বিদায়-আরতি/মহানামন্

মহানামন্‌

(প্রথম হলক)

“রাজা নেই ব’লে অরাজক নয়
কপিলবাস্তু পুরী,
সন্তাগাবের সন্তেরা আছে,
বাজা ওর বাজা তুরী।
নগর-জ্যেষ্ঠ শ্রীমহানামন্‌
আদেশ করেন সবে,—
রাজদস্যুর এই দস্যুতা
নিরোধ করিতে হবে।
কোশল-ভূপতি প্রসেনজিতের
তনয় পিতৃঘাতী—
বৃদ্ধ পিতার রাজ্য হরিয়া
দেমাকে উঠেছে মাতি;

পর-ধন পর-রাজ্যের ক্ষুধা
প্রাণে জ্বলে ধ্বক ধ্বক;
দাসীর পুত্র দস্যু হয়েছে
দারুণ এ বিরুধক।
এই নগরের মালঞ্চে ওর
মা একদা ছিল দাসী,
মহামনা মহানামনের দ্বারে
অন্নপিণ্ড গ্রাসি’
পুষ্ট যে হ’ল, তাহারি পুত্র
দুয়ারে পেতেছে থানা,
ঘোচাতে মায়ের দাস্যের স্মৃতি
বুঝি হেথা দেছে হানা।
অধমের ধাবা ধরেছে ধৃষ্ট
ভুলে গেছে উপকার,
আধঃপাতের পিছল পথে পা
দিয়েছে কুলাঙ্গার।
ভেবেছে দর্পী—শাক্যসিংহ
বনে গিয়েছেন ব’লে—
শাক্যকুলের পৈতৃক ভিটা
হরণ করিবে ছলে;
খবর পেয়েছে—হিংসাবৃত্তি
ছেড়েছে শাক্য-কুল—
তাই সে এসেছে নিরস্ত্র জনে
করিবারে নির্ম্মল।
হার মেনে ফিরে গেছে বারেবার,
আবার এসেছে তেড়ে,

ধৃষ্টের চূড়ামণিরে এবার
সহজে দিব না ছেড়ে।
বুদ্ধের জ্ঞাতি শাক্য আমরা
করি না প্রাণের হানি,
তবুও যুঝিব সহজে না দিব
রাজাহীন রাজধানী।
অমোঘ-লক্ষ্য আমরা শাক্য
হইনা মুষ্টিমেয়,
লড়িবে ভৃঙ্গ হাতীর সঙ্গে,
যুঝিব,— ন ছাড়ি শ্রেয়।
ঘোষণা দেছেন নগর জ্যেষ্ঠ
শোনো ওগো শোনো সবে—
প্রাণীর প্রাণের হানি না করিয়া
যুদ্ধ করিতে হবে।
কে করিবে এই নূতন লড়াই?
এস জোড়া-তৃণ এঁটে,
শত্রুরে মোরা প্রাণে না মারিব,
ছেড়ে দিব কান কেটে।
শত্রু-সৈন্য বিব্রত করা
এই আজিকার ব্রত,
কোশলের সেনা ভোলে না যেন রে
শাক্য রণের ক্ষত।
প্রাণে প্রাণে দেশে যায় যাক ফিবে
কান-কাট পল্‌টন
মরণ-অধিক লজ্জার লেখা
বহে যেন আমরণ।”



(দ্বিতীয় হল্‌কা)

সাড়া প’ড়ে গেল পাড়ায় পাড়ায়,
কপিলবাস্তু জুড়ে,
নিদ্রা তন্দ্রা ভয় সব যেন
মন্ত্রেতে গেল উড়ে।
প্রহর না যেতে কর্ম্মে চর্ম্মে
ছেয়ে গেল দশদিক্‌-
মরাল সহসা সাঁজোয়া পরিয়া
সজারু সাজিল ঠিক।
রাজাহীন দেশে জনে জনে রাজা,
জনে জনে দুর্জ্জয়,
স্বদেশের মান রাখিতে সমান
ব্যগ্র ও নির্ভয়।
মজুর কষাণ গোপনে আপন
হাতিয়ারে দ্যায় শাণ,
চারিদিকে শুধু ‘সাজ’ ‘সাজ’ ‘সাজ’,
চারিদিকে ‘হান্‌’ ‘হান্‌’।
বাহির হইল বিরাশী হাজার
শাক্য তীরন্দাজ,
হাতীর সমুখে ভীমরুল-পাঁতি
অভিনব রণ আজ—
একদিকে ব্যুহ কোশল-সেনার
পিষিতে চাহিছে চাপে,
আর দিকে যত হিংসা-বিরত
রুদ্ধ-আবেগে কাঁপে।

বাণে বাণে প্রাণ অস্থির তবু
সমঝি’ যুঝিছে সবে,
প্রাণের হানি না করিয়া যে আজ
যুদ্ধ করিতে হবে।
লঘু-করে বাণ করে সন্ধান
সুলঘু ক্ষিপ্রগতি
অশ্ব-চালনে অঙ্গ-হেলনে
বিদ্যুৎ-হেন জ্যোতি।
তীর হানি’ শুধু কোশল-সেনার
কান-কুণ্ডল কাটে,
ঝরা-পাতা হেন কাটা কানে কানে
ছেয়ে ফেলে মাঠে ঘাটে!
কেটে পাড়ে তূণ ধনুকের গুণ
অমোঘ লক্ষ্যে বিঁধে,
সারথির হাতে বল্গা ঘোড়ার
কেটে দিয়ে যায় সিধে।
করে টলমল বিকল কোশল-
সেনা অদ্ভুত রণে,
বাণ দিয়ে যেন করে বিদ্রূপ
শাক্যেরা খুসী-মনে।
ঢালে ভোঁতা করে শক্রর খাঁড়া,
খড়গ না হানে ফিরে,
অদ্ভূত যোঝা যুঝিছে বৌদ্ধ
নিরঞ্জনার তীরে;
বুকের উপর শত্রুর ছুরি,—
মরণ সে ধ্রুব জানে,

হাতে হাতিয়ার, শক্ররে তবু
মারিবে না কেউ প্রাণে।
হাজারে হাজারে বুদ্ধের জ্ঞাতি
চলেছে মরণ ভেটে,
হাস্য-বদনে মরিছে শাক্য
মৃত্যুর কান কেটে।

(তৃতীয় হল্‌কা)



সন্ধ্য আসিল, ক্ষণিক সন্ধি
আনিল অন্ধকার,
শাক্য-দুর্গে তুর্য্য ধ্বনিল—
ফেরো সবে এইবার।
শাক্য-কুলের মৌমাছি ওরে!
মৌচাকে দে রে চাবি,
হের বিব্রত শ্রাবস্তি-সেনা
হস্তী মদস্রাবী।
আসমান রণ চলে কতখন?
এইবার ফিরে আয় —
শাক্য-গড়ের কোমর-কোঠায়
বাজে তূরী উভরায়।
পড়ে অর্গল দুর্গ-দুয়ারে,
পরিখায় ফোলে জল,
কান-কাটা সেনা কান দাবী ক’বে
করে দূরে কোলাহল!
প্রাণ-হারা সেনা সেই কোলাহল
শুনিবারে নাহি পায়—

দাবীর চেয়ে সে ঢের বেশী দিয়ে
শুয়েছে মৃত্তিকায়।

(চতুর্থ হল্‌কা)



কপিলবাস্তু করি’ অবরোধ
ব’সে আছে বিরুধক,
ঘাঁটি-মুহড়ায় কড়া পাহারার
বেড়া দেছে কণ্টক।
যুদ্ধ নাহিক দীর্ঘ দিবস
কাটিছে স্তব্ধ ব’সে,
শাক্য-দুর্গ দূরন্দাজের
ধাক্কায় নাহি ধ্বসে।
রসদ ফুরায় কি হবে উপায়?
ফৌজ উঠিছে ক্ষেপে,
ছাউনির ধারে ব্যাধি উকি মারে,
কত রাখা যায় চেপে?
চোখ-রাঙানিতে ভুরু-ভঙ্গীতে
চেপে রাখা যায় কত?
অসন্তোষের আক্রোশ নিতি
ফণা তোলে শত শত।
“ছাউনী নাড়িব” কহে বিরুধক।
মন্ত্রী তা শুনি কয়—
“আমাদের চেয়ে অবরুদ্ধেরা
ঢের বেশী ক্লেশ সয়;
দাঁতে তৃণ করি’ তারা তো এখনো
আসেনি শিবিরে সবে;

এখন নড়িলে শত্রু হাসিবে,
লোকে অপযশ কবে;
এখন নড়িলে পায়ে ঠেলা হবে
করগত সিদ্ধিরে।”
সেনাপতি কয় “মুখ দেখানো যে
দায় হবে দেশে ফিরে।”
কহে বিরুধক “তাই হোক; তবে
পল্টন খুসী নয়।”
“আছে কুটনীতি পল্টন মোর”
মন্ত্রী হাসিয়া কয়।

(পঞ্চম হল্‌কা)



শাক্য-পুরের সন্তাগারেতে
সন্ত মিলেছে যত,
শত্রুর দূত এনেছে যে চিঠি
তাহারি বিচারে রত।
শুদ্ধোদনের শূন্য আসনে
বুদ্ধের ছবি ভায়,
বাজাহীন দেশে রাজার যে কাজ
দশে মিলে করে তায়।
পাকা পাকা যত মাথা ঘেমে উঠে,
কথা উঠে কত শত,
পত্রের ’পরে টিপ্পনি করে
যার যেবা মনোমত।
“শাক্যের প্রতি নেই বটে প্রীতি,
নেইও বিশেষ দ্বেষ”,

লিখেছে কোশল, “দ্বার যদি খোলো
দেখে যাই এই দেশ,
তীর্থ সাকার এ দেশ আমার
মায়ের মাতৃভূমি,
এরে ছারখারে দিতে নারি, শুধু
পথ-রজ যাব চুমি।”
“সে তো বেশ” কহে সন্ত জিনেশ;
“বড় বেশ নয়” কন—
সন্ত দেবল, “ছল এ কেবল
চোরের এ লক্ষণ।”
সন্ত নালদ কহিল “রসদ
দুর্গে আদৌ নাই,
আজ নয় কাল দুর্গ-দুয়ার
খুলিতেই হবে, ভাই;
অনশনে নিতি মরে ছেলে বুড়া
পুত্র কন্যা জায়া
কপিলবাস্তু জুড়িয়া পড়েছে
মৃত্যু-কপিশ ছায়া।
মরার অধিক যন্ত্রণা নেই
মরিতেই যদি হয়,
অস্ত্রে মরিব, অনশনে হেন
তিলে তিলে মরা নয়।
তর্ক বাড়িল, আওয়াজ চড়িল
শান্ত সন্তাগারে,
বোঝা নাহি যায় কি যে হবে, হায়,
কোন দল জিনে হারে।

অনশন? কিবা অস্ত্রে মরণ?
বকাবকি এই নিয়ে,—
যমের মহিষ গুঁতোবে কিন্তু
কোন্‌ শৃঙ্গটা দিয়ে?
নাম-গুটিকার কুণ্ডাতে শেষে
গুটি দিল গিয়ে সবে,
গুটি গুণে ঠিক হইল—হা ধিক্‌
দুয়ার খুলিতে হবে!

(ষষ্ঠ হল্‌কা)



দুর্গদ্বারের অর্গল আজি
খুলিতে গিয়াছে টুটে,
পলটন লয়ে পশে বিরুধক
কল-কোলাহল উঠে।
কি অদ্ভুত? কোথা গেল দূত —
ময়ূরপুচ্ছধারী?
পলটন লয়ে কেন পশে পুরে?
এ দেখি জুলুম ভারি!
একা এসে দেশ দেখে চলে’ যাবে
এই কথা ছিল আগে,
বাজদস্যুর দস্যূ-স্বভাব
কোন্‌ ছুতা পেয়ে জাগে?
শাক্যপুরীর ধনৈশ্বর্য্য
দেখে আপনার চোখে
লোভের নাড়ীটা হয়েছে প্রবল
ঠেকাবে কে বল ওকে?

পল্‌টন্‌গুলা করে লুণ্ঠন,
যার-তার ঘরে ঢুকি’
নাগরিকে আর সৈনিকে, হায়,
বেধে গেল ঠোকাঠকি।
ভূলি প্রতিজ্ঞা রাজা বিরুধক
হুকুম করল জারি—
“শাক্যের কুল কর নির্ম্মূল
কি পুরুষ কিবা নারী।”
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দন-রোল—
কাঁদে নারী কাঁদে শিশু,
নাহি দেয় কান তাহে শয়তান
নিদারুণ বিজিগীষূ!
আগুন জ্বলিছে, খড়গ ঝলিছে,
রক্তে ফিনিক্‌ ছোটে,
তর্জ্জনে হাহাকারে একাকাব
আর্ত্ত ধূলায় লোটে;
আহত লোকের বুকের উপরে
ছুটে চলে ক্ষেপ। ঘোড়া,
তাগুবে মাতি’ নাচে ক্ষেপ হাতী,
বীভৎস আগাগোড়।

(সপ্তম হল্‌কা)



নগরমূখ্য শ্রীমহানামন্‌
ক্ষুব্ধ হৃদয়ে হায়,—
জীবন ভিক্ষা মাগিতে প্রজার
চলেছেন দ্রুতপায়।

চলেছে বৃদ্ধ ভগ্ন-হৃদয়
মরণ-পাংশু মুখে,
নগ্ন চরণে দাঁড়াইতে রাজ-
দস্যুর সম্মুখে।
চলেছে সন্ত সুগত পন্থ
দুটি হাত বুকে জুড়ে—
দেশের দশের দুর্গতি দেখি’
দুখের দহনে পুড়ে’।
ভাবিছে বৃদ্ধ “এ কি রে বিষম,
এ কি রে মনস্তাপ,
কোন্‌ কালামুখ রাজ্যকামুক
চিন্তিল মনে পাপ,
সে পাপের ছায়া কায়া ধরি’ পশে
কপিলবাস্তু-পুরে,
পুণ্যের ঘরে একি অনাচার
হাহাকার দেশ জুড়ে।
বুদ্ধের দেশে এ কি, র যুদ্ধ.
একি হানাহানি হায়,
প্রাণ দিলে যদি রোধ করা যেত
রুধিতাম আমি তায়।”

(অষ্টম হল্‌কা)



ভিক্ষা মাগিছে বৃদ্ধ আপন
দাসীর ছেলের কাছে,—
“জয়তু রাজন্‌! বুড়া একজন
প্রসাদ তোমার যাচে;

নিজ পরিচয় দিতে নাহি ভয়,
মহানামনের নাম
হয়তো শুনেছ,— জননীর মুখে,—
ওগো কীর্ত্তির ধাম!
অতিথি একদা হ’ল তব পিতা
আমারি সে উপবনে,
ভাবী রাণী সনে নয়নে নয়নে
মিলিল শুভক্ষণে;
এ বুড়া একদা মায়েরে তোমার
করেছে সম্প্রদান,—”
“জানি তা, জানি তা,” কহে উদ্ধত,
“ছাড়ি ভণিতার ভাণ
কি প্রসাদ চাও খুলে বল তাই।”
“নিরীহ প্রজার প্রাণ”—
কহিল বৃদ্ধ নীরবে সহিয়া
অবনিয় অপমান।
“নিজ.প্রাণ লয়ে পালাও বৃদ্ধ,
অধিক কোরো না আশ,”
কহে বিরুধক—মূর্ত্ত বিরোধ—
হাসিয়া অট্টহাস।
“রাজন!” “কি চাও?—যাও, যাও, যাও,
পালাও সপরিবারে,
এর বেশী কিছু কোরো না ভিক্ষা
আমার এ দর্‌বারে।
কান-কুণ্ডল কেটেছে আমার
তোমার নিরীহ প্রজা,

সমুচিত সাজা দিব আমি তাঁর
বলে’ দিন এই সোজা।”
মৌন ক্ষনেক রহিয়া বৃদ্ধ
কহেন জুড়িয়া কর-—
“জননীরে স্মরি” এ ভিক্ষ তবে
দাও কে কৌশলেশ্বর,—
নিশ্বাস রুধি আমি যে অবধি
ডুবিয়া থাকিব জলে
সে অবধি লোক কোরো না আটক,—
যাক যেথা খুসি চ’লে।
তার পর তুমি দিও জনে-জনে
শাস্তি ইচ্ছামত।”
“ভাল, তাই হবে”— ব’লে রাজা ভাবে—
বুড়ার দম বা কত?
কত পা পালাবে?—যাবে দেখা যাবে;
বুড়াটা পালায় যদি!—
তবে এ নগরে কি পথে কি ঘরে
রক্তে বহাব নদী।”

(নবম হল্‌কা)



আবারিত দ্বার পালায় যে যার
যেথা দু’চক্ষু যায়,
কপিলবাস্ত হরিষে বিষাদে
মূরছি পড়িল প্রায়!
কেউ বেগে ধায় পিছে না তাকায়
প্রাণ নিয়ে সোজাসুজি,

কেউ যেতে যেতে ফিরে এসে ফের
তুলে নিয়ে যায় পুঁজি।
বসন ভূষণ ফেলে কেহ ধায়
ছেলে আঁকড়িয়া বুকে,
ফ্যল্‌ফ্যাল্‌ চায় ইতি উতি ধায়
কথা নাই কারো মুখে;
সোম কুশাসনে জড়ায়ে গোপনে
বিপ্র পালায় রড়ে,
যেতে তাড়াতাড়ি শ্রেষ্ঠীর ভূঁড়ি
ঝন্‌ ঝন্‌ রবে নড়ে!
কাণ্ড দেখিয়া কোশল-সৈন্য
চোখ পাকালিয়া চায়,
বাজার হুকুমে দুহাত গুটায়ে
দাঁতে দাঁতে ঘষে হায়!

(দশম হল্‌কা)



হোথা বিরুধক বিরক্ত মনে
পাটলি হ্রদের কূলে
পল গণি’ গণি’ হয়েছে অধীর
ধবল-ছত্র-মূলে।
“জনহীন প্রায় হ’ল যে নগরী,
মন্ত্রী, এ কী বালাই,
এখনো যে দেখি মহানামনের
উঠিবার নাম নাই।
জ্বলে দেহ রাগে, কে জানিত আগে
বুড়ার এতটা দম?

ফেরফার কিছু নেই তো ভিতরে?—
সুড়ঙ্গে সংক্রম?—
ডুব দিয়ে কেউ দেখুক্‌ কি হ’ল,—
ফেরফার থাকে যদি
উচিত শাস্তি করিব বুড়ার,
রক্তে বহাব নদী।”
মনে মনে কয় মন্ত্রী—“তেমন
কিসে তার হবে সখে,
লোক কই আর?—রক্ত-তৃষা কি
মিটাবে অলক্তকে?”

(একাদশ হল্‌কা)



পল গণি’ গণি’ প্রহর কেটেছে,—
না রে আর দেরী নয়,
কোনো কৌশলে ফাঁকি দিয়ে বুড়া
পালায়েছে নিশ্চয়।
পাটলির জল তোলপাড় করে
কোশল-রাজের লোক,
মহানামনেরে পাক্‌ড়া করিতে
নাকে মুখে লাগে জোঁক।
পাঁক তোলে আর আঁকুবাঁকু করে,
ঢোকে ঢোকে জল খায়;
জলের তলায় কই সুড়ঙ্গ?
কই বুড়া কই? হায়!
সহসা ফুকারি’ কহিল জনেক
“না না পালায়নি কেহ,

শালের শিকড় আঁকড়িয়া আছে
আড়ষ্ট মৃতদেহ!
ছল ক’রে বুড়া ডুবেছিল জলে
বুড়ার কি কড়া জান,
জলের তলায় মরিল হাঁপায়ে
বাঁচাতে পরের প্রাণ!”
ক্রোধে চীৎকারি কহে বিরুধক—
“ভারি ভাবি বাহাদুরী!
খাবি খেতে খেতে খল-পনা— ম’রে
গিয়ে তবু জুয়াচুরী!”

(দ্বাদশ হল্‌কা)



ক্লেশের মবণ বরণ করিয়া
অমব হইল কারা?
স্মৃতি-ছায়াপথ উজলি’ জগৎ
তা’রা হ’য়ে আছে তারা।
মরণের সাথে করি মহারণ
কারা হল মৃতুঞ্জয়,
দেশ-ভায়েদের আয়ূ কে বাড়ল
নিজ আয়ু করি ক্ষয়?
মানুষে মানুষে বিশ্বাস কার
প্রতি নিশ্বাসে বাড়ে?
কার সংযম চরম সময়ে
যমের দণ্ড কাড়ে?
কে ধর্ম্মিষ্ঠ স্বদেশনিষ্ঠ
ধর্মের রাখি’ মান

দেশের সেবায় করিল সহজে
নিজের জীবন দান?
বীরের স্বর্গে অমল অর্ঘ্য
কারা পায় সব আগে?
মহানগমনের মহা নাম জাগে
তা’-সবার পুরোভাগে।
শাক্যকুলের দ্বিতীয় সিংহ
বুদ্ধ সে গৃহবাসী-
আড়াই হাজার বছরেও ম্লান
নহে তার যশোরাশি।[]


  1. রক্‌হিল-রচিত বুদ্ধ-চরিত অবলম্বনে