পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/কঠিনবর্ম্মী/চিংড়ির চোখ, কান ও নাক
চিংড়ির চোখ, কান ও নাক
চিংড়ির আকৃতি ও মুখের গড়নের কথা তোমরা শুনিলে,—এখন ইহাদের চোখ কান নাক ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের কথা বলিব।
চিংড়ির মাথায় যে শুঁয়ো লাগানো থাকে, তাহা তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। শুঁয়ো দুই জোড়া থাকে। এক জোড়া খুব লম্বা। চিংড়িরা যখন জলের ভিতরে চলিয়া বেড়ায়, তখন এই শুঁয়ো দুইটি পিঠের উপরে পড়িয়া থাকে; ইহা তখন প্রায় লেজ পর্য্যন্ত পৌঁছায়। কিন্তু এই দুইটি ছাড়া চিংড়ির মাথায় আরো দু’টা শুঁয়ো দেখা যায়। এগুলি প্রথম শুঁয়োর চেয়ে অনেক ছোট। গাছের গুঁড়ি হইতে যেমন ছোট ডাল বাহির হয়, এই দুইটি শুঁয়োর প্রত্যেকটি হইতে সেই রকম তিনটি শুঁয়ো বাহির হইতে দেখা যায়। যখন জলের ভিতরে সাঁতার কাটিয়া চলে, তখন চিংড়িরা এই দুইটি ডাল-পালা-ওয়ালা শুঁয়োকে একবার ডাইনে এবং একবার বামে ফেলিয়া চলিতে আরম্ভ করে। তাহারা শুঁয়ো দু’টিকে বৃথা নাড়ায় না। প্রত্যেক শুঁয়োর গোড়ায় তাহাদের কান থাকে। জলের ভিতরকার শব্দ শুনিবার জন্য উহারা শুঁয়ো নাড়িতে নাড়িতে চলে।
কান বলিতে আমরা যাহা বুঝি, চিংড়িদের কান মোটেই সে-রকম নয়। শুঁয়োর গোড়ায় ছোট থলির মত এক-একটা অংশই ইহাদের কান। এই থলির ভিতরে লালার মত এক রকম জিনিস এবং কয়েক কণা বালি ভিন্ন আর কিছুই দেখা যায় না। চিংড়িরা অতি অল্প শব্দও এই কান দিয়া শুনিতে পায়।
তোমরা যদি চিংড়ি মাছের কান দেখিতে চাও, তবে মাথার যেখানে তাহার ছোট শুঁয়ো জোড়াটি লাগানো আছে, সেই জায়গায় খোঁজ করিয়ো। লোমে-ঢাকা থলির মধ্যে উহার অদ্ভুত কান নিশ্চয়ই দেখিতে পাইবে।
কানের ঠিক উপরে চিংড়ির দুইটি বেশ বড় বড় চোখ আছে। আমাদের চোখ যেমন মাংসের মধ্যে বসানো থাকে, ইহার চোখ সে রকম দেখিবে না। দুইটা ছোট কাঠির মাথায় যেন চোখ দুটি বসানো আছে।
চিংড়ির চোখ বড় মজার জিনিস। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়া যদি ইহাদের চোখ পরীক্ষা করিবার সুবিধা পাও, তবে প্রত্যেক চোখে মধুর চাকের উপরকার ছোট কুঠারির মত শত শত কুঠারি দেখিতে হইবে। এই প্রত্যেক কুঠারিই চোখ। তাহা হইলে বলিতে হয়, চিংড়ির মাথায় যে কালো কালো দুটি চোখ দেখা যায়, তাহার প্রত্যেকটিতেই শত শত ছোট চোখ আছে। কিন্তু এতগুলি চোখ আছে বলিয়াই ইহারা যে বড় প্রাণীদের চেয়ে অনেক ভালো করিয়া দেখিতে পায়, তাহা বলা যায় না। ইহাদের চোখের পাতা নাই; কাজেই, ডাইনের এবং বামের শত শত চোখ সর্ব্বদা খোলা থাকে।
তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে, ছোট প্রাণী হইলেও চিংড়িদের চোক কান খুব জোরালো না হইলেও বেশ সজাগ।
অন্ধকারে যখন কিছুই দেখা যায় না, তখন আমরা হাত বা পা দিয়া ছুঁইয়া কাছে কি কি জিনিস আছে ঠিক করি। চিংড়িরা তাহাদের লম্বা লম্বা শুঁয়ো দিয়া ছুঁইয়া দূরে কি জিনিস আছে তাহা বুঝিয়া লয়। সুতরাং ইহাদের স্পর্শ-শক্তিও কম নয়।
খাদ্য দ্রব্য লুকানো থাকিলে কেবল চোখে দেখিয়া তাহার খোঁজ পাওয়া যায় না। তখন গন্ধ শুঁকিয়া লুকানো খাদ্য বাহির করিতে হয়। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি খুব বেশি। কেবল গন্ধ শুঁকিয়া শুঁকিয়া অনেক কুকুর গভীর জঙ্গল হইতে শিকার ধরিয়া আনে। চিংড়িরা মাংসাশী প্রাণী। জলের মধ্যে পচা মাছ বা মাংস যাহা কিছু থাকে, তাহাই সন্ধান করিয়া ইহারা খায়। কাজেই লুকানো খাবার সংগ্রহ করা ইহাদের খুবই দরকার হয়। এই কাজের জন্য্য চিংড়িদের খুব ঘ্রাণশক্তি আছে। কিন্তু যে নাক দিয়া ইহারা গন্ধ লয়, তাহা শরীরের ঠিক কোন্ জায়গায় আছে, তাহার সন্ধান পাওয়া যায় নাই। পণ্ডিতেরা আন্দাজ করেন, চিংড়ির কান যেমন শুঁয়োর গোড়ায় আছে, নাকও হয় ত শুঁয়োরই কোনো এক জায়গায় আছে।