বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/হেমন্ত


হেমন্ত

হে হেমন্তলক্ষ্মী, তব চক্ষু কেন রুক্ষ চুলে ঢাকা,
ললাটের চন্দ্রলেখা অযত্নে এমন কেন ম্লান।
হাতে তব সন্ধ্যাদীপ কেন গো আড়াল করে আন
কুয়াশায়। কণ্ঠে বাণী কেন হেন অশ্রুবাষ্পে-মাখা
গোধুলিতে আলোতে আঁধারে। দূর হিমশৃঙ্গ ছাড়ি
ওই হেরো রাজহংসশ্রেণী আকাশে দিয়েছে পাড়ি
উজায়ে উত্তরবায়ুস্রোত, শীতে ক্লিষ্ট ক্লান্ত পাখা,
মাগিছে আতিথ্য তব জাহ্নবীর জনশূন্য তটে
প্রচ্ছন্ন কাশের বনে। প্রান্তরসীমায় ছায়াবটে
মৌনব্রত বউকথাকও। গ্রামপথ আঁকাবাঁকা
বেণুতলে পান্থহীন অবলীন অকারণ ত্রাসে,
কচিৎ চকিতধূলি অকস্মাৎ পবন-উচ্ছ্বাসে।

কেন বলো, হৈমন্তিকা, নিজেরে কুণ্ঠিত করে রাখা,
মুখের গুণ্ঠন কেন হিমের ধুমলবর্ণে আঁকা।



ভরেছ, হেমন্তলক্ষ্মী, ধরার অঞ্জলি পক্ক ধানে।
দিগঙ্গনে দিগঙ্গনা এসেছিল ভিক্ষার সন্ধানে
শীতরিক্ত অরণ্যের শূন্যপথে। বলেছিল ডাকি,
‘কোথায় গো, অন্নপূর্ণা, ক্ষুধার্তেরে অন্ন দিবে না কি।
শান্ত করো প্রাণের ক্রন্দন, চাও প্রসন্ন নয়ানে
ধরার ভাণ্ডার-পানে।’ শুনিয়া, লুকায়ে হাস্যখানি,

লুকায়ে দক্ষিণহস্ত দক্ষিণা দিয়েছ তুমি আনি—
ভূমিগর্ভে আপনার দাক্ষিণ্য ঢাকিলে সাবধানে।

স্বর্গলোক ম্লান করি প্রকাশিলে ধরার বৈভব
কোন্ মায়ামন্ত্রগুণে, দরিদ্রের বাড়ালে গৌরব।

অমরার স্বর্ণ নামে ধরণীর সোনার অঘ্রানে।
তোমার অমৃতনৃত্য, তোমার অমৃতস্নিগ্ধ হাসি
কখন ধূলির ঘরে সঞ্চিত করিলে রাশি রাশি,
আপনার দৈন্যচ্ছলে পূর্ণ হলে আপনার দানে।