পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/দ্বিপক্ষ পতঙ্গ/মশার ডিম ও বাচ্চা

মশার ডিম ও বাচ্চা

 মশার ডিম পাড়া, ডিম হইতে বাচ্চা বাহির হওয়া এবং সেই বাচ্চা হইতে নূতন মশার উৎপত্তি হওয়া—সকলি বড় আশ্চর্য্য-জনক।

 যে প্রাণী ডাঙায় বাস করে এবং ডাঙাতেই চরিয়া বেড়ায় তাহারা প্রায়ই ডাঙাতেই ডিম পাড়ে। কিন্তু মশারা তাহা করে না। পচা পুষ্করিণী বা গর্ত্তের বদ্ধ জলই তাহাদের ডিম পাড়িবার জায়গা। কখনো টবের নর্দ্দামার ও পাতকূয়োর বদ্ধ জলেও তাহাদিগকে ডিম পাড়িতে দেখা যায়।

 ডিম পাড়ার সময় হইলেই মশারা নিকটের নোংরা এবং বদ্ধ জলের দিকে ছুটিয়া চলে এবং তাহাতে ডিম পাড়ে। সেগুলি জলে ভাসিয়া বেড়ায়, কিন্তু বিচ্ছিন্ন হইয়া ভাসে না। ডিম পাড়া শেষ হইলে মশারা সেগুলিকে পিছনের পা দিয়া একত্র করে এবং তার পরে লালার মত এক রকম জিনিস দেহ হইতে বাহির করিয়া, সেগুলিকে পরস্পর আট্‌কাইয়া রাখে। এই রকমে ডিমগুলি একত্র থাকিয়া ভেলার মত জলের উপরে ভাসিয়া বেড়ায়।

 মশাদের ডিম হইতে বাচ্চা বাহির হইতে বেশি সময় লাগে না। শীঘ্রই প্রত্যেক ডিম হইতে একএকটি বাচ্চা বাহির হইয়া জলের উপরে কিল্‌বিল করিতে থাকে। এই বাচ্চাদের চেহারা বড়ই অদ্ভুত। মুখে এক এক গোছা চুলের মত লোম লাগানো থাকে। জলের ছোট ছোট পোকা-মাকড়দিগকে ইহারা ঐ চুলের গোছা দিয়া ঠেলিয়া মুখে পূরিয়া দেয়। জলে বাস করিবার সময়ে জলের পোকাই ইহাদের খাদ্য।

 মশার বাচ্চা কখনই মাথা উপরে রাখিয়া মাছের মত সাঁতার দেয় না। লেজ উঁচু এবং মাথা নীচু করিয়া সাঁতার দেওয়াই ইহাদের স্বভাব। মাছের মত ইহাদের কান্‌কো নাই। আমরা যেমন নাকের ছিদ্র দিয়া বাতাস টানিয়া বাঁচিয়া থাকি, মশার বাচ্চারাও সেই রকম লেজে-লাগানো সরু নলের মত ছিদ্র দিয়া বাতাস টানিয়া বাঁচিয়া থাকে। এইজন্যই লেজ উপরে রাখিয়া ইহারা সাঁতার দেয় এবং যখন দরকার হয় তখন লেজের ছিদ্রটা জলের উপরে উঠাইয়া বাতাস টানিয়া লয়। মুখে যেমন চুলের গোছা থাকে, ইহাদের লেজেও সেই রকম কয়েকগাছি চুল দেখা যায়।

 এখানে মশার ডিম ও বাচ্চার ছবি দিলাম। তোমরা এই রকম পোকা জলে কখনই দেখ নাই কি? গ্রীষ্ম ও

বর্ষাকালে চৌবাচ্চা বা টবে কিছুদিন ধরিয়া জল পচিতে থাকিলে, তাহাতে এই রকম লম্বা পোকা অনেক দেখিতে পাওয়া যায়। মানুষের সাড়া পাইলে বা কোনো শব্দ শুনিলে সেগুলি শরীর ও লেজ নাড়িয়া এবং মুখ বাঁকাইয়া জলের মধ্যে ডুব-সাঁতার কাটে। এইগুলিই মশার বাচ্চা। যে জলে এই রকম মশার বাচ্চা থাকে, তাহাতে একটু কেরোসিন তেল ঢালিয়া দিলে সেগুলি মরিয়া যায়। জলের সঙ্গে কেরোসিন মেশে না। কাজেই জলে ঢালিয়া দিলে তাহা পাত্‌লা সরের মত হইয়া জলের উপরিভাগ ঢাকিয়া রাখে। তার পরে মশার বাচ্চারা বাতাস লইবার জন্য লেজ উপরে উঠাইলেই নিশ্বাস টানিবার নলে কেরোসিন ঢুকিয়া যায়। ইহাতে উহারা দম আট্‌কাইয়া মারা পড়ে।

 মশার বাচ্চা প্রায় পনেরো দিন জলে বাস করে এবং এই সময়ের মধ্যে চারি বার খোলস ছাড়ে। তার পরে গোলাকার পিণ্ডের মত হইয়া পুত্তলি-অবস্থায় থাকার পরে খোলস ছাড়িয়া ডানা-ওয়ালা মশা হইয়া দাঁড়ায়। কিন্তু খোলস ছাড়িলেই উহারা উড়িতে পারে না। আমরা নৌকায় চড়িয়া যেমন জলের উপরে ভাসিয়া বেড়াই, নূতন মশারাও ঠিক্ সেই রকমে নিজের গায়ের খোলসের উপরে বসিয়া কিছুক্ষণ কাটাইয়া দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ডানা মেলিয়া গায়ের জল শুকাইতে থাকে। ইহার পরে তাহারা আহারের সন্ধানে উড়িতে সুরু করে।