বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/শরৎ
শরৎ
ধ্বনিল গগনে আকাশবাণীর বীন,
শিশির-বাতাসে দূরে দূরে ডাক দিল কে।
আয় সুলগনে, আজ পথিকের দিন,
এঁকে নে ললাট জয়যাত্রার তিলকে।
গেল খুলি গেল মেঘের ছায়ার দ্বার,
দিকে দিকে ঘোচে কালো আবরণভার,
তরুণ আলোক মুকুট পরেছে তার—
বিজয়শঙ্খ বেজে ওঠে তাই ত্রিলোকে।
শরৎ এনেছে অপরূপ রূপকথা
নিত্যকালের বালকবীরের মানসে
নবীন রক্তে জাগায় চঞ্চলতা-
বলে, ‘চলো চলো, অশ্ব তোমার আনো-সে।
ধেয়ে যেতে হবে দুস্তর প্রান্তরে
বন্দিনী কোন্ রাজকন্যার তরে,
মায়াজাল ভেদি চলো সে রুদ্ধ ঘরে—
লও কামুর্ক, দানবের বুকে হানো-সে।’
ওরে, শারদার জয়মন্ত্রের গুণে
বীরগৌরবে পার হতে হবে সাগরে।
ইন্দ্রের শর ভরি নিতে হবে তূণে-
রাক্ষসপুরী জিনে নিতে হবে, জাগো রে।
‘দেবী শারদার যে প্রসাদ শিরে লয়ি
দেবসেনাপতি কুমার দৈত্যজয়ী,
সে প্রসাদখানি দাও গো অমৃতময়ী’
এই মহাবর চরণে তাঁহার মাগো রে।
আজি আশ্বিনে স্বচ্ছ বিমল প্রাতে
শুভ্রের পায়ে অম্লানমনে নমো রে।
স্বর্গের রাখী বাঁধো দক্ষিণ হাতে
আঁধারের সাথে আলোকের মহাসমরে।
মেঘবিমুক্ত শরতের নীলাকাশ
ভুবনে ভুবনে ঘোষিল এ আশ্বাস-
‘হবে বিলুপ্ত মলিনের নাগপাশ,
জয়ী হবে রবি, মরিবে মরিবে তম রে।’