পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/পতঙ্গ

পতঙ্গ

 চিংড়ি মাছ ও কাঁকড়ার কথা বলা হইল। এখন আমরা পতঙ্গদের কথা বলিব।

 ষষ্ঠ শাখার প্রাণীদের মধ্যে পতঙ্গেরই সংখ্যা বেশি। হাজার হাজার রকমের পতঙ্গ সর্ব্বদাই আমাদের নজরে পড়ে এবং যাহারা আমাদের নজরে পড়ে না, তাহাদের সংখ্যা আরো বেশি। আরসুলা মশা মাছি প্রজাপতি এবং নানা রকম গোব্‌রে-পোকা সকলেই পতঙ্গের দলের প্রাণী। তা’ছাড়া পিঁপ্‌ড়ে, উই, ছারপোকারাও এই দলে পড়ে।

 পিঁপ্‌ড়ে গোবরে-পোকা বা ফড়িং ধরিয়া তোমরা যদি পরীক্ষা করিয়া দেখ, তাহা হইলে সকলের দেহের মধ্যে বেশ একটা মিল দেখিতে পাইবে। ইহাদের কেবল আকৃতিতেই যে মিল আছে, তাহা নয়। দেহের ভিতরকায় যন্ত্রাদিতে এবং সেই সকল যন্ত্রের কাজেও খুব মিল ধরা পড়ে।

 এই মিল আছে বলিয়াই আমরা প্রথমে একটি মাত্র পতঙ্গের দেহ-যন্ত্রাদির কথা তোমাদিগকে বলিব। ইহা বুঝিলে, তোমরা যে-কোনো পতঙ্গের দেহের কাজ বুঝিয়া লইতে পারিবে। মানুষের আকৃতির মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। মোঙ্গলীয় চীনবাসী বর্ম্মাবাসী ও জাপানীদের রঙ্ কতকটা হল্‌দে রকমের, তাহাদের নাক খাঁদা। আফ্রিকার অধিবাসীদের গায়ের রঙ্ ঘোর কালো, ওষ্ঠ ভয়ানক পুরু। আমেরিকার আদিম অধিবাসীদের রঙ্ তামার মত লাল। আকৃতির এই রকম অমিল থাকিলেও, ইহাদের সকলেই মানুষ এবং সকলেরি শরীরে এক রকম যন্ত্র আছে এবং সকলের দেহের যন্ত্র এক রকমেই চলে। সুতরাং যদি কোনো একটি মানুষের শরীরের যন্ত্রের কথা তোমরা জানিয়া লইতে পার, তবে বাঙালী, ইংরেজ, কাফ্রি বা আমেরিকান্ সকলেরি শরীরের কথা জানা হয় না কি? এই জন্যই বলিতেছি, নানা জাতি পতঙ্গের আকৃতির মধ্যে অমিল থাকিলেও তোমরা যদি একটিমাত্র পতঙ্গের শরীরের কাজ জানিয়া রাখিতে পার, তবে পৃথিবীর সমস্ত রকম পতঙ্গের দেহে কি প্রকারে জীবনের কাজ চলে, তাহা বলিয়া দিতে পারিবে।

 আমরা পর-পৃষ্ঠায় একটি পতঙ্গের ছবি দিলাম। আমরা আগেই বলিয়াছি পতঙ্গদের শরীরে মাথা, বুক ও লেজ এই তিনটি মোটামুটি ভাগ আছে এবং ইহাদের প্রায় সকলেরি ছয়খানা করিয়া পা থাকে। ছবিতে তোমরা ছয়খানি পা এবং দেহের ভাগ স্পষ্ট দেখিতে পাইবে। ছবিতে পাঁচটি ভাগ আছে। ইহার প্রথম ভাগটি মাথা; তাহার পরের তিনটি ভাগ লইয়া বুক এবং শেষের ভাগ লেজ।

 আমাদের মাথা এবং দেহের মাঝে একটা সরু অংশ থাকে। ইহাই আমাদের গলা। অনেক পতঙ্গেরই মাথা ও বুক ঐ রকমে জোড়া থাকে। তার পরে বুক ও লেজও আবার ঐ রকম সরু অংশ দিয়া জোড়া দেখা যায়। তোমরা
চিত্র ২৭।
কাঁচপোকা বা বোল্‌তার শরীর পরীক্ষা করিয়া দেখিয়ো। ইহাদের মাথা বুক ও লেজ পরস্পর তারের ন্যায় সরু অংশ দিয়া জোড়া দেখিতে পাইবে। এই রকমে জোড়া থাকে বলিয়াই পতঙ্গেরা মাথা বুক ও লেজকে পৃথক্ পৃথক্ ভাবে ইচ্ছামত ঘুরাইতে পারে।

 যাহা হউক, এখন আবার ছবিখানিকে দেখ। আংটির মত যে সব গাঁট দিয়া পতঙ্গের দেহ প্রস্তুত, তাহার মধ্যে তিনটি গাঁট লইয়া ইহাদের বুকের সৃষ্টি হইয়াছে এবং এই গাঁটগুলির প্রত্যেকটি হইতে এক এক জোড়া পা বাহির হইয়াছে। কাজেই পতঙ্গদের মোট পায়ের সংখ্যা ছয়।