বাজী রাও/প্রথম অধ্যায়
বাজী রাও।
প্রথম অধ্যায়।
জন্মভূমি—পিতৃপরিচয়—জন্ম—
শৈশবে বিপত্তি।
দক্ষিণ ভারতের যে অংশ মহারাষ্ট্র দেশ নামে পরিচিত, তাহার উত্তর দিকে সুরত (সুরাট) প্রদেশ ও সাতপুড়া (সাতপুরা) নামক শৈলশ্রেণী, পশ্চিম দিকে আরব সমুদ্র,মহারাষ্ট্র। দক্ষিণ দিকে কৃষ্ণা ও মলপ্রভা নদী এবং পূর্ব্ব দিকে গোণ্ডবন (গণ্ডওয়ানা) ও তেলঙ্গণ (তেলিঙ্গানা) প্রদেশ অবস্থিত।মহারাষ্ট্র দেশের পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ পঞ্চবিংশতি সহস্র বর্গমাইল। ইহা আয়তনে ইংলণ্ড দেশের দ্বিগুণ অপেক্ষাও বৃহত্তর। এই দেশের বর্ত্তমান লোকসংখ্যা প্রায় দুই কোটী। মহারাষ্ট্রদেশ সাধারণতঃ পর্ব্বতবহুল ও অপেক্ষাকৃত অনুর্ব্বর। এই কারণে এই দেশের লোকেরা দৃঢ়কায়, কষ্টসহিষ্ণু ও বলশালী। মহারাষ্ট্র দেশের জলবায়ু ভারতবর্ষের অনেক স্থানের জলবায়ু অপেক্ষা স্বাস্থ্যকর।
সহ্য পর্ব্বত বা পশ্চিমঘাট নামক গিরি-শ্রেণীর উত্তরাংশ মহারাষ্ট্র দেশকে পূর্ব্ব ও পশ্চিমে দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছে। সহ্য পর্ব্বতের কোঙ্কণ। পূর্ব্বাংশ কোঙ্কণ (দেশীয় ভাষায় কোঁকন) নামে প্রসিদ্ধ। এই প্রদেশের এক দিকে নিয়ত গর্জ্জনশীল, ঝটিকাবর্ত্তময় আরব সমুদ্র প্রসারিত ও অপর দিকে দিগন্ত-বিস্তীর্ণ সহ্যাদ্রির শ্বাপদ সঙ্কুল, সহস্র শীর্ষ বিশাল দেহ বিরাজমান। কোঙ্কণ প্রদেশের দৈর্ঘ্য প্রায় চারিশত মাইল; কিন্তু উহার সর্ব্বাপেক্ষা আয়ত অংশের বিস্তার ৫০ মাইলেরও অধিক নহে। এই সঙ্কীর্ণ ভূমিখণ্ড অধিকাংশ স্থলেই শৈলময় অরণ্য শ্রেণীতে সমাবৃত। এখানকার অধিবাসীরা প্রকৃতিগুণে আত্মরক্ষায় কুশল, শ্রমশীল, সরলস্বভাব ও স্বল্প-সন্তুষ্ট।
কোঙ্কণ প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে “জঞ্জীরা” নামে একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে। ঐ দ্বীপটি জঞ্জীরা। এক্ষণে কুলাবা (কোলাবা) জিলার অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে। ইংরাজদের এদেশে রাজ্য স্থাপনের পূর্ব্বে জঞ্জীরা দ্বীপ ও তৎচতুষ্পার্শ্ববর্তী প্রদেশ আবিসীনীয় বা হাব্সীদের অধিকারভুক্ত ছিল। হাব্সীগণ দক্ষিণাপথে “সিদ্দি” নামে ও তাঁহাদিগের পূর্ব্ব-অধিকৃত ভূমি-ভাগ অদ্যাপি “হাব্সান” নামে পরিচিত। হাব্সান প্রদেশের পরিমাণ ৩২৫ বর্গ মাইল ও উহার বর্ত্তমান রাজস্বসংক্রান্ত আয় বৎসরে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। আবিসীনীয়দিগের তদানীন্তন রাজধানী জঞ্জীরা দ্বীপে এক্ষণে ইংরাজের এক জন আসিষ্ট্যাণ্ট পোলিটিক্যাল এজেণ্ট বাস করেন।
জঞ্জীরা দ্বীপের ১২ মাইল দক্ষিণে, বাণকোট নামক সাগর-প্রণালীর উত্তর তীরে,শ্ৰীবৰ্দ্ধন । সাবিত্রী নদীর মোহানার নিকট “শ্রীবর্দ্ধন” নামে একটি ক্ষুদ্র গ্রাম আছে। এই গ্রামের লোকসংখ্যা তিন সহস্রের অধিক নহে; তন্মধ্যে প্রায় এক সহস্র ব্রাহ্মণ। কোঙ্কণের অন্তর্গত অন্যান্য স্থানের ন্যায়, এই গ্রামেও আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কদলী ও সুপারি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় । এখানকার সুপারি অত্যুৎকৃষ্ট বলিয়া মহারাষ্ট্র দেশের সর্ব্বত্র বিশেষ আদৃত। প্রাচীনকালে এই গ্রাম বাণিজ্য-ব্যবসায়ের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল।
শ্রীবর্দ্ধন গ্রামে প্রায় দুই শত বৎসর পূর্ব্বে (খৃঃ সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে) একজন সদ্বংশজাত মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ বাস করিতেন। তাঁহার নাম বিশ্বনাথ ভট্ট। তিনি গার্গ্যগোত্রোৎপন্ন ছিলেন। তাঁহার পিতার নাম জনার্দ্দন ভট্ট। তিনি জঞ্জীরার সিদ্দিদিগের অধীনতায় শ্রীবর্দ্ধন পরগণার দেশমুখ ও গ্রাম লেখকেরআদি পুরুষ। কার্য্য করিতেন। মহালের জমাবন্দীর কার্য্য পর্যবেক্ষণ ও পরগণার রাজস্ব আদায় প্রভৃতি কার্য্যের ভার তাঁহার প্রতি অর্পিত ছিল। সেকালে রাজায় রাজায় বিবাদ ঘটিলে এই দেশমুখেরা যাঁহার পক্ষ অবলম্বন করিতেন, তাঁহার পক্ষে দেশ জয় করা সহজসাধ্য হইত। দেশমুখেরা বিরোধী হইলে রাজার পক্ষে খাজনা আদায় বা দেশ-শাসন অসম্ভব হইয়া উঠিত। শ্রীবর্দ্ধনের ভট্টবংশের হস্তে দেশমুখের কার্য্য ন্যস্ত থাকায় দেশে তাঁহাদের বিশেষ প্রতিপত্তি ও মহারাষ্ট্রের রাজনীতিক ব্যাপারের সহিত কিয়ৎ পরিমাণে সম্বন্ধ ছিল।
বিশ্বনাথ ভট্ট চারি পুত্র রাখিয়া ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁহার প্রথম দুই পুত্রের কোন বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া যায় না।বালাজী বিশ্বনাথ। তাঁহার তৃতীয় পুত্র জানোঞ্জী বা জনার্দ্দন ভট্ট পৈত্রিক পদের উত্তরাধিকারিরূপে শ্রীবর্দ্ধনে থাকিয়া দেশমুখের কার্য্য সম্পন্ন করিতেন। কনিষ্ঠ বালাজী (বল্লালজী) বিশেষ উদ্যমশীল ছিলেন। তিনি পৈত্রিক সম্পত্তির উপর নির্ভরশীল ও ভ্রাতার গলগ্রহ না হইয়া অর্থোপার্জ্জনের স্বতন্ত্র পন্থা অবলম্বন করেন। ১৮৯৮ খৃষ্টাব্দের কিছু পূর্ব্বে তিনি সিদ্দিদিগে অধীনতায় নিকটবর্ত্তী চিপ্লুণ তালুকের কর— সংগ্রহের ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন। তদ্ভিন্ন “মীঠ বন্দর” নামক স্থানে লবণের কারখানাগুলিও তাঁহার ইজারা ছিল। এজন্য তাঁহাকে প্রায়ই চিনে থাকিতে হইত। এই বালাজী পরিশেষে “পেশওয়ে বালাজী বিশ্বনাথ” নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। মহারাষ্ট্র-দেশে আত্ম-নামের সহিত পিতৃ নাম সংযুক্ত করিবার প্রথা প্রচলিত থাকায় বালাজী নামের সঙ্গে তাঁহার পিতার “বিশ্বনাথ” নাম সাধারণত একত্র লিখিত হইয়া থাকে। বালাজী বিশ্বনাথ স্বজন-সমাজে “বালাজী পন্ত”[১] নামে পরিচিত ছিলেন। বালাজীপন্তে ঔরসে, তদীয় গুণবতী ভার্য্যা রাধা বাঈ বাজী রাও। গর্ভে সম্ভবতঃ ১৭৯৯ খৃষ্টাব্দে বর্ণিতব ইতিহাসের নায়ক মহাবীর বাজী রাও বল্লালের জন্ম হয়।
বাল্যজীবনে বিপত্তি অনেকেরই ভবিষ্য-জীবনের মহত্ব সূচিত করিয়া থাকে। বাজী রাওয়ের জীবনেও এ নিয়মে ব্যতিক্রম ঘটে নাই। বাল্যদশায় তাঁহাকে বহুবার বিষম সঙ্কটে পড়িতে হইয়াছিল। তিনি চতুর্থ বর্ষ বয়সে পদার্পণ করিতে না করিতে তাঁহাকে বিপন্ন হইয়া পিতার সহিত স্বীয় জন্মভূমি পরিত্যাগপূর্ব্বক পলায়ন করিতে হয়। কেবল তাহাই নহে, তদুপলক্ষে তাঁহার কারাবাসও ঘটিয়াছিল।
এই সময়ে সিদ্দি কাশিম খাঁ জঞ্জীবা দ্বীপের অধিপতি ছিলেন। তাঁহার শৌর্য্যে প্রীত হইয়া সম্রাট্ অওরঙ্গজেব তাঁহাকে মোগল নৌসেনার অধিনায়ক করিয়াছিলেন।বিপৎ-পাত। ছত্রপতি মহাত্মা শিবাজীর সময় হইতেই সিদ্দি কাশিম মহারাষ্ট্রীয়দিগের প্রতাপ খর্ব্ব করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। এই কারণে মারাঠা সেনানায়কগণের সহিত তাঁহার প্রায়ই যুদ্ধবিগ্রহ ঘটিত; হিন্দু প্রজাদিগের উপর অত্যাচারও নিতান্ত অল্প হইত না। আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, সে সময়ে সমুদ্রতীরবর্ত্তী স্থানসমূহের অধিকার লইয়া তদানীন্তন মহারাষ্ট্রীয় নৌসেনার অধিপতি কাহ্নোজী আংগ্রের সহিত সিদ্দিগণের শত্রুতা চলিতেছিল। বাজী রাও যখন অর্দ্ধস্ফূট বাকো প্রতিবেশী বালকগণের সহিত শৈশব-ক্রীড়ার আনন্দ উপভোগ করিতেছিলেন, সেই সময়ে কাহ্নোজী আংগ্রে ও সিদ্দি কাসিমের বিবাদানল অতিশয় প্রজ্বলিত হইয়া উঠে। কাহ্নোজী সিদ্দির কর্ম্মচারীদিগকে বশীভূত করিয়া স্বদলভুক্ত করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। ইত্যবসরে, বালাজী বিশ্বনাথ গোপনে আংগ্রের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছেন, এইরূপ সংবাদ সিদ্দি কাসিমের কর্ণগোচর হয়। এ রটনা যতদূর সত্য হউক, কাশিম তাহাতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়া শ্রীবর্দ্ধনের ভট্ট পরিবারকে ধৃত করিবার আদেশ প্রচার করিলেন। প্রথমে বালাজীর অগ্রজ জানোজী ধৃত হন। সিদ্দি বিনা বিচারে তাঁহার প্রাণদণ্ডাজ্ঞা করেন। হতভাগ্য জানোজীকে একটা বস্তার মধ্যে পূরিয়া সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত করা হয়। (১৭০১ খৃষ্টাব্দ)
এই দুর্ঘটনায় অতিমাত্র ভীত হইয়া বাজী রাওয়ের পিতা আত্ম-রক্ষার জন্য সপরিবারে সিদ্দির অধিকার ত্যাগ-পূর্ব্বক বাণকোট-প্রণালীরস্বদেশ-ত্যাগ। দক্ষিণতীর-স্থিত ‘ওয়েলাস’ গ্রামে উপস্থিত হইলেন। ঐ গ্রামে হরি মহাদেব ভানু নামক এক সজ্জন ব্রাহ্মণ রাস করিতেন। বালাজীর সহিত তাঁহার পূর্ব্বপরিচয় ছিল। বালাজী ভবিষ্য-কর্তব্যতা-সম্বন্ধে তাঁহার সহিত পরামর্শ করিয়া স্থির করিলেন যে, কোঙ্কণ পরিত্যাগপূর্ব্বক সহ্যাদ্রির পূর্ব্বাঞ্চলস্থিত কোনও স্থানে গিয়া নূতন ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হওয়াই তাঁহার পক্ষে যুক্তিসিদ্ধ। ভানু-পরিবারের অবস্থা সচ্ছল ছিল না। বিশেষতঃ অত্যাচারী সিদ্দির রাজ্যে বাস করিতে তাঁহাদিগেরও অনিচ্ছা ছিল। এই কারণে তাঁহারা বালাজী পন্তের অনুবর্ত্তী হইলেন।
অতঃপর ভট্ট ও ভানু কিয়ৎ দূর অগ্রসর হইতে না হইতেই সিদ্দির অনুচরগণ কর্ত্তৃক বালাজী ধৃত ও “অঞ্জনবেল” দুর্গে বন্দিভাবে প্রেরিত হন। পথে বিপত্তি। অঞ্জনবেল দুর্গ প্রসিদ্ধ সুবর্ণ দুর্গের ১৫ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। সিদ্দির আদেশে তাঁহাকে ঐ দুর্গে সপরিবারে ২৫ দিন বাস করিতে হয়। এই বিপৎকালে হরি মহাদেব ভানু ও তাঁহার উভয় সহোদর বহু যত্ন করিয়া অঞ্জনবেলের দুর্গপতিকে বশীভূত করেন। ফলে বালাজীর মুক্তিলাভ ঘটে। তখন সহ্যাদ্রি উত্তীর্ণ হইয়া ভট্ট ও ভানু পুণার নিকটস্থিত ‘সাসবড়’ গ্রামের অম্বাজী-ত্র্যম্বক পুরন্দরে (গ্রাণ্ট ডফের আবাজীপন্ত পুরন্দরে) নামক জনৈক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণের আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। অম্বাজী পন্ত তাঁহাদিগকে মহারাষ্ট্র দেশের তদানীন্তন রাজধানী সাতারা নগরীতে লইয়া গেলেন।
এই সময়ে পূর্ব্ব-মহারাষ্ট্রে ঘোর বিপ্লব চলিতেছিল। শিবাজীর মৃত্যুর পর সম্রাট্ অওরঙ্গজেব ১২ লক্ষ মোগল সেনা লইয়া মহারাষ্ট্র দেশ আক্রমণ করিয়াছিলেন। তদীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র সাম্ভাজী মোগল আক্রমণে বাধা দিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু বুদ্ধিদোষে তাঁহাকে মোগলদিগের হস্তে প্রাণত্যাগ করিতে হয়।দেশের অবস্থা। তাঁহার স্ত্রী ‘এসু বাঈ' (যশোদা বাঈ) ও পুত্র শাহু দিল্লীশ্বরের বন্দী হন। তখন শিবাজীর কনিষ্ঠ পুত্র রাজারাম সিংহাসনারোহণ করিয়া মোগলদিগের শত্রুতাচরণে প্রবৃত্ত হইলেন। ১৭০০ খৃঃ মহারাজ রাজারামের দেহাত্যয় ঘটিলে, তদীয় মহিষী তারা বাঈ মহারাষ্ট্র রাজ্যের কর্ত্তৃত্ব গ্রহণ করেন। মোগলেরা ভাবিয়াছিলেন, রাজারামের মৃত্যুতে মহারাষ্ট্রীয়েরা হতাশ হইয়া শান্তভাব ধারণ করিবেন। কিন্তু তাহা হইল না। তারা বাঈর উত্তেজনায় মহারাষ্ট্রীয়েরা মোগলদিগকে স্বদেশ হইতে বিতাড়িত করিবার জন্য প্রাণপণে যুদ্ধ চালাইলেন। যে ব্যক্তি কোনরূপে একটী ঘোড়া ও একখানি বল্লম সংগ্রহ করিতে পারিল, সে-ই মোগলদিগের পশ্চাদ্ধাবনে প্রবৃত্ত হইল।
বালাজী যখন “সাসবড়ে” পদার্পণ করেন, তখন তারা বাঈর অমাত্য রামচন্দ্র পন্ত, প্রতিনিধি পরশুরাম ত্র্যম্বক, সচিব শঙ্করজী নারায়ণ ও সেনাপতি ধনাজী যাদব প্রভৃতি মহারাষ্ট্রীয় সর্দ্দারগণের বীর্য্যবিক্রমে সমগ্র দক্ষিণাপথ কম্পিত হইতেছিল। মোগলেরা মহারাষ্ট্রীয়দিগের রুদ্রমূর্ত্তিদর্শনে ভীত হইয়া পলায়নপর হইয়াছিলেন। মোগল-শাসিত প্রদেশে মহারাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তৃত হইতেছিল। সুতরাং কার্যক্ষম ও বুদ্ধিমান্ ব্যক্তির পক্ষে এসময়ে মহারাষ্ট্রদেশে কার্য্যক্ষেত্রের অভাব ছিল না। বালাজীও উদ্যমশীল ও কার্য্যকুশল ব্যক্তি ছিলেন। এই কারণে রাজধানী সাতারায় পদার্পণ করিবার অল্পদিবসের মধ্যেই তাঁহার রাজকার্য্যে প্রবেশ-লাভ ঘটিয়াছিল।
সাতারায় মহাদেব কৃষ্ণ জোশী নামক একব্যক্তি বাস করিতেন। তাঁহার সহিত ভানুদিগের পরিচয় ছিল। এই জোশী মহোদয়ের চেষ্টায় কার্য্যলাভ। বালাজী ও তাঁহার সহচরেরা তারা বাঈর প্রতিনিধি পরশুরাম ত্র্যম্বকের নিকট হইতে একটা তালুকের রাজস্ব আদায় করিবার ইজারা প্রাপ্ত হইলেন। সে কার্য্যে তাঁহাদিগের দক্ষতা দেখিয়া রাজপ্রতিনিধি মহাশয় বালাজী ও অম্বাজীকে সেনাপতি ধনাজী (ধনঞ্জয়জী) যাদব রাওয়ের অধীনতায় রাজস্ব-বিভাগে কারকুনের পদে বার্ষিক শতমুদ্রা বেতনে নিযুক্ত করিয়া দিলেন (১৭০৬ খৃষ্টাব্দ)। ভানুত্রিতয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ রামাজী-মহাদেব সচিব শঙ্করজী নারায়ণের অধীনতায় কর্ম্ম পাইলেন। অবশিষ্ট দুইজন বালাজীর আশ্রয়েই অবস্থিতি করিতে লাগিলেন।
- ↑ এই ‘পন্ত’ শব্দ পণ্ডিত শব্দের অপভ্রংশ-জাত। বঙ্গদেশে ব্রাহ্মণের নামের শেষে যেরূপ “ঠাকুর” শব্দ ব্যবহৃত হইয়া থাকে, মহারাষ্ট্রে সেইরূপ “পন্ত” শব্দের প্রয়োগ সর্ব্বত্র লক্ষিত হয়।