পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/গান্ধী পোকা/ছারপোকা

ছারপোকা

 ছারপোকা তোমরা সকলেই দেখিয়াছ এবং তাহাদের কামড়ে হয় ত কষ্টও পাইয়াছ। ইহারা গান্ধী পোকার দলের পতঙ্গ। ইহাদের ডানা নাই। তাই কতকটা রক্ষা পাওয়া যায়। ডানা থাকিলে এক বাড়ীর ছারপোকা উড়িয়া গিয়া আর এক বাড়ীর চেয়ার টেবিলের ফাঁকে বা বিছানা বালিশে আড্ডা করিত। তখন কি ভয়ানক ব্যাপারই হইত। ইহারা খুব সৌখীন পতঙ্গ,—প্রাণীর গরম-গরম রক্ত ছাড়া আর কিছু ইহাদের মুখে রোচে না।

 এখানে ছারপোকার একটা বড় ছবি আঁকিয়া দিলাম।
চিত্র ৬৬—ছারপোকা।
তার পরে ইহাদের মুখেরও একটা ছবি দিলাম। সাধারণ পতঙ্গদের মত ইহাদের ছয়খানি পা আছে। মাথা ও বুক খুব ছোট। লেজের অংশটাই চওড়া ও বড়। মাথার নীচে রক্ত শুষিয়া খাইবার যন্ত্রটা কি রকম, ছবি দেখিলেই তোমরা তাহা জানিতে পারিবে।

 ছারপোকারা কি-রকম ডিম পাড়ে তাহা তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। চেয়ার টেবিল বিছানা-বালিশ ও খাট-পালঙের ফাঁকই ইহাদের ডিম পাড়ার জায়গা। পাখীদের মত ইহারা ডিমে তা দেয় না। প্রসবের পর প্রায়ই এক সপ্তাহের মধ্যে ডিমগুলি আপনা হইতেই ফুটিয়া যায় এবং তাহা হইতে সাদা বালির কণার মত ছারপোকার ছোট বাচ্চা বাহির হয়। সাধারণ পতঙ্গদের ডিম হইতে যেমন প্রথমে শুঁয়ো-পোকার আকারে বাচ্চা জন্মে, ছারপোকার ডিম হইতে তাহা হয় না। ডিম হইতে সম্পূর্ণ আকারেরই ছারপোকা বাহির হয়। তাই ইহারা ডিম ছাড়িয়াই রক্ত খাইতে আরম্ভ করে। যেমন রক্ত খায় তেমনি আকারে বড় হয় এবং বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গায়ের খোলস বদ্‌লায়। যেখানে ছারপোকার আড্ডা, সেখানে খোঁজ করিলে তোমরা ছারপোকার গায়ের সাদা খোলস অনেক দেখিতে পাইবে। হঠাৎ দেখিলে সেগুলিকে ছারপোকার শুক্‌নো মৃতদেহ বলিয়া মনে হয়।

 তিন-চারিবার খোলস ছাড়ার পরে, ছারপোকারা সম্পূর্ণ আকার পায়। কতদিনে ইহারা বড় হয়, তাহা হিসাব করিয়া বলা যায় না। যাহারা তাজা রক্ত খাইবার সুবিধা পায়, তাহারাই শীঘ্র শীঘ্র খোলস বদ্‌লাইয়া বড় হইয়া পড়ে। পেট ভরিয়া রক্ত না খাইলে ইহারা কখনই খোলস বদ্‌লায় না।

 মশারা গা হইতে রক্ত টানিয়া লইবার পূর্ব্বে কাটা ঘায়ে এক প্রকার মৃদু বিষ ঢালিয়া দেয়, ইহা তোমরা আগেই শুনিয়াছ। ছারপোকারা মশাদেরই মত ছুঁচের মত দাঁত দিয়া গায়ে ছিদ্র করে এবং তাহাতে ঐ-রকমের মৃদু বিষ ঢালিয়া দেয়। ইহাতে কাটা-ঘায়ে রক্ত জমা হইলে, সেই রক্তই উহারা চুষিয়া খায়। ছারপোকার কামড়ের জ্বালা-যন্ত্রণা সেই বিষ হইতেই জন্মে এবং বিষেই কামড়ের জায়গাটা ফুলিয়া উঠে।

 ম্যালেরিয়া জ্বরের বিষ মশার শরীরে প্রবেশ করিলে খুব জোরালো হয়, ইহা তোমরা আগেই শুনিয়াছ। আসাম ও বাংলাদেশে কালাজ্বর নামে এক-রকম ব্যারামে লোকে বড় কষ্ট পায় এবং তাহাতে অনেক লোক মারাও যায়। ডাক্তাররা বলেন, কালাজ্বরের রোগীর শরীরে যে ব্যারামের বীজ থাকে, রক্তের সঙ্গে ছারপোকার পেটে গেলে তাহাও খুব জোরালো হয়। তার পরে যখন সেই ছারপোকা অপর লোককে কামড়ায় তখন রোগের বীজ শরীরে প্রবেশ করিয়া সুস্থ ব্যক্তিকে অসুস্থ করিয়া তুলে।

 তাহা হইলে দেখা যাইতেছে, ছারপোকারা মশাদেরই মত মানুষের পরম শত্রু। এই শত্রুরা যাহাতে আমাদের ঘরে দুয়ারে জায়গা না পায়, তাহার দিকে নজর রাখা সকলেরি উচিত।