পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ/পিঁপ্ড়ের লড়াই
পিঁপ্ড়ের লড়াই
তোমরা পিঁপ্ড়ের লড়াই দেখিয়াছ কি? আমরা অনেক দেখিয়াছি। এক রাজার সঙ্গে আর এক রাজার কেন লড়াই বাধে, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। প্রায়ই স্বার্থ লইয়া লড়াই বাধে। এক রাজা অন্য রাজার রাজ্যের ধন-সম্পত্তিতে লোভ করিয়া সেই রাজ্য আক্রমণ করে। ইহাতে দুই পক্ষে যুদ্ধ বাধিয়া যায়। দুই দল পিঁপ্ড়ের মধ্যেও ঠিক এই কারণে লড়াই বাধে। এক দল যেই আর এক দলের অধিকারে আড্ডা করিতে যায়, অপর দল তাহা সহ্য করিতে না পারিয়া হাজারে হাজারে গর্ত্ত হইতে বাহির হয় ও লড়াই সুরু করে। কুকুর ও পাখীরা যেমন পায়ে পা বাধাইয়া কামড়াকাম্ড়ি করে এবং সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়, পিঁপ্ড়ের লড়াই কতকটা সেই রকমের। দিনের পর দিন, দুই দল পিঁপ্ড়ের মধ্যে এই রকম লড়াই চলে। এই যুদ্ধে সন্ধি হয় না। এক পক্ষ সম্পূর্ণ হারিয়া গেলে যুদ্ধ থামে।
যুদ্ধক্ষেত্রে যে-সব সৈনিক মারা পড়ে, আমরা তাহাদের দেহ আনিয়া গোর দিই বা পুড়াইয়া ফেলি। পিঁপ্ড়েরা মৃত সৈনিকের দেহ টানিয়া গর্ত্তে লইয়া যায়। কিন্তু গোর দেয় না। পিঁপ্ড়েরা মৃত দেহ পাইলে খুব আনন্দ করে এবং সকলে মিলিয়া ভাগ করিয়া খাইয়া ফেলে। কাণা খোঁড়া স্বজাতীয়দের উপরেও তাহাদের দয়ামমতা নাই,—কোনো নিষ্কর্ম্মা লোককে তাহারা দলে থাকিতে দেয় না। কোনো রকমে দলের পিঁপ্ড়ে আহত হইলে, সকলে মিলিয়া তাহাকে বাসায় টানিয়া লইয়া খাইয়া ফেলে।
তোমরা হয় ত ইতিহাসে পড়িয়াছ, অতি প্রাচীনকালে পৃথিবীর সকল দেশেই মানুষ কেনা-বেচা চলিত। লোকে যাহাকে টাকা দিয়া কিনিত, তাহাকে পশুর মত খাটাইত। এক দল লোক এক দেশ হইতে মানুষ ধরিয়া আনিয়া আর এক দেশে বিক্রয় করিত। এখন পৃথিবীর কোনো দেশে মানুষ-ধরার ব্যবসায় নাই। কিন্তু পিঁপ্ড়েদের মধ্যে এই চুরি-বিদ্যা খুব আছে। পিঁপ্ড়েরা অনেক সৈন্য সংগ্রহ করিয়া হঠাৎ আর এক দলের গর্ত্তে প্রবেশ করে এবং তাহাদের ডিম ও পুত্তলি চুরি করিয়া নিজেদের গর্ত্তে আনিয়া ফেলে। এই চুরি লইয়াও দুই দলে কখনো কখনো লড়াই বাধে। চুরি-করা ডিম হইতে যে পিঁপ্ড়ে জন্মে, সেগুলি চোর পিঁপ্ড়েদেরই দলভুক্ত হয়।