পুড়াইল ধানের গোলা, তিল জোন্লা, সব আদি যত।
গোরু মো’ষ ছাগল ভেড়া পুড়্ল শত শত॥
পূর্ব্বে হনুমান, লঙ্কাখান, যেমনে পুড়ায়।
ঘরা ঘরি অগ্নি দিয়ে সাঁওতাল বেড়ায়॥
ঐ গ্রাম নিবাস, সাধুদাস, সঙ্গে জনাচারি।
জজ সাহেবের কাছে গিয়ে, কহিছে বিনয় করি॥
কি মন্ত্রণা
কচ্ছেন হুজুর
বসে
ঘরকন্না পুড়ায়ে আমার ভাইকে কাট্লে শেষে॥
শীঘ্র উপায় কর, সাঁওতাল মার, রাখ প্রজাগণ।
টাঙ্গির চুটে মুলুক কেটে পতিত ক’ল্লে বন॥
শুনে তখন, সিপাইগণ, কান্ধে বন্দুক নিল।
রাতারাতি হাতাহাতি কুমরাবাদে গেল॥
যুদ্ধ যেমতে, বিস্তারিতে, হবে বহুক্ষণ।
আকাশের চন্দ্র কোথা ধরয়ে বামন॥
বেটারা বন্দুক ধরে, তীর মারে, করে মার মার।
সঙ্গেতে কুকুর আছে হাজার হাজার॥
সাহেব হুকুম দিলে, ‘ফায়ের’ ব’লে, শুনে সিপাইগণ।
হাজার হাজার সাঁওতাল মারে ততক্ষণ॥
অমনি ভাগ্ড়া হ’য়ে, পশ্চিম মুয়ে, পলাইয়া সত্বরে।
জনা দশ বার গড়ে সেই দিনেতে মরে॥
লোকের কি যন্ত্রণা, কি লাঞ্ছনা, ক’র্লে সাঁওতালে।
কত গর্ভবতী রাস্তায় প্রসবিল ছেলে॥
এমনি সর্ব্বত্তরে, লুট ক’রে, বেড়ায় সাঁওতাল।
মনুষ্য কি কথা, দেবতা, পালান গোপাল॥
ভাণ্ডীবন ছেড়ে, পালান দৌড়ে, পূজারির মাথায়।
বীরসিংপুরের কালীমায়ের বলিহারী যায়॥
রায় কৃষ্ণদাস বলে, চরণতলে, রেখো মা আমারে।
কৃপা ক’রে নিজগুণে উদ্ধারিও মোরে॥
বারশ’ বাষটি সাল, বর্ষাকাল বানের বড় বৃদ্ধি।
আব্দারপুরের মানুষ কেটে ক’রলে গাদাগাদি॥
রায় কৃষ্ণদাস ভণে সাঁওতালগণে, রাখিল সুখ্যাতি।
যে কিছু কহিলাম আমি সকলি তাহা সত্যি॥
কথা মিথ্যা নয়, সত্য হয়, শুন সকল ভাই।
হরি হরি বল সবে দিন ব’য়ে যায়॥
(সমাপ্ত)।
- ↑ শুভবাবু = সাঁওতাল সর্দ্দার। হাণ্টার কৃত গ্রন্থে হাঙ্গামাকারী সাঁওতালদের দলনায়ক দুইভ্রাতার কথা উল্লিখিত হইয়াছে; শুভবাবু তাহাদের একজন হইতে পারে।
- ↑ কুক = চীৎকার। ‘কুক্ ছাড়িয়া কাদা’ এখনও পূর্ব্ববঙ্গে প্রচলিত আছে।
- ↑ রাঁড় কান্দনা = রাঁড়ি অর্থাৎ বিধবাদের ক্রন্দন।
- ↑ সলা সুলুক = মন্ত্রনা ও গুপ্ত পরামর্শ।
- ↑ মৌরক্ষি = সাঁওতাল প্রদেশান্তর্গত নদী।
- ↑ পূর্ব্বমুয়ে=পূর্ব্বমুখে।
- ↑ বরাতমতে=ফরমাইস মতে
- ↑ টানা হয়=অনটন হয়।
- ↑ ভাড়ের=মৃৎভাণ্ডের।
- ↑ কুক=টীৎকা।
- ↑ বেচারাম=বাঙ্গালী মহাজন
- ↑ মরা পেটে····করিল=ক্ষুধার্ত্ত সাঁওতালেরা উদর পূরণ করিয়া আহার করিল। খিটন = ভূরি ভোজন। এখনও “খেট” শব্দ এতদ্দেশে প্রচলিত আছে।
- ↑ দুর্পিণ = দূরবীক্ষণ যন্ত্র।
- ↑ জেহাল থানা=জেল থানা।
- ↑ সরাপ=মদ।
- ↑ দুষ্ক মনে=দুঃখিত হইয়া।
- ↑ এক্কাকার=একত্র।
- ↑ জদ্দী=রাজমহল পাহাড়
- ↑ সান্ধায়=প্রবেশ করে