পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/গান্ধী পোকা
গান্ধী পোকা
(Rhynchota)
মশা মাছি ডাঁশ ইত্যাদি দ্বিপক্ষ পতঙ্গের কথা বলিলাম। এখন তোমাদিগকে গান্ধী পোকাদের পরিচয় দিব।
এই দলেও নানা আকৃতি ও নানা রকমের পতঙ্গ আছে। অনেকেরই দু’খানা করিয়া স্বচ্ছ ডানা থাকে এবং মুখে মশা-মাছিদের মত শুঁড় থাকে। ইহাদের কতকগুলির মুখের দাত লম্বা ছুঁচের মত ধারালো হয়। গাছপালার রস ও বড় প্রাণীদের রক্ত ইহাদেরো খাদ্য। ছারপোকারা এই দলের প্রাণী। ছারপোকার ডানা নাই, সুতরাং সকল গান্ধী পোকারই যে ডানা গজায়, তাহা বলা যায় না।
তোমরা গান্ধী পোকা দেখ নাই কি? বর্ষাকালে এই দলের নানা রকম পোকা আলোর কাছে ঘুরিয়া বেড়ায় এবং তাহাদের গায়ে হাত ঠেকিলে হাতে বিশ্রী গন্ধ হয়। এই গন্ধ কিসে হয়, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। ইহাদের সম্মুখের পায়ের গোড়ায় একএকটি কোষে তেলের মত এক রকম রস জমা হয়। ভয় করিলে বা বিরক্ত হইলে পোকারা ঐ রস ইচ্ছামত শরীর হইতে বাহির করিয়া ফেলিতে পারে। গান্ধী পোকার গায়ের গন্ধ, ঐ রসেরই গন্ধ। টিক্টিকি ব্যাঙ্ বা পাখীরা যখন এই পোকাদের ধরিতে যায়, তখন ঐ বদ্ গন্ধ বাহির করিয়া তাহারা আত্মরক্ষা করে। গায়ের বিশ্রী গন্ধ পাইয়া কোনো প্রাণীই তাহাদের কাছে আসে না।
হঠাৎ দেখিলে এই দলের অনেক পতঙ্গকেই গোবরে পোকার মত কঠিনপক্ষ প্রাণী বলিয়া মনে হয়, কিন্তু ইহারা সে দলের নয়। স্ত্রী-গান্ধী পোকারা প্রায়ই গাছের গায়ে বা পাতায় ডিম পাড়ে। কিন্তু ডিম হইতে শুঁয়ো-পোকার আকারের বাচ্চা বাহির হয় না। বাচ্চাগুলিকে সম্পূর্ণ আকারের দেখা যায়। কিন্তু এই সময়ে বাচ্চাদের ডানা থাকে না। দুই তিন বার গায়ের খোলস বদ্লাইলে ডানা গজায়। তখন ইহারা সম্পূর্ণ পতঙ্গের রূপ পায়। সুতরাং দেখা যাইতেছে, গান্ধী পোকারা সাধারণ পতঙ্গের মত চেহারা বদ্লাইয়া বড় হয় না। কিন্তু তথাপি ইহারা পতঙ্গ। অপর পতঙ্গদেরই মত ইহাদের শরীর অনেক আংটির মত খোলা দিয়া প্রস্তুত।