দধি

থেজুর-রস, মধু, দুগ্ধ প্রভৃতি কতকগুলি জিনিষকে অনাবৃত অবস্থায় রাখিয়া দিলে, এগুলি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকৃত হুইয়া পড়ে। একটু পরীক্ষা করিলেই দেখা যায়, একপ্রকার বাষ্প উঠিয়া জিনিষগুলিকে ফেনাযুক্ত করিয়া ফেলিতেছে। খেজুর রস এই প্রকারে বিকৃত হইলে এত ফেনিল হইয়া পড়ে যে, তখন ভাণ্ডে তাহার স্থান সংকুলান হয় না। বলা বাহুল্য, এই পরিবর্ত্তনে জিনিষের স্বাদ বর্ণ গন্ধ সকলই পৃথক্ হইয়া দাঁড়ায়। বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যাইতে পারে এই প্রকারে উহাদের একটা রাসায়নিক পরিবর্ত্তন উপস্থিত হয়। চলিত কথায় আমরা এই পরিবর্ত্তনকে “গাঁজিয়ে যাওয়া” বলি। ইংরাজিতে উহাকে Fermentation বলে। খাঁটি সংস্কৃতে, ব্যাপারটাকে কিণ্বন বলা যাইতে পারে। যে বাষ্প উঠিয়া জিনিষগুলাকে ফেনাইয়া তোলে, তাহার পরিচয় গ্রহণ করা হইয়াছে। বাষ্পটা অঙ্গারক বাষ্প (Carbonic Acid Gas) ব্যতীত আর কিছুই নয়।

 টাট‍্কা খেজুরের রস, খাঁটি দুধ প্রভৃতি কিছুক্ষণ অনাবৃত রাখিবার পরই তাহাদের এই প্রকার বিকার দেখিলে বাহিরের কোন জিনিষের যোগেই এই পরিবর্ত্তন হইতেছে বলিয়া মনে হয়। প্রকৃত ব্যাপারটাও তাই বটে। বায়ুশূন্য পরিষ্কার পাত্রে রাখিলে উহাদের কোন বিকারই দেখা যাইবে না। জর্ম্মানির গো-শালাগুলির ঘন দুধ, ইংলণ্ডের মাছ, এবং আমেরিকার বড় বড় বাগানগুলির ফলমূল এই পদ্ধতিতেই টিনে আবদ্ধ হইয়া আমাদের বাজারে উপস্থিত হইতেছে এবং এইরূপ বায়ুশূন্য কৌটায় ফলরক্ষণ আমদের দেশেও আরম্ভ হইয়াছে।

 যাহা হউক যে জিনিষ বাতাসের সহিত ভাসিয়া আসিয়া খেজুররস ইত্যাদি বিকৃত করে, আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ তাহা লইয়া অনেক গবেষণা করিয়াছেন। ইহাতে জানা গিয়াছে বাতাসে সর্ব্বদাই নানা জাতীয় জীবাণু ভাসিয়া বেড়াইতেছে। জীবাণুর নাম শুনিলেই ব্যাধির জীবাণুর কথা মনে পড়িয়া যায়। কিন্তু এপর্য্যন্ত যতগুলি এই শ্রেণীর জীবের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে, তাহার মধ্যে ব্যাধি-উৎপাদক জীবাণুর সংখ্যা নিতান্তই অল্প। মৃত প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহকে পচাইয়া ফেলা, চিনি হইতে মদ উৎপন্ন করা, উদ্ভিদের মূলে বায়ুর নাইট্রোজেন সংগ্রহ করিয়া রাখা, এমন কি চুরুটের তামাকে সুগন্ধ উৎপন্ন করা, রঞ্জন-কার্য্যে রঙ্ কে ফলাইয়া তোলা প্রভৃতি অনেক ব্যাপার কেবল জীবাণু দ্বারাই সম্পন্ন হয় বলিয়া স্থির হইয়াছে। কেবল স্থির করিয়াই বৈজ্ঞানিকগণ ক্ষান্ত হন নাই; হাজার হাজার পৃথক্ জাতীয় জীবাণুর মধ্যে আবশ্যক মত এক এক জাতিকে চিনিয়া এবং বাছিয়া লইয়া তাহাদিগকে পালন করিতে আরম্ভ করিয়াছেন। ব্যবসায়ের জন্য আমরা রেসমের কীট ও লাক্ষার কীট পালন করিয়া থাকি। আজকাল ব্যবসায়ের জন্য ঐ সকল জীবাণুকেও পালন করা হইতেছে। যে জীবাণু মদ্য উৎপন্ন করে যা উদ্ভিদের খাদ্য যোগায়, —পালন করিয়া তাহাদিগকে মদ্য প্রস্তুতের কারখানায় বা শস্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দেওয়া হইতেছে। ইহাতে আজকাল অত্যাশ্চর্য ফল পাওয়া যাইতেছে।

 দধি জিনিষটাও জীবাণু দ্বারা উৎপন্ন। এক শ্রেণীর বিশেষ জীবাণু দুগ্ধে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া কোন প্রকার রস নির্গত করিতে থাকিলে তাহা দ্বারা রাসায়নিক কার্য্য শুরু হয়। ইহাই দুগ্ধকে দধিতে পরিণত করে। দধির সুগন্ধ, অম্লস্বাদ সকলই সেই দধি-জীবাণুর কাজ। মাখনের সুগন্ধ এবং বিলাতি চিজের সেই গন্ধটারও মূলে জীবাণুর কার্য্য দেখিতে পাওয়া যায়। বিশেষ বিশেষ জীবাণু দুগ্ধে আশ্রয় গ্রহণ করিলে তাহারাই মাখন ও চিজ্ উৎপন্ন করে। আজকাল বিলাতি গোয়ালারা দধি, মাখন বা চিজ্ উৎপাদক জীবাণুগুলিকে চিনিয়া পৃথক্ স্থানে তাহাদের পালন করিতেছে, এবং আবশ্যকমত তাহাদিগকেই দুগ্ধে ফেলিয়া দিয়া উৎকৃষ্ট দধি মাখন ইত্যাদি প্রস্তুত করিতেছে। আমাদের গো-শালাগুলিতে সেই “সাঁজা” দিয়া দধি প্রস্তুতের প্রথা অদ্যাপি প্রচলিত আছে। “সাঁজা” দেওয়া এবং দুগ্ধে জীবাণু সংযোগ করা একই কাজ বটে, কিন্তু আমরা যাহাকে “সাঁজা” বলি তাহাতে দধির উৎপাদক খাঁটি জীবাণু ছাড়া আরো অনেক জীবাণু থাকিয়া যায়। কাজেই সকল সময় সাঁজায় খুব ভাল দধি হয় না। দধি-উৎপাদক জীবাণু যেমন কাজ করিতে থাকে, তেমনি সঙ্গে সঙ্গে অপর অনাবশ্যক জীবাণু সাঁজার সহিত দুগ্ধে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া তাহাকে বিকৃত করিতে আরম্ভ করে। ফলে দধিটা একটা অদ্ভুত জিনিষ হইয়া পড়ে। প্রায়ই দেখা যায় দধি বসিল না, বা সেটা লালার ন্যায় একটা আটালো জিনিষ এবং দুর্গন্ধময় হইয়া পড়িল। এই সকল সেই অনাবশ্যক জীবাণুরই কীর্ত্তি।

 জীবাণু কেবল ব্যাধি-উৎপাদন এবং বাহিরের জিনিষকে ভাল—মন্দে পরিবর্ত্তন করিয়া ক্ষান্ত হয় না। সুস্থ এবং সবল প্রাণীর দেহের ভিতরেও ইহারা আশ্রয় গ্রহণ করিয়া নানাপ্রকার কার্য্য দেখায়। মানবদেহের নবদ্বারের মধ্যে অন্ততঃ কতকগুলি দ্বার ইহাদের প্রবেশের জন্য অবারিত রহিয়াছে। আমরা খাদ্যের সহিত অনেক জীবাণু উদরস্থ করিয়া ফেলি। কিন্তু এগুলি ধদি ব্যাধি-জীবাণু না হয়, তবে তাহারা আমাদের বিশেষ কোন অনিষ্ট করিতে পারে না। আমাদের জঠর হইতে যে পাক-রস (Gastric Juice) নির্গত হয়, তাহার জীবাণুনাশের শক্তি আছে। কাজেই উদরস্থ হইলে পর সেই রসের সংযোগে তাহারা মরিয়া যায়। কিন্তু অন্ত পথে আমাদের অন্ত্রে (Intestine) যে-সকল জীবাণু আশ্রয় গ্রহণ করে অস্ত্র-রস (Pancreatic Juice) তাহাদিগকে নষ্ট করিতে পারে না। বরং ঐ রসের সহিত একটু ক্ষার যুক্ত থাকায় তাহা অন্ত্রস্থ পদার্থগুলিকে জীবাণুর বংশ বিস্তারের উপযুক্ত ক্ষেত্র করিয়া তোলে। ইহার ফলে অন্ত্রস্থ অর্দ্ধপক্ক ভুক্ত জিনিষগুলাকে ঐ জীবাণুগুলি খুব পচাইয়া তুলিতে থাকে। পচানোই যে-সকল জীবাণুর কাজ তাহারা সংসারের অশেষ উপকার করে সত্য, কিন্তু এই পচানোর কাজটা আমাদের দেহের মধ্যে চালাইতে থাকিলে ফল শুভ হয় না। জীবাণু সকল নিজের দেহ হইতে যে রস নির্গত করে, তাহা রক্তের সহিত সংযুক্ত হইলেই নানা পীড়ার লক্ষণ প্রকাশ হইয়া পড়ে।

 মানবদেহে এই সকল জীবাণুর কাজ লইয়া আধুনিক শারীরবিদ্‌গণ অনেক পরীক্ষা করিয়াছেন। ইহাতে জানা গিয়াছে, বয়স যতই অধিক হয়, মানুষের অন্ত্রে অনিষ্টকর জীবাণুর সংখ্যা ততই বাড়িয়া চলে। সুস্থ শিশুদের অন্ত্রে সেই পচানো জীবাণু একপ্রকার দেখাই যায় না। পরীক্ষায় কেবল কতকগুলি দধি-জীবাণুর সন্ধান পাওয়া যায় মাত্র। তা’র পর শিশু বয়ঃপ্রাপ্ত হইতে থাকিলে ঐ দধি-জীবাণুগুলিকে তাড়াইয়া দিয়া পচানো-জীবাণু ক্রমে অন্ত্র অধিকার করিয়া বসে।

 ফরাসী বৈজ্ঞানিক মেচ‍্নিকফ্ (Metchnikoff) আজকাল জীবাণু সম্বন্ধে নানা গবেষণা দ্বারা বৈজ্ঞানিক মহলে বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছেন। ইনি মানবদেহের প্রধান শত্রু জরার মূলকারণ খুঁজিতে গিয়া তাহাতে জীবাণুর কার্য্য আবিষ্কার করিয়াছেন। ইনি বলেন, বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের দেহের পাকনালীতে যে-সকল জীবাণু আশ্রয় গ্রহণ করে, তাহাদেরই দেহনির্গত বিষ রক্তের সহিত সংযুক্ত হইলে জরার লক্ষণ প্রকাশ পায়। ব্যাধির মূল কারণ নিঃসন্দেহে জানিতে পারিলে তাহার প্রতিকারের উপায় উদ্ভাবন প্রায়ই সুসাধ্য
ফরাসী বৈজ্ঞানিক মেচ্‌নিকফ
অপাঠ্য মেচ‍্নিকফ্ সাহেব জরা-উৎপত্তির ঐ একটি কারণ জানিতে পারিয়া তাহার নিবারণের উপায় আবিষ্কার করিবার জন্য সচেষ্ট হইয়াছিলেন। ইনি দেখিয়াছিলেন, অম্লযুক্ত পদার্থে ঐ অনিষ্টকর জীবাণুগুলি মোটেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় না। শিশুর অন্ত্রে দধি-উৎপাদক (Lactic Acid) জীবাণু প্রচুর পরিমাণে থাকে বলিয়াই শিশুগণ ঐ অনিষ্টকর জীবাণুগুলিকে আক্রমণ হইতে রক্ষা পায়। যে উপায়ে স্বয়ং প্রকৃতি শিশুদেহ হইতে অনিষ্টকর জীবাণুগুলিকে ধ্বংস করেন, বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তির শরীরের ভিতরকার জীবাণুগুলি ঠিক সেই প্রকার অম্ল সংযোগে ধ্বংস করিবার জন্য মেচ‍্নিকফ্ কৃতসংকল্প হইয়াছিলেন। খাদ্যের সহিত কিঞ্চিৎ ল্যাকটিক্ এসিড্ অর্থাৎ দধির অম্ল উদরস্থ করিবার কথা সর্ব্বপ্রথমে ইঁহার মনে হইয়াছিল। কিন্তু পরীক্ষায় শুভ ফল পাওয়া যায় নাই। পাকযন্ত্রে উপস্থিত হইবামাত্র এসিড‍্কে বিশ্লিষ্ট হইতে দেখা গিয়াছিল। কাজেই যখন অন্ত্রেই গিয়া পৌঁছিয়াছিল তখন তাহা দ্বারা জীবাণুর বিনাশ হয় নাই। এই কারণে যাহাতে অন্ত্রেই কোন প্রকারে দধির অম্ল উৎপন্ন হইতে পারে তাহার কোন এক ব্যবস্থা করা আবশ্যক হইয়া পড়িয়াছিল। এই সময়ে মেচ্‌নিকফ্ মনে করিয়াছিলেন, যদি কোনক্রমে দেহের পাকাশয়ে দধির অম্লউৎপাদক জীবাণুর (Lactic Acid Bacteria) স্থায়ী উপনিবেশ স্থাপন করা যাইতে পারে তবে সকল গোলযোগেরই অবসান হয়; তখন ঐ জীবাণুগুলিই দধির অম্ল প্রস্তুত করিয়া অনিষ্টকর জীবাণুগুলিকে নিশ্চয়ই নষ্ট করিতে থাকিবে।

 ল্যাক্‌টিক্ এসিড্ উৎপাদক সাধারণ জীবাণুগুলি ৮৫° ডিগ্রির অধিক উত্তাপে ভাল জন্মায় না। আমাদের পাক-নালীর উষ্ণতা প্রায় ৯৯º ডিগ্রি। কাজেই পাকনালীতে ল্যাক‍্টিক এসিড্ জীবাণুর উপনিবেশ স্থাপন করার কল্পনা মেচ্নিকফ‍্কে একপ্রকার ত্যাগই করিতে হইয়াছিল। কিন্তু তিনি একেবারে হতাশ হনপড়ে।

যত প্রকার অম্লম্বাদযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত হইতে পারে তিনি নানা দেশ হইতে তাহা সংগ্রহ করিয়া পরীক্ষা আরম্ভ করিয়াছিলেন। পরীক্ষার পর বুল‍্গেরিয়া অঞ্চলের এক প্রকার দধিতে (Yoghurt) বাঞ্ছিত জীবাণুর সন্ধান পাওয়া গিয়াছিল। এই জীবাণুগুলিও দধির অম্ল অর্থাৎ ল্যাক্‌টিক্ এসিডের উৎপাদক, কিন্তু এই শ্রেণীর সাধারণ জীবাণু হইতে কিঞ্চিৎ পৃথক্। আমাদের পাকযন্ত্রের উত্তাপকে সহা করিয়া এগুলি বেশ বৃদ্ধি পাইতে পারে। মেচ‍্নিকফ্ অনুসন্ধানে জানিতে পারিয়াছিলেন যে বুল‍্গেরিয়ার এক শ্রেণীর লোক এই দধি অত্যন্ত অধিক পরিমাণে ভক্ষণ করিয়া থাকে। তাহাদের মধ্যে প্রায় সকলেই দীর্ঘজীবী ও বলিষ্ঠ।

 ইহার পর আমাদের দেশের দধি এবং ইজিপ্তের লেবেন (Leben) লইয়া পরীক্ষা করা হইয়াছিল। উভয়েই তিনি তাপসহিষ্ণু জীবাণু সন্ধান পাইয়াছিলেন। আমাদের দধিব জীবাণু ৯৯° ডিগ্রির অধিক উষ্ণতা সহ্য করিতে পারে না, কিন্তু বুলগেরিয়ার দধির জীবাণুগুলিকে প্রায় ১২০° ডিগ্রি পর্য্যন্ত উষ্ণতায় জীবিত থাকিতে দেখা গিয়াছিল। শিশুর অন্ত্রে যে-সকল স্বাস্থ্যকর জীবাণু দেখা যায় সেগুলি এই জাতিরই অন্তর্গত।

 যাহা হউক এই আবিষ্কারের পর হইতে দধি ভক্ষণ ব্যাপারটা সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে। ইউরোপের বড় বড় সহরে দধির কারখানা খোলা হইয়াছে; শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত সকলেই ইহার হিতকারিতার কথা শুনিয়া আজকাল দধিকে একটি উৎকৃষ্ট খাদ্যের মধ্যে ধরিতেছেন। দধি যে মানুষকে দীর্ঘায়ু এবং বলিষ্ঠ করে, একথা সকলে আজও নিঃসন্দেহে স্বীকার না করিলেও, ইহা যে পাকযন্ত্রসম্বন্ধীয় অনেক পীড়ার একটি মহৌষধ তাহা প্রত্যক্ষ দেখা যাইতেছে। বয়স অধিক হইলে অনেক সময় অকারণে মানুষ অসুস্থ হইয়া পড়ে। এই ব্যাধির প্রতিকারে দধির অত্যাশ্চর্য্য শক্তি দেখা গিয়াছে। তা ছাড়া রক্তহীনতা, পেটফাঁপা, অবসন্নভাব, মাথাধরা ইত্যাদি ছোট বড় নানা প্রকার পীড়ায় ইহা খুবই উপকার করে। অনুসন্ধান করিলে দেখা যায়, পূর্ব্বোক্ত প্রায় সকল-ব্যাধিই পাকনালীর সেই অনিষ্টকর জীবাণুর দ্বারা উৎপন্ন। সুতরাং দধির স্বাস্থ্যকর জীবাণুই যে, দেহশত্রুগণকে ধ্বংস করিয়া মানুষকে নিরুপদ্রব করে তাহাতে বোধ হয় আর সন্দেহ করিবার কিছুই নাই। দধির অপর কোন গুণ থাকুক্ বা না থাকুক্ ইহার যে এক অদ্ভুত পাচকশক্তি আছে কেবল তাহার জন্যই জিনিষটা সর্ব্বজাতির প্রধান খাদ্য বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে।

 স্বাস্থ্যবর্দ্ধক বলিয়াই হাটে বাজারে দধি নামক যে এক অতি তরল পদার্থ বহু ব্যয়ে ক্রয় করা যায়, তাহা ব্যবহার করিবার জন্য পাঠককে কেহই পরামর্শ দিবে না। খাঁটি দধি-জীবাণু দ্বারা প্রস্তুত দধিই স্বাস্থ্যপ্রদ। স্বাদে গন্ধে বর্ণে যে দধি নিকষ্ট তাহা স্বাস্থ্যহানিকর জীবাণুরই আবাসভূমি একথা স্মরণ রাখিতে হইবে। কাজেই ইহার ব্যবহারে স্বাস্থ্যের হানি হইবারই কথা। বাড়ীতে যাঁহারা ভাল দধি পাতিতে পারেন এপ্রকার গৃহিণী আমাদের পাড়াগাঁয়ে ঘরে ঘরে দেখিতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে দধিব্যবসায়িগণ নিরক্ষর বটে কিন্তু ইহাদেরই মধ্যে অনেকে দীর্ঘকালের পুরুষপরম্পরাগত অভিজ্ঞতার ফলে অনিষ্টকর জীবাণু তাড়াইয়া তাহাদের “সাঁজা” গুলিকে এমন সুন্দর করিয়া প্রস্তুত করে যে, ইহাদের হাতের দধি কখনই খারাপ হইতে দেখা যায় না। খাঁটি দধি-জীবাণু দিয়া বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দই পাতা আমাদের দেশেও আরম্ভ হইয়াছে।