বিদ্যাসাগর/ষষ্ঠ অধ্যায়



ষষ্ঠ অধ্যায়।

সংস্কৃত-রচনা, পরীক্ষার ব্যবস্থা, পরীক্ষার রচনা, অনুরোধে
রচনা, স্বেচ্ছায় রচনা ও আমাদের বক্তব্য।”

 কলেজের পাঠ সমাপ্ত করিয়া ঈশ্বরচন্দ্র চাকুরীতে প্রবৃত্ত হন। পরবর্তী অধ্যায় হইতে তদ্বিবরণের বিবৃতি আরম্ভ হইবে। সংস্কৃত কলেজে পাঠের সময় তিনি যে সব রচনা লিখিয়াছিলেন, তাহার একত্র সমাবেশ হইলে পাঠকগণের পড়িবার সুবিধা হইবে বলিয়া এই অধ্যায়ে সেই সমস্ত সন্নিবেশিত হইল।

 রচনা সাহিত্য-শিক্ষার সবিশেষ সাহায্যকারিণী। রচনায় সাহিত্যের শিক্ষা-পুষ্টির পরিচয়। যে সময় ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত কলেজে পড়িতেন, সে সময় রচনার উৎকর্ষ-সাধনজন্য কলেজের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট যত্ন চেষ্টা ছিল। কেবল সংস্কৃত কলেজে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য নয়, ইংরেজী কলেজেও ইংরেজি শিক্ষার জন্য, রচনার সম্যক্ বিধি-ব্যবস্থা দেখা যাইত। উৎসাহে উৎকর্ষ। এই জন্য ছাত্রবৃন্দের রচনাবিষয়ে উৎসাহ-বৰ্দ্ধনার্থ যথোচিত পারিতোষিক বিতরণের বন্দোবস্ত ছিল। রচনার পরিপটি প্রকৃত পক্ষে পরীক্ষক ও কর্তৃপক্ষের পরম প্রীতি-উৎপাদন করিত। পিতৃদেবের মুখে শুনিয়াছি,—“তখন রচনার জন্য যেমন ছাত্র-শিক্ষকের আগ্রহ দেখা যাইত, এখন আর তেমন বড় দেখা যায় না। এখনকার মত তখন বিশ্ববিদ্যালয়ী বিমিশ্র শিক্ষার বাঁধাবাঁধি তো ছিল না। তখন যাঁহার যে বিষয়ে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি থাকিত, তিনি সে বিষয়েরই উৎকর্ষ-সাধনের সুযোগ পাইতেন। যাহার সাহিত্যে প্রবৃত্তি, তিনি সাহিত্যের উৎকর্ষ-সাধনে যত্নশীল হইতেন। গণিত, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়েও সেইরূপ ছিল। অধুনা বিকট বিমিশ্র শিক্ষার বাঁধাবাঁধিতে কোন বিষয়ে প্রকৃষ্ট ব্যুৎপত্তিলাভের সম্ভাবনা থাকে না। তখন সাহিত্যে যাঁহার প্রবৃত্তি থাকিত, রচনায়ও তাহার অনুরাগ দেখা যাইত। সাহিত্যাধ্যাপকগণও তদ্বিষয়ে যথেষ্ট যত্নশীল হইতেন। যে ছাত্র অল্পের ভিতর বহু ভাবময় রচনা লিখিতেন, তিনি প্রশংসিত হইতেন। একবার আমাদের ‘পরিশ্রম’ সম্বন্ধে ইংরেজী রচনার বিষয় ছিল। আমি এ সম্বন্ধে পনর ষোল ছত্র মাত্র লিখিয়াছিলাম; কিন্তু এই পনর ষোল ছত্রের জন্যও পুরস্কার পাইয়াছিলাম; পরন্তু এই সময় হইতে আমি অধ্যাপক ও পরীক্ষকের প্রীতিপাত্র হইয়াছিলাম।”

 সংস্কৃত কলেজে রচনার জন্য পরিতোষিকের ব্যবস্থা থাকিলেও ঈশ্বরচন্দ্র রচনায় বড় অগ্রসর হইতেন না; তাঁহার বিশ্বাস ছিল,— “আমরা সংস্কৃত ভাষায় রীতিমত রচনা করিতে অসমর্থ। যদি কেহ সংস্কৃত ভাষায় কিছু লিখিতেন, ঐ লিখিত সংস্কৃত প্রকৃত সংস্কৃত বলিয়া আমার প্রতীতি হইত না।”[]

 ঈশ্বরচন্দ্রের এ বিশ্বাস চিরকাল দৃঢ়বন্ধ ছিল। তাহার কার্য্যাবস্থায় এক জন কোন বিষয় সংস্কৃতে লিখিয়া, তাঁহাকে দেখাইতে গিয়াছিলেন। তিনি তাহার সংশোধন করিয়া দেন। তাঁহার সংশোধন-প্রণালী দেখিয়া রচয়িতা চমৎকৃত হইয়াছিলেন। তিনি বলেন,—“আপনি এমন সুন্দর সংস্কৃত লেখেন, তবে আপনি যে সকল সংস্কৃত গ্রন্থ মুদ্রিত করিতেছেন, তাহার মুখবন্ধে বা বিজ্ঞাপনে বাঙ্গালা লেখেন কেন?” এতদ্বৃত্তরে বিদ্যাসাগর মহাশয় একটু হাস্য করিয়া বলেন,—“সংস্কৃত ভাষায় বুৎপত্তি থাকিলেও বিশুদ্ধ সংস্কৃত রচনা দুরূহ বলিয়া আমার বিশ্বাস।”

 বিদ্যাসাগর মহাশয় সংস্কৃত রচনায় সহজে অগ্রসর হইতেন না বটে; কিন্তু যখনই রচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তখনই সর্ব্বোচ্চ স্থান অধিকার করিয়া পারিতোষিক পাইয়াছিলেন।

 টোলে রচনার প্রথা নাই। সংস্কৃত কলেজে প্রথমতঃ তাহা ছিল না। ইংরেজির প্রণালীমতে ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে বা ১২৪৫ সালে, সংস্কৃত কলেজে এ প্রথা প্রবর্তিত হয়। এই বৎসর নিয়ম হয়,— স্মৃতি, ন্যায়, বেদান্ত—এই তিন উচ্চশ্রেণীর ছাত্রদিগকে বার্ষিক পরীক্ষায় গদ্যে ও প্দ্যে সংস্কৃত রচনা করিতে হইবে। এই নিয়মানুসারে ঐ বৎসর সংস্কৃত গদ্য “সত্যকথনের মহিমা” সম্বন্ধে, রচনার বিষয় ছিল।বেলা দশটা হইতে ১টা পর্য্যন্ত এই রচনা লিখিবার সময় নির্দ্ধারিত ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় নিম্নে প্রকাশিত রচনা লিখিয়া ১০০ এক শত টাকা পুরস্কার পাইয়াছিলেন।


সত্যকথনের মহিমা।

 সত্যং হি নাম মানবানাং সার্ব্বজনীয়বিশ্বসনীয়তায় হেতু। তথ্যবিধায়শ্চি বিশ্বসনীয়তায়াঃ ফলমিহ বহুলমুপলভ্যতে। তথাহি যদি নাম কশ্চিৎ সত্যবাদিতয়া বিনিশ্চিতো ভবতি সর্ব্ব এব নিয়তং তবচসি সম্যগ বিশ্বসন্তি। সত্যবাদী হি সততং সজ্জননসংসদি সাতিশয়ং মাননীয়ঃ সবিশেষং প্রশংসনীয়শ্চ ভবতি।

 যে হি মিথ্যাবাদী ভবতি ন কোহপি কদাচিাপি তস্মিন বিশ্বসিতি। স থলু নিঃসংশয়ং নিরতিশয়ং নিন্দনীয়ে ভবতি, ভবতি চ সর্ব্বত্র সর্ব্বথা সৰর্ব্বোযাং জনানামবজ্ঞাভাজনম্।”

  কিমধিকেন শিশবোহপি বাললীলাসু যদি কশ্চিন্মিথ্যাবাদিতিয়া প্রতীয়মানো ভবতি ভো ভ্রাতরে নানেনাধমেলাম্মাভিঃ পুনর্ব্যবহর্ত্তব্যম অয়ং খলু মূষাভাষীত্যাদিকাং গিরমূগিরন্তীতালং পল্লবিতেন।

 ১০ দশটা হইতে ১ একটা পর্যন্ত উল্লিখিত রচনার জন্য সময় নিৰ্দ্ধারিত ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় এই পরীক্ষার সময় প্রথমে উপস্থিত ছিলেন না। উপস্থিত থাকিবার তাঁহার প্রবৃত্তি ছিল না। পণ্ডিত প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশের সক্রোধ আদেশে তিনি বেলা ১২ বার টার সময় রচনা করিতে প্রবৃত্ত হন। তিনি ভাবিয়াছিলেন, তাঁহার রচনা হাস্যস্পদ হইবে; কিন্তু তদ্বিপরীতে তিনি এই রচনার জন্য পুরস্কার পান।

 দ্বিতীয় বৎসর বিদ্যাসম্বন্ধে রচনা ছিল। ঈশ্বরচন্দ্র নিম্নে প্রকাশিত রচনার জন্য পুরস্কার পাইয়াছিলেন।

বিদ্যা

বিদ্যা দদাতি বিনয়ং বিপুলঞ্চ বিত্তং
চিত্তং প্রসাদয়তি জাড্যমপাকরেীতি
সত্যামৃতং বচলি সিঞ্চতি কিঞ্চ বিদ্যা
বিদ্যামৃণাং স্বরতরুর্ধরণী তলস্থঃ॥ ১॥
বিদ্যা বিকাশয়তি বুদ্ধিবিবেকবীর্যাং
বিদ্যা বিদেশগমনে সুহৃদদ্বিতীয়ঃ।

বিদ্যা হি রূপমতুলং প্রথিতং পৃথিব্যাং
বিদ্যাধনং ন নিধনং ন চ তস্য ভাগ:॥ ২॥
রূপং মৃণাং কতিচিদেব দিনানি নূনং
দেহং বিভূষয়তি ভূষণসন্নিকৰ্ষাৎ।
বিস্তাভিধং পুনরিদং সহকারিশূন্য-
মামৃত্যু ভূষয়তি তুল্যতয়ৈব দেহম্॥৩॥
অন্যানি যানি বিদিতানি ধনানি লোকে
দানেন যান্তি নিধনং নিয়তং সু তানি।
বিদ্যাধনন্ত পুনরন্ত মহানগুণোহসৌ
দানেন বৃদ্ধিমধিগচ্ছতি যৎ সদেদম্॥ ৪॥
নৈশ্বর্যেণ ন রূপেণ ন বলেনাপি তাদৃশী।
যাদৃশী হি ভবেৎ খ্যাতির্বিক্ষয় নিরবন্ধয়॥ ৫॥
দুর্ব্বলোহপি দরিদ্রোহপি নীচবংশভবেছিপি সন।
ভাজনং রাজপূজাযয়া নরো ভবতি বিদ্যয়॥৬॥
বিদ্বৎসভাসু মনুজ, পরিহীশবিদ্যো,
নৈবাদরং কচিদুপৈতি ন চাপি শোভাম্।
হাসখি কেবলমসেী নিয়তং জনানাং
তজজীবিতং বিফলমেব তথাবিধস্য॥ ৭॥
অজ্ঞানখগুনকরী ধনমানহেতুঃ
সৌখ্যাপবৰ্গফলমগনিদেশিনী চ।
সা নঃ সমস্তজগতামভিলাষভুমি
বিদ্যা নিরস্য জড়তাং ধিয়মাদধাতু। ৮॥

 এই কবিতাগুচ্ছে প্রাচীন সংস্কৃত কবিতার মর্ম্ম নিবদ্ধ পাকিলেও উহু একটী বিদ্যার্থীর রচনা পলিয়া বিবেচনা করিলে মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করিতে হইবে। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের রচনার পক্ষপাতী না হওয়ার পক্ষে ইহাও এক কারণ। ফলতঃ কবিতাগুলি সারল্যে ও মাধুর্য্যে পরিপূর্ণ ও অতিমাত্র স্বাভাবিক।

 প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার সময় জি, টি, মার্শেল সাহেব সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তৃতীয় বৎসর অধ্যক্ষ ছিলেন, বাবু রসময় দত্ত। এ বৎসর অগ্নীধ্র রাজার তপস্যাসংক্রাস্ত বিষয়টী রচনার নিমিত্ত নির্দিষ্ট ছিল। রসময় বাবু কয়েকটী কথা লিখিয়া দিয়া তৎসম্বন্ধে কবিতায় শ্লোক রচনা করিতে বলিয়াছিলেন। তদনুসারে নিয়ে প্রকাশিত কবিতাগুলি রচিত হয়। রসময় বাবু এই কবিতা দেখিয়া অত্যন্ত আহ্লাদিত হইয়াছিলেন।


অগ্নীধ্র রাজার উপাখ্যান।

অগ্নীধ্রো নাম ভূমীন্দ্রঃ প্রজারঞ্জনবিশ্রুত: |
আরাধয়ং সুতাকাঙ্ক্ষী গিরিপ্রস্থে প্রজাপতিম্। ১।
ভগবান সোহথ তজজ্ঞাত্বা প্রেষয়ামাস সত্বরম্।
প্রযত্নতঃ পুর্ব্বচিত্তিং নাম কমিপি কামিনীম্। ২।
নৃপতিস্তাং সমালোক্য কাস্ত্য ত্রৈলোক্যমোহিনীম্।
শ্লোকানুবাচ কতিচিজভূবন্মেহিমাশ্রিতঃ। ৩।
আলীঢ়নীরদচয়ে শিথরৈরুদগ্রৈ-
রুচ্চবচৈরজগরৈরঙিতো বিকীর্ণে।

ক্রব্যান্ধদনৈরগণনৈর্ভয়মাদধানে
কং নু’ব্যবসাসি মুনীশ্বর ভূধরেংশ্বিন। ৪
কোদণ্ডযুগ্মমিদমদ্ভুতমম্বুজাক্ষি
ধৎসে কিমর্থমথবা হরিণোপমানম।
বালে বশীকরণবাসনয়া নিতান্ত-
মম্মাদৃশাং হতদৃশামজিতেন্দ্রিয়াণাম। ৫।
বীণবিমৌ বিবিধবিভ্রমমস্থরৌ তে
পুঙ্খং বিনাপিরুচিরেী নিশিতা গ্রভাগৌ।
ধাতুঃ কটাক্ষপতিতায় হতাশ্রয়ায়
কর্ম্মৈ প্রযোক্তুমভিবাঞ্ছসি তন্ন বিদ্ম:। ৬।
যদ দৃশ্যতে সুমুখি বিম্বফলং মনোজ্ঞং
মধ্যে সুবর্ণপরিকল্পিতবাগুরায়াঃ।
জানীমহে ন হি করিষ্যতি কন্য যুন-
শ্চেতোবিহঙ্গমশিশোবিপুলাং বিপত্তিম্‌। ৭।
অস্মিন্‌ নিরাকৃতকলঙ্কশশাঙ্কবিম্বে
নীলাম্বুজন্মযুগলং যদিদং বিভাতি
মন্যে সুধাংশুমুখি সংবননং বিধাত্রা
লোকত্রয়স্ত বিহিতং মহতাদরেণ। ৮।
যুগ্নচ্ছিখাবিগলিতা ললিত নিতান্তং
শিষ্যা ইমে মুনিবরানুগতা ভবস্তম্।
প্রীতা ভজন্তি বিমলাং কিল পুষ্পবৃষ্টিং
ধর্ম্মব্রতা মুনিসুতা ইব বেদশাখাম্‌। ৯।
তস্মাদয়ং ভয়পরিপ্লববুদ্ধয়ন্তাম
অভ্যর্থয়ামহ ইদং চটুলাযতাক্ষি।

উদ্যন্‌ বিজেতুমবনীং তব বিক্রমোহয়-
মস্মাকমস্তু কুশলায় নিরাশ্রয়াণম্॥ ১০

 এই নৈসর্গিক মধুরতায় আদিরসাত্মক কবিতা প্রাঞ্জলতাগুণে সকলেরই চিত্ত প্রীত করিবে যেন প্রাচীন কবির লিপিপটুতা পদে পদে প্রতিভাত।

 ১২৪৫ সালে বা ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে জন্‌ মিয়র্‌ নামে এক সিবি-লিয়ন্‌ সাহেবের প্রস্তাবে বিদ্যাসাগর মহাশয়, পুরাণ, সূর্য্যসিদ্ধান্ত ও যুরোপীয় মতের অনুযায়ী ভূগোল ও খগোল বিষয়ে এক শত শ্লোক রচনা করিয়া, এক শত টাকা পুরস্কার পাইয়াছিলেন। এই শ্লোকগুলি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবদ্দশায় পুস্তকাকারে মুদ্রিত হইতেছিল। তখন উহার মুদ্রা-কার্য্য সমাপ্ত হয় নাই। তাঁহার মৃত্যুর পর ১২৯৯ সালে ১৫ই বৈশাখে পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছে।[] ইহাতে এখন ৪০৮ টী শ্লোক দেখা যায়। সুতরাং মিয়র সাহেবের নির্দিষ্ট শত শ্লোক অপেক্ষা ইহাতে অতিরিক্ত শ্লোক রহিয়াছে। সেগুলি বোধ হয় পরে রচিত।

 এ পুস্তকের প্রারম্ভে ঈশ্বরচন্দ্রের আস্তিকতা, গুরুদেবপরায়ণতা বিনয়নম্রতার প্রমাণ রহিয়াছে।

অস্তিকতার প্রমাণ,—

যৎক্রীড়াভাণ্ডবদ্ভাতি ব্রহ্মাণ্ডমিদ্ভুতম্।
অসীমমহিমানং তং প্রণমামি মহেশ্বরম॥ ১।

বিনয়মম্রতা ও গুরুপরায়ণতার পরিচয়,—

“জগদ্বর্শন কর্ম্মেদং শর্ম্মণে কিমু মাদৃশ্যম্।
খদ্যোতানাং তমোনাশোদ্যমো হাস্যায় কন্য ন। ৪।
তথাপি শরণীকৃত্য[] গুরূণাং চরণং পরম।
কিঞ্চিদ্বক্ষ্যামি সংক্ষেপাৎ সুধিয়ঃ শোধয়ন্তু তৎ। ৫।”

 এভাবের এমন প্রমাণ আর পরবর্তী গ্রন্থে পাই না। এইটী বুঝি কেবল অবিমিশ্র সংস্কৃত শিক্ষার ফল।

 খগোল-ভূগোল পুস্তকে যেরূপ বিভাগক্রমে দ্বীপ, বর্ষ, বর্ষখণ্ড এবং জনপদসমূহ বর্ণিত হইয়াছে, তাহাতে অনেক স্থলে পুরাণের অপেক্ষা পুরাণাংশ মুখপাঠ্য ও মুখবোধ্য।

 পুরাণমতে সাতটী পরিচ্ছেদে পৃথক পৃথক্ দ্বীপবর্ণন, অষ্টম পরিচ্ছেদে দ্বীপাতিরিক্ত সত্ত্বযুত ভূমিভাগ, কাঞ্চনভূমি, লোকলোক পর্ব্বত এবং ভূমণ্ডলের পরিমাণ আর নবম পরিচ্ছেদে খগোল বৃত্তান্ত বর্ণিত হইয়াছে। খগোল বৃত্তান্তে রাশিচক্র, গ্রন্থ-সংস্থান প্রভৃতি সংক্ষেপে বর্ণিত হইয়াছে। পুরাণমতের পরেই সূর্য্যসিদ্ধান্তের মত। সূর্য্যসিদ্ধান্তমতে একটা পরিচ্ছেদ। এক পরিচ্ছেদেই ভূগোল ও খগোল সংক্ষেপে বর্ণিত আছে। তবে ইহাতে ভূগোল অপেক্ষা খগোলের বৃত্তান্ত অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত। পুরাণ ও সূর্য্যসিদ্ধান্তমতে প্রথমে ভূগোল, পরে খগোল। সূর্য্যসিদ্ধাস্ত-মতের পরে যুরোপীয় মত। তাহাতে প্রথমে খগোল, পরে ভূগোল। য়ুরোপীয় ভূগোলে আসিয়া, য়ুরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকা ক্রমে বর্ণিত। যুরোপখণ্ডে ইংলণ্ডাদিক্রমে প্রধান দেশগুলি পৃথক পৃথক বর্ণিত। যুরোপীয় ভূগোল-খগোল সংস্কৃত শ্লোকাকারে রচিত হওয়ায় বালকগণের অভ্যাসের সুবিধা। সর্ব্বত্রই রচনা প্রাঞ্জল। এইরূপ সংক্ষিপ্ত সরল, মুখবোধ্য রচনা বিদ্যাসাগরের এতদ্বিষয়ে বিশিষ্ট জ্ঞানের পরিচায়ক। সেই অল্প বয়সে ঈদৃশ ভাষা ও পদার্থ জ্ঞান পূর্ব্বজন্মের সুকৃতি ও ইহজন্মের অধ্যবসায়ের ফল, ইহা একবাক্যে সকলেরই স্বীকার্য্য। য়ুরোপীয় মতের ভূগোল-সংক্রান্ত সংস্কৃত রচনার কয়েকটা উদ্ধৃত হইল—

“পুরাণসূর্য্যসিদ্ধান্তমতমেবং” প্রদর্শিতম।
মতং য়ুরোপপ্রথিতং সংক্ষেপেণাধুনোচ্যতে। ২৩০।
আধারভূতং সর্ব্বষ্যেং ধাত্রা নির্ম্মিতস্বরম্
তদন্তরালসংলীনো বর্ত্ততে তপতাম্পতিঃ। ২৩১।
নাস্ত্যন্য প্রাণসঞ্চারো নায়ঞ্চলতি দূরতঃ।
তেজোময় পৃথুৰ্জুমেদেশলক্ষ-গুণেন সঃ। ২৩২।
ভ্রমতো গ্রহচক্রস্য সদা মধ্যস্থলস্থিতঃ।
উষ্ণতাতেজসী তেত্যো দদাত্যেষ নিরস্তরম্। ২৩৩।

সর্ব্বেয়ামেব বন্যানামন্যোকর্ষণং ভবেৎ।
গুরুণা কৃষ্যতে তত্র লঘুম্বাভিমুখং যতঃ। ২৩৪।
আকর্ষতি ততো ভানুর্গ্রহান স্বাভিমুখৎ সদা।
তথাকর্ষতি পৃথীন্দুং যতোহন্য লঘুতা ততঃ। ২৩৫।
অর্কন্যাকর্ষণাদুর্দ্ধমধস্তাদাত্মনাং তথা।
ভ্রমন্তি নিয়তং মধ্যদেশে পৃথ্যাদয়ে গ্রহাঃ। ৩৬।

 এক সময় অধ্যাপক জয়গোপাল তর্কালঙ্কার মহাশয় “গোপালায় নমোহস্থ মে” এই চতুর্থ চরণ নির্দিষ্ট করিয়া এবং একঘণ্টা সময় দিয়া ছাত্রগণকে শ্লোকরচনায় নিযুক্ত করেন। গোপালের কথা কবিতার বিষয়ীভূত হইলে, বিদ্যাসাগর মহাশয় জিজ্ঞাসা করিয়ছিলেন,—“মহাশয়, আমরা কোন্‌গোপালের বর্ণনা করিব? এক গোপাল আমাদের সম্মুখে বিদ্যমান রহিয়াছেন; এক গোপাল বহুকাল পূর্ব্বে বৃন্দাবনে লীলা করিয়া অন্তহিত হইয়াছেন।” পণ্ডিত মহাশয় হাস্য করিয়া গোকুলের গোপাল সম্বন্ধে লিথিতে বলেন। বিদ্যাসাগরের শ্লোকরচনায় পণ্ডিত মহাশয় সন্তুষ্ট হইয়া, তাহার উৎসাহ বর্দ্ধন করেন। সেই শ্লোকগুলি এই—

গোপালায় নমোহস্ত মে।

যশোদানন্দকন্দায় নীলোৎপলদলশ্রিয়ে।
নন্দগোপালবালায় গোপালায় নমোহস্তু মে॥ ১॥
ধেনুরক্ষণদক্ষায় কালিনীকুলচারিণে।
বেণুবাদনশীলায় গোপালায় নমোহস্তু মে॥ ২।
ধৃতপীতদুকুলায় বনমালাবিলাসিনে।
গোপস্ত্রীপ্রেমলোলায় গোপালায় নমোহস্থ মে॥ ৩॥

বৃষ্ণিবংশাবতংসায় কংসধ্বংসবিধায়িতে
দৈতেয়কুলকালায় গোপালায় নমোহস্ত মে॥ ৪॥
নবনীতৈকচৌরায় চতুৰ্বর্গৈকদায়িনে।
জগদ্ভাণ্ডকুলালায় গোপালায় নমোহস্ত মে॥ ৫॥

 ইহাতে বিদ্যাসাগর মহাশয় আর এক শক্তির পরিচয় দিয়াছেন। তিনি যে শ্লোকের পাদপুরণ করিতে পারিতেন, পাঠক এখানে তাহারও প্রমাণ পাইলেন। এ কবিতায় গোপালের প্রতি ভগবদ্ভাব প্রকটিত।

 তর্কালঙ্কার মহাশয়ের অনুরোধে আর একবার সরস্বতী পূজার সময় ঈশ্বরচন্দ্র নিম্নলিখিত রসপূর্ণ কবিতাটী লিখিয়াছিলেন,—

লুচী-কচুরী-মতিচুর-শোভিতং
জিলেপি-সন্দেশ-গজ-বিরাজিতম্‌।
যস্যাং প্রসাদেন ফলারমাপ্নুমঃ
সুস্বতী সা জয়তান্নিরন্তরম্॥”

 কবিতটির রচনা সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয় এইরূপ লিখিয়াছেন,—

 “শ্লোকটী দেখিয়া পূজ্যপাদ তর্কালঙ্কার মহাশয় আহ্লাদে পুলকিত হইয়াছিলেন এবং অনেককে ডাকাইয়া আনিয়া স্বয়ং পাঠ করিয়া শ্লোকটী শুনাইয়াছিলেন।”[]

 অল্পায়তনে কি সুন্দর রস-রচনা! ভবিষ্যৎজীবনে কিন্তু এরূপ রচনায় পরিচয় দিবার সুযোগ ঘটে নাই। রসরচনার সে পরিচয় নাই থাকুক; রসালাপের প্রসিদ্ধি অপ্রতুল নয়।

পরীক্ষার্থী রচনা বা অনুরোধ জন্য রচনা ভিন্ন ঈশ্বরচন্দ্রের মধ্যে স্বেচ্ছায় কিছু কিছু রচনা করিতেন। সকল রচনা পাওয়া যায় নাই। এ সম্বন্ধে তিনি এইরূপ লিপিয়াছেন,—

 “এক আত্মীয় আমার রচনা দেখিবার নিমিত্ত সাতিশয় আগ্রহ প্রকাশ এবং সত্বর ফিরিয়া দিবার অঙ্গীকার করিয়া সমুদায় রচনাগুলি লইয়া যান; বারংবার প্রার্থনা করিয়াও, তাহার নিকট হইতে আর ফিরিয়া পাইলাম না। এইরূপে রচনাগুলি হস্তবহির্ভূত হওয়াতে আমি যৎপরোনাস্তি মনস্তাপ পাইয়াছি। পুরাণ কাগজের মধ্যে অনেক অনুসন্ধান করিয়া, যে কয়টী মাত্র পাইয়াছিলাম, তন্মাত্র মুদ্রিত হইল”।[]

 স্বেচ্ছাকৃত রচনার মধ্যে “মেঘ” বিষয়িণী একটা কবিতা পাওয়া যায়। সেই কবিতাটা এইখানে প্রকাশিত হইল,—

মেঘ।

প্রায় সহায়যোগাৎ সম্পদমধিকর্ত্তূমীশতে সর্ব্বে।
জলদাঃ প্রাবৃভূপায়ে পরীহিয়ন্তে শ্রিয়া মিতরাম্॥ ১॥
কিং,নিম্নগা জলজমণ্ডলবর্জিতেন
তোয়েন বৃদ্ধিমুপগন্তুমধীশতে তাম্।
ন স্যাদজস্রগলিতং যদি পান্থ যুনাং
সাহায় কামু কিল নির্ম্মলমশ্রীবর্ধম॥ ২॥

কাস্তাভিসাররসলোলুপমানসানাম
আতঙ্ককম্পিতদৃশামভিসারিকাণাম।
যদ বিঘ্নক্কদ ছুরিতমজিতবানজস্রং
কেনীধুনা ঘন তরিষ্যসি তন্ন বিদ্ম:॥ ৩॥
ক্ষীণং প্রিয়াবিরহকাতরমণনসং মাং
নো নির্দয়ং ব্যথয় বারিদ নাত্মবেদিন।
ক্ষীণো ভবিষ্যসি হি কালবশং গতঃ সন
আস্তে তবাপি নিয়তস্তড়িতা বিয়োগঃ॥ ৪॥
সর্ব্বত্র সন্নমুতদন্তটিনীশরীর-
সংবৃর্দ্ধকন্তনুভূতাং শমিতোপতাপঃ।
যচ্চাতকেষু করুণাবিমুখোহসি নিত্যং
মায়ং মতো জলদ কিং বত পক্ষপাতঃ॥ ৫॥
লোকোত্তরা যদি চ তোয়দ তে প্রবৃত্তি-
রেষা যদব্ধিসরিত্যেরসি সঙ্গহেতুঃ।
জাগর্ত্তি সজ্জনসভাসু তথাপি ঘোরং
ত্বৎকল্পষং কৃপণপান্থবধুবধোখম॥ ৬॥
ত্বং হি স্বভাবমলিনস্তব নাশ্যমজং
ত্বদগর্জিতং বিরহিবর্গনিসর্গবৈরি।
কস্তাং স্তুবীত বদ তোয়দ লোকসিদ্ধাং
প্রেক্ষামহে ন যদি জীবনদায়িতাং তে॥ ৭॥
কাস্তাবিয়োগবিষজর্জ্জরপান্থযুনাং
ত্বং জীবনপহরণব্রতদীক্ষিতোহসি।
স্বামীমনস্তি ঘন জীবনদণয়িনং যৎ
কিং স ভ্রমো ন বদ তৎ স্বয়মেব বুদ্ধা। ৮॥

গর্জন ভৃশং তত ইতঃ সততং বৃথা কিং
নো লজ্জসে জলন্ধ পান্থনিতান্তশত্রো।
আস্তে হি নান্যগতিচাতকপোতচঞ্চু-
সম্পূরণেইপি বত যস্য ন শক্তিযোগঃ॥৯॥

কবি-প্রতিভা।

জীমূতচাতকগণং নমু বঞ্চয়িত্বা
মা মুঞ্চ বারি সরসীসরিদর্ণবেষু।
কং বা গুণং শিরসি সংস্তুততৈললেপে
তৈলপ্রদানবিধিনা লভতেইত্র লোকঃ॥ ১০॥

 কবিতায় কি সুন্দর স্বভাব বর্ণন! কি মনোহর অলঙ্কারবিন্যাস! কি সরল সরস রচনা-কৌশল! বিদ্যাসাগর কবি বলিয়া পরিচিত নহেন; কিন্তু কেবল এই একটীমাত্র কবিতা পাঠে বলিতে পারি,—বিদ্যাসাগর স্বভাব কবি! বাল-কবির কি অপূর্ব্ব প্রতিভা! বাল্যকালে বঙ্কিমচন্দ্রও বাঙ্গালায় “বর্ষার মানভঞ্জন” নামে একটী কবিতা লিখিয়াছিলেন।[] ঈশ্বরচন্দ্রের কবিতায় যেমন প্রথমে মেঘের স্বভাব-বর্ণন, পরে বিরহিণীর বিরহ-ব্যঞ্জন: বঙ্কিমচন্ত্রের কবিতাতেও তেমনই প্রথমে বর্ষার স্বভাববর্ণন, পরে মানিনীর মানভঞ্জন।উভয়ই পূর্ণ কবিত্বময়। বাল্যে উভয়ই কবি। উত্তরকালে উভয়েই সাহিত্য-পুষ্টির উত্তরসাধক। তবে পথ ও প্রণালী স্বতন্ত্র।

রচনার বঙ্গানুবাদ দিলাম না। দিবার প্রয়োজনও নাই। সুচনা যেরূপ সরস ও সরল, তাহাতে যাহাদের সংস্কৃত ভাষায় কিঞ্চিম্মাত্র বোধ আছে, তাহারা ইহার রস-মধুর্য্য হৃদয়ঙ্গম করিতে সমর্থ হইবেন। এ রচনাগুলি পড়িলে স্পষ্টই প্রতীতি হয়, সর্ব্ব-রস-বিকাশে এবং ছন্দোবিন্যাসে বিদ্যাসাগর মহাশয় শক্তিমান্‌। বাল্যে যিনি এমন মধুর, সুললিত ও বিশুদ্ধ সংস্কৃত লিখিতে পারেন, প্রবৃত্তি বা অভ্যাস রাখিলে, অথবা নিজ রচনাশক্তিতে অবিশ্বাসী হইয়া সংস্কৃত রচনাকল্পে উদাসীন না হইলে, তিনি ভবিষ্যৎ জীবনে উপাদেয় এবং সুপাঠ্য সংস্কৃত গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া সংস্কৃত সাহিত্যের সম্মান রক্ষা করিতে পারিতেন, সন্দেহ নাই। সংস্কৃত ভাষার সংকীর্ণ-প্রচারও বোধ হয় সংস্কৃত গ্রন্থপ্রণয়নের প্রবৃত্তিপ্রণোদনপক্ষে অন্তরায় হইয়াছিল।

  1. বিদ্যাসাগর কর্ত্তৃক প্রকাশিত “সংস্কৃত রচনা"। প্রথম পৃষ্ঠা।
  2. ১, ২, ৩, ৪, ৯ ও ১০ রসময় বাবুর কথানুসারে রচিত। ৫, ৬, ৭, ও ৮ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ইচ্ছানুসারে রচিত।
     খগোল-ভূগোল রচনা-সংক্রান্ত পুস্তকের সুচনায় বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহার একটা সহাধ্যায়ীর দুর্ব্ব্যবহার সম্বন্ধে যাহা লিপি রাখেন, তাই একটু বিচিত্র। সেই জন্য তাহা এইখানে প্রকাশ করলাম,—"খগোল-ভূগোল সম্বন্ধে রচনা হইবার পূর্ব্বে মিয়্‌র সাহেবের পদার্থ বিদ্যা সম্বন্ধে রচনার বিষয় নির্ধারিত করিয়া এক শত টাকা পুরস্কার দিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন। একশতটী শ্লোকে এই রচনা লিখিবার কথা ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের একজন সহাধ্যায়ী আসিয়া তাঁহাকে বলেন,—“তুমি পঞ্চাশটা শ্লোক লিখিও এবং আমি পঞ্চাশটা লিখিব। পরে তোমার নামেই হউক, আর আমার নামেই হউক, এই রচনাটি কর্ত্ত্ররীপক্ষকে দেওয়া যাইবে।” সহাধ্যায়ীর বহু পীড়াপীড়িতে বিদ্যাসাগর মহাশয় সম্মত হন। রচনা কর্ত্তৃপক্ষকে দিবার কিয়দ্দিন পূর্ব্বেই সেই সহয়্যাধায়ীটী আসিয়া বলেন যে, আমি শ্লোকগুলি লিখিতে পারি নাই। ইহা শুনিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় বলেন—” তবে আমার লেখা এই শ্লোকগুলি আর কি হইবে?” এই বলিয়া তিনি সেই স্বরচিত শ্লোকগুলি তৎক্ষনাৎ ছিঁড়িয়া ফেলিলেন। পরে তিনি তাঁহার সহধ্যায়ীটী ১০০ একশত শ্লোকই রচনা করিয়া আনিয়া কর্তৃপক্ষকে দেখান এবং পুরস্কার পান।
  3. ত্ব শরণীকৃত্য অদ্ভূততদ্ভাবে চ্বি। চিরন্তনীয়।
  4. “সংস্কৃত রচনা” পুস্তক, ১৬ পৃষ্ঠা।
  5. খগোল-ভূগোল” রচনাটী লইয়া যেমন একখানি পুস্তক হইয়াছে, এই রচনাগুলি লইয়া ১২৯২ সালের ১ লা অগ্রহায়ণ বা ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে “সংস্কৃত রচনা” গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
  6. ১৩০১ সালের শ্রাবণ মাসের সাহিত্য। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দোহিত্র শ্রীযুক্ত সুরেশ্চন্দ্র সমাজপতি কর্তৃক সম্পাদিত মাসিক পত্র।