প্রাকৃতিকী/কেরোসিন তৈল
কেরোসিন্ তৈল
প্রায় ত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে যখন আমাদের পরিবারে কেরোসিন্ তৈলের ব্যবহার প্রথম আরম্ভ হয়, তখনকার একটা ক্ষুদ্র ঘটনার কথা আজ মনে পড়িয়া গেল। আমাদের একটি অতি বৃদ্ধা ধাত্রী ছিল। প্রাকৃতিক বা অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারসম্বন্ধে খট্কা উপস্থিত হইলেই আমরা সেই বৃদ্ধার শরণাপন্ন হইতাম। ব্যাখ্যানপ্রদানে সে সিদ্ধবিদ্যা লাভ করিয়াছিল। মেঘের চলাচল, বজ্রপাত, বিদ্যুৎস্ফুরণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ব্যাপার হইতে আরম্ভ করিয়া ভূত প্রেত ব্রহ্মদৈত্যের আবির্ভাব প্রভৃতি অতিপ্রাকৃত ব্যাপারের ব্যাখ্যান তাহার জিহ্বাগ্রে থাকিত। তত্ত্বজিজ্ঞাসু হইয়া তাহার শরণাগত হইয়া, আমরা কখনই নিরাশ হই নাই। বৃদ্ধা কেরোসিন্ তৈল কোনক্রমে স্পর্শ করিত না, এবং আমাদিগকেও স্পর্শ করিতে দিত না। একদিন এই বিতৃষ্ণার কারণ-জিজ্ঞাসু হইয়া তাহার নিকট উপস্থিত হইয়াছিলাম। ধাত্রীর ব্যাখ্যানে জানিয়াছিলাম, দেশের সমস্ত মৃত জন্তুর গলিত দেহ কলের ঘানিতে ফেলিয়া সাহেবেরা যে তৈল বাহির করে, তাহাই কেরোসিনের রূপ পরিগ্রহ করিয়া বাজারে বিক্রয় হয়।
কেরোসিন তৈলের প্রস্তুতপ্রণালীর পূর্ব্বোক্ত বিষরণটি বহুদিন ধরিয়া সত্য বলিয়া বিশ্বাস ছিল। অবশ্য এখন আর সে বিশ্বাস নাই। সুদূর পল্লীবাসীও এখন ঐ প্রকার একটা অদ্ভুত প্রস্তুতপ্রণালীতে বিশ্বাসস্থাপন করিবে না; কিন্তু কেরোসিনের উৎপত্তিতত্ত্ব জানিবার জন্য বিজ্ঞানগ্রন্থ খুলিলে আমাদের সেই বৃদ্ধা ধাত্রীর কথার সহিত একদল বৈজ্ঞানিকের উক্তির মুলে মিল দেখা যায়। কলের ঘানিতে মৃতদেহ পেষণ করিয়া সাহেবেরা তৈল বাহির করেন না, প্রকৃতিই ভূপ্রোথিত জীবদেহের উপর চাপ দিয়া কোন প্রকারে তৈল উৎপন্ন করিয়া থাকেন। আধুনিক বৈজ্ঞানিকদিগের উক্তির ইহাই সারমর্ম্ম।
কেরোসিন তৈল যে একটা জৈব পদার্থ, তাহাতে আর সন্দেহ, নাই। বৈজ্ঞানিকদিগের মধ্যে সকলেই ইহাতে একমত হইয়াছেন। অনুসন্ধান করিলে দেখা যায়, পৃথিবীর যে-সকল অংশে অতি প্রাচীন কয়লার খনি আছে, কেরোসিন তৈল সেই সকল স্থানেই প্রচুর পাওয়া যায়; সুতরাং কয়লা যেপ্রকার ভূপ্রোথিত উদ্ভিদের দেহ হইতে উৎপন্ন হয়, কেরোসিনও সেই প্রকার যুগ-যুগান্তরের মাটিচাপা বৃক্ষাদি হইতে প্রস্তুত হয় বলিয়া সিদ্ধান্ত করাই স্বাভাবিক। উদ্ভিদশরীরে কেরোসিনের ন্যায় পদার্থের অভাব নাই। টার্পিন তৈল ধুনা প্রভৃতি দাহ্য বস্তু উদ্ভিদ্ হইতেই উৎপন্ন হইয়া থাকে। কাজেই বৃক্ষাদির যে-সকল অংশ হইতে টার্পিন্ প্রভৃতির উৎপত্তি হয়, তাহাই বহুকাল প্রোথিত থাকিয়া ভূ-গর্ভের চাপ ও তাপে যে শেষে কেরোসিন্ হইয়া দাঁড়াইবে, তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি?
বৈজ্ঞানিকের নিকট হীরক ও কয়লা একই জিনিষ। বিশ্লেষণে এক অঙ্গার ব্যতীত অপর কোন জিনিষই হীরকে পাওয়া যায় না। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, কয়লাই বহুকাল ভূপ্রোথিত থাকিলে, পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ উত্তাপে ও উপরের মৃত্তিকার চাপে তাহার মলিনতা ঘুচিয়া যায়। ধরা-কুক্ষির বৃহৎ কর্ম্মশালায় কি প্রকারে কেবল চাপ ও তাপের সাহায্যে তুচ্ছ কৃষ্ণ অঙ্গার অতুজ্জ্বল ও বহুমূল্য হীরকে পরিণত হয়, তাহা জানা ছিল না। অল্পদিন হইল একজন ফরাসী বৈজ্ঞানিক কয়লাকে ভূগর্ভের অবস্থায় ফেলিয়া তাহাকে হীরকে রূপান্তরিত করিয়াছেন। বৃক্ষনির্য্যাসকে ঐ প্রক্রিয়ায় কেরোসিনে পরিববর্ত্তিত করিবার চেষ্টা চলিতেছে।
কেবল কয়লার খনির নিকটেই যে কেরোসিন তৈল পাওয়া যায়, এখন আর একথা বলা চলে না। অনেক অঙ্গারবর্জ্জিত স্থানেও আজকাল কেরোসিনের খনি বাহির হইয়া পড়িয়াছে। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, এই সকল স্থানের কেরোসিন্ উদ্ভিদ্-দেহজ নয়। প্রাণীর দেহ বহুকাল ভূপ্রোথিত থাকিলে, দেহের তৈলময় উপাদানগুলি নানাপ্রকারে রূপান্তরিত হইয়া শেষে কেরোসিন হইয়া দাঁড়ায়। এই সকল কেরোসিনখনির চারিদিকের ভূমি খনন করিলে, সত্যই অনেক জীবকঙ্কাল বাহির হইয়া পড়ে; সুতরাং প্রাণীর বসা ইত্যাদি কালক্রমে পরিবর্ত্তিত হইয়া যে কেরোসিনের আকার প্রাপ্ত হইতে পারে, তাহাতেও অবিশ্বাস করা যায় না।
আজ চল্লিশ বৎসর হইল কেরোসিনের ব্যবহার আরম্ভ হইয়াছে। ইহা দেখিলে মনে হইতে পারে, ভূগর্ভে যে এপ্রকার একটা তৈল সঞ্চিত আছে প্রাচীনেরা বুঝি তাহার কোন সন্ধান রাখিতেন না; কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তাহা নয়। প্রাচীনেরা ইহার খুবই সন্ধান রাখিতেন, এবং আবশ্যক মত ব্যবহারও করিতেন। নিনেভা ও বাবিলনের নগরপ্রাচীরের ভগ্নাবশেষগুলি পরীক্ষা করিলে, তাহার চূণ সুরকির সহিত একপ্রকার অপরিচ্ছন্ন কেরোসিন মিশ্রিত দেখা যায়। এই জিনিষটাকে গৃহনির্ম্মাণের অপর উপাদানগুলির সহিত ব্যবহার করিলে যে গাঁথুনি দৃঢ় হয়, এবং জলে তাহার ক্ষতি করিতে পারে না, চারি হাজার বৎসর পূর্ব্বেকার লোকেরাও তাহা জানিতেন।
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই কেরোসিন তৈলের আকরের অল্পাধিক সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। আমেরিকার ইউনাইটেড্ষ্টেট্স্ ও কানাডা-প্রদেশে ইহার খুব বড় বড় আকর আছে। তা’ছাড়া রুসিয়া ও আমাদের ব্রহ্মদেশেও কেরোসিন পাওয়া যাইতেছে। মাটি খুঁড়িলে কয়লা প্রভৃতি আকরিক জিনিষকে যে প্রকার স্তরে স্তরে সজ্জিত
আমেরিকার একস্থানে বহু কেরোসিনের খনির দৃশ্য দেয়া যায়, কেরোসিনকে সেপ্রকার বিশেষ স্তরে পাওয়া যায় না। যদি মাটিতে ফেরোসিন থাকে, তবে ভূগর্ভের স্থানে স্থানে যে-সকল ফাটাল দেখা যায়, পার্শ্বস্থ মৃত্তিকা হইতে তাহাতেই তৈল আপনা হইতে সঞ্চিত হয়। উপর হইতে খুঁড়িতে আরম্ভ করিয়া সেই সকল ফাটাল বাহির করিলেই জল ও বাষ্পমিশ্রিত তৈল ফোয়ারার মত ছুটিয়া উপরে উঠিতে আরম্ভ করে। এই প্রকারে খনির ভিতরকার আবদ্ধ বায়বীয় ও জলীয় অংশ বাহির হইয়া গেলে, খাঁটি তৈল গহবরে পড়িয়া থাকে। এই অবস্থায় ব্যবসায়িগণ পম্প্ লাগাইয়া তৈল সংগ্রহ করিয়া থাকেন।
আকর হইতে যে-সকল তৈল সদ্য উত্তোলিত হয়, তাহার সহিত আমাদের পরিচিত কেরোসিন তৈলের কোনই সাদৃশ্য থাকে না। তৈল প্রস্তুতকারিগণ নানা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সেই অবিশুদ্ধ তৈলকে নির্ম্মল করিয়া ব্যবহারোপযোগী করিয়া থাকেন। একশত ভাগ আকরিক তৈল লইয়া কেরোসিন্ প্রস্তুত করিতে গেলে, কেবল পঞ্চান্ন ভাগ মাত্র খাঁটি নির্ম্মল তৈল পাওয়া যায়। অবশিষ্ট পঁয়তাল্লিশ ভাগ হইতে গ্যাসোলিন্, ন্যাপ্থা, প্যারাফিন্ ও কলে দিবার তৈল প্রভৃতি কতকগুলি অত্যাবশ্যক জিনিষ প্রস্তুত হয়। স্কুল কথায়, আকরিক তৈলের অতি অল্প অংশ অব্যবহার্য্য বলিয়া পরিত্যক্ত হইয়া থাকে।
অবিশুদ্ধ আকরিক তৈলের শোধনপদ্ধতি অতি সহজ। গুড়ের ন্যায় ঘন তৈলকে কতকগুলি আবদ্ধমুখ কটাহে রাখিয়া ফুটানো হয়। কটাহের আবরণের সহিত লৌহের বড় বড় নল সংযুক্ত থাকে। তৈল ফুটিতে আরম্ভ করিলে যে বাষ্প উত্থিত হয়, তাহা ঐসকল নল দ্বারা আর এক শীতল পাত্রে পৌঁছিয়া দিলে তথায় জমিতে আরম্ভ করে। এই প্রক্রিয়ার প্রথম কালে যে জিনিষটা শীতল পাত্রে জমা হয়, তাহা দ্বারা বিশেষ কোন কাজ পাওয়া যায় না। তাহাকে পুনরায় পূর্ব্বোক্ত প্রথায় চোয়াইলে গ্যাসোলিন, বেনজিন্ ন্যাপ্থা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক জিনিষগুলি পাওয়া যায়। কটাহের তৈল ফুটিতে আরম্ভ করিয়া মাঝামাঝি সময়ে যে-সকল বাষ্প ছাড়িতে আরম্ভ করে, তাহাই আমাদের পরিচিত কেরোসিনের বাষ্প। ইহ। সেই সুদীর্ঘ নল বহিয়া শীতল পাত্রে আসিয়া তরল হইলেই কেরোসিন প্রস্তুত হয়।
এই প্রকারে যে তৈল পাওয়া যায়, তাহার সহিত আমাদের পরিচিত কেরোসিনের খুব সাদৃশ্য থাকিলেও জিনিষটাকে ঠিক্ বাজারের ভাল কেরোসিনের মত নির্ম্মল দেখায় না। ইহার সহিত শতকরা দুই ভাগ সলফিউরিক্ এসিড্ মিশাইলে ময়লা কাটিয়া নীচে থিতাইতে আরম্ভ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে তৈল বেশ স্বচ্ছ ও দুর্গন্ধহীন হইয়া দাঁড়ায়। অতি উৎকৃষ্ট তৈল প্রস্তুত করিতে হইলে ইহার পর তৈলে এমোনিয়া বা কষ্টিক্ সোডা মিশানো হইয়া থাকে। ইহাতে তৈলে অণুমাত্র মলিনতা থাকে না, এবং দুর্গন্ধও প্রায় লোপ পাইয়া যায়।
অপরিচ্ছন্ন আকরিক তৈল কটাহে ফুটিতে আরম্ভ করিলে সর্ব্বপ্রথমে যে ন্যাপ্থা প্রভৃতির বাষ্প বহির্গত হইয়া জমা হয়, তাহা তৈলরূপে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী; কিন্তু জিনিষটার প্রস্তুতব্যয় অতি অল্প বলিয়া, অনেক ব্যবসায়ী অন্যায় লাভের আশায় ভাল কেরোসিনের সহিত এই জিনিষটাকে প্রায় মিশাইয়া থাকে। ল্যাম্প ফাটিয়া গিয়া যে-সকল দুর্ঘটনা ঘটায়, তাহার মূল কারণ ঐ ন্যাপ্থা ব্যতীত আর কিছুই নয়। যে-সকল তৈল একশত তেত্রিশ ডিগ্রি উত্তাপে প্রজ্বলিত হয়, সাধারণতঃ তাহাকেই উৎকৃষ্ট তৈল বলা হইয়া থাকে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গিয়াছে, তাহারই সহিত শতকরা একভাগ ন্যাপ্থা মিশাইলে মিশ্র তৈল
গভীর স্তর হইতে কেরোসিন উত্তোলনের যন্ত্র—১৯৩ পৃঃ একশত তিন ডিগ্রি উত্তাপেই জ্বলিয়া উঠে। সৎ ব্যবসায়ীর নিকট হইতে কেরোসিন না কিনিলে কখন কখন তৈলে শতকরা পাঁচভাগ পর্যন্ত ন্যাপ্থা পাওয়া গিয়া থাকে। এই তৈল ৮৬° ডিগ্রি উত্তাপ পাইলেই জ্বলিয়া উঠে; সুতরাং এপ্রকার নিকৃষ্ট জিনিষ ব্যবহারে বিপদের সংঘটন মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়।
কেবল দুর্ঘটনা হইতে নিষ্কৃতি লাভের জন্যই যে উৎকৃষ্ট তৈলের ব্যবহার আবশ্যক, তাহা নয়। অল্প খরচে অধিক আলোক পাইতে হইলেও উৎকৃষ্ট তৈল ব্যবহার করা আবশ্যক। অনেক সময়ে বাজারের তৈল ভাল ল্যাম্পে ব্যবহার করিতে গিয়া দেখা যায়, শিখা ধুমময় হইয়া পড়িতেছে। ইহাও তৈলমিশ্রিত ন্যাপ্থারই একটা লক্ষণ! এ প্রকার তৈল অল্প মূল্যে পাওয়া যায় সত্য; কিন্তু জিনিষটা এত অপরিচ্ছন্ন আলোক দিয়া শীঘ্র শীঘ্র পুড়িয়া যায় যে, ইহার ব্যবহারে গৃহস্থমাত্রকেই ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হয়। তা’ ছাড়া আকস্মিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা পূর্ণমাত্রায় রহিয়া যায়। হিসাব করিয়া দেখা গিয়াছে, ভাল তৈল পুড়াইয়া যে পরিমাণ আলোক পাওয়া যায়, মধ্যম শ্রেণীর তৈলে তাহার চারি ভাগের তিন ভাগ মাত্র আলোক পাওয়া গিয়া থাকে।
কেরোসিন তৈল আজকাল আমেরিকায় একটা প্রধান পণ্যদ্রব্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। পৃথিবীর নানা স্থানের কেরোসিনের বড় বড় আকরগুলি ১৮৬০ সাল পর্য্যন্তও অনাদৃত ব্যবস্থায় পড়িয়াছিল। দেশের অতি প্রাচীন জঙ্গলের বৃহৎ বৃহৎ বৃক্ষগুলিই ইন্ধন জোগাইত। এখন আর সে জঙ্গল নাই। প্রায় সকল অরণ্যভূমিই কৃষিক্ষেত্র বা গ্রাম-নগরে পরিণত হইয়াছে। কাজেই বৃহৎ বৃহৎ কলকারখানার খাঙ্ক জোগাইবার জন্য আমাদিগকে রত্নগর্ভা ধরা-দেবীরই শরণাপন্ন হইতে হইয়াছে। মনে হয়, ভবিষ্যৎ সন্তানদিগের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের জন্যই যেন বসুন্ধরা যুগযুগান্তর ধরিয়া এই সকল অমূল্য দ্রব্য ধারণ করিয়া আসিতেছেন।
অতি প্রাচীনকালে যে অবস্থায় পড়িয়া বৃক্ষাদি ভূপ্রোথিত হইয়াছিল, পৃথিবীর এখন আর সে অবস্থা নাই। এখন বৃক্ষাদি আর ভূপ্রোথিত হইতে পারিতেছে না; সুতরাং নূতন করিয়া কয়লা বা কেরোসিন তৈলেরও উৎপত্তি হইতেছে না, অথচ পূর্ব্বসঞ্চিত কয়লা ইত্যাদির ব্যয় ক্রমে বাড়িয়াই চলিয়াছে। এই আয়-ব্যয়ের হিসাব করিয়া আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ বড়ই চিন্তাযুক্ত হইয়া পড়িয়াছেন। আশঙ্কা হইতেছে, বুঝি বা আর একশত বৎসরের মধ্যে পৃথিবীর কয়লা ও কেরোসিনের ভাণ্ডার নিঃশেষিত হইয়া যায়; কিন্তু আমরা ইহাতে কোন আশঙ্কারই কারণ দেখি না। মানবজাতি বিধাতার নানা আশীর্ব্বাদে ভূষিত হইয়া প্রাণিরাজ্যের শীর্ষস্থান অধিকার করিয়াছে সত্য, কিন্তু তাই বলিয়া সৃষ্টিরক্ষার কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য-নির্দ্ধারণ কখনই তাহার অধিকারভুক্ত বলা যায় না। বৃহৎ অরণ্যগুলির ধ্বংসের পর মানব যখন ইন্ধনের অভাব অনুভব করিতে আরম্ভ করিয়াছিল, তখন বিধাতারই অঙ্গুলিসঙ্কেতে ভূগর্ভে নুতন ইন্ধনের সন্ধান পাওয়া গিয়াছিল। এই ভাণ্ডার শূন্য হইলে, সেই বিধাতারই অকথিত বাণী ইন্ধন-সংগ্রহের নব নব সহজ উপায় বলিয়া দিবে।