বাজী রাও/দ্বিতীয় অধ্যায়
দ্বিতীয় অধ্যায়।
বাল্যশিক্ষা—নানা অভিযানে পিতার সাহচর্য্য—
দিল্লীগমন— পিতৃবিয়োগ।
রাজধানী সাতারায় বাজী রাওয়ের শিক্ষারম্ভ হয়। কারকুনের পুত্র তৎকাল প্রচলিত লেখা পড়ায় বিশেষ দক্ষতা লাভ করিয়াছিলেন, তাহা বলাই বাহুল্য। তবে বর্ত্তমান কালের ন্যায় সেকালে লেখা পড়াবাল্য-শিক্ষা। শিক্ষাই বাল্যজীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। বালকগণের মানসিক শক্তির বিকাশের দিকে আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা যেরূপ দৃষ্টি রাখিতেন, তাহাদের শারীরিক শক্তিসমূহের পরিস্ফূর্ত্তির দিকেও তাঁহাদিগের সেইরূপ যত্ন থাকিত। বরং পুস্তকগত বিদ্যা কণ্ঠস্থ করিয়া পণ্ডিত উপাধিলাভ অপেক্ষা পুরুষোচিত গুণগ্রাম লাভ করিবার দিকে তাঁহারা সমধিক মনোযোগ করিতেন। বিশেষতঃ বাজী রাও যে সময়ে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, সে সময়ে এদেশে বীরত্বের বড় গৌরব ছিল। এই কারণে বালাজী বিশ্বনাথ স্বীয় পুত্রকে পুস্তক-লেখনী-গতা বিদ্যার সহিত অশ্বারোহণ ও অসি-ভল্ল সঞ্চালনাদির কৌশলেও অভিজ্ঞ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। সাতারার রাজকর্ম্মে প্রবেশ করিয়া বালাজী বিশ্বনাথকে প্রায় সমস্ত জীবনই যুদ্ধাভিযানে অতিবাহিত করিতে হয়। পুত্রকে সর্ব্বপ্রকার পৌরুষ গুণে অলঙ্কৃত করিবার জন্য তিনি সকল অভিযানেই বাজী রাওকে আপনার সঙ্গে রাখিতেন। সুতরাং অল্প বয়সেই বাজী রাও শৌর্য্য সাহসের আধার হইয়া উঠিয়াছিলেন। পিতার সহিত সর্ব্বদা রাজসভায় গমন ও নানা দেশ ভ্রমণ করিবার সুযোগ পাওয়ায় রাষ্ট্রসম্পর্কীয় সকল কার্য্যই তিনি অনায়াসে শিক্ষা করিতে সমর্থ হন। বালাজী বিশ্বনাথের অনুষ্ঠিত কার্য্যকলাপের সহিত এই শিক্ষার ও বাজী রাওয়ের ভবিষ্যজীবনের সম্বন্ধ অতি ঘনিষ্ঠ। এই কারণে আমাদিগকে তদ্বর্ণনায় প্রবৃত্ত হইতে হইল।
যে সময়ে বালাজী বিশ্বনাথ ধনাজী যাদবের অধীনতায় কর্ম্মলাভ করেন, সেই সময়ে মহারাষ্ট্ৰীয়দিগের পুনঃ পুনঃ আক্রমণেপদোন্নতি। নিতান্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া মোগলেরা সাম্ভাজীর পুত্র শাহুকে মুক্তিদান করিলেন। কেবল তাহাই নহে, মহারাষ্ট্রীয়দিগকে শান্ত করিবার জন্য তাঁহারা তাঁহাকে দক্ষিণাপথের সরদেশমুখী (সমগ্র রাজস্বের দশমাংশ) স্বত্বের সনন্দও প্রদান করেন। শাহু স্বদেশে প্রত্যাবৃত্ত হওয়ায় রাজ্যাংশ লইয়া তারা বাঈর সহিত তাঁহার যুদ্ধ হয়। শাহুকে রাজ্যের প্রকৃত উত্তরাধিকারী জানিয়া প্রধান সেনাপতি ধনাজী যাদব তাঁহার শত্রুতাচরণে বিরত হন। সুতরাং তারা বাঈর সহজেই পরাজয় ঘটিল। (১৭০৭ খৃঃ) এত দিন মহারাষ্ট্র রাজ্যে যে বিপ্লব চলিতেছিল, শাহু সিংহাসনে আরোহণ করিলে, তাহার কিয়ৎপরিমাণে লাঘব হইল। সুতরাং বালাজী বিশ্বনাথ রাজস্ববিভাগের কার্য্যে স্বীয় প্রতিভার পরিচয় দিবার অবকাশ পাইলেন। তাঁহার কার্য্যকুশলতা গুণে অল্প দিনের মধ্যেই রাজস্ব-সংক্রান্ত কার্য্যের বিশেষ সুব্যবস্থা সম্পাদিত হইল। তিনি কৃষিকার্য্যে উৎসাহদানপূর্ব্বক কৃষকদিগের উন্নতির পথ উন্মুক্ত ও রাজ্যের আয়-বৃদ্ধি করিলেন। তাঁহার এইরূপ কার্য্য-দক্ষতার পরিচয় পাইয়া সেনাপতি যাদবরাও তাঁহার একান্ত পক্ষপাতী হইলেন। মহারাজ শাহুর নিকটেও বালাজী বিশ্বনাথের কার্যতৎপরতার কথা অবিদিত রহিল না। ১৭১০ খৃঃ জুনমাসে ধনাজী যাদবের মৃত্যু হইলে মহারাজ শাহু রাজস্ববিভাগের সমস্ত ভার বালাজী বিশ্বনাথের উপর অর্পণ করিলেন। যাদবরাওয়ের পুত্র চন্দ্রসেনের হস্তে কেবল সামরিক বিভাগের ভার রহিল। পরন্তু বালাজীর উপর সেনাপতি চন্দ্রসেনের আর কর্ত্তৃত্বও রহিল না। এই ঘটনায় বালাজীর প্রতি চন্দ্রসেনের বিদ্বেষের সঞ্চার হয়। তদবধি তিনি এই অবমাননার প্রতিশোধ লইবার অবসর অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন।
১৭১১ খৃঃ একদিন মৃগয়া প্রসঙ্গে বালাজীর অধীন কোনও অশ্বারোহীর হস্তে দৈবক্রমে চন্দ্রসেনের জনৈকসেনাপতির বৈরিতা। ভৃত্য আহত হয়। এতদুপলক্ষে বালাজী বিশ্বনাথকে বিপন্ন করিবার উপযুক্ত অবসর পাইয়া সেনাপতি স্বীয় সৈন্যদলসহ সহসা তাঁহাকে আক্রমণ করেন। বালাজীর সঙ্গে জ্যেষ্ঠপুত্র বাজীরাও, কনিষ্ঠ পুত্র চিমণাজী আপ্পা, বন্ধু অম্বাজী পন্ত পুরন্দরে এবং অতি স্বল্পসংখ্যক অশ্বারোহী সৈন্য ছিল। তাঁহাদিগের সহিত পলায়নপুর্ব্বক তিনি প্রথমে সাসবড় গ্রামে ও পরে তথা হইতে পুরন্দর-দুর্গে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু তত্রত্য প্রধান কর্মচারী ইচ্ছা সত্ত্বেও সেনাপতির ভয়ে বালাজীকে আশ্রয়দান করিতে পারিলেন না। সুতরাং সেনাপতির সৈন্যদল কর্ত্তৃক পশ্চাদ্ধাবিত হইয়া বালাজী বিশ্বনাথ “পাণ্ডবগড়” নামক একটি নিকটবর্ত্তী গিরিদুর্গের অভিমুখে আশ্রয়ার্থ অগ্রসর হইলেন। তাঁহাদিগের বহু চেষ্টায় পথিমধ্যে পাঁচ ছয় শত সমরকুশল ব্যক্তি সংগৃহীত হয়। তাহাদিগের সাহায্যে বালাজী সাহসপূর্ব্বক নীরা নদীর তীরে চন্দ্রসেনের সম্মুখীন হইলেন। কিন্তু সৈন্যসংখ্যার অল্পতাপ্রযুক্ত তাঁহাকে পরাজয় স্বীকারপূর্ব্বক পুনর্ব্বার পলায়ন করিতে হইল। চন্দ্রসেনও তাঁহার অনুসরণে ক্ষান্ত হইলেন না।
বহুকষ্টে বালাজী পাণ্ডবগড়ে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেনাপতির সৈন্যদল কর্ত্তৃক ঐ দুর্গ অবরুদ্ধ হইল। এদিকে মহারাজ শাহু স্বীয় কার্য্যদক্ষবিপদুদ্ধার। বিশ্বস্ত কর্মচারীর এই বিপদ্বার্ত্তা অবগত হইয়া তাঁহাকে অভয়পত্র প্রেরণপূর্ব্বক সেনাপতিকে সাতারায় আহ্বান করিলেন। বালাজীর প্রতি মহারাজের বিশেষ প্রীতিদর্শনে চন্দ্রসেন অতীব অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। এক্ষণে তিনি আর সে বিরাগ গোপন করিতে না পারিয়া মহারাজ শাহুকে বলিয়া পাঠাইলেন যে, “বালাজীকে আমার হস্তে অর্পণ না করিলে আমি শত্রুপক্ষের সহিত মিলিত হইব।” সেনাপতির এইরূপ ঔদ্ধত্যদর্শনে ক্রুদ্ধ হইয়া শাহু তাঁহার দমনের জন্য সরলস্কর হয়বৎ রাও নিম্বালকরকে প্রেরণ করিলেন। নিম্বালকরের সহিত যুদ্ধে চন্দ্রসেনের পরাজয় ঘটে। পরাস্ত সেনাপতি প্রথমে তারা বাঈর ও পরে মোগল সুভেদার নিজাম উল্মুল্কের আশ্রয় গ্রহণ করেন। বালাজী বিশ্বনাথ সেই ভয়ঙ্কর বিপদ হইতে রক্ষা পাইয়া পুত্রদ্বয়সহ সাতারায় প্রত্যাবৃত্ত হইলেন।
এদিকে প্রধান সেনাপতি শত্রুপক্ষ অবলম্বন করায় শাহুর সৈন্যসংখ্যা কমিয়া গেল। সুযোগ বুঝিয়া তারাবাঈ চন্দ্রসেনের সাহায্যে নানা উপায়েসেনাকর্ত্তা। শাহুর অপর সর্দ্দারগণকে স্বপক্ষভুক্ত করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। এই সময়ে বালাজী বিশ্বনাথ স্বীয় অপূর্ব্ব প্রতিভার বিকাশ না করিলে শাহুকে বিপন্ন হইতে হইত। বালাজীর বুদ্ধি-কৌশলে শাহুর সর্দ্দারগণ তারাবাঈর দলে মিলিত হইতে পারিলেন না। পক্ষান্তরে তিনি বহু সংখ্যক নুতন সৈন্যসংগ্রহ করিয়া শাহুর সৈন্যাভাব দূর করিলেন। এই কারণে মহারাজ শাহু তাঁহাকে ১৭১১ খৃষ্টাব্দের ২০এ আগষ্ট “সেনাকর্ত্তা” এই গৌরবসূচক উপাধি প্রদান করিলেন[১]।
বালাজী ইতঃপূর্ব্বে দেশের কৃষকগণের অবস্থার উন্নতি সাধনের উপায় অবলম্বন ও রাজস্ব বিভাগে সুব্যবস্থা প্রবর্ত্তন করিয়াছিলেন। এক্ষণে দেশের মঙ্গলের জন্য রাজ্যের অপরাপর বিশৃঙ্খলার নিবারণে তিনি মনোযোগী হইলেন। এই সময়ে মহারাষ্ট্র-রাজ্যের বিশৃঙ্খলতা অতিশয় বৃদ্ধি পাইয়াছিল। শাহুর সহিত যুদ্ধেঅরাজকতা। পরাভূত হইয়া তারাবাঈ স্বীয় পুত্ত্রকে ছত্রপতি বলিয়া ঘোষণাপূর্ব্বক কোলাপুরে এক নূতন রাজধানীর স্থাপন করেন। কাজেই মহারাষ্ট্রীয় সর্দ্দারগণের মধ্যে কেহ শাহুর পক্ষ, কেহ বা কোহ্লাপুরাধিপতি সাম্ভাজীর পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন। কেহ বা মোগলগণের দলেও মিলিত হইয়াছিলেন। আবার কেহ কেহ কোনও পক্ষাবলম্বী না হইয়া স্ব-প্রধান ও স্বতন্ত্র হইয়া উঠিয়াছিলেন। এই শেষোক্ত শ্রেণীর সর্দ্দারগণের মধ্যে দামাজী (দামোদরজী) থোরাত ও উদয়জী চৌহানই প্রধান ছিলেন। উদয়জীর উপদ্রবে ব্যতিব্যস্ত হইয়া শাহু তাঁহাকে স্বীয় রাজ্যের একাংশের চৌথ আদায়ের স্বত্ব প্রদান করিতে বাধ্য হন। কাহ্নোজী আংগ্রে কোহ্লাপুরপতি সাম্ভাজীর পক্ষাবলম্বন করিয়া শাহুর অধিকৃত কল্যাণ প্রদেশ জয় করিবার উদ্যোগ করিতেছিলেন। অপর দিকে কৃষ্ণরাও খটাও-কর নামক রাজা উপাধিধারী এক ব্রাহ্মণ বিদ্রোহী হইয়া রাজ্যমধ্যে উপদ্রব আরম্ভ করিয়াছিলেন। এতদ্ভিন্ন আরও অনেক ক্ষুদ্র বৃহৎ মরাঠা-সামন্ত শাহুর অধীনতা স্বীকার করিতেন না।
এই সকল অরাজকতার দমন ভিন্ন স্বদেশবাসী প্রজাপুঞ্জের সুখ স্বচ্ছন্দতা বিধান সম্ভবপর ছিল না। কাজেই মহারাজ শাহুর অনুমতি লইয়াকৃষ্ণরাওয়ের দমন। বালাজী বিশ্বনাথ প্রথমে কৃষ্ণরাও খটাওকরের দমন করিতে যাত্রা করিলেন। সেই সময়ে সচিব নারায়ণশঙ্কর দামাজী থোরাতের বিরুদ্ধে এবং পেশওয়ে ভৈরব পন্ত পিঙ্গলে কাহ্নোজী আংগ্রের বিরুদ্ধে প্রেরিত হন। ইঁহাদিগের মধ্যে বালাজী বিশ্বনাথই এ যাত্রায় সফলতা লাভ করিয়াছিলেন। আউন্ধ নামক স্থানের নিকটে তিনি বিদ্রোহী খটাওকরকে সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধে পরাভূত করেন। থোরাতের সহিত যুদ্ধে নারায়ণশঙ্কর ও আংগ্রের সহিত যুদ্ধে ভৈরবপন্ত পরাজিত হইয়া বন্দী হন। আংগ্রে কেবল ভৈরবপন্তকে বন্দী করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই; তিনি লৌহগড় ও রাজমাচী প্রভৃতি স্থান অধিকার করিয়া শাহুর রাজধানী সাতারা নগরী আক্রমণেরও উদ্যোগ করিতে লাগিলেন।
তখন বালাজী-বিশ্বনাথকে আংগ্রের দমনের ভার গ্রহণ করিতে হইল। তিনি বিংশতি সহস্রআংগ্রের সহিত সন্ধি। সৈন্যসহ আংগ্রের বিরুদ্ধে যাত্রা করিয়া লৌহগড় প্রভৃতিদুর্গ অধিকার ও শত্রু সৈন্যের পরাজয়সাধন করিলেন। অতঃপর তিনি কাহ্নোজীকে, সন্ধি করিয়া মহারাষ্ট্র-রাজ্যের প্রকৃত উত্তরাধিকারী শাহুর শরণাপন্ন হইবার জন্য বিবিধযুক্তিপূর্ণ একখানি পত্র লিখিলেন। বালাজীর এই সামনীতি সুফলপ্রদ হইল। আংগ্রে কোহ্লাপুরের সাম্ভাজীকে পরিত্যাগপূর্ব্বক শাহুর পক্ষাবলম্বন করিলেন। তখন বালাজীর মধ্যস্থতায় যে সন্ধি স্থাপিত হইল, তাহার ফলে পেশওয়ে ভৈরবপন্ত কারামুক্ত হইলেন, আংগ্রে শাহুর যে সমস্ত দুর্গ বলপূর্ব্বক অধিকার করিয়াছিলেন, “রাজমাচী” ব্যতীত তৎসমস্তই তিনি প্রত্যর্পণ করিলেন। এই সন্ধির বিনিময়ে আংগ্রেও শাহুর নিকট দশটী সুদৃঢ় দুর্গ, ১৬টী সামান্য দুর্গ এবং শাহুর পক্ষে মহারাষ্ট্র-রণতরি-সমূহের অধ্যক্ষতা প্রাপ্ত হইলেন। এতদ্ব্যতীত কাহ্নোজীকে “সর্খেল” উপাধিও প্রদত্ত হইল।
এইরূপে পেশওয়ে ভৈরব পন্তের উদ্ধারসাধন ও আংগ্রের সহিত সন্ধিস্থাপন প্রভৃতি কার্য্য সম্পন্নপেশওয়ে পদলাভ। করিয়া বালাজী পন্ত ১৭১৩ খৃষ্টাব্দের শেষভাগে মহারাষ্ট্র-রাজধানী সাতারায় প্রত্যাবৃত্ত হইলেন। মহারাজ শাহু তাঁহার এই সকল কার্য্যপরম্পরায় সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে বিশেষরূপে সম্মানিত ও পুরস্কৃত করিলেন। ভৈরবপন্ত পিঙ্গলে আংগ্রের হস্তে বন্দী হইয়াছিলেন বলিয়া ও তাঁহার কার্য্যদক্ষতার অভাবদর্শনে মহারাজ শাহু তাঁহাকে পদচ্যুত করেন। বালাজী বিশ্বনাথ তাঁহার কার্য্যকুশলতার পুরস্কারস্বরূপ ১৭১৩ খৃঃ ১৬ই নবেম্বর তৎপদে অভিষিক্ত হইলেন। “শ্রীমন্ত” উপাধি এই সময়েই পেশওয়েগণের নামের সহিত প্রথম সংযুক্ত হইল। তদনুসারে বালাজী সরকারী কাগজপত্রে “শ্রীমন্ত বালাজী বিশ্বনাথ পন্ত (পণ্ডিত) প্রধান” এই নামে উল্লিখিত হইতে লাগিলেন। তাঁহার রাজমুদ্রা এইরূপ ছিল,—
“শাহু নরপতি হর্ষ-নিধান।
বালাজী বিশ্বনাথ মুখ্য প্রধান!”[২]
বালাজী বিশ্বনাথকে পেশওয়ে-পদ প্রদানকালে তদীয় বন্ধু অম্বাজীপন্ত পুরন্দরেকে তাঁহার মুতালিক বা উপমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। বালাজীর অনুরোধে মহারাজ শাহু হরি মহাদেব ভানুকে পেশওয়ের অধীন ফড়নবীশের (Audit) কার্য্যে নিযুক্ত করেন। এইরূপে যে বালাজী বিশ্বনাথ দশ বৎসর পূর্ব্বে সিদ্দিদিগের ভয়ে স্বদেশত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন ও সাতারায় আসিয়া বার্ষিক ১ শত মুদ্রা বেতনে সামান্য কেরাণীর পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন, তিনি স্বীয় অসাধারণ প্রতিভাবলে রাজ্যের প্রধান মন্ত্রীর পদলাভ করিয়া স্বীয় বন্ধুদিগকেও উচ্চপদে প্রতিষ্ঠাপিত করিলেন।
শাহুর সহিত সন্ধির বলে আংগ্রে যে সকল দুর্গ পাইয়াছিলেন, শ্রীবর্দ্ধন প্রভৃতি কতিপয় স্থান তাহার অন্তর্গত ছিল। সিদ্দিগণের নিকট হইতেসিদ্দির পরাজয়। তাহাদের উদ্ধার সাধনের জন্য কাহ্নোজী পেশওয়ে বালাজী বিশ্বনাথের সহায়তা প্রার্থনা করিলেন। বালাজীর সহায়তায় কাহ্নোজীর হস্তে ১৭১৫ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে সিদ্দিগণের পরাজয় ঘটে।
এক্ষণে দামাজী থোরাতের দমন আবশ্যক হইয়া উঠিল। কারণ, তিনি কোহ্লাপুরের সাম্ভাজীরথোরাতের হস্তে বন্দী। পক্ষ অবলম্বন করিয়া শাহুর রাজ্যে লুণ্ঠনাদি করিতেন। তিনি পুণার ৪০ মাইল পূর্ব্বদিকে অবস্থিত “হিঙ্গন” গ্রামের সুদৃঢ় ক্ষুদ্র দুর্গের অধিপতি ছিলেন। হিঙ্গনদুর্গের চতুষ্পার্শ্ববর্ত্তী প্রায় ২০ ক্রোশব্যাপী প্রদেশ থোরাতের শাসনে ছিল। বালাজীর সমরায়োজন দেখিয়া দামাজী কপটতাপূর্ব্বক সন্ধিপ্রার্থী হইলেন এবং বিল্বপত্র ও হরিদ্রাস্পর্শপূর্ব্বক বশ্যতা— স্বীকারের শপথ করিয়া তাঁহাকে দুর্গ সমর্পণ করিলেন। কিন্তু বালাজী সদলে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র দুষ্ট তাঁহাদিগকে বন্দী করিল (১৭১৬ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর)। অন্যান্য অভিযানের ন্যায় এই অভিযানেও কিশোরবয়স্ক বাজী রাও ও তৎকনিষ্ঠ চিমণাজী আপ্পা তাঁহার সঙ্গে ছিলেন। বিশ্বাসঘাতক থোরাত তাঁহাদিগের নিষ্ক্রয়স্বরূপ বহু অর্থ প্রার্থনা করিতে লাগিল। তাঁহারা ক্ষুধায় কাতর হইলে পাপিষ্ঠ তাঁহাদিগের প্রত্যেকের সম্মুখে একটি করিয়া উত্তপ্ত ভস্মপূর্ণ কবলপাত্র (তোবরা) রাখিয়া দিল। মহারাষ্ট্রপতি শাহু বালাজী বিশ্বনাথের মুক্তির জন্য থোরাতের প্রার্থিত অর্থ দান করিতে বাধ্য হইলেন।
সাতারায় প্রত্যাবৃত্ত হইয়া বালাজী সেনাপতি মানসিংহ মোরে ও সর-লস্কর হয়বৎ রাও নিম্বালকরের সহযোগে দামাজীর বিরুদ্ধে পুনর্ব্বারথোরাতের দমন। অভিযান করিলেন। সচিব নারায়ণ-শঙ্কর থোরাতের হস্তে বন্দী হইয়াছিলেন। অতএব দামাজীর বিরুদ্ধে সহসা যুদ্ধযাত্রা করিলে পাছে সেই দুর্বৃত্ত সচিবকে নিহত করে, এই ভয়ে বালাজী বিশ্বনাথ প্রথমে তাহার শত্রুতাচরণে প্রবৃত্ত না হইয়া নিষ্ক্রয়প্রদানপূর্ব্বক সচিবকে মুক্ত করিলেন। সচিব অক্ষত শরীরে প্রত্যাবৃত্ত হইলে থোরাতের গড় আক্রান্ত হইল। বালাজীর তোপে গড় ভূমিসাৎ ও দামাজী বন্দী হইয়া ১৭১৭ খৃষ্টাব্দের জুন মাসে সাতারায় নীত হইল। এইরূপ কার্য্য-দক্ষতাগুণে মহারাজ শাহুর দরবারে বালাজী বিশ্বনাথই সর্ব্বপ্রধান হইয়া উঠিলেন। তাঁহার অনুমোদন ব্যতীত রাজ্যের প্রায় কোনও কার্য্যই সংসাধিত হইত না।
এই সময়ে উত্তর-ভারতে দিল্লীর দরবারে এক ভয়ানক গোলযোগ উপস্থিত হইয়াছিল।দিল্লীর সংবাদ। অওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র ফরুখ্শিয়র দিল্লীর সিংহাসনে আরূঢ় ছিলেন। সৈয়দ আব্দুল্লা খাঁ ও সৈয়দ হুসেন আলী খাঁ নামক দুই জন সর্দ্দারের হস্তে তাঁহাকে অনেকটা ক্রীড়াকন্দুকবৎ থাকিতে হইত। এই কারণে তিনি ও তাঁহার বন্ধুবর্গ সৈয়দযুগলের সর্ব্বনাশ করিবার জন্য নানাপ্রকার চেষ্টা করিতেছিলেন। এদিকে দক্ষিণ ভারতের সমস্ত বাদশাহী প্রদেশে চৌথ পদ্ধতি—প্রবর্ত্তনের অধিকার পাইবার জন্য মহারাষ্ট্রীয়েরা ভয়ঙ্কর বিপ্লব উপস্থিত করিয়াছিলেন। বিশেষতঃ বালাজী বিশ্বনাথ যখন অন্তর্ব্বিগ্রহের নিবারণের সময়ক্ষেপ করিতেছিলেন, সেই সময়ে খণ্ডে রাও দাভাড়ে প্রভৃতি সেনানায়কের পুনঃ পুনঃ আক্রমণে সুভেদার সৈয়দ হুসেন আলী জর্জ্জরিত হইয়া উঠিয়াছিলেন। এইরূপ উভয় সঙ্কটে পতিত হওয়ায় সৈয়দেরা মহারাজ শাহুর সহিত সন্ধি করিয়া দক্ষিণাপথে শান্তিস্থাপন ও আপনাদের বল বৃদ্ধি করিবার সংকল্প করিলেন। কিন্তু বাদশাহ মহারাষ্ট্রীয়দিগকে চৌথ ও সরদেশমুখীর স্বত্ত্ব দিতে সম্মত হইলেন না। এই মতভেদ উপলক্ষে পরিশেষে ১৭১৭ খৃষ্টাব্দে সৈয়দের সহিত বাদশাহের প্রকাশ্য যুদ্ধের সূচনা হইল। তখন সৈয়দ হুসেন আলী মহারাজ শাহুর নিকট সৈন্য সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। তিনি বলিলেন যে, মহারাষ্ট্রপতি যদি এই সময়ে তাঁহাকে ১৫ সহস্র সৈন্যসহ সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি বাদশাহের দ্বারা তাঁহাকে নর্ম্মদার দক্ষিণস্থিত সমস্ত মোগলরাজ্যে চৌথ ও সরদেশমুখী প্রবর্ত্তন করিবার সনন্দ প্রদান করাইবেন। তদ্ভিন্ন ঐ সৈন্যের ব্যয়ভার মাসিক ১৫ লক্ষ টাকা বহন করিতেও তিনি প্রস্তুত হইলেন।
এ সময়ে বালাজী বিশ্বনাথের চেষ্টায় মহারাষ্ট্র রাজ্যে অন্তর্ব্বিগ্রহের পরিসমাপ্তি হইয়া সর্ব্বত্র শাহুর একাধিপত্য বিস্তৃত হইয়াছিল। কাজেই সৈয়দযুগলকে সৈন্য-সাহায্য করা এ সময়ে মহারাষ্ট্রপতির পক্ষে দুঃসাধ্য হইল না। তখন বালাজী বিশ্বনাথ এইসন্ধির সর্ত্ত। সহায়তার পুরস্কার-স্বরূপ মহারাজ শাহুর পক্ষ হইতে দিল্লীশ্বরের মন্ত্রীর নিকট নিম্নলিখিত স্বত্বগুলি প্রার্থনা করিলেন,—
১। ছত্রপতি মহারাজ শিবাজীর উপার্জ্জিত স্বরাজ্যের সম্পূর্ণ উপস্বত্ব যাহাতে মহারাষ্ট্রীয়েরা নির্ব্বিরোধে ভোগ করিতে পারেন, তাহার সনন্দ। (এই সনন্দ মহারাষ্ট্রীয়দিগের সহিত দীর্ঘকালব্যাপী সমরে পরাস্ত হইয়া শাহুকে মুক্তিদানের সময়ে ১৭০৭ খৃষ্টাব্দে মোগল সম্রাট্ কর্ত্তৃক প্রদত্ত হইয়াছিল। কিন্তু দক্ষিণাপথের সুভেদার নিজাম-উল-মুল্ক তাহাতে উপেক্ষা প্রকাশ করিয়া মহারাষ্ট্রীয়দিগের স্বরাজ্যের অনেক স্থান পুনঃপুনঃ অধিকার করিবার চেষ্টা করায় শাহুকে নূতন বাদশাহের নিকট হইতে নূতন সনন্দ গ্রহণের প্রস্তাব করিতে হয়।)
২। দক্ষিণাপথের অন্তর্গত বিজাপুর, হায়দরাবাদ, কর্ণাটক, তঞ্জোর, ত্রিচিনপল্লী ও মহীসুর এই ছয়টী বাদশাহী প্রদেশে চৌথ পদ্ধতি প্রবর্ত্তন ও সরদেশমুখী (রাজ্যের মোট আয়ের দশমাংশ) আদায় করিবার স্বত্ব প্রদান।
৩। মহাত্মা শিবাজীর জন্মস্থান শিবনেরী দুর্গ ও ত্রিম্বক-দুর্গ মহারাষ্ট্রীয়দিগকে প্রত্যর্পণ।
৪। শাহুর মহারাষ্ট্রে আগমনকালে তাঁহার জননী ও অপর আত্মীয়গণ তদীয় প্রতিভূরূপে দিল্লীতে অবস্থিতি করিতেছিলেন, তাঁহাদিগকে স্বদেশে প্রত্যাগমনের অনুমতি প্রদান।
৫। গোণ্ডবন ও বেরারের যে সকল প্রদেশ “সেনা সাহেব সুভে” কাহ্নোজী ভোলে কর্ত্তৃক অধিকৃত হইয়াছে, সেগুলি মহারাষ্ট্রীয়দিগের স্বরাজ্যভুক্ত করিবার আদেশ দান।
৬। মহাত্মা শিবাজী ও তাঁহার পিতা শাহজীর চেষ্টায় কর্ণাটকের যে সকল অংশ অধিকৃত হইয়াছিল, তাহা মরাঠাদিগকে প্রত্যর্পণ।
৭। খান্দেশে যে সকল স্থানে শিবাজীর অধিকার ছিল, তাহার পরিবর্ত্তে মহারাষ্ট্রদেশের পূর্বাঞ্চলস্থিত পণ্ঢরপুর প্রভৃতি প্রদেশ-দান।
বাদশাহ এই সকল স্বত্ব প্রদান করিলে মহারাষ্ট্রপতি শাহু নিম্নলিখিত সর্ত্ত পালনে স্বীকৃত হইবেন বলিয়া বালাজী অঙ্গীকার করেন:—
১। ছত্রপতি মহারাজ শাহু দিল্লীশ্বরের সম্মান রক্ষার জন্য দশলক্ষ টাকা উপঢৌকন প্রদান করিবেন।
২। সরদেশমুখী স্বত্বলাভের প্রতিদানে মহারাষ্ট্রীয়দিগকে দেশের শান্তিরক্ষার জন্য দায়ী হইতে হইবে। যে সকল প্রদেশ হইতে তাঁহারা সরদেশমুখী আদায় করিবেন, সেই সকল প্রদেশে দস্যু তস্করের উপদ্রব ঘটিলে তাঁহাদিগকে তাহার ক্ষতিপূরণ করিয়া দিতে হইবে।
৩। চৌথ আদায়ের স্বত্বের বিনিময়ে মহারাষ্ট্রীয়দিগকে ১৫ সহস্র সৈন্যসহ বাদশাহের সহায়তা করিবার জন্য সর্ব্বদা প্রস্তুত থাকিতে হইবে। যখন যে কোনও স্থানে প্রয়োজন হইবে, তখন সেই স্থানে বাদশাহী সুভেদারকে ১৫ সহস্র সৈন্য সাহায্য প্রদান করিতে হইবে।
৪। কোহ্লাপুরের সাম্ভাজী ও তাঁহার পক্ষীয় সর্দ্দারগণ কর্ণাটক, বিজাপুর ও হায়দরাবাদ প্রভৃতি বাদশাহী প্রদেশে উপদ্রব অত্যাচার করিলে মহারাজ শাহুকে তাহার প্রতিবিধান করিতে হইবে। এমন কি, সান্তাজীর অত্যাচারে বাদশাহী প্রজার ক্ষতি ঘটিলে মহারাজ শাহু তাহারও পরিপূরণ করিয়া দিতে বাধ্য হইবেন।
হুসেনআলি এই সকল স্বত্বের প্রায় সকলগুলিই দান করিতে স্বীকৃত হইলে মহারাজ শাহুদিল্লী-যাত্রা। সেনাপতি মানসিংহ মোরে, পরসোজী ভোঁসলে, সান্তাজী ভোঁসলে, বিশ্বাস রাও পবার প্রভৃতি সেনানীদিগকে ১৫ সহস্র সেনা লইয়া সৈয়দের সাহায্যার্থ দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করিবার আদেশ করিলেন। বালাজী বিশ্বনাথের উপর এই সমস্ত সেনানীর তত্ত্বাবধানের ভার অর্পিত হইল। বালাজী বিশ্বনাথের দিল্লী-গমনকালে মহারাজ শাহু তাঁহাকে বাদশাহের নিকট হইতে দৌলতাবাদ ও চাঁদা দুর্গ এবং গুজরাথ ও মালব প্রদেশে চৌথ পদ্ধতি প্রবর্ত্তন করিবার স্বত্বগ্রহণের যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে উপদেশ দিয়াছিলেন। এই মহারাষ্ট্র সেনা ১৭১৮ খৃষ্টাব্দের শেষভাগে সাতরা ত্যাগ করিয়া দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করিল। যুবক বাজী রাও-ও পিতার সহিত মোগল রাজধানী দর্শনার্থ গমন করিলেন।
মহারাষ্ট্রসেনা দিল্লীতে উপস্থিত হইলে দিল্লীর গোলযোগ বাড়িয়া উঠিল। সেই বিপ্লবে ফরুখ্শিয়র নিহত হইয়া মহম্মদ শাহ সিংহাসনে স্থাপিত হইলেন। সৈয়দেরা মহারাষ্ট্রীয়দিগকে চৌথের সনন্দ দানসনন্দ লাভ। করিতে প্রবৃত্ত হওয়ায় দিল্লীবাসীরা তাঁহাদিগের প্রতি নিতান্ত অসন্তুষ্ট হইয়া ছিলেন। মরাঠাদিগের উপরও তাঁহাদের জাতক্রোধ হইয়াছিল। একদিন বালাজী বিশ্বনাথ সৈয়দগণের সহিত বাদশাহের দরবারে গমন করিলে দিল্লীবাসীরা বিদ্রোহী হইয়া মরাঠাদিগকে আক্রমণ করে। এই দুর্ঘটনায় সন্তাজী ভোঁসলে, বালাজীমহাদেব ভানু ও প্রায় ১৫ শত মারাঠার জীবন বিনষ্ট হয়। কিন্তু সৈয়দ অর্থদানে যথাসাধ্য তাঁহাদিগের ক্ষতিপূরণ করিলেন। ১৭১৯ খৃষ্টাব্দের ৩রা মার্চ্চ হুসেন আলি নূতন বাদশাহের মুদ্রাঙ্কিত একটী সনন্দ দ্বারা মারাঠাগণকে তাঁহাদিগের স্ব-রাজ্যের[৩] সম্পূর্ণ স্বত্ব, দক্ষিণাপথে চৌথ প্রবর্ত্তন ও সরদেশমুখী স্বত্ব আদায় করিবার অধিকার প্রদান করিলেন। মহারাজ শাহুর জননী ও অপর আত্মীয়গণও এই সময়ে মুক্তিলাভ করেন। দিল্লীশ্বরের নিকট হইতে চৌথ, সরদেশমুখী ও স্বরাজ্যের সনন্দ লাভ করায় তদানীন্তন ভারবাসীর নিকট মহারাষ্ট্র শক্তি ন্যায়সঙ্গত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বলিয়া বিবেচিত হইল[৪]।
শাহুর পক্ষ হইতে বালাজী বিশ্বনাথের প্রার্থিত যে সমস্ত অধিকার সৈয়দেরা মহারাষ্ট্রীয়দিগকে প্রদান করিলেন না, তাহারও এস্থলে উল্লেখ আবশ্যক। সেগুলি এই,—
(১) খান্দেশের মধ্যে যে সকল দুর্গে মহারাষ্ট্রীয়দিগের অধিকার ছিল, তাহা।
(২) ত্রিম্বক দুর্গ ও চতুষ্পার্শবর্ত্তী প্রদেশ।
(৩) তুঙ্গভদ্রা নদীর দক্ষিণস্থিত যে সকল প্রদেশ মারাঠারা জয় করিয়াছিলেন, তাহা।
(৪) তদ্ভিন্ন সেনাসাহেব সুভে কাহ্নোজী ভোঁস্লে বেরার অঞ্চলে যে সকল প্রদেশ অধিকার করিয়াছিলেন, তাহা স্বরাজ্যভুক্ত করিয়া দিতেও সৈয়দ হুসেন আলী অসম্মতি প্রকাশ করিলেন।
(৫) গুজরাথ ও মালব প্রদেশে চৌথ প্রবর্ত্তনের অধিকার তাঁহারা মারাঠাগণকে সময়ান্তরে প্রদান করিতে প্রতিশ্রুত হইলেন। বালাজী বিশ্বনাথ সে সনন্দ আদায় করিবার জন্য দেব রাও হিঙ্গণে নামক জনৈক সুচতুর ব্রাহ্মণকে দিল্লীতে দূতস্বরূপ রাখিয়া স্বদেশাভিমুখে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন।
পথিমধ্যে জয়পুর যোধপুর, উদয়পুর, প্রভৃতি স্থানের রাজাদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বালাজী শাহুর সহিত তাঁহাদিগের সহিত মিত্রতাসূচক সন্ধি স্থাপন করিলেন।
মহারাষ্ট্রীয়েরা (১৭১৯ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) দুই মাস দিল্লীতে ছিলেন। যমুনারবাজী রাওয়ের অবজ্ঞা। দক্ষিণ তীরে তাঁহাদিগের শিবির ছিল। তাহার নিকটবর্ত্তী স্থানসমূহের ক্ষেত্রস্থ শস্য যাহাতে সৈনিকেরা বিনষ্ট না করে, সে বিষয়ে যথোচিত উপায় অবলম্বন করিবার জন্য বালাজী বিশ্বনাথ সামরিক কর্ম্মচারীদিগের প্রতি আদেশ প্রচার করিয়াছিলেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ সর্দ্দার মহ্লাররাও হোলকর তাহাতে অবজ্ঞা প্রকাশ করিয়া একদা স্ব-দলস্থ অশ্বাদির জন্য কোনও কৃষকের ক্ষেত্র হইতে বলপূর্ব্বক শস্য সংগ্রহ করেন। অল্প ক্ষণের মধ্যেই, মহারাষ্ট্র সেনা ক্ষেত্র-স্থিত শস্য বিলুণ্ঠন করিয়াছে, এই মর্ম্মে পেশওয়ের নিকট অভিযোগ উপস্থিত হইল। তখন বাজীরাও প্রকৃত অপরাধীর সন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি শিবিরস্থিত প্রত্যেক অশ্বশালার পর্য্যবেক্ষণ করিতে করিতে, মহ্লার রাওয়ের অশ্বদলের সম্মুখে সদ্যশ্ছেদিত শস্যরাশি দেখিতে পাইয়া, অশ্বরক্ষক অনুচরকে অপরাধী জ্ঞানে হস্তস্থিত যষ্টি দ্বারা প্রহার করেন। অদূরবর্ত্তী মহ্লার রাও তদ্দর্শনে অতিমাত্র ক্রুদ্ধ হইয়া বাজী রাওয়ের প্রতি লোষ্ট্র নিক্ষেপে তাঁহাকে অবজ্ঞাত করিলেন। বলা বাহুল্য, মহ্লার রাও তখনও পেশওয়ের বেতনভোগী সর্দ্দারের শ্রেণীভুক্ত হন নাই। তিনি কেবল তাঁহার সহকারিরূপে সদলে দিল্লীতে উপস্থিত হইয়াছিলেন।
সে সময়ে বাজীরাও সাধারণ যুবজনের ন্যায় ধৈর্য্যচ্যুত হইলে মহ্লাররাওয়ের সহিত তৎক্ষণাৎঅনুশাসনে অনুরাগ। তাঁহার দ্বন্দ্বযুদ্ধ উপস্থিত হইত। কিন্তু তিনি ক্ষমাপ্রকাশপূর্ব্বক নীরবে আপনার শিবিরে প্রত্যাবৃত্ত হইলেন, এবং, বিদেশে—মিত্র-রাজ্যে মহারাষ্ট্রীয় সেনা সামরিক অনুশাসনে উপেক্ষা করত এইরূপ যথেচ্ছাচার করিলে তাহার পরিণাম কিরূপ অনিষ্টকর হইতে পারে, পিতাকে তদ্বিষয়ে চিন্তাপূর্ব্বক ইতি-কর্ত্তব্যতা নির্দ্ধারণ করিতে অনুরোধ করিলেন। তৎশ্রবণে বালাজী বিশ্বনাথ প্রথমতঃ মহ্লার রাওয়ের সর্ব্বস্ব—হরণ-পূর্ব্বক তাঁহাকে আদর্শদণ্ডে দণ্ডিত করিবার সংকল্প করিয়াছিলেন। কিন্তু পরিশেষে অপর কয়েকজন সামরিক কর্মচারীর অনুরোধে মহ্লার রাওয়ের অপরাধের মার্জ্জনা হইল।
এই ঘটনায় বাজীরাওয়ের প্রতি মহ্লার রাও জাতক্রোধ হইলেন এবং তাঁহাকে বিপন্ন করিবারপ্রাণসঙ্কটে মৈত্রী। অবসর অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। দৈবক্রমে দিল্লী হইতে প্রত্যাবর্ত্তনকালে তিনি এক দিন পথিমধ্যে বাজীরাওকে একাকী ও নিরস্ত্র দেখিতে পান। তৎক্ষণাৎ তাঁহার জিঘাংসা উদ্দীপিত হইয়া উঠে। তিনি সহসা বাজী রাওকে আক্রমণ ও তাঁহার বক্ষঃস্থলে স্বীয় ভীষণ ভল্ল স্থাপন করত বলিলেন, “এক্ষণে আমি তোমার প্রাণহরণ করিলে,কে তোমাকে রক্ষা করিতে পারে?” এই আকস্মিক বিপৎপাতে বাজীরাও কিছুমাত্র ভীত না হইয়া ঈষৎ হাস্যপূর্ব্বক বলিলেন, “আমার হস্তে তরবারি থাকিলে আমি একথার উপযুক্ত উত্তর দিতে পারিতাম। যাহা হউক, অভিযানকালে আমি তোমার সাহস ও সমরকৌশল দেখিয়া প্রীত হইয়াছি। এক্ষণে তুমি আমার প্রতি আক্রোশ ত্যাগ করিয়া আমার সহিত মিত্রতা স্থাপন কর।” এই কথায় মহ্লার রাও শান্তভাব ধারণ করিলেন। তদবধি এই উভয় বীরের মধ্যে যে অকৃত্রিম প্রণয়ের সঞ্চার হইল, তাহা আজীবন ক্ষুণ্ণ হয় নাই।
দিল্লী হইতে সনন্দ লইয়া বালাজী বিশ্বনাথ ১৭১৯ খৃঃ ৪ঠা জুলাই সাতারায় উপস্থিত হইলেন।রাজসম্মান। মহারাজ শাহু তাঁহার বিজয়ী পেশওয়ের সম্মানার্থ মহাসমারোহ সহকারে স্বয়ং প্রত্যুদ্গমনপূর্ব্বক তাঁহাকে অভিনন্দিত করিলেন। এই সনন্দ লাভ করায় মহারাষ্ট্রীয়দিগের স্বরাজ্যের মধ্যে যে সকল মোগল থানা ছিল, তাহার সকলগুলি উঠিয়া গেল। “স্বরাজ্য” মধ্যে আর কোনও স্থানে মোসলমান অধিকার রহিল না। তদ্ভিন্ন শাহুর প্রতিপত্তি সর্ব্বত্র বিশেষরূপ বর্দ্ধিত হইল। মহারাজ শাহু এই সকল কার্য্যের পুরস্কার স্বরূপ বালাজী বিশ্বনাথকে পুণা জেলার অন্তর্গত পাঁচটী মহালের সরদেশমুখী স্বত্ব ও কয়েকটা গ্রামের সমস্ত উপস্বত্ব-ভোগের অধিকার দান করিলেন। খান্দেশ ও বালেঘাট অঞ্চলের শাসন-ভার তাঁহার প্রতি পূর্ব্বাবধি অর্পিত ছিল।
বালাজী বিশ্বনাথ রাজ্যের বহিঃশত্রুগণের পরাক্রম খর্ব্ব করিয়া এক্ষণে কিয়ৎ পরিমাণে নিশ্চিন্ত হইয়াছিলেন। এই কারণে তিনি রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অবস্থার সংস্কার সাধনে মনোযোগী হইবার অবসর প্রাপ্ত হইলেন। এতদিন পর্য্যন্ত রাজ্যের আয় ব্যয়েরও সম্বন্ধে সর্দ্দারগণের প্রাপ্য অংশের কোনও নির্দ্ধারিত নিয়ম না থাকায় প্রায়ই অংশীদারগণের মধ্যে কলহ ঘটিত। বালাজী বিশ্বনাথ তাহা নিবারণের জন্য জমাবন্দীর সূক্ষ্ম হিসাবপত্র দেখিয়া আয় ব্যয়ের সম্বন্ধে কতিপয় বিশেষ নিয়ম নির্দ্ধারণ করিলেন। এই অভিনব নির্দ্ধারণের ফলে রাজকার্য্যের অনেক গোলযোগ নিবৃত্ত হইল এবং রাজ্যের শ্রীবৃদ্ধি সাধনের দিকে সকলের স্বাভাবিক অনুরাগ জন্মিল। তদ্ভিন্ন মোসলমানদিগের হস্ত হইতে নিত্য নূতন প্রদেশ গ্রহণ করিবার আকাঙ্ক্ষাও মহারাষ্ট্রীয়দিগের হৃদয়ে বলবতী হইল। সর্দ্দারদিগের মধ্যে একজনের ক্ষতিবৃদ্ধির সহিত অপর সর্দ্দারের স্বার্থ ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধ করিয়া মারাঠাগণের মধ্যে একতা-সংস্থাপনের পথ প্রসারিত করেন। এই জন্য অল্প দিনের মধ্যেই মহারাষ্ট্রীয়দিগের সাম্রাজ্য সমগ্র ভারতবর্ষে বিস্তৃত হইয়া পড়ে। তাঁহার চেষ্টায় মোসলমান বিপ্লবে জর্জ্জরিত কৃষক-সমাজের শ্রীবৃদ্ধি সাধিত ও দেশের চৌরভয় সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়।[৫]
ইতঃপূর্ব্বে দামাজীর হস্ত হইতে সচিবকে রক্ষ করায় তাঁহার জননী কৃতজ্ঞতার চিহ্নস্বরূপ বালাজী বিশ্বনাথকে স্বীয় অধিকারস্থিত পুরন্দর দুর্গপুণা লাভ। ও পুণাপ্রদেশ দান করিয়াছিলেন। বালাজী শাহু মহারাজের অনুমতি ও সনন্দপত্র লইয়া তাহা গ্রহণ করেন। এই সময়ে পুণাপ্রদেশ মোগল পক্ষীয় সর্দ্দার বাজী কদম নামক এক ব্যক্তির অধিকারভুক্ত ছিল। মহারাষ্ট্রীয়েরা কেবল তাহার “চৌথ” পাইতেন। পুণার “চৌথ” সচিব মহোদয়ের প্রাপ্য ছিল। সচিব তাহারই স্বত্ব বালাজীকে দান করিয়াছিলেন। বালাজী মোগল সর্দ্দারকে বশীভূত করিয়া পুণায় স্বীয় সম্পূর্ণ আধিপত্য স্থাপন করিলেন (১৭১৮ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর)। এত দিন সাসবড় গ্রামে বালাজীর পরিবারবর্গ বাস করিতেন। এক্ষণে পুরন্দর দুর্গের আশ্রয়ে পুণায় তিনি স্বীয় বাসস্থান নির্দ্দেশ করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া তদ্বিষয়ে মহারাজের অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। শাহু তাঁহার কার্য্যকলাপে প্রীত হইয়াছিলেন। সুতরাং তিনি পুণা প্রদেশ বালাজীকে ইনাম (পুরস্কার) স্বরূপ দান করিতে বিলম্ব করিলেন না। স্বল্প দিবসের মধ্যেই বালাজীর চেষ্টায় পুণার চৌরভয় নিবারিত হইয়া কৃষককুলের অবস্থার উৎকর্ষ ঘটিল।
মহারাষ্ট্র-রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থার প্রণয়নে ও স্বজাতির শ্রীবৃদ্ধিসাধনে কিছুদিন অনবরত পরিশ্রম করিয়া বালাজী বিশ্বনাথের স্বাস্থ্যভঙ্গবালাজীর মৃত্যু। হয়। এই অবস্থাতেও তাঁহাকে দুই একটী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিযানের নেতৃত্ব গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। ইহার পর তিনি জলবায়ুর পরিবর্ত্তন ও কিছুদিন বিশ্রামলাভের বাসনায় মহারাজ শাহুর অনুমতি লইয়া “সাসবড়” গ্রামে গিয়া বাস করেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁহার স্বাস্থ্য আর পূর্ব্বাবস্থা লাভ করিতে পারিল না। ঐ স্থানে অবস্থানকালেই ১৭২০ খৃষ্টাব্দের ২রা এপ্রিল (গ্রাণ্ট ডফের মতে অক্টোবর মাসে) তিনি ইহধাম পরিত্যাগ করেন। বালাজীর মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে শাহু অতীব দুঃখিত হইয়াছিলেন।
বালাজী বিশ্বনাথ সমরকুশল বলিয়া বিশেষ প্রসিদ্ধিলাভ করিতে না পারিলেও সাহসীচরিত্র-সমালোচনা। যোদ্ধা ও রাজনীতি-বিশারদ বলিয়া বিশেষরূপে পরিচিত ছিলেন। তিনি অতিশয় সরল-প্রকৃতি ও অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন ছিলেন। মহারাজ শাহু বাল্যকালে মোগল-রাজ-পরিবারে থাকিয়া প্রতিপালিত হওয়ায় বহু পরিমাণে বিলাসিতার দাস হইয়া পড়িয়াছিলেন। বালাজী বিশ্বনাথের ন্যায় কার্য্যদক্ষ পেশওয়ের সহায়তা না পাইলে তিনি কখনও মহারাষ্ট্রদেশে এরূপ প্রতিপত্তি লাভ করিতে পারিতেন কি না, সন্দেহ। বালাজীর প্রতিভা মহারাষ্ট্র সমাজকে যে নূতন শক্তি দান করিয়াছিল, তাহার বিষয় চিন্তা করিয়া পরলোকগত বিচারপতি মহাদেব গোবিন্দ রানাড়ে মহোদয় মহারাষ্ট্র ইতিহাসে তাঁহাকে মহাত্মা শিবাজীর পরবর্ত্তী স্থান দান করিয়াছেন।
বালাজী বিশ্বনাথের মৃত্যুকালে তাঁহার স্ত্রী রাধাবাঈ, পুত্র বাজীরাও ও চিমণাজী আপ্পা তাঁহার নিকটেই ছিলেন। ইহার পর ১৭৫৩ খৃষ্টাব্দে রাধাবাঈর মৃত্যু হয়। পুত্রদ্বয় ভিন্ন বালাজীর দুইটী কন্যাও ছিল।
- ↑ গ্রাণ্ট ডফ “সেনাকর্ত্তা” শব্দের অর্থ Agent in charge of the army করিয়াছেন, তাহা আমাদের সঙ্গত বোধ হয় না। “সেনাকর্ত্তা” অর্থে “সৈন্যদলের সৃষ্টি-কর্ত্তা” হওয়াই উচিত। ডফ মহোদয় এই ঘটনাকে ১৭১৩ খৃঃ অব্দের ঘটনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করিয়াও ভ্রমে পতিত হইয়াছেন।
- ↑ পেশওয়েদিগের রাজমুদ্রায় এইরূপ উল্টা “ন” লিখিবার কারণ এই,—পূর্ব্বে শিবাজীর সময় হইতে পিঙ্গলে-বংশের পুরুষেরা পেশওয়ে-পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। মহারাজ শাহু পিঙ্গলে-বংশের হস্ত হইতে পেশওয়ে পদের অধিকার “ভট্ট” বংশের হস্তে অর্পণ করিলেন। এই বংশান্তরের চিহ্নরূপে “প্রধান” শব্দের নকার বিপরীত ভাবে লিখিবার প্রথা শাহু কর্ত্তৃক প্রবর্ত্তিত হয়।
অনেকে বালাজী বিশ্বনাথকেই প্রথম পেশওয়ে বলিয়া মনে করেন। বস্তুতঃ তাহা নহে, বালাজী মহারাষ্ট্র-রাজ্যের প্রথম পেশওয়ে নহেন। তিনি ভট্টবংশীয় পেশওয়েগণেরই প্রথম। - ↑ স্বরাজ্য—ছত্রপতি মহারাজ শিবাজীর অধিকৃত প্রদেশগুলি মহারাষ্ট্র দেশে “স্বরাজ্য” নামে পরিচিত। স্ব-রাজ্য বলিলে প্রধানতঃ পুণা, সুপা, ইন্দাপুর, ওয়াই, তারলে, সাতারা, কহ্রাড়, খটাও, মাণ, ফলটন, মলকাপুর তারলে, গহ্লালা, অঝেরা, জুন্নুর, কোহ্লাপুর, কোঙ্কণ ও তুঙ্গভদ্রা নদীর উত্তরস্থিত কোপল, গদক এবং হল্যাল পরগণা— এই সমস্ত ভূভাগ বুঝায়।
- ↑ This acquisition gained to the Maratha power that legitimacy, in the absence of which it is not possible to distinguish power from force. Justice M. G. Ranade’s “Rise of the Maratha Power”
- ↑ Of course there were seeds of dissolution and decay in the arrangement of Balaji, but they were fairly held in check for nearly a century. We have the testimoney of Mr. M. Elphinstone and his coadjutor that though the system was theoretically full of defects, it practically ensured peace and prosperity and succeeded in making the Maratha power respected and feared by all its neighbours. Rise of Maratha Power. pp. 217.