পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/পতঙ্গ/পতঙ্গের চোখ
পতঙ্গদের চোখ বড় আশ্চর্য্যজনক জিনিস। মাছির মাথার দুই পাশে যে দুটা বড় চোখ থাকে, তাহা তোমরা অবশ্যই দেখিয়াছ। অনেক পতঙ্গেরই এই রকম চোখ আছে। ইহা ছাড়া বড় চোখ দুটির মাঝামাঝি জায়গায় তাহাদের আরো গোটা তিনেক চোখ থাকে। ছোট চোখ আমাদেরি চোখের মত। কিন্তু বড় চোখ দুটি বড় মজার জিনিস। ইহাদের প্রত্যেকটিতে হাজার হাজার ছোট চোখ জটলা পাকাইয়া থাকে। তাহা হইলে বলিতে হয়, হাজার হাজার ছোট চোখে মিলিয়া পতঙ্গদের একএকটি চোখের সৃষ্টি করে।
এখানে পতঙ্গের একটা চোখের ছবি দিলাম। অণুবীক্ষণ
চিত্র ২৮—পতঙ্গের চোখ
যন্ত্র দিয়া দেখিলে চোখটিকে যে রকম দেখায়, ছবিতে তাহাই আঁকা আছে। দেখ, মৌমাছির ঘরের মত হাজার হাজার চোখ একত্র হইয়া রহিয়াছে। মাছির মাথায় এই রকম চারি হাজার চোখ থাকে। প্রজাপতিদের চোখের সংখ্যা আরো বেশি। ইহাদের এক-একটি চোখে সতের হাজার ছোট চোখ থাকে। কিন্তু গোব্রে পোকারা এ বিষয়ে সকলকেই হারাইয়াছে,—তাহাদের একএকটির মাথায় প্রায় পঁচিশ হাজার চোখ আছে।
তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, আমাদের দুইটা চোখেই বেশ কাজ চলিয়া যায়; পতঙ্গেরা এতগুলো চোখ লইয়া কি করে? এই কথাটা সত্যই ভাবিয়া দেখিবার বিষয়। যাঁহারা বহুকাল
চিত্র ২৯—পতঙ্গের চোখ।
ধরিয়া পোকা-মাকড়ের জীবনের কাজ পরীক্ষা করিয়াছেন, পতঙ্গের এতগুলো চোখের ব্যবহার কি, তাহা তাঁহারাও ঠিক করিতে পারেন নাই। কেহ কেহ বলেন, কোন্ জিনিস উজ্জ্বল এবং কোন্ জিনিস অনুজ্জ্বল, পতঙ্গেরা ঐ-সকল চোখ দিয়া কেবল তাহাই বুঝিতে পারে। এগুলি ছাড়া মাথার উপরে যে পৃথক্ চোখ থাকে তাহা দিয়াই উহারা সব জিনিস স্পষ্ট দেখিতে পায়। স্পষ্ট দেখিলেও পতঙ্গদের দৃষ্টিশক্তি খুব বেশি নয়। কাক, চিল, শকুনি বা অপর প্রাণীরা দুটি ছোট চোখ দিয়া যেমন দেখিতে পায়, পতঙ্গেরা হাজার হাজার চোখ দিয়াও সে-রকম দেখিতে পায় না।