বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/বৈশাখের প্রবেশ


বৈশাখের প্রবেশ

গান

নমো নমো, হে বৈরাগী।
তপোবহ্নির শিখা জ্বালো জ্বালো,
নির্বাণহীন নির্মল আলো
অন্তরে থাক্‌ জাগি।
নমো, নমো, হে বৈরাগী।

সম্বােধন


ধূসরবসন, হে বৈশাখ,
রক্তলোচন, হে নির্বাক্,
শুষ্ক পথের দানব দস্যু,
শুষে নিতে চাও হাসি ও অশ্রু,
ইঙ্গিতে দাও দারুণ ডাক।

স্তম্ভিত হল সে ডাকে পৃথ্বী,
ভাণ্ডারে তার কাঁপিল ভিত্তি,
শঙ্কায় তার শুকায় তালু,
অট্ট হাসিল মরুর বালু।

হুংকার সেই তপ্ত হাওয়ায়
প্রান্তর হতে প্রান্তরে ধায়,
দিগ্বধূদের নীরবে কাঁদায়,
শূন্যে শূন্যে উড়ায় ধুলি
বিজয়পতাকা আকাশে তুলি।

দুহিয়া লয়েছ গগনধেনুরে,
ঝরায়ে দিয়েছ শিরীষরেণুরে,
উদাস করেছ রাখালবেণুরে
তৃষ্ণাকরুণ সারঙ তানে।


শীর্ণ নদীর গেল সঞ্চয়,
ঝিরিঝিরি জল ধীরিধীরি বয়,
আকুলিয়া উঠে কাননের ভয়
ভীরু কপোতের কাকলিগানে।


ধূসরবসন, হে বৈশাখ,
রক্তলোচন হে নির্বাক্,
শুষ্ক পথের দানব দস্যু,
শুষে নিতে চাও হাসি ও অশ্রু,
ইঙ্গিতে দাও দারুণ ডাক।

হৃদয় আমার, ঐ বুঝি তোর
বৈশাখী ঝড় আসে,
বেড়া ভাঙার মাতন নামে
উদ্দাম উল্লাসে।
মোহন এল ভীষণ বেশে
আকাশ-ঢাকা জটিল কেশে,
এল তোমার সাধনধন
চরম সর্বনাশে।


বাতাসে তোর সুর ছিল না,
ছিল তাপে ভরা।
পিপাসাতে বুক-ফাটা তোর
শুষ্ক কঠিন ধরা।
জাগ্‌রে হতাশ, আয় রে ছুটে
অবসাদের বাঁধন টুটে,
এল তোমার পথের সাথি
বিপুল অট্টহাসে।