বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ/স্বাধীন কর্ম্মক্ষেত্রে
স্বাধীন কর্ম্মক্ষেত্রে
বিদ্যাসাগরের সরকারী কর্ম্ম হইতে অবসরগ্রহণ দেশ ও দশের পক্ষে প্রভূত কল্যাণকর হইয়াছিল। তাঁহার একটা মোটা রকমের আয় কমিয়া গেল বটে, কিন্তু তিনি মোটেই বিচলিত হইলেন না—তাঁহার স্বরচিত পুস্তক বিক্রয়ের আয়ই তখন মাসিক তিন-চার হাজার টাকা।[১] তিনি এইবার স্বাধীনভাবে কর্ম্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইবার সুযোগ পাইলেন।
মেট্রোপলিটান্ ইনষ্টিটিউশন
মেট্রোপলিটান কলেজের প্রতিষ্ঠা তাঁহার অতুলনীয় কীর্ত্তি। ইহাই বাঙালীর নিজের চেষ্টায় নিজের অধীনে স্থাপিত উচ্চতর শিক্ষার প্রথম কলেজ। মেট্রোপলিটানের নাম এখন বিদ্যাসাগর কলেজ হইয়াছে। পুর্ব্বে ইহার নাম মেট্রোপলিটান ছিল না। ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে কয়েকজন প্রতিষ্ঠাপন্ন ভদ্রলোক মিলিয়া শঙ্কর ঘোষের লেনে ‘ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুল’ নামে এক ইংরেজী বিদ্যালয় স্থাপন করেন। সরকারী স্কুল অপেক্ষা অল্প বেতনে মধ্যবিত্ত ঘরের হিন্দু-বালকগণকে ইংরেজী শিক্ষা দান করাই এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল। মিশরীদের স্কুলে মাহিনা কম ছিল বটে, কিন্তু খৃষ্টধর্ম্ম প্রচারিত হইত বলিয়া হিন্দুরা সেখানে ছেলেদের পাঠাইতে চাহিত না। প্রথম কয়েক মাস প্রতিষ্ঠাতারাই স্কুল পরিচালনা করিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর সরকারী চাকরি ছাড়িয়া দিয়াছেন জানিতে পারিয়া তাঁহারা বিদ্যাসাগরকে ও তাঁহার বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্কুল-পরিচালনে সহায়তা করিতে আহ্বান করিলেন। তাঁহারা স্বীকৃত হইলে এক পরিচালক সমিতি গঠিত হইল। ১৮৬১, মার্চ মাস পর্য্যন্ত স্কুলটি এই সমিতি কর্ত্তৃক পরিচালিত হইয়াছিল। পরিচালকবর্গের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতান্তর উপস্থিত হওয়াতে এই বৎসরে দুইজন প্রতিষ্ঠাতা পদত্যাগ করিয়া এক প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্যালয় স্থাপন করিলেন।
শিক্ষাপ্রচার এবং বিদ্যালয় পরিচালনে বিদ্যাসাগরের কৃতিত্ব অসাধারণ। তা ছাড়া তিনি নিঃস্বার্থভাবে সাধারণের কার্য করিতেন। ইহা বুঝিয়াই অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা বিদ্যাসাগর এবং রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ, রামগোপাল ঘোষ, রায় হরচন্দ্র ঘোষ বাহাদুর, রমানাথ ঠাকুর ও হীরালাল শীলের হাতে বিদ্যালয় পরিচালনের ভার দিয়া অবসরগ্রহণ করিলেন। নূতন কমিটি গঠিত হইল। বিদ্যাসাগর মহাশয় সেক্রেটারি নিযুক্ত হইলেন। স্কুলের নানারূপ সংস্কারে হাত দিয়া বিদ্যালয়ের সুপরিচালনার জন্য তিনি কতকগুলি নিয়ম প্রণয়ন করিলেন। বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য—হিন্দু-বালকগণকে ইংরেজী এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে সম্যকরূপে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা। ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দের গোড়া হইতে বিদ্যালয়টির নূতন নাম হয়—হিন্দু মেট্রোপলিটান ইনষ্টিটিউশন। ইতিমধ্যেই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পরিচালনার গুণে ছাত্রগণ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অপূর্ব্ব কৃতিত্ব দেখাইতে লাগিল। রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ (১৮৬৬) এবং হরচন্দ্র ধোষের (১৮৬৮) মৃত্যুতে এবং তৎপুর্ব্বে অপর তিনজন সদস্যের পদত্যাগে বিদ্যালয় পরিচালনের সম্পূর্ণ ভার বিদ্যাসাগরের উপর পড়িল। ১৮৭২, জানুয়ারি মাসে দ্বারকানাথ মিত্র ও কৃষ্ণদাস পালকে লইয়া তিনি এক কমিটি গঠন করিলেন এবং বিদ্যালয়ে যাহাতে বি. এ. পর্যন্ত পড়া যায় তদ্বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করিলেন। বি. এ. পড়াইবার অধিকার না পাইলেও ইহাতে ফার্ষ্ট আর্টস্ পর্য্যন্ত পড়িতে পারা যাইবে, ইহা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুর করিলেন। ১৮৭৪ সালে ফার্ষ্ট আর্টস্ পরীক্ষায় মেট্রোপলিটান ইনষ্টিটিউশন গুণানুসারে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিল। দেশীয় লোকের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের এই সাফল্য দেখিয়া সকলেই বিস্ময়ান্বিত হইয়াছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার সাট্ক্লিফ সাহেব বলিয়াছিলেন,—“পণ্ডিত তাক্ লাগাইয়া দিয়াছেন!” ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে মেট্রোপলিটান ফার্ষ্ট গ্রেড কলেজে পরিণত হইল, এবং ১৮৮১ খৃষ্টাব্দে এখান হইতে ছাত্রেরা বি. এ. পরীক্ষা দিতে প্রেরিত হইল। পত্মীক্ষার ফল ভালই হইল।
ইউরোপীয় শিক্ষকের সাহায্য ব্যতীত কোনো কলেজ যে ভাল চলিতে পারে অথবা অধ্যাপনা ভাল হইতে পারে, ইহা লোকের ধারণার অতীত ছিল। বিদ্যোগর নিজের কলেজে ভারতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত করিয়া দেখাইলেন, কলেজের অধ্যাপনায় বিলাতী অধ্যাপকেরাই সর্বশ্রেষ্ঠ নয়, ভারতীয় শিক্ষকের দ্বারা অনুরূপ, এমন কি কোনো কোনো বিষয়ে উৎকৃষ্টতর শিক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্ত্তিত করা যাইতে পারে। মেট্রোপলিটানের সাফল্য দেখিয়া অন্যান্য কলেজ হইতে অনেক ছাত্র এই কলেজে ভর্তি হইতে লাগিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় শিক্ষা বিস্তারের এক নূতন দিক খুলিয়া দিলেন। সত্য কথা বলিতে কি, বে-সরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠার তিনিই প্রবর্তক। তিনি যখন যে-কাজে হাত দিতেন, সে-কাজ সার্থক না করিয়া ক্ষান্ত হইতেন না। তা ছাড়া শিক্ষা-বিষয়ে তাঁহার অভিজ্ঞতা ছিল বিপুল। সারা বাংলার শিক্ষা বিস্তারে যে-প্রতিভা নিযুক্ত ছিল, তাহা একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীভূত হওয়াতে, সেই প্রতিষ্ঠান অতুলনীয় সফলতা লাভ করিল।
বিদ্যাসাগরের আর একটি বড় গুণ ছিল। তিনি পরের উপর নির্ভর করিয়া থাকিতেন না, সকল কাজ নিজে দেখিতেন। তিনি অনেক সময় বিদ্যালয়ে হঠাৎ উপস্থিত হইয়া দেখিতেন নিয়ম-মত কাজ চলিতেছে কি-না। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদেশ ছিল, শিক্ষকেরা কখনও বালকদের উপর শারীরিক শাস্তি বিধান করিতে পারিবেন না। তিনি বলিতেন, শান্ত সদয় ব্যবহারের দ্বারা ছাত্রদের দোষ সংশোধন করিতে চেষ্টা করা উচিত। যাহাকে সংশোধনের অতীত বলিয়া বোধ হইত, তেমন ছাত্রকে তিনি বিদ্যালয় হইতে বিতাড়িত করিতেন।
বাক্ল্যাণ্ড সাহেব ভারত-সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারী ছিলেন। তিনি তাঁহার পুস্তকে লিখিয়াছেন,—
যে জমির উপর এখন কলেজটি অবস্থিত, ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে তাহা কেনা হয়। সুবৃহৎ বিদ্যালয়-গৃহ নির্মাণ করিতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বায় হইয়াছে। ১৮৮৭ সালের গোড়া হইতেই এখানে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হয়।
গ্রন্থ-রচনা
বিদ্যাসাগর অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। তাহার মধ্যে দু-চারখানির কথা বাদ দিলে বাকী সমস্তই অনুবাদ, অনুসৃতি বা পাঠ্যপুস্তক। অবশ্য একথা অস্বীকার করিলে চলিবে না যে তখনকার দিনে এরূপ উত্তম পাঠ্যপুস্তকের বিলক্ষণ অভাব ছিল। বিদ্যাসাগরের পূর্ব্বে বাংলা-গদ্যের অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তকগুলি তাহার নিদর্শন। বিদ্যাসাগরের গদ্য কিঞ্চিৎ সংস্কৃতানুসারী হইলেও অতি সুললিত। বঙ্কিমচন্দ্রের যশোবিস্তারের পূর্ব্বে সাহিত্যিক হিসাবে ঈশ্বরচন্দ্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন,—
বিদ্যাসাগরের রচনা কিরূপ আবেগময়ী, ওজস্বী ও প্রাঞ্জল ছিল তাহা ‘বিধবাবিবাহ’ পুস্তকের নিম্নোদ্ধৃত অংশ পাঠ করিলেই প্রতীয়মান হইবে:—
যাঁহারা বাল্যকালে বিদ্যাসাগরের ‘সীতার বনবাস’ পাঠ করিয়াছেন তাঁহারা কখনও ইহার ভাষার লালিত্য ও মাধুর্য্য বিস্মৃত হইতে পারিবেন না। নিম্ন-উদ্ধৃত অংশের মত সীতার বনবাসের বহু স্থলই তাঁহাদের স্মৃতিপথে জাগরিত থাকিবে।—
দয়া-দাক্ষিণ্য
দরিদ্র এবং আর্ত্তের সহায়, দয়ালু দাতা এবং জনহিতৈষী রূপে বিদ্যাসাগরের তুলনা নাই। এই মহদ্গুণের জন্য আজ তিনি প্রাতঃস্মরণীয়। কাহাকেও বিপন্ন দেখিলেই তাঁহার প্রাণ কাঁদিয়া উঠিত এবং লোকের দুঃখ দুর করিবার জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করিতেন। আজও তিনি দেশবাসীর নিকট “দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর” নামে পরিচিত। দুঃস্থ এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করিতে তাঁহার আয়ের অধিকাংশই ব্যয়িত হইত। তাঁহার সাহায্যেই বহু দরিদ্র বিধবার সংসার চলিত। শত শত অনাথ বালকের প্রতিপালন ও শিক্ষার ভার তিনি নিজের স্কন্ধে গ্রহণ করিয়াছিলেন। গৃহে গৃহে তাঁহার নাম শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হইত। ধনী দরিদ্র নির্ব্বিশেষে সকলেই তাঁহাকে ভালবাসিত। শুধু বন্ধু এবং সহকৰ্মীরাই নয় তাঁহার রিরুদ্ধবাদীরাও তাঁহাকে শ্রদ্ধা করিত। তাঁহার সাহস ছিল অতুলনীয় এবং দাক্ষিণ্য অপূর্ব্ব। অথচ তিনি নিজে নিতান্ত সরল জীবন যাপন করিতেন। এই তেজস্বী দানবীর সরল ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের কাছে বড় বড় জমিদারের মাথা আপনি নত হইয়া পড়িত। বাংলার তদানীন্তন ছোটলাট স্যর সিসিল বীডন এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষাব্রতীর সহিত প্রায়ই পরামর্শ করিতেন, এবং তাঁহার সঙ্গে আলাপ করিতে বড়ই আনন্দ পাইতেন।
রাজসম্মান
অবসরগ্রহণের বিশ বৎসর পরে ১৮৮০ সালে নববর্ষের প্রথম দিনে ভারত-গভর্ন্মেণ্ট তাঁহাকে সি. আই. ই. উপাধিতে ভূষিত করেন। এই উপাধিদানে বিদ্যাসাগর ন’ন সরকার নিজেই সম্মানিত হইয়াছিলেন। তৎপূর্ব্বে (১৮৬৪, ৪ জুলাই) বিদ্যাসাগর বিলাতের রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির অনারারি মেম্বর—সম্মানিত সভ্য—নির্ব্বাচিত হন।[৫] এই উচ্চসম্মান লাভ এযাবৎকালের মধ্যে মুষ্টিমেয় বাঙালীর ভাগ্যেই ঘটিয়াছে। ছোটলাট স্যর রিচার্ড টেম্পলের আমলে তাঁহাকে এই সম্মান-লিপি প্রদান করা হয়—
মৃত্যু
তাঁহার শরীর পূর্ব্বেই ভাঙিয়া গিয়াছিল। ক্রমেই তিনি বিশেষরূপে অসুস্থ হইয়া পড়িতে লাগিলেন। বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজনের বিয়োগ-ব্যথা এবং কয়েক বৎসরব্যাপী রোগভোগে দেহ সম্পূর্ণরূপে বিকল হইয়া গেল। তিনি কঙ্কালসার হইয়া পড়িলেন। একে একে শ্রমসাধ্য সকল কার্য্যই তাঁহাকে পরিত্যাগ করিতে হইল। নগরের কলকোলাহল তাঁহার আর সহ্য হইত না। তিনি নানা স্বাস্থ্যকর স্থানে যাইতে লাগিলেন। কার্ম্মাটারের বাড়িতেই তিনি বেশী যাইতেন।
শরীর আর বহিল না। ১৮৯১, ২৯এ জুলাই পূর্ণ ৭০ বৎসর বয়সে বাংলার শ্রেষ্ঠ মনীষী ইহলোক হইতে অপসৃত হইয়া গেলেন।
১৮৯১, ২৭ আগষ্ট ছোটলাট স্যর চার্লস এলিয়টের সভাপতিত্বে কলিকাতার টাউনহলে এক বিরাট অধিবেশন হয়। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতি চিরস্থায়ী করিবার জন্য কি উপায় অবলম্বন করা যায়, ইহাই ছিল সভার আলোচ্য বিষয়। সভার ফলে সেই বিরাট ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ সংস্কৃত কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের এক প্রস্তরমূর্ত্তি কলেজ-ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়।পরিশিষ্ট
বিদ্যাসাগরের গ্রন্থাবলী
প্রচারকাল | নাম | বিষয় |
(১৮৪২-৪৭) | বাসুদেব-চরিত (অপ্রকাশিত) | শ্রীমদ্ভাগবতের ১০ম স্কন্ধ অবলম্বনে রচিত। ইহাই বিদ্যাসাগরের সর্ব্বপ্রথম গদ্যগ্রন্থ বলিয়া পরিচিত। |
১৮৪৬[৭] ১৯০৩ সংবৎ |
বেতালপঞ্চবিংশতি | ‘বৈতালপঁচীসী’ নামক প্রসিদ্ধ হিন্দী পুস্তক অবলম্বনে রচিত। |
১৮৪৮ ১৯০৪ সংবৎ |
বাঙ্গালার ইতিহাস, ২য় ভাগ[৮] |
মার্শম্যান সাহেবের History of Bengal—এর শেষ নয় অধ্যায় অবলম্বনে রচিত। সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসন-আরোহণ হইতে বেণ্টিঙ্কের রাজত্বকাল পর্য্যন্ত ইতিহাস। |
১৮৪৯, সেপ্টেম্বর ১১ ১৭৭১ শক, ২৭ ভাদ্র |
জীবনচরিত | চেম্বার্স বায়োগ্রাফি পুস্তকের অনুবাদ। গালিলিও, নিউটন, হর্শেল, ডুবাল, জোন্স প্রভৃতি কয়েকজন মহানুভব ব্যক্তির জীবনচরিত। |
১৮৫১, এপ্রিল ৬ ১৯০৭ সংবৎ, ২৫ চৈত্র |
শিশুশিক্ষা, ৪র্থ ভাগ (বোধাদয়) |
নানা ইংরেজী পুস্তক হইতে সঙ্কলিত। |
১৮৫১, নভেম্বর ১৬ ১৯০৮ সংবৎ, ১ অগ্রহায়ণ |
সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা | |
১৮০১, নভেম্বর ১৬ ১৯০৮ সংবৎ, ১ অগ্রহায়ণ |
ঋজুপাঠ, ১ম ভাগ | পঞ্চতন্ত্রের কয়েকটি উপাখ্যান। |
১৮৫২, মার্চ্চ ৪ ১৯০৮ সংবৎ, ২২ ফাল্গুন |
ঋজুপাঠ, ২য় ভাগ | |
১৮৫১, ডিসেম্বর ৩০ ১৯০৮ সংবৎ, ১৬ পৌষ |
ঋজুপাঠ, ৩য় ভাগ | |
১৮৫৩, মার্চ্চ ১০ ১৯০৯ সংবৎ, ২৮ ফাল্গুন |
সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব | ১৮৫১, ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত, কলিকাতাস্থ বীটন সোসাইটি নামক সমাজে এই প্রস্তাব প্রথমে পঠিত হয়। অনেকের সবিশেষ অনুরোধে বিদ্যাসাগর মহাশয় দুই শত পুস্তক মুদ্রিত করিয়া বিতরণ করেন। সংবৎ ১৯১৩, ১৪ চৈত্র এই প্রস্তাব পুনর্মুদ্রিত হয়। |
১৮৫৩ | ব্যাকরণ কৌমুদী, ১ম ও ২য় ভাগ | |
১৮৫৪ | ব্যাকরণ কৌমুদী, ৩য় ভাগ | |
১৮৫৪, ডিসেম্বর ৯ ১৯১১ সংবৎ, ২৫ অগ্রহায়ণ |
শকুন্তলা | কালিদাস-রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তল’ নাটকের উপাখ্যান-ভাগ। |
১৮৫৫, জানুয়ারি ২৮ ১৯১১ সংবৎ ১৬ মাঘ |
বিধবাবিবাহ, প্রথম পুস্তিকা | বিধবা-বিবাহের সপক্ষে শাস্ত্রীয় প্রমাণ। |
১৮৫৫, এপ্রিল ১৩ ১৯১২ সংবৎ, ১ বৈশাখ |
বর্ণপরিচয়, ১ম ভাগ | |
১৮৫৫, জুন ১৪ ১৯১২ সংবৎ, ১ আষাঢ় |
বর্ণপরিচয়, ২য় ভাগ | |
১৮৫৫, অক্টোবর ২০ ১৯১২ সংবৎ, ৪ কার্ত্তিক |
বিধবাবিবাহ দ্বিতীয় পুস্তক[৯] | বিধবা-বিবাহ প্রস্তাবের প্রতিবাদকারীদের প্রতি উত্তর। |
১৮৫৬ | কথামালা | Aesop’s Fables পুস্তকের অংশবিশেষের বঙ্গানুবাদ। |
১৮৫৬, জুলাই ১৫ ১৯১৩ সংবৎ, ১ শ্রাবণ |
চরিতাবলী | ডুবাল, রস্কো প্রভৃতি স্বনামধন্য লোকের জীবনচরিত। |
১৮৫৯, জানুয়ারি ১৩ ১৯১৫ সংবৎ, ১ মাঘ |
পাঠমালা | কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশার্থি বিদার্থিগণের ব্যবহারার্থ জীবনচরিত, শকুন্তলা ও মহাভারতের অংশবিশেষ লইয়া এই পুস্তক সঙ্কলিত। |
১৮৬০, জানুয়ারি ১৩ ১৯১৬ সংবৎ, ১ মাঘ |
মহাভারত (উপক্রমণিকাভাগ) | উপরিচর রাজার উপাখ্যান অবধি মহাভারতের প্রকৃত আরম্ভ ধরিলে, তাহার পূর্ব্ববর্তী অধ্যয়গুলি উহার উপক্রণিকা-স্বরূপ। পুস্তকাকারে প্রচারিত করিবার পূর্ব্বে, মহাভারতের উপক্রমণিকাভাগের এই অনুবাদ ‘তত্ত্ববোধিনী। পত্রিকা’য় ক্রমশ প্রকাশিত হয়। |
১৮৬১, এপ্রিল ১২ ১৯১৮ সংবৎ, ১ বৈশাখ |
সীতার বনবাস | ইহার প্রথম দুই পরিচেছদ ভবভূতিরচিত ‘উত্তরচরিত’ নাটকের প্রথম অঙ্ক হইতে গৃহীত। অবশিষ্ট পরিচ্ছেদগুলি রামায়ণের উত্তরকাণ্ড অবলম্বনে সঙ্কলিত। |
১৮৬২, ফেব্রুয়ারি ১ ১৯১৮ সংবৎ, ২০ মাঘ |
ব্যাকরণ কৌমুদী, ৪র্থ ভাগ | |
১৮৬৩, নভেম্বর ১৬ ১৯২০ সংবৎ, ১অগ্রহায়ণ |
আখ্যানমঞ্জরী, ১ম ভাগ[১০] | কতকগুলি ইংরেজী পুস্তক অবলম্বনে আখ্যানগুলি রচিত। |
১৮৬৪, এপ্রিল ১২ ১৮৭৬ শক, ১ বৈশাখ |
প্রভাবতী সম্ভাষণ | বিদ্যাসাগরের পরম প্রিয়পাত্র রাজ-কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায়ের শিশুকন্যা প্রভাবতীর মুত্যুতে এই পুস্তিকা রচিত। ১২১৯ সালের বৈশাখ মাসের ‘সাহিত্যে’ ইহা প্রথম প্রকাশিত হয়। |
১৮৬৮ ফেব্রুয়ারি ১২ ১৯২৪ সংবৎ, ১ফাল্গুন |
আখ্যানমঞ্জরী, ২য় ভাগ | |
১৮৬৮ | আখ্যানমঞ্জরীঐ, ৩য় ভাগ | |
১৮৬৯ | রামের রাজ্যাভিষেক | ইহার মাত্র ছয় ফর্ম্মা মুদ্রিত হইয়াছিল। |
১৮৬৯, অক্টোবর ১ ১৯২৬ সংবৎ, ৩০ আশ্বিন |
ভ্রান্তিবিলাস | শেক্সপীয়ারের Comedy of Errors-এর উপাখ্যান-ভাগ। |
১৮৭১, জুলাই ১৬ ১৯২৮ সংবৎ, শ্রাবণ |
বহুবিবাহ, ১ম পুস্তক | বহুবিবাহ-প্রথার বিরুদ্ধে শাস্ত্রীয় প্রমাণ। |
১৮৭২, মার্চ্চ ১৯২৯ সংবৎ, ১ চৈত্র |
বহুবিবাহ, ২য় পুস্তক[১১] | বহুবিবাহ সমর্থনকারীদের মতখণ্ডন। |
১৮৭৩ ১৭৯৫ শক |
বামনাখ্যানম্ | মধুসূদন তর্কপঞ্চানন ১১৭টি সংস্কৃত শ্লোক সুচনা করেন। কিন্তু ‘ভাষারচনায় তাদৃশ অভ্যাস’ না থাকায় ‘শ্রীযুত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নিকট প্রার্থনা করাতে, তিনি শ্লোকগুলি বাঙ্গালা ভাষায় অনুবাদিত ও ব্যায়স্বীকার-পুর্ব্বক পুস্তকখানি মুদ্রিত করিয়া দেন। |
১৮৮৫ ১২৯২ সাল, ১অগ্রহায়ণ |
সংস্কৃত-রচনা | বাল্যকালের কতকগুলি সংস্কৃত-রচনা। |
১৮৮৮, এপ্রিল ১২ ১২৯৫ সাল, ১ বৈশাখ |
নিষ্কৃতিলাভপ্রয়াস | যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ তাঁহার শ্বশুর মদনমোহন তর্কালঙ্কারের রচিত শিশুশিক্ষা, ১ম—৩য় ভাগের অধিকার লইয়া বিদ্যাসাগর-চরিত্রে কলঙ্কারোপ করেন। সেই কলঙ্ক অপনোদনের জন্য বিদ্যাসাগর এই ক্ষুদ্র পুস্তকখানি প্রকাশ করিয়াছিলেন। |
১৮৯০, মে ১৪ ১২৯৭ সাল, ১ জ্যৈষ্ঠ |
শ্লোকমঞ্জরী | কতকগুলি উদ্ভট শ্লোক-সংগ্রহ। |
১৮৯১, সেপ্টেম্বর ২৫ ১৯৪৮ সংবৎ, ৯ আশ্বিন |
বিদ্যাসাগর-চরিত (স্বরচিত) | এই আত্মজীবনীতে বিদ্যাসাগয় কলিকাতা সংস্কৃত কলেজে প্রবেশ করিবার পূর্ব্ববর্তী ঘটনাগুলি বিবৃত করিয়াছেন। তাঁহার মৃত্যুর পর পুত্র নারায়ণচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ইহা প্রকাশিত করেন। |
১৮৯২, এপ্রিল ২৬ ১২৯৯ সাল, ১৫ বৈশাখ |
ভুগোলখগোলবর্ণনম্ | ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে, জন্ মিয়র নামে পশ্চিম অঞ্চলের এক সিবিলিয়ানের প্রস্তাবে বিদ্যাসাগর পুরাণ সূর্য্যসিদ্ধান্ত ও ইউরোপীয় মতের অনুযায়ী ভূগোল ও খগোল বিষয়ে ১০০ শ্লোক রচনা করিয়া একশত টাকা পুরস্কার পাইয়াছিলেন। শ্লোকগুলি বিদ্যাসাগরের জীবদ্দশায় পুস্তকাকারে মুদ্রিত হইতেছিল। তাঁহার মৃত্যুর পর ইহা প্রকাশিত হয়। ইহাতে এখন ৪০৮টি শ্লোক দেখা যায়। |
বাল্মীকির রামায়ণ | টীকাটিপ্পনী সমেত। |
১৮৫১, জুলাই ১৬ (১৯০৮ সংবৎ, ১ শ্রাবণ) তারিখে প্রকাশিত রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীতিবোধ’ পুস্তকের অনেকাংশ বিদ্যাসাগরের রচিত। তিনিই প্রথমে এই পুস্তক লিখিতে সুরু করেন; অবকাশ-অভাবে শেষে রাজকৃষ্ণবাবুকেই পুস্তকখানি সম্পূর্ণ করিবার ভার দেন। পুত্রগণের প্রতি ব্যবহার, পরিবারের প্রতি ব্যবহার, পরিশ্রম, স্বচিন্তা ও স্বাবলম্বন, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, বিনয়,—এই কয়টি প্রস্তাব তাঁহারই রচিত।
‘শব্দ-সংগ্রহ’—বিদ্যাসাগর মহাশয় জীবদ্দশায় বহু খাঁটি বাংলা শব্দ সংগ্রহ করিয়াছিলেন। তাঁহার মৃত্যুর পর এই শব্দ-সংগ্রহ ১৩০৮ সনের সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় (২য় সংখা, পৃ, ৭৪-১৩০) প্রকাশিত হয়।
বিদ্যাসাগর অনেকগুলি সংস্কৃত গ্রন্থের বিশুদ্ধ সংস্করণ প্রকাশ করেন:—
১৮৪৮ | সর্ব্বদর্শনসংগ্রহ | ||
১৮৫৩ | কিরাতার্জ্জুনীয় | ||
১৮৫৩ | রঘুবংশ | ... | মল্লীনাথের টীকা সমেত |
১৮৫৭ | শিশুপাল-বধ | ||
১৮৬১ | কুমারসম্ভব | ... | মল্লীনাথের টীকা সমেত |
১৮৬৯ ১২৯৫ সংবৎ, ৩০ চৈত্র |
মেঘদূত | ... | মল্লীনাথের টীকা সমেতঐ |
১৮৭০, আগষ্ট ২২ ১৯২৭ সংবৎ ৭ ভাদ্র |
উত্তরচরিত | ||
১৮৭১, জুন ১৪ ১৯২৮ সংবৎ, ১ আষাঢ় |
অভিজ্ঞানশকুন্তলম | ||
১৮৮২, নভেম্বর ১৬ ১৯৩৯ সংবৎ, ১ অগ্রহায়ণ |
হর্ষচরিত | ||
কাদম্বরী |
বিদ্যাসাগর কৃষ্ণনগর রাজবাটীর ‘মূলপুস্তক’ দেখিয়া ভারতচন্দ্র রায়ের এই কয়খানি গ্রন্থের পরিশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করেন:—
১৮৪৭ ১৭৬৯ শক |
অন্নদামঙ্গল ১ম খণ্ড |
১৮৪৭ ১৭৬৯ শক |
অন্নদামঙ্গল [মানসিংহ] ২য় খণ্ড |
... | বিদ্যাসুন্দর—দ্বিতীয় মুদ্রণের তারিখ ১৭৭৫ শক (১৮৫৩) |
ইহা ছাড়া বিদ্যাসাগর এই তিনখানি সঙ্কলন-গ্রন্থও মুক্তিত করিয়াছিলেন:—
Selections from the Writings of Goldsmith
Selections from English Literature
Poetical Selections
- ↑ ১৮৪৮-৪৯ সালে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত প্রেস স্থাপন করিয়াছিলেন; সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটারীও চালাইতে থাকেন। সংস্কৃত প্রেস হইতে মুদ্রিত সকল পুস্তক বিক্রয়ের জন্য ডিপজিটারীতে মজুত থাকিত। ব্যবসায়টি দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত হইয়াছিল এবং বহু বৎসর ধরিয়া ইহা হইতে রীতিমত লাভ হইত।
- ↑ “বাঙ্গালা সাহিত্যে ৺প্যারীচাঁদ মিত্রের স্থান”—বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (প্যারীচাঁদ মিত্রের গ্রন্থাবলী, ১২৯৯)
- ↑ “বিদ্যাসাগর চরিত”-সাধনা, ভাদ্র, ১৩০২, পৃ. ৩০৩-০৫।
- ↑ সাহিত্য, ৩য় বর্ষ, বৈশাখ, ১২৯৯।
- ↑ Journal of the Royal Asiatic Society, 1865, p. 15.
- ↑ যাঁহারা বিধবা-বিবাহ আন্দোলনের বিস্তৃত বিবরণ জানিতে ইচ্ছুক তাঁহাদিগকে এই পুস্তকখানি পাঠ করিতে অসুবোধ করি —"A collection containing the Proceedings which led to the passing of Act xv. of 1856." Compiled by Narayan Keshav Vaidya (Bombay, 1885). বইখানি আমি প্রথমে ব্রাহ্মসমাজ লাইব্রেরীতে দেখি। সুবলচন্দ্র মিত্রের পুস্তকেও বিধবা-বিবাহ আন্দোলনের বিবরণ আছে।
- ↑ বৃটিশ মিউজিয়মের বাংলা পুস্তকের তালিকায় এই তারিখ দেওয়া আছে।
- ↑ রামগতি ন্যায়রত্নের ‘বাঙ্গালার ইতিহাস, ১ম ভাগ’ বিদ্যাসাগর কর্ত্তৃক পরিবর্দ্ধিত হইয়া প্রকাশিত হইয়াছিল।
- ↑ ১৮৫৬ সালে বিদ্যাসাগর তাঁহার ‘বিধবাবিবাহ’ পুস্তক দুইখানির ইংরেজী অনুবাদ Marriage of Hindu Widows নামে প্রকাশ করেন। ১৮৬৫, জানুয়ারি মাসে ইহা বিষ্ণু পরশুরাম শাস্ত্রী কর্ত্তৃক মারাঠীতেও অনূদিত হয়।
- ↑ চারি বৎসর পরে (১৯২৪ সংবৎ, ১ ফাল্গুন) আখ্যানমঞ্জরী প্রথম ভাগের মাত্র ছয়টি আখ্যান লইয়া এবং সরল ভাষায় সঙ্কলিত কতকগুলি নূতন আখ্যা দিয়া, ‘আখ্যানমঞ্জরী, প্রথম ভাগ’ প্রচারিত হয়। প্রথম ভাগের পরিত্যক্ত বাকী আখ্যানগুলির সহিত সাতটি নূতন আখ্যান যোগ করিয়া নামকরণ করা হয়—‘আখ্যানমঞ্জরী, দ্বিতীয় ভাগ।’
- ↑ বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ-সংক্রান্ত পুস্তকখানি ইংরেজীতে অনুবাদ করিয়াছিলেন। কিন্তু পুস্তকাকারে দেখিয়া যাইতে পারেন নাই; তাঁহার জীবদ্দশায় অল্প অংশই ছাপা হইয়াছিল।