পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/কঠিনবর্ম্মী/চিংড়ির শ্বাস-প্রশ্বাস

চিংড়ির শ্বাস-প্রশ্বাস

 তোমাদিগকে আরো অনেকবার বলিয়াছি, জীবন্ত থাকিয়া শরীর পুষ্ট করিতে হইলে, প্রাণীদের শরীরে অক্সিজেনের দরকার হয়। বাতাসে অক্সিজেন আছে। বড় বড় প্রাণীরা নাক-মুখ দিয়া বাতাসের অক্সিজেন টানিয়া শরীরের ভিতরকার ফুস্‌ফুসে প্রবেশ করায় এবং ফুস্‌ফুসের রক্ত সেই অক্সিজেন শুষিয়া লয়। জলের প্রাণী জলে-মিশানো বাতাসের অক্সিজেন শুষিয়া লয়। এই সকল কথা তোমরা আগে শুনিয়াছ। কিন্তু চিংড়ি মাছেরা শরীরে অক্সিজেন লইবার জন্য এই দুই উপায়ের কোনোটাই অবলম্বন করে না। অক্সিজেন টানিবার জন্য ইহাদের দেহে একটি বিশেষ যন্ত্র আছে। চিংড়িদের মাথা যে চওড়া খোলা দিয়া ঢাকা থাকে, সেইটা খুলিয়া ফেলিলেই উহার নিশ্বাসের যন্ত্র দেখিতে পাইবে। চিংড়ি মাছের মাথার খোলা ছাড়াইবার সময়ে হয় ত তোমরা ঐ যন্ত্র দেখিয়াছ। ইংরাজিতে ইহাকে গিল্ (Gill) বলে, আমরা তাহাকেই কান্‌কো বলিব।

 চিংড়ির মাথার দুই পাশে ঐ কান্‌কো দু’টা থাকে। ইহা দেখিতে সাদা এবং পাখীর কোঁকড়ানো পালকের মত অনেক ছোট অংশ দিয়া প্রস্তুত। মাথার দুই পাশে মালার

চিত্র ২৩—চিংড়ির কান্‌কো।

মত গোলাকারে সেগুলি উপরে উপরে সাজানো থাকে। এখানে চিংড়ি কান্‌কোর একটা ছবি দিলাম।

 গোরু পাখী মাছ প্রভৃতি মেরুদণ্ডযুক্ত প্রাণীদের রক্ত লাল। ইহা ছাড়া অপর প্রাণীদের রক্তের বিশেষ রঙ্ নাই। চিংড়ি মাছের শরীরে রক্ত আছে, কিন্তু সে রক্ত রাঙা নয়—প্রায় জলের মত বর্ণহীন। এই রক্ত চিংড়ির কান্‌কোর সেই পালকের মত অংশের ভিতর দিয়া চলা-ফেরা করে এবং তাহাই জলে-মিশানো বাতাসের অক্সিজেন শুষিয়া লয়।

 কান্‌কো কঠিন খোলা দিয়া ঢাকা থাকে, তবে কি করিয়া তাহার উপরে জল আসে,—বোধ হয় তোমরা ইহাই ভাবিতেছ।

 খোলার ভিতরকার কান্‌কোর উপরে জল আসা-যাওয়ার বড় সুন্দর ব্যবস্থা আছে। চিংড়ির মাথায় খোলা খুব শক্ত করিয়া আঁটা থাকিলেও পায়ের গোড়ার কাছে খোলার ধারগুলিতে বেশ ফাঁক থাকে। বাহিরের জল ঐ সকল ফাঁক দিয়া খোলার ভিতরে প্রবেশ করিয়া কান্‌কোকে সর্ব্বদাই ঘেরিয়া রাখে। দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া যদি অনেক লোক একটি ছোট ঘরে অনেক ক্ষণ বাস করে, তবে সকলেই নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন টানিয়া লয় বলিয়া ঘরের বাতাসের অক্সিজেন কমিয়া আসে এবং নানা রকম খারাপ বাষ্প শরীর ও নাক দিয়া বাহির হইয়া বাতাসকে খারাপ করিয়া দেয়। তাই ঘরে পরিষ্কার বাতাস প্রবেশ করাইবার জন্য দরজা-জানালা খুলিয়া রাখিতে হয়। চিংড়ি মাছের খোলার ভিতরে যে জল প্রবেশ করে, ঐ রকমে তাহারও অক্সিজেন কমিয়া আসে। এই জন্য জল যাহাতে ভিতরে আবদ্ধ না থাকিয়া স্রোতের জলের মত চলাফেরা করে, তাহার ব্যবস্থা থাকা দরকার হয়। এই ব্যবস্থা চিংড়ির দেহে ভালোই আছে। পিছনের পায়ের কাছে খোলার তলায় যে পথ থাকে, তাহা দিয়া জল ভিতরে প্রবেশ করে এবং সম্মুখের পায়ের কাছের আর এক পথ দিয়া তাহা বাহির হইয়া যায়। কেবল ইহাই নয়, যাহাতে খোলার ভিতরের জল স্রোতের মত জোরে বাহির হইয়া যায়, তাহার জন্য চিংড়ির সম্মুখের পায়ের কাছে পাখার মত ছোট অংশ জোড়া থাকে। চিংড়িরা সর্ব্বদাই এই পাখা ঘন ঘন নাড়িয়া ভিতরের জল বাহির করিয়া দেয়। এই রকমে একটা জলের স্রোত সর্ব্বদাই কান্‌কোর উপর দিয়া চলিতে থাকে। জল হইতে সর্ব্বদা অক্সিজেন টানিয়া লইবার এই ব্যবস্থা অতি সুন্দর নয় কি?