পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ/কাঁচ-পোকা
কাঁচ-পােকা
তোমরা কাঁচ-পোকা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। ইহাদের
চিত্র ৪১—কাঁচ-পােকা।
গায়ের রঙ্টি কেমন চক্চকে নীল! শরীরটা কাচের মত চক্চকে বলিয়াই বোধ হয় ইহাদিগকে কাঁচ-পোকা বলা হয়। কাঁচ-পোকা ধরিবার জন্য ছেলেবেলায় যে কত ছুটাছুটি করিয়াছি তাহা এখনো মনে আছে। ইহাদের লেজে যে-সকল শক্ত আংটির মত আবরণ থাকে, তাহা কাটিয়া মেয়েদিগকে টিপ পরিতে দেখিয়াছি।
কাঁচ-পোকা বোল্তা-জাতীয় পতঙ্গ। কিন্তু ইহারা কখনই বোল্তাদের মত চাক বাধে না বা দলবদ্ধ হইয়া বাস করে না এবং কুমরে-পোকাদের মত ঘরও বানায় না। ইহারা একেবারে বুনো পতঙ্গ। গাছের পচা রকমের কাঠে গর্ত্ত করিয়া ইহারা বাস করে। কয়েক জাতি কাঁচ-পোকাকে আমরা মাটিতে গর্ত্ত করিয়াও থাকিতে দেখিয়াছি।
ছোট বা বড় পোকা-মাকড়ই কাঁচ-পোকাদের প্রধান খাদ্য। যখন ইহারা তোমাদের বাগানে ঘুরিয়া বেড়ায়, তখন কেবল পোকা ধরিবারই ফন্দি করে। অনেক কাঁচ-পোকাকে গর্ত্তের মধ্যে গিয়া পোকা ধরিয়া আনিতে দেখা গিয়াছে।
ইহারা কি রকমে আরসুলা শিকার করে তোমরা দেখ নাই কি? আরসুলার মত বড় প্রাণীকে কাঁচ-পোকারা জব্দ করিয়া ছাড়ে। একটা ছোট কাঁচ-পোকা প্রকাণ্ড আরসুলাকে শুঁয়ো ধরিয়া হিড়্ হিড়্ করিয়া টানিতেছে ইহা প্রায়ই দেখা যায়। তখন আরসুলা বেচারা দড়ায়-বাঁধা শান্ত গোরুর মত কাঁচ-পোকার পিছনে পিছনে চলে। ইহা দেখিলে সত্যই হাসি পায় এবং দুঃখও হয়। নিজেকে রক্ষা করিবার জন্য আরসুলার হুল নাই, দাঁতে বিষ নাই, কেবল ছয়খানা পায়ে করাতের মত দাঁত লাগানো থাকে। আরসুলা দেখিলেই চতুর কাঁচ-পোকা তাহার পিঠে চড়িয়া বসে এবং হুল বাহির করিয়া তাহার গলার কাছে স্নায়ু-কেন্দ্রে খোঁচা দিতে থাকে। স্নায়ু-কেন্দ্রই প্রাণীদের বুদ্ধি-বিবেচনা ও চলা-ফেরার যন্ত্র। হুলের খোঁচায় তাহা নষ্ট হইয়া গেলে, আরসুলার অঙ্গ অবশ হইয়া পড়ে এবং সে বুদ্ধি-বিবেচনা হারায়। কাজেই তখন ছোট কাঁচ-পোকা আারসুলার গোঁফ ধরিয়া যেখানে ইচ্ছা টানিয়া লইতে পারে।
কাঁচ-পোকারা এই রকমে যে-সকল আরসুলা বা মাকড়সা শিকার করে, তাহা উহারা নিজে প্রায়ই খায় না। আধ-মরা শিকারগুলিকে বাসায় রাখিয়া সেখানে ডিম পাড়ে। ডিম হইতে বাচ্চা বাহির হইয়া ঐ-সকল শিকারকে খাইয়া শীঘ্র শীঘ্র বড় হয়। পুরুষ কাঁচ-পোকাদের পিছনে হুল থাকে না। ইহারা নিরীহ প্রাণী। স্ত্রীরাই পোকা-মাকড় শিকার করিয়া বেড়ায়।