বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/৮৪
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভাসানীকে দেশে প্রবেশ করতে দেবীর দাবী | ঢাকা রাজনৈতিক কর্মবৃন্দ | এপ্রিল, ১৯৫৫ |
দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঢাকায় আগমন করিতেছেন। রোগমুক্তি এবং কেন্দ্রীয় সরকার যোগদানের পর শহীদ সাহেবের এই আগমনী সংবাদ নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক হইতে যদি না এই তথাকথিত কনভেনশনে পূর্ববঙ্গ হইতে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পুলিশ মন্ত্রী মিঃ এস্কান্দার মির্জাসহ ঢাকায় আগমন করিতেন। তিনি যে তথাকথিত কনভেনশনের সদস্য মনোনয়নের জন্য পূর্ববঙ্গে আগমন করিতেছেন তাহাকে ইতিমধ্যেই বেআইনী ও গণতন্ত্র বিরোধী বলিয়া বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল হইতে অভিমত প্রকাশ করা হইয়াছে। বিশেষভাবে এই কনভেনশনে গণতন্ত্র বিরোধী সংখ্যাসাম্যের ব্যবস্থা করিয়া পূর্ববঙ্গের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে পদদলিত করা হইয়াছে। এবং ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আইনে জনসংখ্যার অনুপাতে গণপরিষদের আসন বণ্টনের যে মূলনীতি ঘোষণা করা হইয়াছিল, সংখ্যাসাম্যের ব্যবস্থা করিয়া সেই নীতিকেই হত্যা করা হইয়াছে। আর আট কোটি অধিবাসী অধ্যুষিত একটি দেশের শাসনতন্ত্র রচনার মত একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্বাচিত গণপরিষদ ছাড়া অন্য কোন কনভেনশন, কনফারেন্স দ্বারা সম্পন্ন হইতে পারে না।
তাহা ছাড়া পূবর্ববঙ্গের সাড়ে চার কোটি নির্যাতিত মানুষ আকুল আগ্রহে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষা করিতেছি। জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় হামিদ খান ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষা করিতেছে। জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদানের পূর্বে এবং পরে বারবার ঘোষণা করিয়াছেন যে, মওলানা সাহেবকে সঙ্গে লইয়া তিনি পূর্ববঙ্গে আগমন করিবেন কিন্তু কার্যত আমরা দেখিতে পাইতেছি যে, যে ব্যক্তি মাওলানা সাহেবকে কমুনিষ্ট, দেশদ্রোহী এবং দেশের সমগ্র মানুষের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে নানারূপ জঘন্য উক্তি করিয়াছেন, সেই ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়াই শহীদ সাহেব পূর্ববঙ্গে আগমন করিতেছেন। আমরা তাঁহারা এই যুগল আগমনের তীব্র প্রতিবাদ করিতেছি।
দীর্ঘ পাঁচ মাস জনাব শহীদ সাহেব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদান করিয়াছেন। মওলানা ভাসানীর যেখানে আজ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তনের কোন ব্যবস্থা তিনি করিতে পারেন নাই সেখানে তাহার (শহীদ সাহেবের) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদান করাই উচিত হয় নাই বলিয়া জনসাধারণ মনে করে। গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর ন্যায্য অধিকারকে তিনি কার্যকরী করিবেন ইহাই দেশবাসী তাঁহার নিকট চায়। কোনরূপ আপোস আলোচনা অথবা শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নের জন্য আহুত সম্মেলনে মওলানা ভাসানীর অনুপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার কাহারও নাই।
এই অবস্থায় আমরা মাননীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদিগকে সুস্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতেছি যে মওলানা ভাসানীকে জাতির মাহসঙ্কটক্ষণে দূরে সরাইয়া রাখিয়া যদি কোনরূপ অবৈধ কার্যকলাপ দেশবাসীর উপর চাপাইয়া দেওয়া হয় তবে দেশবাসী তাহা কখনও বরদাস্ত করিবে না। দেশবাসী গণতন্ত্র ও আইনের শাসন চায়। ডিক্টেটরী ও জবরদস্তির নিকট আট কোটি অধিবাসী কখনও পরাজয় স্বীকার করিবে না, করিতে পারে না। ইহাই ইতিহাসের শিক্ষা।
ঢাকার রাজনৈতিক কর্মীবৃন্দ
পাকিস্তান জিন্দাবাদ।
গণতন্ত্র জিন্দাবাদ।
২১ দফা কায়েম কর।
রাজবন্দীদের মুক্তি চাই।
ভাসানীর প্রত্যাবর্তন চাই।
*১৯৫৪ সালের মে মাসে মওলানা ভাষানী স্টকহোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান ত্যাগ করেন। ৯২-ক ধারা প্রবর্তনের পর ভাসানীর পক্ষে দেশে ফেরা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, কারণ ইস্কান্দার মীর্জারে দুমকি দেন যে মওলানা ভাসানী দেশে ফিরলে তাঁকে গুলি করা হবে।