বিদায়-আরতি/স্কন্দ-ধাত্রী

স্কন্দ-ধাত্রী

[সপ্তর্ষির পত্নীদের মধ্যে বশিষ্ঠের স্ত্রী অরুন্ধতী বাদে বাকী ছয়জনের পত্নীর নাম যথাক্রমে বর্ষয়ন্তী, অভ্রযন্তী, অম্বা দুলা, নিবত্নী ও চুপুনীকা। এরাই শরবনে পরিত্যক্ত ইন্দ্রের শক্র তারকাসুরের ভাবী-দমন-কর্ত্তা রুদ্রের পুত্র স্কন্দ বা কার্ত্তিকেয়-দেবের ধাত্রী। এঁদের অন্য নাম কৃত্তিকামণ্ডলী।]

কই রে কোথা বর্ষয়ন্তী? অভ্রয়ন্তী কই?
—নাম ধ’রে আজ আকাশ-বাণী ডাক দিয়েছে ওই।
শূন্য নভে বুলাস্‌নে আর ব্যথার অনিমেষ,
দৈব হ’ল সদয়, বুঝি হবে ব্যথার শেষ।
প্রাণে পুষিস্‌ স্নেহের ক্ষুধা, হৃদয় উপোষী,
শুনিস্ নে কি শিশুর কান্না কাঁদায় ক্রন্দসী?
গর্ভে ছেলে ধরি নি তাই শূন্য রবে কোল?
শুকিয়ে যাবে সব মমতা? শুন্‌ব না মা-বোল্‌?
এমন কঠোর ন’ন্‌ বিধাতা, আকাশ-বাণী তাই
ডাক দিয়েছে সফল হ’তে, চল্‌ ছ’বেনে যাই।
খুঁজে দেখি তিন ভুবনে কোথায় সে কুমার,
রুদ্র-তেজে জ’ন্মে যে কোল পায়নিক উমার।
এইদিকে আয়, এইদিকে আয়, এইদিকে আয়, বোন্‌।
কচি ছেলের পাস্‌ কি আওয়াজ? কান পেতে ভাই শোন্‌।
সন্দেহে সৌভাগ্য-হারা আমরা অভাগী—
একটি শিশুর একটু পরশ ছয় বোনে মাগি।
 * * *
এইদিকে আয়! ওই দ্যাখা যায়! আহা চমৎকার!
চোখের পলক কেড়ে-নেওয়া মুখ দ্যাখো বাছার!

সাগর-সেঁচা মাণিক এ যে সাতটি রাজার ধন,
দৈব-বাণী ভুল বলে নি, ভুল বলে নি, বোন্‌!
এ যেন রে নিখিল নারীর মাতৃ-হিয়ার সাধ,
স্বপ্নে-গড় মূর্ত্তিমন্ত জীবন্ত আহলাদ!
এ যেন রে দিব্যছটা মৃত্তিকা ’পরে
ভানুর ভ্রূণ ভোরাই মেঘের সূতিক-ঘরে!
জন্মেছে এই ফুল্‌কিটুকুন্‌ নেহাৎ অসহায়
দৃষ্টিবিষা বিষধরে ঘেরা বনের ছায়।
নাইক গেহ মায়ের স্নেহ, নাইক বাছার নীড়,
খাগ্‌ড়া-শরের খাঁড়ার মতন পাতার খালি ভিড়।
ভিড় ক’রে কি করিস্‌ তোরা? সর্‌ তে দেখি, দে,
দেখিস্‌ নে কি দুধের বাছার পেয়েছে ক্ষিদে?
 * * *
ছয় মা দেবে পীযুষ, ছেলের একটি সবে মুখ;
কোন্‌ মাকে দুখ্‌ দিবি, ছেলে? কার ভরাবি বুক?
ছয় মায়েরি পীযুষ-ব্যথা, সোয়াস্তি নেই আর!
হঠাৎ এ কি! দ্যাখ্‌ দিদি দ্যাখ্‌! এ কি চমৎকার!
সত্যি এ কি? স্বপ্ন দেখি? এ কি রে বিস্ময়
দেখ্‌তে দেখ্‌তে নতুন মুখ আর নতুন অধর হয়!
এক আকাশে উদয় যেন হ’ল রে ছয় চাঁদ,
এক লহমায় মিটিয়ে দিতে ছয় জননীর সাধ!
আর কেন বোন্‌ বষয়ন্তী আর কেন বিমন?
ছয় মায়েরি ক্ষোভ মিটাতে কুমার ষড়ানন!
 * * *
ছয় জননী স্তন্য পিয়াই চাঁদ-ঝোলানো দোলাতে,
ছয় বোনে হিম্‌শিম্‌ খেয়ে যাই একটি ছেলে ভোলাতে।

কচি-কচি ঠোঁট রয়েছে হৃদয়-সুধার সন্ধানে,
চোখ দেখে ওর হয় গো মনে ও আমাদের মন জানে!
সবার কাছেই নিচ্ছে ও যে নিচ্ছে পরম আগ্রহে,
জীবন্ত মৌচাক ও যেন চিত্ত-মধুর সংগ্রহে!
উঠ্‌ছে বেড়ে পীযুষ কেড়ে মধুর ভরে টুপ্‌ টুপে,
খুশীতে মন তুষ্ট ক’রে নেবার যা সব ন্যায় চুপে।
পিয়াই ওরে আট-পহরে আনন্দেরি ছন্দ গান;
ওর দে’-আলোর দীপ্ত আলোয় চন্দ্রতপন স্পন্দমান!
পিয়াই স্মৃতি, পিয়াই আশা, স্বপ্ন পিয়াই স্তন্য সাথ,
তরুণ আঁখির তারায় হেরি অরুণ-আলোর সুপ্রভাত।
সেরা-সেরা তারায় ঘেরা হিন্দোলা ওর প্রশস্ত,
সোনার কাঠি ছোঁয়ায় ধ্রুব, রূপার কাঠি অগস্ত্য!
নিদ্‌ মহলে সিঁদ কাটে ও, স্বপ্নে চীয়ায় সুপ্তকে!
পরম লোভী হাত বাড়িয়ে ধর্‌তে ও চায় ‘লুব্ধকে’!
ত্রিপুর-বধের বিপুল ধনু হয়েছে ওর খেল্‌না সে,
কৃপাণ-পাণি কাল-পুরুষের খড়গ দেখে খুব হাসে।
হাস কুমার! খেল কুমার! অপ্রসূতির আঁতুর-ঘরে,
দুর্ভাগাদের আঁচল-আড়ে, বঞ্চিতাদের ধন্য ক’রে।
ছয়-ধারাতে স্তন্য পিয়াই, শক্তি চীয়াই ছয় ধারাতে,—
—রক্ত হিয়ায় ক্ষীর মমতায়,—সঞ্চারি বল স্তন্য সাথে,—
শক্তি যাতে রয় নিহিত—সেই শুভ—সেই স্বতঃস্ফূর্ত্তি—
আত্মাহীনে আত্মা যে দ্যায়—পুণ্যেরি সে ভিন্নমূর্ত্তি।
মূর্ত্তিমন্ত সান্ত্বনা মোর শক্তিতে হও ওতঃপ্রোত;
স্তন্য পিয়াই আত্মপ্রদ, পীযুষ পিয়াই বলপ্রদ।
 * * *

পীযূষ সনে কে পিয়ালি প্রাণের জ্বালা রে,
ছয় বোনেরি গলায় মোদের জ্বালার মালা রে!
অকারণে নির্ব্বাসিত স্বামীর সন্দেহে;
অন্যায়েরি দহন দহে মোদের মন দেহে।
স্পষ্ট ক’রে ভাব্‌তে না চাই, ভাব লে হারাই জ্ঞান,
অভিশাপের তাপে পাছে হয় রে অকল্যাণ।
অগ্নিকে হায় তুষলে স্বাহা মোদের রূপ ধ’রে,
ঋষির মনে লাগ্‌ল ধোঁকা, দিলেন দূর ক’রে,
সন্দেহে মন বিষিয়ে গেল স্বামী হলেন পর,
ঋষি স্বামীর পুরুষ-রিষে বিষম আথান্তর।
ঘর হারালাম বর হারালাম আমরা ছ’জনা,
পণ্ড হ’ল নারী-হিয়ার শিশুর কামনা!
প্রাণের যে সাধ,—আচম্বিতে পঙ্গু নেহারি,
আকাশে নিশ্বাসের জ্বালা বিফল বিথারি।
ক্ষুব্ধ শরীর ক্ষুব্ধ শোণিত ক্ষোভের পীযূষ পান
কর্‌ছে কুমার, অন্যায়ে সে কর্‌বে অবসান।
বাছা ওরে কার্ত্তিকেয়! তুলাল কৃত্তিকার,
সুরাসুরের কর্‌বে তুমি অন্যায়ে সংহার।
 * * *
রুদ্র-তেজে জন্মেছে যে আভ্যুদয়িক তার,
সময় ব’য়ে যায় যে, দ্যাখা নাইক পুরোধার;
কই পুরোহিত? কই পুরোহিত? অন্বেষি মহী,
ঐ যে ঋষি বিশ্বামিত্র বিশ্ববিদ্রোহী!
উনিই হবেন যাজক মোদের সকল ক্রিয়াতে;
পারেন উনি আপন গুণে শক্তি চীয়াতে;

দৈব-জয়ী ঐ যে মুনি, ঐ যে তপোধন,—
ছয় বোনে চল্‌ প্রণাম করি, জানাই নিবেদন।
 * * *
আভ্যুদয়িক না হ’তে শেষ কাণ্ড এ কি, হায়,
দিগ্‌গজেদের পাক্‌ড়াতে শুঁড় দামাল ছেলে ধায়!
পাঁচোট্‌ পূজার দিন বাছনি আছ্‌ড়ালে হাতী,
আচোট আকাশ উঠল কেঁপে চাঁদ-তারার পাতি।
কাঁপ্‌ল সাগর আর ধরাধর বাসুকী চঞ্চল,
স্বস্তি না পায় অস্থিরতায় ত্রস্ত অসুরদল।
রুদ্র-শিশুর শক্তি-দাপে কাঁপে অসুর-রাজ;
তারক হেরে মারক গ্রহ শিশুর দেহে আজ।
বালক-বীরের আলীক ভয়ে ইন্দ্র ব্যাকুল-মন,
হাজার আঁখি মেলে কেবল দ্যাখে অলক্ষণ!
তারক-নিপাত রইল মাথায়, রক্ত নয়নে—
বজ্র নিয়ে ইন্দ্র এলেন শিশুর দমনে।
অসুরে যে রাজ্য নেছে, নাই সে খয়াল হায়;
রোষের ভরে শিশুর ’পরে বজ নিয়ে ধায়।
বাছার গায়ে বাজ হানে রে!...বুজ্‌তে গেলাম চোখ,
মুদ্‌ল না নক্ষত্র-নয়ন—পড়্‌ল না পলক!
দেখতে হ’ল বাধ্য হ’য়ে...কিন্তু কী দেখি!...
বিস্ময়ে বাক্‌রুদ্ধ,—অবাক্‌— কুমার করে কী।
বজ্র লুফে ধর্‌ল হাতে—আঙুল চিরে তার
পড়্‌ল যত বিন্দু তত রুদ্র-অবতার;
হুঙ্কারে দিক্‌ কাঁপিয়ে দাঁড়ায় কুমারকে ঘিরে
রুষ্ট চোখে ওষ্ঠ চেপে উদ্ধত শিরে।

স্কন্দে বলে’ “ইন্দ্র হ’য়ে ত্রিলোক তুমিই নাও,
ঈশ্বরতার ঈর্ষাজরা ইন্দ্রকে তাড়াও।”
রুদ্র-সেনায় ইন্দ্র-সেনায় যুদ্ধ আসন্ন,
এমন সময় কে আসে ওই মরাল-নিষণ্ণ।
মাঝে এসে বলেন তিনি, “সম্বরে দেবরাজ,
কী বিপরীত-বুদ্ধি, মরি, দেখি তোমার আজ।
শত্রু তোমার মার্‌বে যে হায় শত্রু ভেবে তায়
যুদ্ধ কর?—বজ হানে। রুদ্র-শিশুর গায়?
অসুর-কুলের অভিমানের অন্যায়ে জর্জ্জর
অন্যায়ে চা ও জয়ী হ’তে অন্য জনের পর।
রদ্রু-রোষে স্বর্গ-মর্ত্ত হবে যে ছারখার,
অস্ত্র রাখো; এই বালকে দিয়ে সেনার ভার
রথ ঘুরিয়ে এক্‌লা তুমি যাও ফিরে দুর্গে,
এই শিশু কাল বধ্‌বে জেনে তাবক-অসুরকে।”
 * * *
রুদ্র-সেনার জয়-রবে কে ফির্‌ল হরষে—
জন্ম যাহার রুদ্র-তেজে বহ্নি-উরসে!
ঘুমে আল হুলাল আমার লড়াই খেলিয়ে,
ময়ূর জাগে তারায়-ঘেরা পেখম মেলিয়ে।
লক্ষ তারা শিশুর সমর দ্যাখার প্রত্যাশে
চোখ চেয়ে সব ঘুমিয়ে গেছে আকাশ-ফরাশে।
হিন্দোলাতে স্কন্দ ঘুমায়, চন্দ্র জেগে থাক্‌!
ব্রহ্মী-নিশার প্রহর গণি’ ছয় বোনে নির্ববাক্‌!
চতুর্ম্মখের বাক্য স্মরি’ আশার আশঙ্কায়
আন্দোলিত চিত্ত মুহু, মন কত কি গায়

ব্রহ্মবাণী মিথ্যা হবার নয়কো, তবে কি—
অত্যাচারের অন্তকারী বালক হবে কি?—
বজ্রকাটা আঙুলে যার জ্যোৎস্না জড়িয়ে,
পাড়িয়েছি ঘুম ঘুম-পাড়ানি মন্ত্র পড়িয়ে,
সে মোর হবে দৈত্যজয়ী?...পূর্‌বে মনের সাধ?...
অন্যায়েরি বন্যাজলে পার্‌বে দিতে বাঁধ?...
অন্যায়ে কেউ বালক-বধের ফনদী আঁটে, হায়,
শিশুর দেহও শত্রু দেখে খামোক চম্‌কায়!
অন্যায়ে কেউ হত্যা করে নারীর নারীত্ব,
পুরুষ-রিযের বিষে-জরা জীবন ও চিত্ত।
অন্যায়ে কেউ ইন্দ্রলোকের কর্ত্ত হ’তে চায়।
অন্যায়েরি বন্যাধারায় জগৎ ভেসে যায়।
অন্যায়েরি অভিযানে স্বর্গ সে ত্রস্ত;—
অন্যায়ে হায় অস্ত প্রায় আজ পুণ্য সমস্ত!
অন্যায়ের এই সৈন্তা-ঘটায় এক্‌লা এ বালক—
করবে ছিন্ন? তিন-লোকে ফের জ্বাল্‌বে সত্যালোক?
আন্‌বে শ্রেয় কর্ত্তিকেয়?... কখন্‌ হবে ভোর? ..
পথ চেয়ে রই সূর্য্য-রথের, ভাবনাতে বিভোর।
কোন্‌ হেরা ওই ঘুম চোখে যায়। সুধাই আয়, সখী!
অন্ধকারের আঁচল ভিজে উঠল আলোয় কি?
 * * *
আকাশ ফিকে হ’তে হ’তেই আঁধার একি হায়!
ঘুরিয়ে ঘোড়া উল্টো দিকে অরুণ ফিরে যায়!
সূর্য্যে প্রবেশ কর্‌লে শশী। সকল আলো লোপ!
অকাল-রাহু-অস্থর আসে মূর্ত্তিমন্ত কোপ!

আঁধার নভ পাপের ভিড়ে, বিশ্বে জাগে ত্রাস,
বাঘের রথে গ্রসন্‌ আসে কর্‌তে জগৎ গ্রাস।
ত্রসন্‌ আসে পিশাচ-রথে, জম্ভ-কুজম্ভ,
নিশানে কাক কালনেমি সে জীবন্ত দম্ভ!
ভ্রূকুটিতে ভুবন ভ’রে তারক সে দুর্ম্মদ
যোজনজোড়া হাজার ঘোড়ার ছোটয় বিপুল বথ।
আমাতিথির অতিথি ওই প্রচণ্ড ধূর্ত্ত
রোদনে দিক্‌ ভরিয়ে চলে, বৌদ্র মূহুর্ত্ত!
রথের ধুলায় ছায় নভতল, রাত্রি অকালে,
উর্দ্ধে ধ্রুব নিম্নে তপন সবায় ঠকালে।
ছুঁচ গলে না এম্‌নি জমাট ভরাট অন্ধকার,
গ্রাসের ত্রাসের আসন্নতায় বিশ্বে হাহাকার!
পলক-ভোল। তারার আঁখি তাও সে অন্ধপ্রায়,
কোলের মানুষ যায় না দ্যাখা, এম্‌নি আঁধার, হায়!
কোথায় গেলি অভ্রয়ন্তি!... বাজ পড়ে মাথে,
সাতটি দিনের বাছা মোদের নাই রে দোলাতে
ঘুমন্তে কে কর্‌লে চুরি!...ঘট্‌ল অনিষ্ট,...
হায় লো মেঘয়ন্ত্রী! মোদের মেঘ্‌লা অদৃষ্ট!
 * * *
অন্ধকারের বুক চিরে ও কাদের সিংহনাদ?
ভয়ের আঁধার ছিন্ন-করা জাগ্‌ল কি! ...আহলাদ
বিদ্যুতেরি হাজার-নরী দুলিয়ে তমসায়।
সংশয়েরি তমম্বিনীর কর্‌লে কে রে সায়!
কে আসে নিঃশঙ্ক মনে ময়ূর-বাহনে
অসুর-ছায়া-পিণ্ডী-কৃত-তিমির-দহনে!

ইন্দ্রদেবের মুকুট-বোঝা তারণ ক’রে যে
তারক নামে আপ্‌নাকে হায় জাহির করেছে,
তাগ ক’রে তায় বাণ হানে কে শৌর্য্য-অবতার?
গ্রসন-ত্রসন-জন্ত-মহিষ আরস্তে চীৎকার!
ছয়-মায়েরি তুলাল ও যে বালক ষড়ানন।
অসুর সাথে শিশুর লড়াই! অপূর্ব্ব এই রণ!
পল্টনে কার হানে কুমার শক্তি শতঘ্নী—
লক্ষ নাগের জিহ্বা যেন উগারে অগ্নি!
বধির ক’রে হাজার বজ্র গর্জ্জে যুগপৎ,...
টুট্‌ল বুঝি তিমির-কারা, দৈত্য হ’ল বধ!...
কুড়িয়ে-পাওয়া কুমার মোদের অসুরজয়ী, ভাই,
জয়ধ্বনি কর্‌তে তোরা কাঁদিস কেন, ছাই!
ছোঁয়াচে এই সুখের কান্না... কাঁদতে জেনেছি...
অম্বা! দুলা।! নিবঘ্নী! বোন্‌ স্বপ্ন দেখেছি।
তোলাপাড়া কর্‌তে মনে পদ্মযোনির বাণী
কখন যে হায় ঘুমিয়ে গেছি কিছুই নাহি জানি।
ভোরের আলো, দ্যাখ্‌ সুমেরুর গায় কি লেগেছে?
ছয় জননীর মেহের নীড়ে কুমার জেগেছে?
উষার হাসি মলিন!...মেঘে সূর্য্য ডুবে যায়—
এ যে আমার স্বপ্নে দ্যাখা, স্বপ্নে দ্যাখা হয়!
স্বপন আমার ফল্‌তে সুরু হয়েছে মন কয়,
ভোরের স্বপন সফল হবে হলে রে নিশ্চয়।
ক্লেশের এবার শেষ হবে রে শঙ্কা ফুরাবে।
ছয় জননীর ভাগের ছেলে ভাগ্য ফিরাবে।
অপরাজের রাজমহিমায় ছাই দেবে এ ঠিক—
আনন্দ ছয় কৃত্তিকার এই অনিন্দ্য কীর্ত্তিক।