বিদায়-আরতি/দোরোখা একাদশী
দোরোখা একাদশী
(শ্রীযুক্ত গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশযের অঙ্কিত চিত্র দেখিয়া)
উড়িয়ে লুচি আড়াই দিস্তে দেড় কুড়ি আম সহ
একাদশীর বিধানদাতা করেন একাদশী,
মুখরোচক এঁর উপবাস,—দমেও ভারী,—আহো! —
পুণ্য ততই বাড়ে যতই এলান্ ভুঁড়িব কশি!
ওদিকে ওই ক্ষীণ মেয়েটি নিত্য একাহারী
একাদশীর বিধান পালন কর্ছে প্রাণে ম’রে,
কণ্ঠাতে প্রাণ ধুঁক্ছে, চোখে সর্ষে-ফুলের সারি,
তৃষ্ণাতে জিভ অসাড়, মালা জপ্ছে ঠাকুব-ঘবে।
অবাক্ চোখে বিশ্ব দ্যাখে হয় গো বিশ্বনাথ,
দোরোখা এক্ট বিধান’ পরে হয় না বজপাত?
নিষ্ঠাবানের সধবাও করেন একাদশী
পতির পাতে প্রচুর ভাবে ‘আট্কে’ বেঁধে বেখে,
আওটা-দুধে চুমুক লাগান্ পিছন ফিরে বসি’
পাঁতিদাতা পতি-গুরু পাছে ফুলন দেখে।
বিড়াল চাটে দুধের বাট বাড়িয়ে দিয়ে গলা,
পিঁপড়ে মাছি আমের খোলায় উল্লাসে ভিড় করে,
শাস্ত্র যাদের ভয় দেখিয়ে করিয়েছে নির্জ্জলা
তারাই শুধু হাতের চেটো মেল্ছে মেঝের পবে।
তৃষ্ণতে জিভ টান্ছে পেটে, এম্নি রোদের তাত,
খস্খসে দুই চোখের পাতা, হয় না আশ্রুপাত
ফোঁটায় ফোঁটায় শিবের মাথায় ঝারার যে জল ঝবে —
সতৃষ্ণ চোখ সারা বেলা দেখছে শুধু তাই,
কাকটা কখন গুটি গুটি ঢুকে ঠাকুর-ঘরে
অর্ঘ্যপাত্রে মুখ দে’ গেল,—একটুও হুঁশ নাই!
চক্ষু দিয়ে প্রাণ-পাখী হায় মেলছে বুঝি পাখা,
ভির্ম্মি গেছে—ভির্ম্মি গেছে— জল কে দেবে মুখে?
কারো সাড়া নেইকে কোথাও মিথো হাক ডাকা—
একাদশীর বিধান-দণতার গর্জ্জে নাসা সুখে!
অধোমুখে বিশ্ব দ্যাখে, হায় গো বিশ্বনাথ,
পাষাণ ’পরে আশ্রু ঝরে’ পড়ে দিবসরাত।