বিদ্যাসাগর/চতুর্ব্বিংশ অধ্যায়

চতুর্ব্বিংশ অধ্যায়।

পুনরায় কার্য্য-প্রার্থনা, ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশন ও

শাস্ত্রীয় ব্যবস্থা।

 ১২৬৯ সালে বা ১৮৬২ খৃষ্টাব্দে ব্যাকরণ-কৌমুদীর চতুর্থ ভাগ মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় সরকারী কার্য্য পরিত্যাগ করিয়াছিলেন বটে; কিন্তু রাজ-পুরুষগণ তাঁহাকে পরিত্যাগ করেন নাই। সরকারী বৈতনিক কার্য্যে তিনি তৎপরে আর আত্মনিয়োগ করেন নাই। তবে বিধবা-বিবাহ প্রচলন করিতে গিয়া নানা প্রকার ঋণ-জালে জড়িত হয়ে তিনি আর একবার সরকারী কর্ম্মের প্রার্থী হইয়াছিলেন। তাঁহার এ কার্য্য-প্রার্থনা ইহসংসার একান্ত বিস্ময়াবহ ব্যাপার নহে। অবস্থার আবর্ত্তনে বিবর্ত্তনে ইহা অসম্ভবপরও নহে। রাজপুতনার বীর প্রতাপসিংহ পরিবার সঙ্গে পর্ব্বতে পর্ব্বতে পরিভ্রমণ করিয়া বেড়াইয়াছিলেন, তবুও মুসলমান সম্রাটের হস্তে তিনি আত্মবিসর্জ্জন করেন নাই; কিন্তু যে দিন তিনি দেখিলেন, তাঁহার প্রাণ-প্রিয়তম শিশুগণ ঘাসের রুটি খাইতেছে, সে রুটিতে সকলের সঙ্কুলান হইতেছে না, সেই দিন সেই দৃশ্য তাঁহার অসহ্য হইয়াছিল। আর সহিতে না পারিয়া তিনি সম্রাট আকবরকে আত্মবিসর্জ্জন-কল্পে পত্র লিখিয়াছিলেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তিনি আত্মবিসর্জ্জন করেন নাই। প্রতাপসিংহের ন্যায় তেজস্বী স্বদেশভক্ত আর কে আছে? যখন অবস্থাভেদে তাঁহারও আত্মত্রুটি হইয়াছিল, ভখন “অন্যে পরে কা কথা?”

 বিদ্যাসাগর মহাশয় ঋণ-নিষ্পীড়নে পুনরায় সরকারী কর্ম্মের প্রার্থী হইয়াছিলেন বটে; কিন্তু ইহ-জগতের অধিকতর মঙ্গলজনক কার্য্য-সাধন জন্য তাঁহাকে পুনরায় সরকারী কার্য্যে প্রবৃত্ত হইতে হয় নাই। সরকারের অনুরোধে সাধারণের হিতার্থে তাঁহাকে অনেক অবৈতনিক সরকারী কার্য্যেই কেবল ব্যাপৃত হইতে হইয়াছিল। ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশনের পরিদর্শনের কার্য্য তাহার অন্যতম।

 ১২৬৯ সালের ৭ই ফাল্গুন (১৮৬৩ খৃষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারী), সরকার বাহাদুর, তাঁহাকে ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশনের পরিদর্শনকার্য্যে নিযুক্ত হইবার জন্য নিম্নলিখিত মর্ম্মে পত্র লিখেন,—

 “গবর্ণমেণ্ট, ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশনের জন্য চারি জন কি পাঁচ জন এ দেশীয় সন্ত্রান্ত লোককে পরিদর্শনকার্য্যে নিযুক্ত করিতে ইচ্ছা করেন। বৎসরের মধ্যে পর্য্যায়ক্রমে নির্দ্ধারিত মাসে এই পরিদর্শকগণকে ইনষ্টিটিউশন পরিদর্শন করিতে হইবে। ইহার উন্নতিকল্পে যে পরিবর্তন ও সংযোজন তাঁহারা যুক্তিসঙ্গত মনে করিবেন, তাহা গবর্ণমেণ্টকে অবগত করাইতে হইবে। গবর্ণমেণ্ট জানেন, বিদ্যাসাগর স্বদেশবাসীর সকল উন্নতিকর কার্য্যে মনোযোগী হয়েন। সেইজন্য ছোটলাট বাহাদুরের একান্ত ইচ্ছা—বিদ্যাসাগর মহাশয় ইনষ্টিটিউশনের পরিদর্শন-কার্য্যভার গ্রহণ করেন।”

 অভিভাবক-হীন নাবালক জমীদার-পুত্রগণকে সরকার বাহাদুরের তত্ত্বাবধানে রাখিয়া শিক্ষা দেওয়াই এই ইনষ্টিটিউশনের কার্য্য। বিদ্যাসাগর মহাশয় অনুরোধপরতন্ত্র হইয়া এবং স্বদেশবাসী জমিদার সন্তানবর্গের উপকার হইবে ভাবিয়া, ১২৭০ সালের অগ্রহায়ণ বা ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দের নবেম্বর মাসে ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশনের পরিদর্শক নিযুক্ত হয়েন। ইনষ্টিটিউশনের উন্নতি-কামনায় তিনি নানা পরিবর্ত্তন-প্রস্তাব করিয়া গবর্নমেণ্টকে লিখিয়াছিলেন। তিনি ইংরেজিতে যে সকল স্মারকলিপি ও রিপোর্ট লিখিয়াছিলেন, তাহার মধ্য হইতে নিম্নলিখিত স্মারকলিপি ও রিপোর্টের বঙ্গানুবাদ প্রয়োজনবোধে প্রকাশ করিলাম,—

স্মারকলিপি।

(১)

 ইনষ্টিটিউশনের ভিতরকার ঝন্দোবস্ত দেখিয়া সন্তুষ্ট হইয়াছি; কিন্তু এক বিষয়ে কিছু পরিবর্ত্তন করা বড়ই দরকারী। তাহা এই,—বর্ত্তমান বন্দোবস্তু মতে সমস্ত নাবালক, এক ঘরে জড় হইয়া এক টেবিলের চতুর্দ্দিকে পাঠ করিতে বসে। আমি প্রথম দিনই দর্শন করিয়া, ইহা অত্যন্ত অসন্তোষজনক বোধ করি। উত্তরোত্তর দর্শন করিয়া ঐ অসন্তোষই দৃঢ়বদ্ধ হইয়াছে। জমীদার- পুত্রগণ, ভিন্ন ভিন্ন ক্লাসে পড়ে। স্পেলিং বুক হইতে এনট্রান্স কোর্স পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন বালকের ভিন্ন ভিন্ন পাঠ্য নির্দ্দিষ্ট আছে। এরূপ স্থলে ঐ ভিন্ন ভিন্ন ক্লাসের ছাত্রগণের এক টেবিলের চতুর্দ্দিকে বসিবার দরুণ বড়ই গোলযোগ উপস্থিত হয় এবং পরস্পরের বড় ক্ষতি হইয়া থাকে। ইহাদিগের মধ্যে যাহারা মনঃসংযোগী নহে, তাহারা পাঠে একেবারেই অবহেলা করে।

প্রাতঃকালে ডাইরেক্‌টার ঐ স্থলে বসেন এবং বালকগণ স্কুলের জন্য পাঠ তৈয়ারি করিয়াছে কি না, তাহা দেখেন; কিন্তু ঐ সময়ে ঐখানে তাঁহার অধিষ্ঠান, আরও গোলযোগের কারণ হয়। যেহেতু সে সময়ে তাঁহার নিকট বাহিরের লোক সর্ব্বদা যাওয়া আসা করে।

 একজন শিক্ষকই সমস্ত বালককে সন্ধ্যাকালে পড়াইয়া থাকেন। ইহা আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে অত্যন্ত অন্যায় বলিয়া বোধ হয়। কারণ, ইহা একজনের পক্ষে অসম্ভব। তিনি একজন বালককে ১৫ মিনিটের অধিক কাল দেখিতে পারেন না; সুতরাং ইহাতে তাহাদিগের উপকার হইবার কোনও সম্ভাবনা নাই। ইহার ফল এই হয় যে, বালকগণ, সন্তোষজনকরূপে লেখা-পড়ায় অগ্রসর হইতে পারে না।

 এই সকল দোষ সংশোধন করিবার নিমিত্ত কতকগুলি পরিবর্ত্তনের প্রয়োজন। নিম্নে তাহার উল্লেখ করিতেছি,—

 ১ম। প্রত্যেক ক্লাসের একটি করিয়া ভিন্ন টেবিল এবং ভিন্ন স্থান থাকা উচিত।

 ২য়। প্রত্যেক ক্লাস, এক এক জন ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষকের অধীন থাকা বিধেয়।

 ৩য়। নিম্নস্থ শ্রেণীসমুহে শিক্ষকগণের প্রাতে ও বৈকালে হাজির হওয়া আবশ্যক এবং উচ্চ ক্লাসসমূহে তাঁহারা হয় সকালে, নয় বৈকালে হাজির হইবেন।

 বালকগণকে ভাল রকম সাহায্য করিবার জন্য আমি এই ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষকের কথা উত্থাপন করিলাম। কারণ, বর্ত্তমান সময়ে স্কুলে যেরূপ শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহাতে ভাল রকম সাহায্য ব্যাতীত সাধারণতঃ বালকগণ কিছুই শিখিতে পারে না। একজন লোক, এক কিংবা দুই ঘণ্টা কাল, এতগুলি লোককে শিক্ষা দিলে, ভাল শিক্ষার আশা করা যাইতে পারে না। নাবালক জমীদার পুত্রগণ, যাহাতে সম্পূর্ণ মাত্রায় সাহায্য প্রাপ্ত হয়, তাহা একান্ত বাঞ্ছনীয়।

 যদি পূর্ব্বোক্ত সংস্কার-সকল কার্য্যে পরিণত হয়, তাহা হইলে গোলযোগের সমস্ত কারণই বিদূরিত হইবে। অন্যমনস্ক বালকদিগের পাঠের অবহেলা কমিয়া আসিবে। ভবিষ্যতে আরও সুফল ফলিবার সম্ভাবনা হইবে।

 পুনশ্চ।— এই সংস্কৃত বন্দোবস্ত অনুসারে ডাইরেক্‌টারকে আর প্রত্যহ বালকগণের পাঠ দেখিতে হইবে না। সেই বিরক্তিজনক কার্য্য হইতে তাঁহাকে অবসব দিয়া, আমি তাঁহাকে বালকগণের মানসিক উন্নতিসাধনে নিযুক্ত করিতে ইচ্ছা করি। এইরূপ কার্য্য তাঁহাব উচ্চ গুণগ্রামের উপযুক্ত হইবে।

 বর্ত্তমান সময়ে যদিও তিনি এই কার্য্য কতকটা করেন বটে; কিন্তু তাঁহাকে এই বিরক্তিজনক কার্য্য হইতে অবসর দিলে, এই কার্য্য আরও ভালরূপে সুসম্পন্ন হইবে।

 না বালক জমীদারপুত্রগণকে সহরে আনিবার উদ্দেশ্য, তাহাদিগের মনের ভাল রকম শিক্ষা দেওয়া। কর্ত্তৃপক্ষী তৎসাধনে যত্নবান হওয়া উচিত।

শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা, ১৮৬৪ খৃঃ, ৪ঠা অক্টোবর

রিপোর্ট।

আর, বি, চাপমান্ স্কোয়ার,
 রেভিনিউ বোর্ডের সেক্রেটরি,
  মহাশয় সমীপেষু।—

,

 মহাশয়,

 ওয়ার্ড ইনষ্টিটিউশনের গত বৎসরের কার্যপ্রণালীর পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট দিবার জন্য অনুজ্ঞা করিয়া ১৮ই নবেম্বরে ৪৮৩ নং যে পত্র প্রেরণ করিয়াছিলেন, তাহা প্রাপ্ত হইয়াছি। সেই রিপোর্ট দিবার পূর্ব্বে মহাশয়কে জ্ঞাত করিতে চাই যে, পরিদর্শকবৃন্দের রিপোর্টের সহিত এই রিপোর্টও পাঠান হইবে, ইহাই প্রথমে সঙ্কল্প করা হইয়াছিল; কিন্তু কোন বিষয়ে তাঁহাদের সহিত আমার মতদ্বৈধ হওয়ায় আমি স্বতন্ত্র রিপোর্ট পাঠাইতেছি। এই রিপোর্ট পাঠাইতে উক্ত কারণে যে বিলম্ব হইয়াছে, তাহার জন্য আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।

 ছাত্রসংখ্যা। গত ৩০শে এপ্রেল তারিখে রেজেষ্ট্রীতে ছাত্রসংখ্যা ১২ জন।

 শিক্ষোন্নতি। দুই একটী শিক্ষণীয় বিষয় ব্যতীত বালকেরা যেরূপ উন্নতি করিয়াছে, তাহা সন্তোষকর না হওয়ায়, সেইগুলির পুনরালোচনা আবশ্যক। এই বিষয়ের বিশেষ বিবরণ পরে বিবৃত হইবে।

 ব্যায়াম-শিক্ষা। ব্যায়াম প্রণালী শিক্ষা অতি সুন্দর হইয়াছে। স্কুলের বালকবৃন্দ রীতিমত নির্দ্ধারিত প্রণালী অনুসারে ব্যায়াম শিক্ষা করিয়াছে।

 স্বাস্থ্য। সাধারণতঃ বালকবৃন্দের স্বাস্থ্য ভালই ছিল।

 খাদ্য। খাদ্য দ্রব্যাদি যত দূর আমি তত্ত্বাবধান করিয়াছি, তাহা অতি উৎকৃষ্ট ও স্বাস্থ্যকর। তাহাদের নিজের নিজের লোকদ্বারা খাদ্য স্বতন্ত্র রন্ধনাগারে প্রস্তুত হইত।

 ব্যয়। বাৎসরিক মোট ব্যয় ৩১,৫২৪৵১০ পাই অর্থাৎ গড়-পড়তা প্রতি বালকের প্রতি বাৎসরিক ২,৬২৭৲ টাকা অথবা ২১৯৲ টাকা মাসিক। বালকদিগের যেরূপ অবস্থা অর্থাৎ তাহারা যেরূপ ধনাঢ্য এবং কলিকাতায় থাকা যেরূপ ব্যয়সাধ্য, তাহাতে বাৎসরিক উক্ত ব্যয় আমার বিবেচনায় অতিরিক্ত বলিয়া বোধ হয় না।

 দর্শকবৃন্দের পরিদর্শন। রেভিনিউ বোর্ড কর্তৃক অনুজ্ঞাত হইয়া ১৮৬২ খৃষ্টাব্দে নবেম্বর হইতে গত বর্ষের শেষ পর্য্যন্ত উক্ত ইনষ্টিটিউশনটী পাঁচবার পরিদর্শন করি। প্রথম হইতে আমার ধারণা হয় যে, ওয়ার্ড দিগের শিক্ষা প্রশালী সম্পূর্ণ সুচারু নয়; সুতরাং তাহার সংস্কার হওয়া আবশ্যক। আমি গত ৪ঠা এপ্রেল তারিখে একখানি স্মারকলিপি প্রেরণ করি। তাহাতে উক্ত প্রণালীর যে যে দোষ আছে, তাহা দেখাইয়াছি এবং যে যে উপায় অবলম্বন করিলে, আমার বিবেচনায় সেই দোষের সংশোধন হইতে পারে, তাহারও উল্লেখ করিয়াছি। তাহার পর উক্ত প্রণালীর সংস্কারের মধ্যে কেবল একটী অতিরিক্ত প্রাইভেট শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়; কিন্তু আমি মহাশয়কে সবিনয় নিবেদন করিতেছি যে, আমি ইহার পর বে কয়েকবার পরিদর্শন করিয়াছি, তাহাতে শিক্ষা প্রণালীর বিশেষ কোন উন্নতি দেখিতে পাই নাই।

 উল্লিখিত স্মারক-লিপি প্রেরণ করিবার পরে আমি সাতিশয় মনোযোগের সহিত এই বিষয়টীর পর্য্যালোচনা করি এবং বোর্ডকে জ্ঞাত করিবাব জন্য অমার নিজ মত প্রকটিত করিবার এই সুযোগ লাভ করিয়াছি। আমার মতে ওয়ার্ডগণের শিক্ষাপ্রণালীর আদ্যোপান্ত সংস্কার হওয়া আবশ্যক। সাধারণতঃ ওয়ার্ডদিগকে এই ইনষ্টিটিউশনে ৪ হইতে ৬ বৎসর রাখা হয়। যদি ওয়ার্ডদিগকে সাধারণ স্কুলে পাঠান হয় এবং সেইখানকার প্রণালী মত পড়ান হয়, তাহা হইলে এই অল্প সময়ের মধ্যে তাহাদের বিশেষ শিক্ষোন্নতি আশা করা যাইতে পারে না। ঐ সকল বিদ্যালয়ে বর্ণপরিচয় হইতে ইউনিভার্সিটির প্রবেশিকা পরীক্ষার উপযুক্ত শিক্ষা পাইতে গেলে, সাধবণতঃ বালকবৃন্দের নয় বৎসর লাগে; কিন্তু শিক্ষার্থী পরীক্ষার উপযুক্ত হইলেও তাহার ইংরেজিতে এরূপ দখল জন্মে না, যেরূপ, দখল তাহার পাঠাভ্যাসকালের পর অত্যাবশ্যক। অতএব ইহা সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে যে, যে ছাত্রেরা প্রবেশিকা পরীক্ষার উপযুক্ত শিক্ষা না পাইয়া ইতিমধ্যেই পাঠাভ্যাস ত্যাগ করে, তাহাদের শিক্ষা কতদূর হইল। দুর্ভাগ্যক্রমে অধিকাংশ ওয়ার্ডদিগের শিক্ষা এই প্রকারের হইয়া থাকে। যতদিন সাধারণ স্কুলে তাহাদের পাঠাভ্যাসের বন্দোবস্ত থাকিবে, ততদিন এইরূপই হইতে থাকিবে। যাহা হউক, যখন ইহা বাঞ্ছনীয় যে ওয়ার্ডগণ ইনষ্টিটিউশনটী পরিত্যাগ করিবার পূর্ব্বে কার্য্যোপযোগী জ্ঞান লাভ করে, তখন আমি বিনয়পুরঃসর নিবেদন করি যে, তাহাদের শিক্ষা-প্রণালীর নূতন বন্দোবস্ত করা হয়।

 ১।  এই ইনষ্টিটিউশনটী এক্ষণে শুদ্ধ ওয়ার্ডগণের বাসস্থান বলিয়া নির্দ্ধারিত আছে। ইহাকে বোর্ডিং বিদ্যালয়ে (এই স্থান, বালকগণের বাসস্থান এবং পাঠাভ্যাস এই উভয় ব্যবস্থাই হয়) পরিণত করা উচিত।

 ২।  ওয়ার্ডদিগের বিশেষ প্রয়োজনীয় স্বতন্ত্র শিক্ষা-পুস্তক-সকল প্রদান করা হউক।

 ৩।  তাহাদের শিক্ষা দিবার উপযুক্ত আবশ্যকমত সুযোগ্য শিক্ষকসকল নিযুক্ত করা হউক।

 সাধারণ বিদ্যালয়ের পদ্ধতি অনুসারে তাহাদিগকে শিক্ষা দিবার অপেক্ষা এই প্রণালী অবলম্বন করিয়া শিক্ষা দেওয়া যে কত সুবিধাজনক, তাহার প্রমাণ স্বতঃসিদ্ধ। তাহার বিস্তারিত বর্ণন করা বাহুল্য মাত্র।

 সাধারণতঃ বিদ্যালয়সমূহে প্রত্যেক শিক্ষককে অন্যূন ৩০ জন বালককে শিক্ষা দিতে হয়; সুতরাং কোন শ্রেণীতে নির্দ্ধারিত পাঠ্য-পুস্তক হইতে কয়েক ছত্র-মাত্র পড়ান সম্ভব। এই কযেক ছত্র-মাত্র শিক্ষা করবার জন্য ওয়ার্ডগণকে প্রতিদিন ৬ ছয় ঘণ্টা করিয়া বিদ্যালয়ে থাকিতে হইবে। সেইটুকু পাঠ অভ্যাস করিতে প্রাতে ও সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টা করিয়া ৪ ঘণ্টা কাল বাটীতে অধ্যয়ন করিতে হইবে। কিন্তু উদ্ভাবিত নিয়ম অনুসারে দুই ঘণ্টার মধ্যে তাহারা ততটুকু পাঠ যথারীতি অভ্যাস করিতে পারিবে। ফলতঃ দেখা যাইতেছে যে, ওয়ার্ডগণ এই ইনষ্টিটিউশনে যে অল্প সময় অবস্থান করে, সেই সময়ের মধ্যে ইংরেজি ভাষাতে বিশেষ ব্যুৎপন্ন হইতে পারিবে এবং অনেক বিষয়ের বিশেষ প্রয়েজনীয় বিবরণ জ্ঞাত হইতে পারিবে। কিন্তু প্রবর্ত্তিত প্রথা অনুসারে চলিলে, এরূপ ফলের প্রত্যাশা করা যাইতে পারে না; এবং এই প্রথা যদ্যপি প্রচলিত থাকে ও ওয়ার্ডগণকে এইরূপ অকিঞ্চিৎকর জ্ঞানলাভ করিয়া যদি ইনষ্টিটিউশন পরিত্যাগ করিতে হয়, তাহা হইলে আমার বিবেচনায় তাহাদিগকে গৃহ হইতে এবং আত্মীয়স্বজনের নিকট হইতে পৃথক করিবার যে উদ্দেশ্য, সে উদ্দেশ্য সফল হইল না।

 এই ইনষ্টিটিউশনে ওয়ার্ডগণকে শাসন করিবার যে নিয়মাবলী আছে, তাহার একাদশ নিয়মটা বিশেষ করিয়া উল্লেখ করিতে চাই। ঐ নিয়মটীর তাৎপর্য এই যে, কোন প্রকার গুরুতর অপরাধ না হইলে, ওয়ার্ডগণকে শারীরিক দণ্ড দেওয়া হইবে না। কিন্তু অর্ডার বুক-দৃষ্টে প্রতিপন্ন হইতেছে যে, প্রতিমাসে বালকদিগকে ৪ হইতে ১২ পর্যন্ত বেত্রাঘাত সহ্য করিতে হইয়াছে। যে যে অপরাধে তাহারা উক্তরূপ দণ্ড প্রাপ্ত হইয়াছে তাহার একটী ব্যতীত অন্য কোনরূপই “গুরুতর অপবাধ” বলিয়া প্রতিপন্ন হইতে পারে না। সেটীরও বিশেষ কোন বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া যায় না। কিন্তু আমি ইহা সবিনয়ে প্রকাশ করিতে চাহি যে অপরাধ যে প্রকারের হউক না কেন, ওয়ার্ডগণকে শাসন করিতে শারীরিক দণ্ড যেন একবারে রদ করিয়া দেওয়া হয়। শারীরিক দণ্ডবিধানের অনিষ্টকর ফলের জন্য তাহা অপর-সাধারণ সমস্ত বিদ্যালয় হইতে উঠাইয়া দেওয়া হইয়াছে। শত শত বালক বেত্রযষ্টির সাহায্য ব্যতীত শাসিত হইতেছে; সুতরাং ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশনের বালকবৃন্দ যে, এই প্রকার রূঢ় ও কঠিন ব্যবহারের উপযুক্ত, ইহা আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি কিছুতেই ধারণা করিতে পারে না। বালকদিগের শাসনবিষয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। আমার স্থির বিশ্বাস এই যে, শারীরিক দণ্ডবিধানের ফল অনিষ্টকর হওয়ায়, তাহা দ্বারা দণ্ডিত ব্যক্তির চরিত্র সংশোধিত হওয়া দূরে থাকুক, আরও জঘন্য হইয়া পড়ে। আমি এই কারণে সবিনয়ে মহাশয়কে জ্ঞাত করিতেছি যে, সেই নিয়মটা শীঘ্র রদ হইয়া যাউক।

 আর একটী বিষয়ে আমি মহাশয়ের মনোযোগ আকৃষ্ট করিতে ইচ্ছা করি। এক্ষণে অধিকাংশ ওয়ার্ড, একতলা গৃহে অবস্থান করে এবং শয়ন করে। কিন্তু কলিকাতার অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়ায় এরূপ একতলস্থ গৃহে বাস করিলে স্বাস্থ্যহানি হইবার বিশেষ সম্ভাবনা; সুতরাং যদি কোন প্রকারে সুবিধা করা যাইতে পাবে, তাহা হইলে তাহাদের দ্বিতলে অবস্থান করিবার ব্যবস্থা করা হউক।

 যে বিষয়ে আমার মত প্রকাশ করিয়াছি, সেই বিষয়টী, আমি আগ্রহসহকারে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্য্যালোচনা করিয়াছি; সুতরাং এ বিষয়ের কতকগুলি সুনিয়ম উদ্ভাবন করা কর্ত্তব্য বলিয়া মনে করি।

বংশবদ—

শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা,

১১ই জানুয়ারী, ১৮৬৫ সাল।

স্মারকলিপি।

(২)

 না-বালকগণ ভাল রকম লেখা-পড়া শিখিয়া এবং যথাযোগ্যরূপে কাজের লোক হইয়া পরে ভাল জমীদার এবং সমাজের উপকারক হইতে পারে, তৎসাধনই না-বালক বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য। কিন্তু এইখানে তাহারা যে শিক্ষা প্রাপ্ত হয়, তাহা শিক্ষা-নামের উপযুক্তই নহে এবং তাহারা স্কুল পরিত্যাগ করিবার সময় সামান্য-মাত্রই ইংরেজি জ্ঞান লাভ করে। এক্ষণে যেরূপ বন্দোবস্ত আছে, তাতে উহার বেশী ভাল ফলের আশা করা যাইতে পারে না। এই সকল দোষ সংশোধন করিবার নিমিত্ত আমি গত ১১ই জানুয়ারির রিপোর্টে কতক গুলি প্রস্তাব উত্থাপন করি। এই ধর্ত্তমান সমিতির গঠন হইবার পর হইতে আমি সেইগুলি বিশেষ করিয়া আলোচনা করিয়া দেখিয়াছি। আমি ঐ মত পরিবর্ত্তন করিবার কোনই কারণ দেখি না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমি যেমন ইনষ্টিটিউশনের সংস্কারের কথা উল্লেখ করিয়াছি, ঐরূপ সংস্কার হইলে, যে সুফল-সাধনের উদ্দেশ্যে ইনষ্টিটিউশন স্থাপিত হইয়াছে, সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হতে পারে।

 যদি ইনষ্টিটিউশনকে পরে বোর্ডিং স্কুল করা হইবে বলিয়া মনে হয়, তাহা হইলে শিক্ষক-নির্ব্বাচন বিষয়ে বিশেষ যত্নবান্ হওয়া উচিত। উপযুক্ত লেখা-পড়া-জানা শিক্ষক আবশ্যক। কি প্রকারে যুবকদিগকে শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহা তাঁহাদের ভাল রকম জানা উচিত। শিক্ষিত-সম্প্রদায় যে সকল দোষে দূষিত থাকে, তাহা যেন তাঁহাদের না থাকে। স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণের ভার, হেডমাষ্টারের হস্তে থাকা উচিত। এইরূপ বন্দোবস্ত হইলে লোকের এই স্কুলের উপর যে বিতৃষ্ণা আছে (উহা মিথ্যা বলা খাইতে পারে না), আমার বিশ্বাস, তাহা অপনোদিত হইতে পারে এবং ইহার উপর লোকের বিশ্বাস পুনঃসংস্থাপিত হইতে পারে। কিন্তু এখন যে অবস্থায় স্কুল চলিতেছে, তাহাতে এই স্কুল যদি উঠাইয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে আমি দুঃখিত হইব না। এইখানে প্রতিপালিত কতকগুলি যুবকের জীবন, এই বিদ্যালয়ের কলঙ্ক ঘোষণা করিতেছে। যদি এই স্কুলে শিক্ষিত নাবালক- সম্প্রদায়ের সহিত অন্যত্র শিক্ষিত নাবালক জমিদারগণের তুলনা করা যায়, তাহা হইলে শেষোক্ত সম্প্রদায়কে ভাল বলিতে হইবে।

 বর্ত্তমান সময়ে নাবালকদিগের এই স্কুলকে কৃষ্ণনগরে স্থানান্তরিত করা কোন মতেই যুক্তিসিদ্ধ নহে। কারণ, তথায় এখন ভয়ানক মড়কের প্রাদুর্ভাব। ইহাকে বীরভূম কিম্বা বহরমপুরে স্থানান্তরিত করিলে কোন ক্ষতি হইবে না। কিন্তু আমি যে সমস্ত সংস্কারের কথা বলিয়াছি, তাহা যদি প্রবর্ত্তিত হয়, তাহা হইলে এই স্কুল কলিকাতায় থাকা বেশী পছন্দ করি। কারণ, পল্লীগ্রাম অপেক্ষা সহরে নজরের উপর স্কুলের তত্ত্বাবধান ভাল হইবে। দর্শকগণের দ্বারা প্রায়ই পরীক্ষিত হইলে এবং শাসনকারী কর্ত্তৃপক্ষগণের নজরের উপর থাকিলে, স্কুলে খুব সুফল ফলিবার সম্ভাবনা। ইহা পল্লীগ্রামে আশা করা যাইতে পারে না।

 আমার বিবেচনায় নাবালকদিগের সাবালক হইবার বয়স যদি ১৮ বৎসর হইতে ২১ বৎসর করা যায়, তাহা হইলে উহা নাবালকদিগের পক্ষে বিশেষ উপকারী হইবে। তাহা হইলে তাহারা আত্মোন্নতি করিবার আরও বেশী সময় পাইবে। এইরূপ বয়সে তাহাদিগের স্ব স্ব বিষয় পাওয়া উচিত। এই বয়সে লোকের চরিত্র একরূপ গঠিত হইয়া যায়। বয়সের এই পরিবর্দ্ধন তত্রত্য জমিদারগণের অনভিপ্রেত হইবে না। আমি জানি যে, ব্রিটিস ইণ্ডিয়ান সভা এই বিষয়ে আইন পরিবর্ত্তনের জন্য চেষ্টা করিয়াছিল।

ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা,

২৯শে আগষ্ট, ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দ।

 ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশন রেভিনিউ বোর্ডের অধীন ছিল। রিপোর্টাদি বোর্ডের কর্ত্তৃপক্ষের নিকট পাঠাইতে হইত। বিদ্যাসাগর মহাশয় মার্চ্চ, জুলাই ও নবেম্বর মাসে ওয়ার্ড পরিদর্শন করিতেন। বোর্ডের কার্য্যালোচনায় তাঁহার অন্তরিকতা অবিসংবাদিনী। তাঁহার প্রদত্ত রিপোর্ট ও স্মারকলিপি ইহার দুই অকাট্য প্রমাণ। আন্তরিকতা মনুষ্যত্বের মূল মর্ম্ম। বিদ্যাসাগর মহাশয়েব সকল কার্য্যেই আন্তরিকতার পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় যে সব পরিবর্ত্তনের প্রস্তাব করিয়াছিলেন, তাহার অধিকাংশ গ্রাহ্য হইয়া ছিল। তবে একটা বিশিষ্ট পরিবর্ত্তন প্রস্তাব গ্রাহ্য হয় নাই। ইনষ্টটিউশনের ছাত্রগণকে বেত্রাঘাত করা হইত। বিদ্যাসাগর মহাশয় বেত্রদণ্ড উঠাইবার চেষ্টা করেন। ইনষ্টিটিউশনের সেক্রেটরি রাজেন্দ্রলাল মিত্র মহাশয় ইহার প্রতিবাদ করেন। তৎসম্বন্ধে কি করা কর্তব্য, তন্নির্দ্ধারণার্থ একটী কমিটীও হইয়াছিল। কমিটীতে রাজেন্দ্রলালের প্রস্তাব গ্রাহ্য হয় নাই।

 ইহার পর নানা কারণে রাজেন্দ্রলাল বাবুর সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মতান্তর হয়। অনেকেই বলেন, এই মতান্তর হেতু বিদ্যাসাগর মহাশয়, ইনষ্টিটিউশনের কার্য্য পরিত্যাগ করেন।

 প্রকৃত পক্ষে কি কারণে তিনি ওয়ার্ডের কার্য্য পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। আমি অনেক অনুসন্ধান করিয়া প্রকৃত কারণ নির্ণয় করিতে পারি নাই। এমন কি প্রকৃত কারণ নির্ণয়ার্থে রেভিনিউ বোর্ডের ভূতপূর্ব্ব অন্যতম সেক্রেটারি মাননীয় স্বর্গীয় নন্দকৃষ্ণ বসু মহাশয়কে অনুরোধ করিয়াছিলাম। তিনি বোর্ডের কাগজপত্র দেখিয়া শুনিয়া কোন কারণ নির্দ্ধারিত করিতে পারেন নাই। এই পর্য্যন্ত কেবল জানা যায়, ১২৭১ সালের ১৬ই চৈত্র বা ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দের ২৮শে মার্চ্চ তারিখে তাঁহার শেষ পরিদর্শন।[১] ইহাতে অনুমান হয়, উপরোক্ত শেষ স্মারকলিপি লিখিয়া তিনি ইনষ্টিটিউশনের পরিদর্শনকার্য্য পরিত্যাগ করেন।

 কোন্ পরীক্ষায় কি সংস্কৃত পাঠ্য হওয়া উচিত, তন্নিৰ্দ্ধারণার্থ ১২৭০ সালে বা ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে একটা কমিটী হইয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয ১২৭০ সালে ১৪ই ভাদ্র বা ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দের ২৯ শে আগষ্ট এই কমিটির একজন সভ্য ইয়াছিলেন। উডরো ও কাওয়েল সাহেব ইহার সভ্য ছিলেন।

 স্বকীয় ও পরকীয় বহু কার্য্যে ব্যাপৃত থাকিয়া ও পরোপকারার্থে সামান্য বিষয়েও বিদ্যাসাগর মহাশয ঔদাসীন্য প্রকাশ করিতেন না। কেহ একটা সামান্য বিষয়ে প্রশ্ন করিলে, তিনি তাহার আত্মজ্ঞান সম্মত যথোত্তরদানে কুণ্ঠিত হইতেন না। এইরূপ কত প্রশ্নের উত্তর দিতে হইত, তাহার সংখ্যা হয় না। এক পুরুষের জীবনে অগণিত কার্য্যের প্রতিষ্ঠা।

 ১২৭১ সালের ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ বা ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দের ১৬ই মে ছোট নাগপুর-রাঁচি হইতে ষ্টেনফার্থ সাহেব একখানি চিঠি লিখিয়া[২] নিম্নলিখিত প্রশ্নের মীমাংসা প্রার্থনা করেন।

 “ক নামক এক জমীদার পাগল। তাঁহার প্রজারা তাঁহার বিবাহ দেওয়ায় এ বিবাহ ব্যাপারটা কি, জমীদার তাহার কিছুই বুঝেন নাই। কালে এই বিবাহিত স্ত্রীর গর্ভে একটী পুত্র হয়। এই পুত্র জমীদারের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হইতে পারে কি না।”

 ১২৭১ সালের ১০ই আষাঢ় বা ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দের ২২শে জুন বিদ্যাসাগর মহাশয় ইহার এইরূপ উত্তর লিখিয়া পাঠান,—

 “এই পুত্রই উত্তরাধিকারী হইবে। যখন বিবাহ হয় তখন সেই বিবাহ-ব্যাপারটা কি, যদিও জমীদার তা বুঝিতে পারেন নাই; কিন্তু এরূপ ক্রটিসম্পন্নবিবাহ হিন্দুর আইনের চক্ষে অসিদ্ধ নহে।”

  1. Record keeper,
     Can you give the last date on which the late Pandit Iswar Chandra Vidyasagar paid a visit to the Ward Institution. Calcutta,

    (Sd.) N. K Basu
    29_


     The last date is 28th March, 1865.

    To Secy.

    (Sd.) N. N. Seal,
    297.
  2. সাহেব ৺কিশোরীচাঁদ মিত্রের মাঃ এই চিঠিখানি পাঠাইয়া দেন। কিশোরী বাবু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধু ছিলেন।